মোনায়েম সরকার
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অভাবনীয় সব ঘটনা ঘটে গেল। গত শতকের ষাটের দশক থেকে সব গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবেই জড়িত আছি। এবারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে নানা কারণে অতীতের কোনো আন্দোলন তুলনীয় নয় বলে আমি মনে করি। তবে সবকিছু নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করার সময় এখন নয়। এখন অনেকেই আবেগে ভাসছেন। কেউ কেউ আবার আত্মরক্ষার জন্য এমন উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন যে সুস্থ মাথায় ভাবনা-চিন্তারও ফুরসত পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে। আবেগ কাটতেও সময় লাগবে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর যে ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে এসেছে, তা কীভাবে কাটবে বলা সহজ নয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন তথা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ যে সংকটের মধ্যে পড়েছিল, এবার শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দলের সংকট তার চেয়েও বেশি বলে আমি মনে করি। এখন এটা ভাবা খুব কঠিন যে আওয়ামী লীগ আবার ঘুরে দাঁড়াবে কীভাবে, কার হাত ধরে। শেখ হাসিনা টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে একদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেমন চমক দেখিয়েছেন, অন্যদিকে তেমনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কারণে শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীসহ ব্যাপক জনগণের কাছে তিনি স্বৈরশাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁকে যাঁরা এত দিন তোয়াজ-তোষামোদ করে নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন, তাঁরা বিপদে পড়লে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নিবেদিতপ্রাণ কর্মী যাঁরা কিছু পাওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি, তাঁদের জীবনে এখন যে দুঃসহ সময় নেমে এসেছে, এটা মেনে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও দীর্ঘদিন রাজনীতিরই মানুষ ছিলাম। ব্যক্তিগত লাভালাভের জন্য তো আমি আমার জীবন রাজনীতিতে সমর্পণ করিনি।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের হাল ধরার জন্য শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমারও সামান্য ভূমিকা ছিল। এটা ঠিক, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব না নিলে দলটি হয়তো আবার ক্ষমতায় যাওয়ার মতো শক্তি অর্জন করতে পারত না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে নতুন উচ্চতায় নিয়েছেন, সেটাও অস্বীকার করা যাবে না। এখন হুজুগে মেতে শেখ হাসিনা যা করেছেন, সবই খারাপ—এমন ঢালাও মন্তব্য করাটা সমীচীন বলে আমি মনে করি না।
এটা ঠিক, ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে কৌশল ও আদর্শের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হয়েছে। বিশ্বরাজনীতির অ্যাজেন্ডার সঙ্গেও খাপ খাওয়াতে হয়েছে। মিত্র বাছাইয়েও শেখ হাসিনাকে অনেক হিসাবনিকাশ করতে হয়েছে। কখনো বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বিপরীত মত-পথের সঙ্গে কৌশলগত সমঝোতা করতে হয়েছে। এক পা এগোনোর জন্য দুই পা পেছানোর রাজনৈতিক কৌশল চর্চা করে শেখ হাসিনা এত দিন সুফল পেলেও শেষে এসে এই কৌশল বুমেরাং হয়ে গেল।
আমি আমার আগের একটি লেখায় লিখেছিলাম: সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকার তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান অভিযোগ অতিমাত্রায় প্রশাসননির্ভরতা। দল ও দলের নেতৃত্বের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসন ও আমলাদের ওপর সরকারের নির্ভরতা বেশি, যার ফলে দলের অনেক ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতাও দলের ভেতরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কোনো দেশের ক্ষমতাসীন দল যখন তার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অরাজনৈতিক শক্তির ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন জনগণের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। আর জনগণের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লে সেই রাজনৈতিক দল ভেতরে-ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ে। ভেতর থেকে দুর্বল হওয়া রাজনৈতিক দলে ভঙ্গুর পরিস্থিতি দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগ যে গত কয়েক বছরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, তার প্রমাণ তো সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, শেখ হাসিনা কি আর দেশে ফিরতে পারবেন? তিনি না ফিরলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কে দেবেন? শেখ পরিবারের কেউ কি দায়িত্ব নেবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্যও আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি বক্তব্য উল্লেখ করতে চাই। সজীব ওয়াজেদ জয় শেখ হাসিনার সরকারের অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ৭ আগস্ট এক ভিডিও বার্তায় জয় বলেন, আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয়। তিনি নেতা-কর্মীদের সাহস নিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আছি।’
এর আগে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর সজীব ওয়াজেদ বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে বলেছিলেন, তাঁর মা আর রাজনীতিতে আসছেন না। পরদিন ডয়চে ভেলেকে জানান, শেখ পরিবারের কারও রাজনীতিতে আসার কারণ নেই। অথচ সজীব ওয়াজেদ ৭ আগস্ট ভিডিও বার্তার শুরুতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এখন দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে। সারা দেশে ভাঙচুর, লুটপাট হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চলছে, হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরোনো এবং বড় গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগ কিন্তু মরে যায়নি। আওয়ামী লীগ এই দেশকে স্বাধীন করেছে। আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয়।’
শেখ হাসিনার পরিবার রাজনীতিতে আসবে না—আগে দেওয়া এই বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না। যদি গণতন্ত্রের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সবচেয়ে বড় দল। আওয়ামী লীগ কোথাও যাবে না। আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয়।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা সবাই সাহস নিয়ে দাঁড়ান, আমরা আছি। বঙ্গবন্ধুর পরিবার কোথাও যায়নি। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। দেশকে, আমাদের নেতা-কর্মীদের এবং আওয়ামী লীগকে রক্ষার জন্য যা প্রয়োজন, আমরা করতে প্রস্তুত।’
বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘এই যে আমাদের বর্তমানে যাঁরাই আছেন ক্ষমতায়, তাঁদের আমি বলব, আমরাও একটি গণতান্ত্রিক, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ দেশ চাই, জঙ্গিবাদমুক্ত। তার জন্য আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শুধু তারা যদি জঙ্গিবাদ, ভায়োলেন্স (সহিংসতা) বাদ দেন। শেখ হাসিনা মরে যাননি। আমরা কোথাও যাইনি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া গণতন্ত্র, নির্বাচন সম্ভব না।’
লেখাটি আজ শেষ করছি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ৭ আগস্ট ওই বাড়ি পরিদর্শন করতে গিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। আমি ছাত্রদের আন্দোলনকে অভিনন্দন জানাই। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা কোনোমতেই এক কথা নয়। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহানায়ক।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে অনেক অন্যায় কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু শেখ মুজিব তো কিছু করেননি। তিনি বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করেছেন। আজকের এই ধ্বংসযজ্ঞ ভবিষ্যৎ ইতিহাসে বাঙালি জাতির জন্য একটি কলঙ্ক হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন। তাঁর সম্মান যুগ যুগ অক্ষত থাকবে। যারা এই অপকর্ম করছে, তাদের বিচার একদিন হবেই হবে।’
আমিও মনে করি, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলে নতুন করে ইতিহাস দখলের চেষ্টা ভালো কিছু হওয়ার লক্ষণ নয়।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অভাবনীয় সব ঘটনা ঘটে গেল। গত শতকের ষাটের দশক থেকে সব গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবেই জড়িত আছি। এবারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে নানা কারণে অতীতের কোনো আন্দোলন তুলনীয় নয় বলে আমি মনে করি। তবে সবকিছু নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করার সময় এখন নয়। এখন অনেকেই আবেগে ভাসছেন। কেউ কেউ আবার আত্মরক্ষার জন্য এমন উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন যে সুস্থ মাথায় ভাবনা-চিন্তারও ফুরসত পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে। আবেগ কাটতেও সময় লাগবে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর যে ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে এসেছে, তা কীভাবে কাটবে বলা সহজ নয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন তথা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ যে সংকটের মধ্যে পড়েছিল, এবার শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দলের সংকট তার চেয়েও বেশি বলে আমি মনে করি। এখন এটা ভাবা খুব কঠিন যে আওয়ামী লীগ আবার ঘুরে দাঁড়াবে কীভাবে, কার হাত ধরে। শেখ হাসিনা টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে একদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেমন চমক দেখিয়েছেন, অন্যদিকে তেমনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কারণে শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীসহ ব্যাপক জনগণের কাছে তিনি স্বৈরশাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁকে যাঁরা এত দিন তোয়াজ-তোষামোদ করে নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন, তাঁরা বিপদে পড়লে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নিবেদিতপ্রাণ কর্মী যাঁরা কিছু পাওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি, তাঁদের জীবনে এখন যে দুঃসহ সময় নেমে এসেছে, এটা মেনে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও দীর্ঘদিন রাজনীতিরই মানুষ ছিলাম। ব্যক্তিগত লাভালাভের জন্য তো আমি আমার জীবন রাজনীতিতে সমর্পণ করিনি।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের হাল ধরার জন্য শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমারও সামান্য ভূমিকা ছিল। এটা ঠিক, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব না নিলে দলটি হয়তো আবার ক্ষমতায় যাওয়ার মতো শক্তি অর্জন করতে পারত না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে নতুন উচ্চতায় নিয়েছেন, সেটাও অস্বীকার করা যাবে না। এখন হুজুগে মেতে শেখ হাসিনা যা করেছেন, সবই খারাপ—এমন ঢালাও মন্তব্য করাটা সমীচীন বলে আমি মনে করি না।
এটা ঠিক, ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে কৌশল ও আদর্শের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হয়েছে। বিশ্বরাজনীতির অ্যাজেন্ডার সঙ্গেও খাপ খাওয়াতে হয়েছে। মিত্র বাছাইয়েও শেখ হাসিনাকে অনেক হিসাবনিকাশ করতে হয়েছে। কখনো বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বিপরীত মত-পথের সঙ্গে কৌশলগত সমঝোতা করতে হয়েছে। এক পা এগোনোর জন্য দুই পা পেছানোর রাজনৈতিক কৌশল চর্চা করে শেখ হাসিনা এত দিন সুফল পেলেও শেষে এসে এই কৌশল বুমেরাং হয়ে গেল।
আমি আমার আগের একটি লেখায় লিখেছিলাম: সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকার তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান অভিযোগ অতিমাত্রায় প্রশাসননির্ভরতা। দল ও দলের নেতৃত্বের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসন ও আমলাদের ওপর সরকারের নির্ভরতা বেশি, যার ফলে দলের অনেক ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতাও দলের ভেতরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কোনো দেশের ক্ষমতাসীন দল যখন তার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অরাজনৈতিক শক্তির ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন জনগণের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। আর জনগণের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লে সেই রাজনৈতিক দল ভেতরে-ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ে। ভেতর থেকে দুর্বল হওয়া রাজনৈতিক দলে ভঙ্গুর পরিস্থিতি দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগ যে গত কয়েক বছরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, তার প্রমাণ তো সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, শেখ হাসিনা কি আর দেশে ফিরতে পারবেন? তিনি না ফিরলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কে দেবেন? শেখ পরিবারের কেউ কি দায়িত্ব নেবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্যও আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি বক্তব্য উল্লেখ করতে চাই। সজীব ওয়াজেদ জয় শেখ হাসিনার সরকারের অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ৭ আগস্ট এক ভিডিও বার্তায় জয় বলেন, আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয়। তিনি নেতা-কর্মীদের সাহস নিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আছি।’
এর আগে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর সজীব ওয়াজেদ বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে বলেছিলেন, তাঁর মা আর রাজনীতিতে আসছেন না। পরদিন ডয়চে ভেলেকে জানান, শেখ পরিবারের কারও রাজনীতিতে আসার কারণ নেই। অথচ সজীব ওয়াজেদ ৭ আগস্ট ভিডিও বার্তার শুরুতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এখন দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে। সারা দেশে ভাঙচুর, লুটপাট হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চলছে, হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরোনো এবং বড় গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগ কিন্তু মরে যায়নি। আওয়ামী লীগ এই দেশকে স্বাধীন করেছে। আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয়।’
শেখ হাসিনার পরিবার রাজনীতিতে আসবে না—আগে দেওয়া এই বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না। যদি গণতন্ত্রের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সবচেয়ে বড় দল। আওয়ামী লীগ কোথাও যাবে না। আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয়।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা সবাই সাহস নিয়ে দাঁড়ান, আমরা আছি। বঙ্গবন্ধুর পরিবার কোথাও যায়নি। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। দেশকে, আমাদের নেতা-কর্মীদের এবং আওয়ামী লীগকে রক্ষার জন্য যা প্রয়োজন, আমরা করতে প্রস্তুত।’
বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘এই যে আমাদের বর্তমানে যাঁরাই আছেন ক্ষমতায়, তাঁদের আমি বলব, আমরাও একটি গণতান্ত্রিক, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ দেশ চাই, জঙ্গিবাদমুক্ত। তার জন্য আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শুধু তারা যদি জঙ্গিবাদ, ভায়োলেন্স (সহিংসতা) বাদ দেন। শেখ হাসিনা মরে যাননি। আমরা কোথাও যাইনি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া গণতন্ত্র, নির্বাচন সম্ভব না।’
লেখাটি আজ শেষ করছি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ৭ আগস্ট ওই বাড়ি পরিদর্শন করতে গিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। আমি ছাত্রদের আন্দোলনকে অভিনন্দন জানাই। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা কোনোমতেই এক কথা নয়। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহানায়ক।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে অনেক অন্যায় কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু শেখ মুজিব তো কিছু করেননি। তিনি বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করেছেন। আজকের এই ধ্বংসযজ্ঞ ভবিষ্যৎ ইতিহাসে বাঙালি জাতির জন্য একটি কলঙ্ক হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন। তাঁর সম্মান যুগ যুগ অক্ষত থাকবে। যারা এই অপকর্ম করছে, তাদের বিচার একদিন হবেই হবে।’
আমিও মনে করি, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলে নতুন করে ইতিহাস দখলের চেষ্টা ভালো কিছু হওয়ার লক্ষণ নয়।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে