এ কে এম শামসুদ্দিন
বছর ঘুরে ডিসেম্বর মাস এলেই যেন মুক্তিযুদ্ধের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। চোখের কোণে ভেসে ওঠে আবেগতাড়িত দুর্বিষহ ঘটনার সব দৃশ্যাবলি। ডিসেম্বর হলো বাঙালির আবেগের মাস, বিজয়ের মাস; বিশেষ করে আমরা যাঁরা এখনো বেঁচে আছি, তাঁরা অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।
মার্চের অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয় অবধি এমন অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এখনো অনেকে বেঁচে আছেন। তাঁদের কাছে ডিসেম্বর মানেই এক অবিস্মরণীয় বিজয়ের গল্পগাথা। তবে এ বিজয় এত সহজে আসেনি। লাখো শহীদের রক্তে সিক্ত এ দেশের প্রতিটি ধূলিকণা যেন তারই সাক্ষ্য দেয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, উনসত্তরের ১১ দফা ও গণ-আন্দোলন এবং একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তার পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে।
একাত্তরের ১ মার্চ। বেলা ঠিক ১টা বেজে ৫ মিনিট। আসন্ন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণার পরপরই ঢাকা শহরজুড়ে রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষুব্ধ মানুষ। দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায়। শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করে এর প্রতিবাদ জানায়। কেবল বেসরকারিই নয়, সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাস্তায় নেমে আসেন। মুহূর্তে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা শহর। এসব মিছিল এসে জড়ো হতে থাকে হোটেল পূর্বাণীর সামনে। হোটেল পূর্বাণীতে চলছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বৈঠক। যেখানে ৬ দফা দাবির ওপর ভিত্তি করে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছিল। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতের ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলার মানুষ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ তিনি ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ বেলা ২টা পর্যন্ত দেশের অন্যান্য জেলায় হরতাল পালনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষণা দেন এবং ওই জনসভাতেই পরবর্তী পরিপূর্ণ কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বলে জানান।
কার্যত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই সমগ্র দেশ পাকিস্তানের হাতছাড়া হয়ে যায়। দেশ তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই পরিচালিত হতে থাকে। এ অবস্থায় ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করতে বাধ্য হন। তবে সেটা ছিল সম্পূর্ণ প্রহসনের বৈঠক। সময়ক্ষেপণ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য সমাবেশ করাই ছিল জান্তাগোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য। দিনের পর দিন বৈঠক করে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খান চোরের মতো পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এরপর সেদিন মধ্যরাত থেকেই ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দখলদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের গোলার শব্দে রাতের নীরবতা ভেঙে চারদিক ভয়ংকর করে তোলে।
২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত অভিযানে পাকিস্তানি হানাদাররা পর্যুদস্ত হতে থাকে। বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, রেললাইন, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় সব যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে তাদের হেডকোয়ার্টার্স থেকে ফ্রন্ট লাইনে অবস্থানরত ব্যাটালিয়নগুলোতে যুদ্ধ সরঞ্জাম ও লজিস্টিক সরবরাহব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠন করা হয় এবং ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বের সূচনা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি সেক্টরে, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাঙালিদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় যৌথবাহিনী সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে। ফলে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।
অথচ একশ্রেণির মানুষ এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বলে থাকে; বিশেষ করে ভারতে এই ধারণার ব্যাপক প্রচার আছে। সে দেশের নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলেই জানেন। ভারতে চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে গল্প-উপন্যাসেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে সেভাবেই তুলে ধরা হয়, যা ইতিহাসের সত্যকে অস্বীকার করার শামিল। এ কথা সত্য যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের ত্যাগ ও অসামান্য অবদানের কথা সর্বকালেই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণীয়। যুদ্ধে যে কয়েক হাজার ভারতীয় সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন, তাঁদের সেই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথাও চিরস্মরণীয়। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এত দ্রুত এ দেশকে শত্রুমুক্ত করা হয়তো সম্ভব হতো না। শরণার্থীদের আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষিত করেছে।
তবে এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি ৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্ব শুরুর পর এর চালিকাশক্তির নিয়ন্ত্রণও ভারতের হাতে ছিল। তারপরও মূল চালিকাশক্তি বা যুদ্ধের নেতৃত্ব যাদের হাতেই থাকুক না কেন, মুক্তিবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া যৌথ বাহিনীর পক্ষে এত দ্রুত ঢাকা পৌঁছানো সম্ভব হতো না। বক্সিং প্রতিযোগিতায় ছোটখাটো আঘাতে প্রতিপক্ষ যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, শরীরে তখন তেমন প্রতিরোধ শক্তি থাকে না। এমন দুর্বল মুহূর্তে যদি সুযোগসন্ধানী কোনো শক্ত পাঞ্চ করা যায়, তাহলে প্রতিপক্ষ সহজেই ধরাশায়ী হতে বাধ্য। ৯ মাসের যুদ্ধেও মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অবস্থাও তা-ই হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে এসে শক্ত সেই পাঞ্চটি মেরেছিল মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী।
ফলে পাকিস্তানি হানাদাররা এত সহজেই হার মেনে নিতে বাধ্য হয়। হানাদার বাহিনীর জনবল, ভারী অস্ত্রের অবস্থান, শত্রুর শক্ত ও দুর্বল দিক, প্রতিরক্ষা অবস্থানের বিন্যাস এবং শত্রুদের মনোবল ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে ভারতীয় বাহিনীকে সরবরাহের কাজটিও করেছিলেন মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা, যা ভারতীয় জেনারেলদের রণকৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। ফলে একের পর এক সামরিক অভিযানে সাফল্য এসেছে। আর মুক্তিবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে মাত্র ১৩ দিনে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হতো না। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দেশে ও বিদেশে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে যত আলোচনা হয়, সেই সব আলোচনায় মুক্তিবাহিনীর ভূমিকা তেমন গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয় না।
এ-সম্পর্কে ভারতীয় ২০ মাউন্টেইন ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল লচমন সিংয়ের স্বীকারোক্তি প্রণিধানযোগ্য। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বগুড়া অভিমুখে অগ্রাভিযানকালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া নদীর তীরে পাকিস্তানের ৩২ বেলুচ ও ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে নদী ক্রস করে একটি সফল অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে জেনারেল লচমন সিং তাঁর ‘ইন্ডিয়ান সর্ড স্ট্রাইকস ইন ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ের ১২৫ ও ১২৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘মুক্তিবাহিনী নদীর ক্রস সাইট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিল বলেই আমরা সহজে শত্রুকে পরাস্ত করতে পেরেছিলাম। যুদ্ধের প্রথম থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, বিশেষ করে এই অভিযানে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা দক্ষতার সঙ্গে আমাদের গাইড করেছেন, তাঁদের ক্রস সাইট ও গোবিন্দগঞ্জে যাওয়ার পথ সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞান ছিল।
এ জন্য নদী পার হতে শত্রু মোকাবিলা করতে হয়নি এবং পথে কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি।’ ভারতের ইস্টার্ন আর্মির তৎকালীন চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাক জেকব তাঁর ‘সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা বার্থ অব এ নেশন’ বইয়ের ৯৪ পৃষ্ঠায় মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ফোর্স ও গেরিলাদের অব্যাহত সাফল্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মূল নিয়ামক। এই যোদ্ধারা পাকিস্তানি সৈনিকদের মনোবল ভেঙে দিয়ে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, শেষ
পর্যন্ত তারা বাধ্য হয়েছিল নির্দিষ্ট সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করতে, যা চূড়ান্ত পর্বের যুদ্ধে সাফল্য এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অবশ্যই তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে।’
জেনারেল জেকব ও লচমন সিংয়ের মন্তব্য থেকে সহজেই বোঝা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে যারাই ‘ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ’ বলে প্রচার করার চেষ্টা করুক না কেন, এই যুদ্ধে পাকিস্তানকে এত সহজে পরাস্ত করা সম্ভব হতো না, যদি আমাদের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ না থাকত।
এ ধরনের অপপ্রচার বন্ধ হওয়া উচিত। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা জরুরি। মুক্তিযুদ্ধকে স্রেফ ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বলা বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকেই বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, স্বাধীনতার এত বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এভাবেই বিকৃতি হচ্ছে, যার অবসান হওয়া উচিত। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে যার যার অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে ইতিহাসের সঠিক স্থানে তাঁদের জায়গা করে দিতে হবে। বিজয়ের এ মাসে এটিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
বছর ঘুরে ডিসেম্বর মাস এলেই যেন মুক্তিযুদ্ধের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। চোখের কোণে ভেসে ওঠে আবেগতাড়িত দুর্বিষহ ঘটনার সব দৃশ্যাবলি। ডিসেম্বর হলো বাঙালির আবেগের মাস, বিজয়ের মাস; বিশেষ করে আমরা যাঁরা এখনো বেঁচে আছি, তাঁরা অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।
মার্চের অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয় অবধি এমন অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এখনো অনেকে বেঁচে আছেন। তাঁদের কাছে ডিসেম্বর মানেই এক অবিস্মরণীয় বিজয়ের গল্পগাথা। তবে এ বিজয় এত সহজে আসেনি। লাখো শহীদের রক্তে সিক্ত এ দেশের প্রতিটি ধূলিকণা যেন তারই সাক্ষ্য দেয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, উনসত্তরের ১১ দফা ও গণ-আন্দোলন এবং একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তার পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে।
একাত্তরের ১ মার্চ। বেলা ঠিক ১টা বেজে ৫ মিনিট। আসন্ন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণার পরপরই ঢাকা শহরজুড়ে রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষুব্ধ মানুষ। দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায়। শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করে এর প্রতিবাদ জানায়। কেবল বেসরকারিই নয়, সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাস্তায় নেমে আসেন। মুহূর্তে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা শহর। এসব মিছিল এসে জড়ো হতে থাকে হোটেল পূর্বাণীর সামনে। হোটেল পূর্বাণীতে চলছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বৈঠক। যেখানে ৬ দফা দাবির ওপর ভিত্তি করে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছিল। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতের ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলার মানুষ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ তিনি ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ বেলা ২টা পর্যন্ত দেশের অন্যান্য জেলায় হরতাল পালনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষণা দেন এবং ওই জনসভাতেই পরবর্তী পরিপূর্ণ কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বলে জানান।
কার্যত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই সমগ্র দেশ পাকিস্তানের হাতছাড়া হয়ে যায়। দেশ তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই পরিচালিত হতে থাকে। এ অবস্থায় ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করতে বাধ্য হন। তবে সেটা ছিল সম্পূর্ণ প্রহসনের বৈঠক। সময়ক্ষেপণ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য সমাবেশ করাই ছিল জান্তাগোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য। দিনের পর দিন বৈঠক করে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খান চোরের মতো পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এরপর সেদিন মধ্যরাত থেকেই ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দখলদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের গোলার শব্দে রাতের নীরবতা ভেঙে চারদিক ভয়ংকর করে তোলে।
২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত অভিযানে পাকিস্তানি হানাদাররা পর্যুদস্ত হতে থাকে। বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, রেললাইন, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় সব যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে তাদের হেডকোয়ার্টার্স থেকে ফ্রন্ট লাইনে অবস্থানরত ব্যাটালিয়নগুলোতে যুদ্ধ সরঞ্জাম ও লজিস্টিক সরবরাহব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠন করা হয় এবং ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বের সূচনা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি সেক্টরে, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাঙালিদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় যৌথবাহিনী সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে। ফলে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।
অথচ একশ্রেণির মানুষ এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বলে থাকে; বিশেষ করে ভারতে এই ধারণার ব্যাপক প্রচার আছে। সে দেশের নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলেই জানেন। ভারতে চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে গল্প-উপন্যাসেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে সেভাবেই তুলে ধরা হয়, যা ইতিহাসের সত্যকে অস্বীকার করার শামিল। এ কথা সত্য যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের ত্যাগ ও অসামান্য অবদানের কথা সর্বকালেই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণীয়। যুদ্ধে যে কয়েক হাজার ভারতীয় সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন, তাঁদের সেই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথাও চিরস্মরণীয়। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এত দ্রুত এ দেশকে শত্রুমুক্ত করা হয়তো সম্ভব হতো না। শরণার্থীদের আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষিত করেছে।
তবে এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি ৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্ব শুরুর পর এর চালিকাশক্তির নিয়ন্ত্রণও ভারতের হাতে ছিল। তারপরও মূল চালিকাশক্তি বা যুদ্ধের নেতৃত্ব যাদের হাতেই থাকুক না কেন, মুক্তিবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া যৌথ বাহিনীর পক্ষে এত দ্রুত ঢাকা পৌঁছানো সম্ভব হতো না। বক্সিং প্রতিযোগিতায় ছোটখাটো আঘাতে প্রতিপক্ষ যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, শরীরে তখন তেমন প্রতিরোধ শক্তি থাকে না। এমন দুর্বল মুহূর্তে যদি সুযোগসন্ধানী কোনো শক্ত পাঞ্চ করা যায়, তাহলে প্রতিপক্ষ সহজেই ধরাশায়ী হতে বাধ্য। ৯ মাসের যুদ্ধেও মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অবস্থাও তা-ই হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে এসে শক্ত সেই পাঞ্চটি মেরেছিল মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী।
ফলে পাকিস্তানি হানাদাররা এত সহজেই হার মেনে নিতে বাধ্য হয়। হানাদার বাহিনীর জনবল, ভারী অস্ত্রের অবস্থান, শত্রুর শক্ত ও দুর্বল দিক, প্রতিরক্ষা অবস্থানের বিন্যাস এবং শত্রুদের মনোবল ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে ভারতীয় বাহিনীকে সরবরাহের কাজটিও করেছিলেন মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা, যা ভারতীয় জেনারেলদের রণকৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। ফলে একের পর এক সামরিক অভিযানে সাফল্য এসেছে। আর মুক্তিবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে মাত্র ১৩ দিনে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হতো না। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দেশে ও বিদেশে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে যত আলোচনা হয়, সেই সব আলোচনায় মুক্তিবাহিনীর ভূমিকা তেমন গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয় না।
এ-সম্পর্কে ভারতীয় ২০ মাউন্টেইন ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল লচমন সিংয়ের স্বীকারোক্তি প্রণিধানযোগ্য। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বগুড়া অভিমুখে অগ্রাভিযানকালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া নদীর তীরে পাকিস্তানের ৩২ বেলুচ ও ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে নদী ক্রস করে একটি সফল অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে জেনারেল লচমন সিং তাঁর ‘ইন্ডিয়ান সর্ড স্ট্রাইকস ইন ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ের ১২৫ ও ১২৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘মুক্তিবাহিনী নদীর ক্রস সাইট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিল বলেই আমরা সহজে শত্রুকে পরাস্ত করতে পেরেছিলাম। যুদ্ধের প্রথম থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, বিশেষ করে এই অভিযানে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা দক্ষতার সঙ্গে আমাদের গাইড করেছেন, তাঁদের ক্রস সাইট ও গোবিন্দগঞ্জে যাওয়ার পথ সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞান ছিল।
এ জন্য নদী পার হতে শত্রু মোকাবিলা করতে হয়নি এবং পথে কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি।’ ভারতের ইস্টার্ন আর্মির তৎকালীন চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাক জেকব তাঁর ‘সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা বার্থ অব এ নেশন’ বইয়ের ৯৪ পৃষ্ঠায় মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ফোর্স ও গেরিলাদের অব্যাহত সাফল্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মূল নিয়ামক। এই যোদ্ধারা পাকিস্তানি সৈনিকদের মনোবল ভেঙে দিয়ে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, শেষ
পর্যন্ত তারা বাধ্য হয়েছিল নির্দিষ্ট সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করতে, যা চূড়ান্ত পর্বের যুদ্ধে সাফল্য এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অবশ্যই তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে।’
জেনারেল জেকব ও লচমন সিংয়ের মন্তব্য থেকে সহজেই বোঝা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে যারাই ‘ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ’ বলে প্রচার করার চেষ্টা করুক না কেন, এই যুদ্ধে পাকিস্তানকে এত সহজে পরাস্ত করা সম্ভব হতো না, যদি আমাদের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ না থাকত।
এ ধরনের অপপ্রচার বন্ধ হওয়া উচিত। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা জরুরি। মুক্তিযুদ্ধকে স্রেফ ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বলা বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকেই বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, স্বাধীনতার এত বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এভাবেই বিকৃতি হচ্ছে, যার অবসান হওয়া উচিত। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে যার যার অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে ইতিহাসের সঠিক স্থানে তাঁদের জায়গা করে দিতে হবে। বিজয়ের এ মাসে এটিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২৩ মিনিট আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩০ মিনিট আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
১ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
১ ঘণ্টা আগে