মোনায়েম সরকার
ঈদ ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এবার ছুটি মোটামুটি লম্বা হয়েছে। এবারই প্রথম দেশে ছয় দিন টানা কোনো দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। আমার মতো বয়স্ক মানুষ, যাঁদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস সকালে খবরের কাগজ পড়া, তাঁদের জন্য এই ছয় দিন কতটা অস্বস্তিকর ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না। তবে এবার ঈদ উপলক্ষে যাঁরা ঢাকা ছেড়েছিলেন, তাঁদের যাত্রা অনেকটাই নির্বিঘ্ন হয়েছে বলেই শুনেছি। তবু প্রচণ্ড গরমে এবং গাদাগাদি করে যাঁদের যাওয়া-আসা করতে হয়েছে, তাঁদের কষ্টটাও বুঝি না তা নয়। আমরা একটা বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম করলেও বৈষম্যের জাল এখনো ছিন্ন করতে পারিনি। যত দিন এই বৈষম্য বজায় থাকবে, তত দিন উৎসব-আনন্দও সব মানুষের এক রকম হবে না। এ নিয়ে আমরা বাহাস করতে পারব, নানা রকম তত্ত্বকথা আওড়াতে পারব, এর-ওর দিকে অভিযোগের তির নিক্ষেপ করতে পারব, কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোনো হেরফের হবে না।
আনন্দ উদ্যাপন শেষ হতে না হতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বড় সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজনের অকালমৃত্যু হয়েছে, অনেক পরিবারে হাহাকার নেমে এসেছে। এই পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই দাবি জোরের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে রাখছি—প্লিজ, আপনারা একটু নড়েচড়ে বসুন। যেসব কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, সেগুলো দূর করার জন্য চেষ্টাটা আন্তরিকভাবে করুন। যারা দুর্ঘটনার কথা বলে প্রকৃতপক্ষে মানুষ হত্যা করছে, সেই ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনুন। আপনারা নিজেদের ভাগ্য গড়ার বিষয়ে তো উদাসীনতা দেখান না, তাহলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কেন?
আমি যেহেতু রাজনীতির মানুষ, তাই রাজনীতি নিয়ে দু-চার কথা বলা জরুরি মনে করছি। আমার এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, দেশে রাজনীতির নামে যা চলছে, তা আর চলতে দেওয়া উচিত নয়। মানুষকে উপেক্ষা করে, মানুষের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে যে রাজনীতি, তা দ্রুত পরিহার করা উচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। সরকারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি এ জন্য যে, শেখ হাসিনার গতিশীল যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। আবার আমার মনে খেদও আছে এ জন্য যে, সত্যি কি বঙ্গবন্ধু এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে, আবার কিছু মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করবে?
বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও একাধিকবার সেই রাজনীতির ধারা অনুসরণের কথাই বলেছেন। কিন্তু দেশ কি সত্যি দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচনের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে? অন্যায়, দুর্নীতি কমবেশি অনেক দেশেই হয়। কিন্তু দেশটাতে দুর্বৃত্ত চরিত্রের মানুষেরা যেভাবে নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পাচ্ছে, সেটা অন্য কোনো সভ্য দেশে কল্পনা করা যায় কি? আমার দুঃখ এটাই যে একজন দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লুটেরা, বিদেশে পুঁজি পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া গেল না। যখন দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়, তখন অলক্ষ্যে বুঝি অন্তর্যামীও বিদ্রূপের হাসি হাসেন।
আমরা দাবি করছি, দেশে গণতন্ত্র আছে, নির্বাচিত সরকার আছে। কিন্তু যেভাবে দেশে নির্বাচন হচ্ছে অধিকাংশ মানুষকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে, ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা বিপুল অর্থ ব্যয় করে ভোটের পাট চুকানো হচ্ছে, এটা কি নীতিনৈতিকতার দিক থেকে সমর্থনযোগ্য? যার খুশি নির্বাচনে দাঁড়াবে, অধিকসংখ্যক মানুষ যাকে ভোট দেবে তিনিই নির্বাচিত হবেন—গণতন্ত্রের এই সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য কি আমাদের দেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে অনুসরণ করা হচ্ছে?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও সম্ভবত প্রায় একই ধারায় হতে যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে একাধিকবার সতর্ক করে বলেছেন, যারা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এমন খবরও সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে যে তৃণমূল পর্যায়ে কেন্দ্রের নির্দেশ না মানার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি অনুসরণ করছেন অনেক মন্ত্রী-এমপি।
নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে একজন প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়-সমর্থকদের জড়িত থাকার অভিযোগ গণমাধ্যমেও ছাপা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও অবাধ করার জন্য দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করে নির্বাচন উন্মুক্ত রেখেছে দলটি। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ওয়াকওভার দেওয়ায় এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে আওয়ামী লীগই। অনেক উপজেলায় মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। শুধু তা-ই নয়, একে অন্যের বিষোদ্গার করছেন, যা পরে স্থায়ী বিরোধ বা সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কৌশল সফল হয়েছে। দলের এই কৌশলের কারণে জাতীয় নির্বাচন অনেক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ভোটের এই প্রতিযোগিতার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধ চাঙা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে। এই বিরোধ-কোন্দল মেটানোর কেন্দ্রীয় উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে শোনা যায় না।
অন্যদিকে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। কিন্তু এরই মধ্যে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন দল দুটির তৃণমূলের কয়েকজন নেতা। প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলায় বিএনপির ৪৫ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জামায়াতেরও কমপক্ষে ২২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দল দুটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হচ্ছেন, তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশনা পাঠানো হবে। এতে কাজ না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তবে দলটির এই বার্তা ভোটে আগ্রহী তৃণমূলের নেতাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে দলের ভেতরেই।
দুটি কৌশল থেকে সরকার এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে, সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। কারণ, যেকোনোভাবে বিএনপিকে এই নির্বাচনে আনা গেলে তাদের ‘একতরফা’ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক, তা মিটে যাবে। অন্যটি হলো, উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে গেলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ভরাডুবি হতে পারে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে। মূলত সংসদ নির্বাচনে এর ইঙ্গিত পেয়ে এবার আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করেছে, দলীয় প্রতীক না থাকলে দলীয় ও স্বতন্ত্র বিভেদ থাকবে না, বিএনপিও ভোটে আসবে। ফলে বিএনপিকে হাতে গোনা কয়েকটি উপজেলায় জয় দেখিয়ে তারা নির্বাচন জায়েজ করে নেবে। এতে বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলনে তৈরি হওয়া নৈতিক অবস্থানও নষ্ট হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের এই কৌশল কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে এটুকুই বলা যায় যে, এতে স্বস্তিতে নেই বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে দুই দলের অস্বস্তির কারণ আলাদা। টানা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগে তৈরি হয়েছে কিছু সাংগঠনিক সমস্যা আর দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপিতেও জমেছে অনেক আবর্জনা। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে দল দুটি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা সক্ষম হবে, তার ওপর দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির অনেক কিছুই নির্ভর করবে।
ঈদ ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এবার ছুটি মোটামুটি লম্বা হয়েছে। এবারই প্রথম দেশে ছয় দিন টানা কোনো দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। আমার মতো বয়স্ক মানুষ, যাঁদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস সকালে খবরের কাগজ পড়া, তাঁদের জন্য এই ছয় দিন কতটা অস্বস্তিকর ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না। তবে এবার ঈদ উপলক্ষে যাঁরা ঢাকা ছেড়েছিলেন, তাঁদের যাত্রা অনেকটাই নির্বিঘ্ন হয়েছে বলেই শুনেছি। তবু প্রচণ্ড গরমে এবং গাদাগাদি করে যাঁদের যাওয়া-আসা করতে হয়েছে, তাঁদের কষ্টটাও বুঝি না তা নয়। আমরা একটা বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম করলেও বৈষম্যের জাল এখনো ছিন্ন করতে পারিনি। যত দিন এই বৈষম্য বজায় থাকবে, তত দিন উৎসব-আনন্দও সব মানুষের এক রকম হবে না। এ নিয়ে আমরা বাহাস করতে পারব, নানা রকম তত্ত্বকথা আওড়াতে পারব, এর-ওর দিকে অভিযোগের তির নিক্ষেপ করতে পারব, কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোনো হেরফের হবে না।
আনন্দ উদ্যাপন শেষ হতে না হতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বড় সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজনের অকালমৃত্যু হয়েছে, অনেক পরিবারে হাহাকার নেমে এসেছে। এই পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই দাবি জোরের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে রাখছি—প্লিজ, আপনারা একটু নড়েচড়ে বসুন। যেসব কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, সেগুলো দূর করার জন্য চেষ্টাটা আন্তরিকভাবে করুন। যারা দুর্ঘটনার কথা বলে প্রকৃতপক্ষে মানুষ হত্যা করছে, সেই ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনুন। আপনারা নিজেদের ভাগ্য গড়ার বিষয়ে তো উদাসীনতা দেখান না, তাহলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কেন?
আমি যেহেতু রাজনীতির মানুষ, তাই রাজনীতি নিয়ে দু-চার কথা বলা জরুরি মনে করছি। আমার এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, দেশে রাজনীতির নামে যা চলছে, তা আর চলতে দেওয়া উচিত নয়। মানুষকে উপেক্ষা করে, মানুষের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে যে রাজনীতি, তা দ্রুত পরিহার করা উচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। সরকারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি এ জন্য যে, শেখ হাসিনার গতিশীল যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। আবার আমার মনে খেদও আছে এ জন্য যে, সত্যি কি বঙ্গবন্ধু এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে, আবার কিছু মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করবে?
বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও একাধিকবার সেই রাজনীতির ধারা অনুসরণের কথাই বলেছেন। কিন্তু দেশ কি সত্যি দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচনের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে? অন্যায়, দুর্নীতি কমবেশি অনেক দেশেই হয়। কিন্তু দেশটাতে দুর্বৃত্ত চরিত্রের মানুষেরা যেভাবে নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পাচ্ছে, সেটা অন্য কোনো সভ্য দেশে কল্পনা করা যায় কি? আমার দুঃখ এটাই যে একজন দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লুটেরা, বিদেশে পুঁজি পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া গেল না। যখন দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়, তখন অলক্ষ্যে বুঝি অন্তর্যামীও বিদ্রূপের হাসি হাসেন।
আমরা দাবি করছি, দেশে গণতন্ত্র আছে, নির্বাচিত সরকার আছে। কিন্তু যেভাবে দেশে নির্বাচন হচ্ছে অধিকাংশ মানুষকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে, ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা বিপুল অর্থ ব্যয় করে ভোটের পাট চুকানো হচ্ছে, এটা কি নীতিনৈতিকতার দিক থেকে সমর্থনযোগ্য? যার খুশি নির্বাচনে দাঁড়াবে, অধিকসংখ্যক মানুষ যাকে ভোট দেবে তিনিই নির্বাচিত হবেন—গণতন্ত্রের এই সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য কি আমাদের দেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে অনুসরণ করা হচ্ছে?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও সম্ভবত প্রায় একই ধারায় হতে যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে একাধিকবার সতর্ক করে বলেছেন, যারা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এমন খবরও সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে যে তৃণমূল পর্যায়ে কেন্দ্রের নির্দেশ না মানার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি অনুসরণ করছেন অনেক মন্ত্রী-এমপি।
নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে একজন প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়-সমর্থকদের জড়িত থাকার অভিযোগ গণমাধ্যমেও ছাপা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও অবাধ করার জন্য দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করে নির্বাচন উন্মুক্ত রেখেছে দলটি। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ওয়াকওভার দেওয়ায় এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে আওয়ামী লীগই। অনেক উপজেলায় মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। শুধু তা-ই নয়, একে অন্যের বিষোদ্গার করছেন, যা পরে স্থায়ী বিরোধ বা সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কৌশল সফল হয়েছে। দলের এই কৌশলের কারণে জাতীয় নির্বাচন অনেক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ভোটের এই প্রতিযোগিতার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধ চাঙা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে। এই বিরোধ-কোন্দল মেটানোর কেন্দ্রীয় উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে শোনা যায় না।
অন্যদিকে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। কিন্তু এরই মধ্যে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন দল দুটির তৃণমূলের কয়েকজন নেতা। প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলায় বিএনপির ৪৫ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জামায়াতেরও কমপক্ষে ২২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দল দুটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হচ্ছেন, তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশনা পাঠানো হবে। এতে কাজ না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তবে দলটির এই বার্তা ভোটে আগ্রহী তৃণমূলের নেতাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে দলের ভেতরেই।
দুটি কৌশল থেকে সরকার এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে, সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। কারণ, যেকোনোভাবে বিএনপিকে এই নির্বাচনে আনা গেলে তাদের ‘একতরফা’ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক, তা মিটে যাবে। অন্যটি হলো, উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে গেলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ভরাডুবি হতে পারে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে। মূলত সংসদ নির্বাচনে এর ইঙ্গিত পেয়ে এবার আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করেছে, দলীয় প্রতীক না থাকলে দলীয় ও স্বতন্ত্র বিভেদ থাকবে না, বিএনপিও ভোটে আসবে। ফলে বিএনপিকে হাতে গোনা কয়েকটি উপজেলায় জয় দেখিয়ে তারা নির্বাচন জায়েজ করে নেবে। এতে বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলনে তৈরি হওয়া নৈতিক অবস্থানও নষ্ট হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের এই কৌশল কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে এটুকুই বলা যায় যে, এতে স্বস্তিতে নেই বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে দুই দলের অস্বস্তির কারণ আলাদা। টানা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগে তৈরি হয়েছে কিছু সাংগঠনিক সমস্যা আর দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপিতেও জমেছে অনেক আবর্জনা। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে দল দুটি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা সক্ষম হবে, তার ওপর দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির অনেক কিছুই নির্ভর করবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে