মালিহা লোধি
ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচন তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে—আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর।
ভারত সরকার ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় মেনে চলার জন্য ১ অক্টোবরের মধ্যে এ নির্বাচন করতে বাধ্য। সুপ্রিম কোর্ট ওই রায়ে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদকে ‘আইনি ও সাংবিধানিক’ হিসেবে দিল্লির ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তকে বহাল করেছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরে এর আগে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল ১০ বছর আগে।
২০১৮ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৯ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এবং রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। ফলে এই রাজ্যটি দিল্লির সরাসরি শাসনাধীনে চলে আসে। জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাসে লেখা হয় আরেকটি ভয়াবহ অধ্যায়। এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশনের বিরুদ্ধে ছিল, যা রাষ্ট্রের কোনো বস্তুগত পরিবর্তনকে নিষিদ্ধ করে, যা একটি আন্তর্জাতিক বিরোধ হিসেবে স্বীকৃত।
নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করার লক্ষ্যে মোদি সরকার ২০১৯ সাল থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের মাধ্যমে প্রশাসনিক, নির্বাচনী, জনসংখ্যাগত এবং আবাসিক নিয়মে ব্যাপক পরিবর্তন করেছে। মোদি সরকারের দাবি অনুযায়ী, এসব পরিবর্তন জনগণের সমর্থন পেয়েছে এবং তা অঞ্চলটিতে ‘স্বাভাবিকতা’ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে।
রাজ্য হিসেবে দিল্লির কথাই ধরুন। প্রকৃতপক্ষে, গত মাসে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে, মোদি সরকার দিল্লির পরবর্তী ‘নির্বাচিত’ সরকারের কর্তৃত্বকে ব্যাপকভাবে সীমিত করতে দিল্লির মনোনীত লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের (এলজি) ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। বিজেপি বা তার সঙ্গীরা দিল্লিতে নির্বাচনে জিততে পারে না। তাই অন্য কাউকে কর্তৃত্ব দিতে নারাজ। সে জন্য মোদি সরকার এভাবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পথ বেছে নিয়েছে।
দিল্লির উপরাজ্যপালকে ব্যাপক প্রশাসনিক ও নিরাপত্তাব্যবস্থাজনিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে—পুলিশ, বেসামরিক কর্মচারীদের বদলি ও পদায়ন, বিচারের অনুমোদন এবং অন্যান্য জনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়ে। তাঁর এই সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ দ্বারা পর্যালোচনা করা।
এ পদক্ষেপটি জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য একটি উসকানি হিসেবে কাজ করেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি এর ব্যাপক বিরোধিতা ও সমালোচনা করেছে। এসব দলের মতে, এটি স্থানীয় জনগণকে ক্ষমতাহীন করার একটি পদক্ষেপ।
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এই পদক্ষেপের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরকে একটি পৌরসভায় পরিণত করা হয়েছে বলে বর্ণনা করেন। এদিকে আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়কে ‘শক্তিহীন রাবার স্ট্যাম্প’-এ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস এটিকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা করেছে এবং জম্মু-কাশ্মীরের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
যা-ই হোক, এটি ছিল অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে ক্ষমতাচ্যুত করার সর্বশেষ চেষ্টা। ২০১৯-পরবর্তী দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল নির্বাচনী মানচিত্রকে নতুন আকার দেওয়া এবং কাশ্মীরি জনগণের ক্ষতির জন্য খেলার নিয়মের পরিবর্তন করা।
২০২০ সালে ভারতের ডিলিমিটেশন কমিশন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিধানসভায় আসনের পুনর্বণ্টনের পরিকল্পনা করে, যাতে ৯০ সদস্যের বিধানসভায় জম্মুকে বাড়তি ৬টি আসন দেওয়া হয় এবং কাশ্মীরকে দেওয়া হয় ১টি। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের রাজনৈতিক শক্তি কমানো এবং হিন্দুদের জন্য ভারসাম্য তৈরি করা, যদিও কাশ্মীরের জনসংখ্যা জম্মুর চেয়ে বেশি। এটিকে একধরনের রাজনৈতিক অপকর্ম হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫-এ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পর, জম্মু ও কাশ্মীরে অ-কাশ্মীরি বহিরাগতদের আবাসিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যা তাদের ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ফলে কাশ্মীরিদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত
করার অভিযোগ উঠেছে এবং জনমিতিতে পরিবর্তন ঘটানোর উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনা আছে।
এ ধরনের কারচুপি ও অপকর্মের পটভূমিতে কী আর আশা করা, বড়জোর একটি দন্তহীন বিধানসভা! ভারতের সঙ্গে এই রাজ্যকে অঙ্গীভূত করার বিজেপি সরকারের প্রয়াসে ভোটের অর্থ আসলে কী দাঁড়াবে? ওমর আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্স নির্বাচনে প্রধান দল হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে জোর অনুমান করা হচ্ছে।
ওমরের দল নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করার অঙ্গীকার করেছে, যা জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। এ ছাড়া কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনকে নষ্ট করে সব আইন (২০১৯-পরবর্তী সময়ে জারি) বাতিল করার এবং ভারত-পাকিস্তান সংলাপের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আবদুল্লাহ এটাও স্পষ্ট করেছেন যে ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রথম কাজ হবে রাজ্যের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করে বিধানসভায় একটি প্রস্তাব নেওয়া এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার দিল্লির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করা।
যদি এটি ঘটে, তবে এই অঞ্চলে বিজেপির অ্যাজেন্ডা খুব কমই বাস্তবায়ন হবে। প্রকৃতপক্ষে, ‘নির্বাচিত’ সরকার ও উপরাজ্যপালের মধ্যে একটি সংঘাত অনিবার্য, যা ‘স্থিতিশীলতা’ প্রতিষ্ঠা করা তো দূরে থাক, উল্টো এই অঞ্চলকে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত করবে।
এরপর প্রকৌশলী রাশেদ ফ্যাক্টর আছে। তিনি এই নির্বাচনে কীভাবে ভূমিকা রাখবেন তা গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে বারামুল্লা থেকে জিতেছিলেন আবদুল রশিদ শেখ। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রচণ্ড বিরোধী এই ব্যক্তি জেল থেকে লড়াই করে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে হারিয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে ২০১৭ সাল থেকে কারাগারে বন্দী হয়ে তিনি দিল্লির অবাধ্যতার প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
লোকসভা নির্বাচনে বারামুল্লা থেকে আবদুল রশিদ শেখের জয় প্রমাণ করে যে স্থানীয় নেতারা এবং তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তাধারা ভোটব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।
শেখ রশিদের নির্বাচনী প্রচার কাশ্মীর উপত্যকাজুড়ে ঢেউ তুলেছিল, বিশেষ করে তরুণদের সমর্থন পেয়েছিল। তাঁর বিজয় দিল্লির প্রতি কাশ্মীরিদের গভীর ক্ষোভের বিষয়টিকে প্রতিফলিত করেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি কি এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে এবং ভবিষ্যতে বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারবে?
কাশ্মীরের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণকে একটি অর্থহীন ও অবৈধ প্রক্রিয়া মনে করে, বিশেষ করে সত্যিকারের কাশ্মীরি নেতাদের বয়কটের আহ্বানের কারণে। তবে সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে বেশি ভোটারের অংশগ্রহণ দেখাচ্ছে যে কাশ্মীরিরা ভোট দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিরোধের নতুন একটি রূপ হিসেবে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে পারে।
এসব বিষয় এই ইঙ্গিত দেয় যে, মোদি সরকারের ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তের লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরের আসন্ন নির্বাচনে জনপ্রিয় ‘আজাদি’ দাবি উঠে আসতে পারে। যদিও সেগুলো কোনোভাবেই কাশ্মীরিদের প্রকৃত আত্মনিয়ন্ত্রণের বিকল্প নয়, তবে নির্বাচনটি তাদের অধিকারের জন্য প্রতিবাদ হিসেবে কাজ করতে পারে।
মালিহা লোধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
(ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচন তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে—আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর।
ভারত সরকার ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় মেনে চলার জন্য ১ অক্টোবরের মধ্যে এ নির্বাচন করতে বাধ্য। সুপ্রিম কোর্ট ওই রায়ে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদকে ‘আইনি ও সাংবিধানিক’ হিসেবে দিল্লির ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তকে বহাল করেছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরে এর আগে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল ১০ বছর আগে।
২০১৮ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৯ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এবং রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। ফলে এই রাজ্যটি দিল্লির সরাসরি শাসনাধীনে চলে আসে। জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাসে লেখা হয় আরেকটি ভয়াবহ অধ্যায়। এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশনের বিরুদ্ধে ছিল, যা রাষ্ট্রের কোনো বস্তুগত পরিবর্তনকে নিষিদ্ধ করে, যা একটি আন্তর্জাতিক বিরোধ হিসেবে স্বীকৃত।
নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করার লক্ষ্যে মোদি সরকার ২০১৯ সাল থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের মাধ্যমে প্রশাসনিক, নির্বাচনী, জনসংখ্যাগত এবং আবাসিক নিয়মে ব্যাপক পরিবর্তন করেছে। মোদি সরকারের দাবি অনুযায়ী, এসব পরিবর্তন জনগণের সমর্থন পেয়েছে এবং তা অঞ্চলটিতে ‘স্বাভাবিকতা’ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে।
রাজ্য হিসেবে দিল্লির কথাই ধরুন। প্রকৃতপক্ষে, গত মাসে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে, মোদি সরকার দিল্লির পরবর্তী ‘নির্বাচিত’ সরকারের কর্তৃত্বকে ব্যাপকভাবে সীমিত করতে দিল্লির মনোনীত লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের (এলজি) ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। বিজেপি বা তার সঙ্গীরা দিল্লিতে নির্বাচনে জিততে পারে না। তাই অন্য কাউকে কর্তৃত্ব দিতে নারাজ। সে জন্য মোদি সরকার এভাবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পথ বেছে নিয়েছে।
দিল্লির উপরাজ্যপালকে ব্যাপক প্রশাসনিক ও নিরাপত্তাব্যবস্থাজনিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে—পুলিশ, বেসামরিক কর্মচারীদের বদলি ও পদায়ন, বিচারের অনুমোদন এবং অন্যান্য জনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়ে। তাঁর এই সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ দ্বারা পর্যালোচনা করা।
এ পদক্ষেপটি জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য একটি উসকানি হিসেবে কাজ করেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি এর ব্যাপক বিরোধিতা ও সমালোচনা করেছে। এসব দলের মতে, এটি স্থানীয় জনগণকে ক্ষমতাহীন করার একটি পদক্ষেপ।
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এই পদক্ষেপের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরকে একটি পৌরসভায় পরিণত করা হয়েছে বলে বর্ণনা করেন। এদিকে আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়কে ‘শক্তিহীন রাবার স্ট্যাম্প’-এ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস এটিকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা করেছে এবং জম্মু-কাশ্মীরের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
যা-ই হোক, এটি ছিল অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে ক্ষমতাচ্যুত করার সর্বশেষ চেষ্টা। ২০১৯-পরবর্তী দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল নির্বাচনী মানচিত্রকে নতুন আকার দেওয়া এবং কাশ্মীরি জনগণের ক্ষতির জন্য খেলার নিয়মের পরিবর্তন করা।
২০২০ সালে ভারতের ডিলিমিটেশন কমিশন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিধানসভায় আসনের পুনর্বণ্টনের পরিকল্পনা করে, যাতে ৯০ সদস্যের বিধানসভায় জম্মুকে বাড়তি ৬টি আসন দেওয়া হয় এবং কাশ্মীরকে দেওয়া হয় ১টি। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের রাজনৈতিক শক্তি কমানো এবং হিন্দুদের জন্য ভারসাম্য তৈরি করা, যদিও কাশ্মীরের জনসংখ্যা জম্মুর চেয়ে বেশি। এটিকে একধরনের রাজনৈতিক অপকর্ম হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫-এ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পর, জম্মু ও কাশ্মীরে অ-কাশ্মীরি বহিরাগতদের আবাসিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যা তাদের ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ফলে কাশ্মীরিদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত
করার অভিযোগ উঠেছে এবং জনমিতিতে পরিবর্তন ঘটানোর উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনা আছে।
এ ধরনের কারচুপি ও অপকর্মের পটভূমিতে কী আর আশা করা, বড়জোর একটি দন্তহীন বিধানসভা! ভারতের সঙ্গে এই রাজ্যকে অঙ্গীভূত করার বিজেপি সরকারের প্রয়াসে ভোটের অর্থ আসলে কী দাঁড়াবে? ওমর আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্স নির্বাচনে প্রধান দল হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে জোর অনুমান করা হচ্ছে।
ওমরের দল নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করার অঙ্গীকার করেছে, যা জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। এ ছাড়া কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনকে নষ্ট করে সব আইন (২০১৯-পরবর্তী সময়ে জারি) বাতিল করার এবং ভারত-পাকিস্তান সংলাপের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আবদুল্লাহ এটাও স্পষ্ট করেছেন যে ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রথম কাজ হবে রাজ্যের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করে বিধানসভায় একটি প্রস্তাব নেওয়া এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার দিল্লির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করা।
যদি এটি ঘটে, তবে এই অঞ্চলে বিজেপির অ্যাজেন্ডা খুব কমই বাস্তবায়ন হবে। প্রকৃতপক্ষে, ‘নির্বাচিত’ সরকার ও উপরাজ্যপালের মধ্যে একটি সংঘাত অনিবার্য, যা ‘স্থিতিশীলতা’ প্রতিষ্ঠা করা তো দূরে থাক, উল্টো এই অঞ্চলকে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত করবে।
এরপর প্রকৌশলী রাশেদ ফ্যাক্টর আছে। তিনি এই নির্বাচনে কীভাবে ভূমিকা রাখবেন তা গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে বারামুল্লা থেকে জিতেছিলেন আবদুল রশিদ শেখ। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রচণ্ড বিরোধী এই ব্যক্তি জেল থেকে লড়াই করে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে হারিয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে ২০১৭ সাল থেকে কারাগারে বন্দী হয়ে তিনি দিল্লির অবাধ্যতার প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
লোকসভা নির্বাচনে বারামুল্লা থেকে আবদুল রশিদ শেখের জয় প্রমাণ করে যে স্থানীয় নেতারা এবং তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তাধারা ভোটব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।
শেখ রশিদের নির্বাচনী প্রচার কাশ্মীর উপত্যকাজুড়ে ঢেউ তুলেছিল, বিশেষ করে তরুণদের সমর্থন পেয়েছিল। তাঁর বিজয় দিল্লির প্রতি কাশ্মীরিদের গভীর ক্ষোভের বিষয়টিকে প্রতিফলিত করেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি কি এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে এবং ভবিষ্যতে বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারবে?
কাশ্মীরের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণকে একটি অর্থহীন ও অবৈধ প্রক্রিয়া মনে করে, বিশেষ করে সত্যিকারের কাশ্মীরি নেতাদের বয়কটের আহ্বানের কারণে। তবে সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে বেশি ভোটারের অংশগ্রহণ দেখাচ্ছে যে কাশ্মীরিরা ভোট দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিরোধের নতুন একটি রূপ হিসেবে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে পারে।
এসব বিষয় এই ইঙ্গিত দেয় যে, মোদি সরকারের ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তের লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরের আসন্ন নির্বাচনে জনপ্রিয় ‘আজাদি’ দাবি উঠে আসতে পারে। যদিও সেগুলো কোনোভাবেই কাশ্মীরিদের প্রকৃত আত্মনিয়ন্ত্রণের বিকল্প নয়, তবে নির্বাচনটি তাদের অধিকারের জন্য প্রতিবাদ হিসেবে কাজ করতে পারে।
মালিহা লোধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
(ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে