ড. জেবউননেছা
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকালটা শীতের হলেও আকাশটা ছিল পরিষ্কার। সকালে ঘরের জানালার পর্দা সরাতেই আকাশটাকে যখন পরিষ্কার দেখেছিলাম, তখনই মনে পড়ে গিয়েছিল বিখ্যাত সেই উক্তি ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’। বাসার কাছেই ভোটকেন্দ্র।
রাজধানীর রাজপথের সঙ্গে বাসা। রাস্তায় বের হতেই থমকে গেলাম, লোকজন কম। ধীরে ধীরে ভোটকেন্দ্রের দিকে যতই এগিয়ে যাই, ততই চোখে পড়ছিল মানুষের ভিড়। ভোটকেন্দ্রের সামনে দেখি অসংখ্য মানুষ। আমি কেন্দ্রের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থেকে বিভিন্ন দলীয় কর্মীদের কার্যকলাপ লক্ষ করছিলাম।
সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত একই জায়গায় একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে মাঝে মাঝেই চোখে পড়েছে ছেলের কোলে বৃদ্ধ মায়ের ভোটকেন্দ্রে আসার দৃশ্য, হুইলচেয়ারে ভোট দিতে আসা ভোটারদের। ভোট শেষে বাসায় ফিরে গণমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করি, কোথাও কোনো বড় ধরনের ঝামেলা নেই তথ্য পাই। বোঝা যাচ্ছিল একটি সুন্দর দিনের সমাপনীর দিকে যাচ্ছে ৭ জানুয়ারির দিনটি।
সোমবার সকালে বাসার কাছে ভ্রাম্যমাণ বাজারের কয়েকজন বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করি, ‘গতকাল ভোট দিয়েছেন?’ সবার একই উত্তর, ‘হ্যাঁ।’ কেউ কি কোনো চাপ প্রয়োগ করেছেন? সবার উত্তর, ‘না।’ মাংসের দোকানের দুজন মাংস বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললাম, তাঁরা উর্দুভাষী। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে। জানতে চাইলাম, ভোট দিয়েছেন? তাঁদের উত্তর, ‘আমরা ভোট দিয়েছি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
আমাদের ভালো লেগেছে এ জন্য যে আমাদের কেউ চাপ দেয়নি; বরং এটা বলেছে, যাকে ভালো লাগবে, তাকেই ভোট দেবেন। আপা, আমরা দেখব দেশের উন্নয়ন। যে উন্নয়ন করবে আমরা তাকেই ভোট দেব।’ বাড়ি ফিরে ফোনে কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে জানতে চাই, কাল কেমন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা। তাঁরা বলেছেন, ‘এর আগেও আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এবারের মতো এত সুন্দর ভোটের আয়োজন নজিরবিহীন।’
পত্রিকার পাতা ওল্টাই। কোনো কোনো সংবাদ পড়ে হতাশ হই। কোনো কোনো সংবাদ মনে আশা জাগায়। মনে প্রশ্ন জাগে, যাঁদের নির্বাচিত করা হলো, তাঁরা তাঁদের অঙ্গীকার অনুযায়ী জনগণের জন্য নিবেদিত থাকবেন তো? যাঁরা প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হলেন, তাঁরা নিজের উন্নয়নের চেয়ে জনগণের উন্নয়নের দিকে ঝুঁকবেন তো?
ফোন করি একজন শহীদ বৃদ্ধিজীবীর সন্তানকে। জানতে চাই গতকাল নির্বাচনে কেমন উপভোগ করলেন? তিনি বলেন, ‘ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। কিন্তু ভোটার কেন্দ্রে গেছে, সেটাই বা কম কিসে? কিন্তু আমার দুশ্চিন্তা অন্যদিকে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, যেই যুদ্ধে আমার বাবা শহীদ হয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সেই অঙ্গীকারে কি আমরা আছি? নাকি অনেকখানি সরে গেছি? সমাজের বৃহৎ ইতিবাচক পরিবর্তনের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের কল্যাণ কামনা করেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা এখন কতটা জনগণের সেবার কথা ভাবেন? নিজের আখের গোছানোর দিকেই থাকে অনেকের দৃষ্টি। দলীয় শৃঙ্খলারও বড় প্রয়োজন।
তা সে যে দলেরই হোক। দরকার পরমতসহিষ্ণুতার।’ সত্যিই তো। আমাদের এখন ভাবনার সময় এসেছে। আমরা সমুদ্র জয় করেছি, টানেল করেছি, মেট্রোরেল স্থাপন করেছি, প্রমত্তা পদ্মার ওপর নিজেদের অর্থে সেতু তৈরি করেছি। উন্নয়নের পরিমাণগত সূচকের প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক দিকের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছি। কিন্তু মোটাদাগে উন্নয়নের গুণগত সূচকের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানসিক দিকের উন্নয়নের কথা মাঝে মাঝেই ভুলে যাই।
ভুলে যাই বলে ট্রেনে পুড়ে মরে কারও কারও স্বপ্ন, রাজপথে পড়ে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের লাশ এবং ভোটকেন্দ্রে কুপিয়ে হত্যা করা হয় প্রার্থীর সমর্থককে। অপরদিকে টিকটকের মাধ্যমে একজন ভুয়া চিকিৎসক পাঁচ শর মতো ভিডিও ছড়িয়ে দিল, কারও নজরে এল না! নানাভাবে সামাজিক মাধ্যমে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমের আড়ালে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
পাশের দেশের বিজ্ঞানীরা যখন চাঁদে যাওয়ার পরিকল্পনায় সফল হন, সেই সময় আমরা ব্যস্ত কার কোন সন্তান কোন স্কুলে ভর্তি হচ্ছে, কোন তারকার সংসার ভেঙে যাচ্ছে, সেই সব রগরগে সংবাদ নিয়ে।
আমাদের আত্ম অহমিকা ছিল আমরা বীরের জাতি। সেই অহমিকা ধূসর হতে চলেছে। সামাজিক মাধ্যমে নানা রকম বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু মহল। তা এড়িয়ে যাচ্ছি। ধর্ম এবং রাজনীতি দুটো আলাদা বিষয়—সে কথা ভুলে যাচ্ছি। রাজনীতি মানে দেশ ও দশের সেবা।
এটাও কেউ কেউ ভুলে যাচ্ছি। অথচ বঙ্গবন্ধু ৩ হাজার ৫৩ দিন সংসার, সন্তান ছেড়ে কারাবরণ করেছেন। তিনি যখন একের পর এক কারাবরণ করেছেন, কাউকে জানানোর চিন্তাও করেননি। তখন যা হতো নিজের জন্য, অন্যকে দেখানোর বিষয় ছিল না। এখন তো পান থেকে চুন খসলেই আমরা নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
কনটেন্টের ভিউ বাড়ানোর জন্য কেউ কোনো সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে এর সত্যতা যাচাই না করে সেই কনটেন্টের পেছনে ছুটতে শুরু করি। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি ফিকে হয়ে গেছে। এখন তো পরিবারগুলোতেও বয়স্কদের কথা অনেকে শুনতে চায় না। বেড়েছে লৌকিকতা এবং পরচর্চা। একটি দেশে রাজনীতি, সমাজনীতি এবং অর্থনীতির সুষ্ঠু ধারায় রচিত হয় ইতিহাস।সামনের দিকে ইতিহাস রচনা করার জন্য আমাদের দরকার দৃষ্টান্তমূলক মানুষ। তাঁদের তুলে আনা দরকার।
আমরা বেশির ভাগ অভিভাবক বাচ্চার পরীক্ষার ফলাফলের নম্বরপত্র সামাজিক মাধ্যমে সয়লাব করে দিচ্ছি। আমাদের সময়ও আমরা ভালো ফলাফল করেছিলাম, আমাদের মা-বাবারা সেই ফলাফল প্রকাশ হলে শোকরানা নামাজ আদায় করতেন। অনেক সময় মিলাদের আয়োজন করতেন। এখন আমাদের প্রথম কাজ বাচ্চার পরীক্ষার নম্বরপত্র সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শন করা।
এই লৌকিকতার সংস্কৃতিযেদিন থেকে শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলতে বসেছি। যে কারণে এখনকার বাচ্চারা ভালো ফলাফল করেই বিদেশে পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু কেন বিদেশে পাড়ি দিতে চায় তারা? এই কারণ কেউ কি খুঁজেছি?
নতুন সরকার শপথ নেবে। আমরা সাধারণ জনগণেরা তাদের কাছ থেকে খুব অল্প চাই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রহিত হোক, মেধাবীদের মূল্যায়ন হোক, রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল হোক এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের সহনশীল মানসিকতার পরিচয় দিক। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যুগের স্রোতে ভেসে যাওয়া এই সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন—এই চাই।
লেখক: অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকালটা শীতের হলেও আকাশটা ছিল পরিষ্কার। সকালে ঘরের জানালার পর্দা সরাতেই আকাশটাকে যখন পরিষ্কার দেখেছিলাম, তখনই মনে পড়ে গিয়েছিল বিখ্যাত সেই উক্তি ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’। বাসার কাছেই ভোটকেন্দ্র।
রাজধানীর রাজপথের সঙ্গে বাসা। রাস্তায় বের হতেই থমকে গেলাম, লোকজন কম। ধীরে ধীরে ভোটকেন্দ্রের দিকে যতই এগিয়ে যাই, ততই চোখে পড়ছিল মানুষের ভিড়। ভোটকেন্দ্রের সামনে দেখি অসংখ্য মানুষ। আমি কেন্দ্রের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থেকে বিভিন্ন দলীয় কর্মীদের কার্যকলাপ লক্ষ করছিলাম।
সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত একই জায়গায় একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে মাঝে মাঝেই চোখে পড়েছে ছেলের কোলে বৃদ্ধ মায়ের ভোটকেন্দ্রে আসার দৃশ্য, হুইলচেয়ারে ভোট দিতে আসা ভোটারদের। ভোট শেষে বাসায় ফিরে গণমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করি, কোথাও কোনো বড় ধরনের ঝামেলা নেই তথ্য পাই। বোঝা যাচ্ছিল একটি সুন্দর দিনের সমাপনীর দিকে যাচ্ছে ৭ জানুয়ারির দিনটি।
সোমবার সকালে বাসার কাছে ভ্রাম্যমাণ বাজারের কয়েকজন বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করি, ‘গতকাল ভোট দিয়েছেন?’ সবার একই উত্তর, ‘হ্যাঁ।’ কেউ কি কোনো চাপ প্রয়োগ করেছেন? সবার উত্তর, ‘না।’ মাংসের দোকানের দুজন মাংস বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললাম, তাঁরা উর্দুভাষী। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে। জানতে চাইলাম, ভোট দিয়েছেন? তাঁদের উত্তর, ‘আমরা ভোট দিয়েছি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
আমাদের ভালো লেগেছে এ জন্য যে আমাদের কেউ চাপ দেয়নি; বরং এটা বলেছে, যাকে ভালো লাগবে, তাকেই ভোট দেবেন। আপা, আমরা দেখব দেশের উন্নয়ন। যে উন্নয়ন করবে আমরা তাকেই ভোট দেব।’ বাড়ি ফিরে ফোনে কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে জানতে চাই, কাল কেমন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা। তাঁরা বলেছেন, ‘এর আগেও আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এবারের মতো এত সুন্দর ভোটের আয়োজন নজিরবিহীন।’
পত্রিকার পাতা ওল্টাই। কোনো কোনো সংবাদ পড়ে হতাশ হই। কোনো কোনো সংবাদ মনে আশা জাগায়। মনে প্রশ্ন জাগে, যাঁদের নির্বাচিত করা হলো, তাঁরা তাঁদের অঙ্গীকার অনুযায়ী জনগণের জন্য নিবেদিত থাকবেন তো? যাঁরা প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হলেন, তাঁরা নিজের উন্নয়নের চেয়ে জনগণের উন্নয়নের দিকে ঝুঁকবেন তো?
ফোন করি একজন শহীদ বৃদ্ধিজীবীর সন্তানকে। জানতে চাই গতকাল নির্বাচনে কেমন উপভোগ করলেন? তিনি বলেন, ‘ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। কিন্তু ভোটার কেন্দ্রে গেছে, সেটাই বা কম কিসে? কিন্তু আমার দুশ্চিন্তা অন্যদিকে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, যেই যুদ্ধে আমার বাবা শহীদ হয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সেই অঙ্গীকারে কি আমরা আছি? নাকি অনেকখানি সরে গেছি? সমাজের বৃহৎ ইতিবাচক পরিবর্তনের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের কল্যাণ কামনা করেই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা এখন কতটা জনগণের সেবার কথা ভাবেন? নিজের আখের গোছানোর দিকেই থাকে অনেকের দৃষ্টি। দলীয় শৃঙ্খলারও বড় প্রয়োজন।
তা সে যে দলেরই হোক। দরকার পরমতসহিষ্ণুতার।’ সত্যিই তো। আমাদের এখন ভাবনার সময় এসেছে। আমরা সমুদ্র জয় করেছি, টানেল করেছি, মেট্রোরেল স্থাপন করেছি, প্রমত্তা পদ্মার ওপর নিজেদের অর্থে সেতু তৈরি করেছি। উন্নয়নের পরিমাণগত সূচকের প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক দিকের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছি। কিন্তু মোটাদাগে উন্নয়নের গুণগত সূচকের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানসিক দিকের উন্নয়নের কথা মাঝে মাঝেই ভুলে যাই।
ভুলে যাই বলে ট্রেনে পুড়ে মরে কারও কারও স্বপ্ন, রাজপথে পড়ে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের লাশ এবং ভোটকেন্দ্রে কুপিয়ে হত্যা করা হয় প্রার্থীর সমর্থককে। অপরদিকে টিকটকের মাধ্যমে একজন ভুয়া চিকিৎসক পাঁচ শর মতো ভিডিও ছড়িয়ে দিল, কারও নজরে এল না! নানাভাবে সামাজিক মাধ্যমে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমের আড়ালে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
পাশের দেশের বিজ্ঞানীরা যখন চাঁদে যাওয়ার পরিকল্পনায় সফল হন, সেই সময় আমরা ব্যস্ত কার কোন সন্তান কোন স্কুলে ভর্তি হচ্ছে, কোন তারকার সংসার ভেঙে যাচ্ছে, সেই সব রগরগে সংবাদ নিয়ে।
আমাদের আত্ম অহমিকা ছিল আমরা বীরের জাতি। সেই অহমিকা ধূসর হতে চলেছে। সামাজিক মাধ্যমে নানা রকম বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু মহল। তা এড়িয়ে যাচ্ছি। ধর্ম এবং রাজনীতি দুটো আলাদা বিষয়—সে কথা ভুলে যাচ্ছি। রাজনীতি মানে দেশ ও দশের সেবা।
এটাও কেউ কেউ ভুলে যাচ্ছি। অথচ বঙ্গবন্ধু ৩ হাজার ৫৩ দিন সংসার, সন্তান ছেড়ে কারাবরণ করেছেন। তিনি যখন একের পর এক কারাবরণ করেছেন, কাউকে জানানোর চিন্তাও করেননি। তখন যা হতো নিজের জন্য, অন্যকে দেখানোর বিষয় ছিল না। এখন তো পান থেকে চুন খসলেই আমরা নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
কনটেন্টের ভিউ বাড়ানোর জন্য কেউ কোনো সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে এর সত্যতা যাচাই না করে সেই কনটেন্টের পেছনে ছুটতে শুরু করি। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি ফিকে হয়ে গেছে। এখন তো পরিবারগুলোতেও বয়স্কদের কথা অনেকে শুনতে চায় না। বেড়েছে লৌকিকতা এবং পরচর্চা। একটি দেশে রাজনীতি, সমাজনীতি এবং অর্থনীতির সুষ্ঠু ধারায় রচিত হয় ইতিহাস।সামনের দিকে ইতিহাস রচনা করার জন্য আমাদের দরকার দৃষ্টান্তমূলক মানুষ। তাঁদের তুলে আনা দরকার।
আমরা বেশির ভাগ অভিভাবক বাচ্চার পরীক্ষার ফলাফলের নম্বরপত্র সামাজিক মাধ্যমে সয়লাব করে দিচ্ছি। আমাদের সময়ও আমরা ভালো ফলাফল করেছিলাম, আমাদের মা-বাবারা সেই ফলাফল প্রকাশ হলে শোকরানা নামাজ আদায় করতেন। অনেক সময় মিলাদের আয়োজন করতেন। এখন আমাদের প্রথম কাজ বাচ্চার পরীক্ষার নম্বরপত্র সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শন করা।
এই লৌকিকতার সংস্কৃতিযেদিন থেকে শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলতে বসেছি। যে কারণে এখনকার বাচ্চারা ভালো ফলাফল করেই বিদেশে পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু কেন বিদেশে পাড়ি দিতে চায় তারা? এই কারণ কেউ কি খুঁজেছি?
নতুন সরকার শপথ নেবে। আমরা সাধারণ জনগণেরা তাদের কাছ থেকে খুব অল্প চাই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রহিত হোক, মেধাবীদের মূল্যায়ন হোক, রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল হোক এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের সহনশীল মানসিকতার পরিচয় দিক। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যুগের স্রোতে ভেসে যাওয়া এই সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন—এই চাই।
লেখক: অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে