হাসান মামুন
গেল শনিবার রাতে কাছেই এক কাঁচাবাজারে গিয়ে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে হলো ১৩০ টাকায়। অন্য দোকানে একটু কমে বিক্রি হচ্ছিল অবশ্য। সেটা নাকি ‘ভারত থেকে আসা’। আমদানি করা পণ্যের দাম কম হওয়ারই কথা। সংকট তীব্র হয়ে উঠলে আমরা তো আশা করেও থাকি, কবে সেটার আমদানি শুরু হবে। এই সময়ে কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়ার বড় কারণ অবশ্য অতিবৃষ্টি, বন্যা ও জলাবদ্ধতা। এতে কাঁচা মরিচসহ সবজির বেজায় ক্ষতি হচ্ছে। রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ। সময় ও ব্যয় বেশি লাগছে পণ্য পরিবহনে। বৃষ্টিবাদলে পচনশীল পণ্যের অপচয়ও বাড়ে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে দামে। শোনা যাচ্ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সড়ক ও নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধ। তা ইতিমধ্যে আবার শুরু হলো কি না, সেটাই বা কে বলবে! চাঁদাবাজি তো বন্ধ হয় না; চাঁদাবাজ বদলায় মাত্র।
এসবের পাশাপাশি এ সময়ে ভারত থেকে সবজি আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়। এ অবস্থায় ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আসার কথা যে দোকানি বলছিলেন, তিনি কি ঠিক বলেছেন? দোকানিরা অনেক সময় ভুলভাল বলে থাকেন। প্রতারণামূলক তথ্যও দেন। এই নিবন্ধ লেখার সময় রাজধানীতে কাঁচা মরিচের দাম কেমন, তা অবশ্য জানি না। দাম কমেও আসতে পারে। বৃষ্টিবাদলে এসব পণ্যের দাম দ্রুত ওঠানামা করে। বাজারে দেখলাম, ধনেপাতার দামও চড়া। এটাও কিন্তু আমদানি হয়ে থাকে সময়ে সময়ে। পূজার পর আমদানি শুরু হলে টমেটোর দামও কমে আসবে। এ সময় টমেটো না হলেও অবশ্য চলে। কিন্তু কাঁচা মরিচ আর ধনেপাতা ছাড়া চলে না। বিগত সরকারের আমলে একবার কাঁচা মরিচের কেজিপ্রতি দাম হাজার টাকা হয়ে গিয়েছিল। সেটা অবশ্য বেশি দিন স্থায়ী হয়নি আমদানির কারণেই। অনেক কমে এটা আনা গিয়েছিল ভারত থেকে। এবারও যাবে নিশ্চয়ই।
এই সময়ে সব সবজির দামই কিন্তু চড়া। চড়াই ছিল; হালে আরও বেড়েছে। সে জন্য নাকি অজুহাত দেওয়া হচ্ছে বৃষ্টি ও বন্যার। বৃষ্টি ও বন্যা তো ‘অজুহাত’ নয়। এসব কি হচ্ছে না দেশে? বিশাল অঞ্চলজুড়ে টানা ও ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এক দেশে হওয়া প্রবল বৃষ্টি আবার অন্য দেশে ঘটাচ্ছে বন্যা। দেশের এমন অঞ্চলেও এবার বন্যা হচ্ছে, যারা দীর্ঘদিন বন্যা দেখেনি। পূর্বাঞ্চলের ১২ জেলার বহু মানুষ ও তাদের অর্থনীতি বন্যায় ভেসে গেছে। এই মুহূর্তে ময়মনসিংহ বেল্টের একটা অঞ্চল ভেসে যাচ্ছে একই ধরনের বন্যায়। রাজধানীতে যারা হয়তো কিছুটা নিরাপদে আছি, তাদের বাজারে পণ্য সরবরাহও কিন্তু ব্যাহত হচ্ছে ওই সব অঞ্চলের বন্যায়। ঘন ঘন নিম্নচাপে সাগর উত্তাল থাকলে মাছ ধরা ব্যাহত হতে পারে আর তাতেও বাজারে মাছের সরবরাহ যেতে পারে কমে। একটি বিজনেস টিভির খবরে দেখছিলাম, সাতক্ষীরায় প্রবল বৃষ্টিতে মাছের খামার ভেসে যাওয়ায় এর আহরণ কমেছে। বানভাসি এলাকায়ও মাছ উৎপাদন কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি? ক্ষতি হয়নি গবাদিপশুর? পোলট্রির? পোলট্রির ক্ষতি মানে শুধু মুরগি নয়; ডিমের সরবরাহও কমে যাওয়া।
এই মুহূর্তে বড় দুঃসংবাদ ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া। বিগত সরকারের শেষ সময় থেকেই ডিমের বাজার অস্থিতিশীল বলে এটা আমদানিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে ডিম বেশি আসেনি। ইতিমধ্যে দাম কমে আসাটাও এর কারণ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও ডিমের একটি চালান এসেছে ভারত থেকে। কিন্তু পরিমাণে এত কম যে, তা রাজধানী অবধি পৌঁছায়নি। বিগত সরকারের সময় দেওয়া অনুমোদন বহাল এখনো। কেউ চাইলে ডিম আমদানি এখনো করতে পারে। ভারতে ডিমের দাম তো অনেক কম। তবে এতে উচ্চ শুল্ক এখনো বহাল। ডিমের শুল্ক না কমানোর কারণ হয়তো আছে। দেশীয় খামারিদের আপত্তি আছে আমদানিতে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাও তাদের সঙ্গে একমত। কিন্তু একমত হলেই তো হবে না; ডিমের দাম সহনীয় করে আনতে হবে। প্রোটিনের এই উৎসটাকে সহজলভ্যও রাখতে হবে।
দেশে নাকি রোজ প্রায় ৪ কোটি ডিম লাগে। ১৬-১৭ কোটি মানুষের দেশে ডিম পরিভোগ দেখা যাচ্ছে এখনো খুব কম। খেটে খাওয়া মানুষের সবারই ডিম খাওয়া প্রয়োজন রোজ। তারা তো গোমাংস কিনে খেতে পারে না। প্রোটিনের আরেক বড় উৎস ব্রয়লার মুরগি। ডিমের সঙ্গে এর দামও কিন্তু বেড়েছে। যেদিন বাজারে গিয়েছিলাম, দেখলাম এর কেজিপ্রতি দাম চাইছে ২১০ টাকা। দীর্ঘদিন নিম্ন পর্যায়ে স্থিতিশীল থাকার পর ব্রয়লারের দাম সেই যে বাড়তে শুরু করেছিল, তাতে যেন বিরতি নেই। ডিম ১৮০ আর ব্রয়লার ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়াটা কিন্তু উদ্বেগজনক। ব্রয়লারও কি আমদানি করতে হবে! কোনো পণ্যের দাম উদ্বেগজনক হয়ে গেলেই আমদানির সিদ্ধান্ত কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হতে পারে আত্মঘাতী। কম দামে আমদানি সম্ভব বলে ঢালাও আমদানি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়ে উঠতে পারে। এর প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থান শুধু নয়; পণ্যটির পরবর্তী সরবরাহে। ডিমের উৎপাদকেরা এটি জোর দিয়ে বলছেন। তাঁরা বলছেন এর উৎপাদন ব্যয় কমানোর কথা।
সে ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে পোলট্রি ফিডের দাম কমানোর ওপর। এর উপকরণে আমরা আবার আমদানিনির্ভর। এ ক্ষেত্রে ভারতই সুবিধাজনক উৎস। সেখান থেকে হালে আগের চেয়ে কম দামে পেঁয়াজ আনা যাচ্ছে। এর ওপর বিধিনিষেধ তারা শিথিল করেছে নিজ স্বার্থেই। তার সুবিধা পাচ্ছি আমরা। কিছু বিরল ব্যতিক্রম বাদে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কেউ স্বার্থ পরিহার করে চলে না। হালে আমরা যেমন ভারতে কিছু ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলাম দুর্গাপূজা ঘিরে, এটা ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। কেননা, ইলিশ রপ্তানির খবরেই দেশে এর দাম গেছে আরও বেড়ে। মাঝে একটি টিভি টক শোয় কথা হচ্ছিল একজন ইলিশ গবেষকের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ইলিশ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণায় থাকতে থাকতে একপর্যায়ে মনে প্রশ্ন জেগেছিল—কেন এ নিয়ে লেগে আছি? সাধারণ মানুষ তো ইলিশ খেতে পারছে না! বিবেকবান মানুষ মাত্রই এভাবে চিন্তা করবেন। প্রশ্ন তুলবেন, ইলিশ আহরণ ব্যয়ের সঙ্গে এর দামের যৌক্তিক সম্পর্ক আছে কি না।
সামনেই ইলিশ ধরা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই বাজারে এর দাম এখন আরও চড়া। কয়েক বছর আগেও যত গ্রাম ওজনের ইলিশ, মোটামুটি তত টাকা ছিল এর কেজিপ্রতি দাম। সেই ধারাও বাতিল হয়েছে দ্রুত। এ অবস্থায় ইলিশ বিষয়ে একটা তদন্ত হওয়া দরকার। বাজারে কিছুটা সস্তায় মিলত যেসব মাছ, সেগুলোর দামও কিন্তু বাড়ছে। খামারে উৎপাদিত মাছই লোকে বেশি কিনে থাকে। এই খাতে আমরা রেকর্ড করেছি বলেও দাবি করা হয়। এসব মাছের দামের ঊর্ধ্বগতিতে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতিফলন কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। বাজারে আমদানি হয়ে আসা মাছও কম নেই। কিছু সামুদ্রিক মাছও কিন্তু আমদানি হয়ে থাকে। এটা ভালো যে, আমরা সামুদ্রিক মাছে অভ্যস্ত হচ্ছি। অপেক্ষাকৃত সস্তা বলেও লোকে এই মাছ খাচ্ছে। যে জিনিস কিছুটা কমে মেলে, সেদিকেই ঝুঁকে পড়ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। দাম বাড়ার সঙ্গে তারা তো আয় বাড়াতে পারছে না। এটা বেদনাদায়ক।
দেশের প্রধান শিল্প খাত তৈরি পোশাকেও বেশ কিছু কারখানা ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না। সেই সব কারখানায় সৃষ্ট বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে পাশের কারখানায়। সেটা ঘিরে হচ্ছে মহাসড়ক অবরোধ। তাতেও কিন্তু বাজারে খাদ্যপণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। অর্থনীতির বিভিন্ন উপাদান এভাবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে আমাদের ভোগায়। পূর্বাঞ্চলের বন্যায়ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে বেশ কদিন। তাতে শঙ্কা জেগেছিল আমদানি-রপ্তানি গভীরভাবে ব্যাহত হওয়ার। অনেক জরুরি পণ্য তো আমরা আমদানি করি এ পথ দিয়েই। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যও রয়েছে। অনেক দিন ধরে আমরা অবশ্য চাল আমদানি করছি না। গত অর্থবছরে এটা করতেই হয়নি বলা চলে। তবে এবারের প্রলম্বিত বর্ষা ও বন্যায় আউশ আর আমনের ফলন ব্যাহত হয়ে খাদ্যনিরাপত্তা বিপন্ন হয় কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর চালের দামেও কিন্তু একটা ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত। এ ক্ষেত্রে সুখবরও মিলেছে সম্প্রতি। প্রধান চাল রপ্তানিকারক ভারত এর ওপর থেকে বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিয়েছে। আমরা এখন ওখান থেকে সহজে চাল আনতে পারব। এই লক্ষ্যে বিদ্যমান উচ্চ কর-শুল্ক কমানোর প্রক্রিয়াও চলমান। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি এড়াতে সরকারকেও চাল আমদানি করে এর মজুত সন্তোষজনক রাখতে হবে। সামনে প্রধান যে চাল উৎপাদন মৌসুম (অর্থাৎ বোরো) রয়েছে, তার জন্য সারের প্রস্তুতিও রাখতে হবে। আমদানির পাশাপাশি গ্যাস সরবরাহ করে সার কারখানাগুলো সচল রাখা যাবে তো? এমন কিছু জটিল প্রশ্ন কিন্তু সামনে রয়েছে।
লেখক: হাসান মামুন
সাংবাদিক, বিশ্লেষক
গেল শনিবার রাতে কাছেই এক কাঁচাবাজারে গিয়ে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে হলো ১৩০ টাকায়। অন্য দোকানে একটু কমে বিক্রি হচ্ছিল অবশ্য। সেটা নাকি ‘ভারত থেকে আসা’। আমদানি করা পণ্যের দাম কম হওয়ারই কথা। সংকট তীব্র হয়ে উঠলে আমরা তো আশা করেও থাকি, কবে সেটার আমদানি শুরু হবে। এই সময়ে কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়ার বড় কারণ অবশ্য অতিবৃষ্টি, বন্যা ও জলাবদ্ধতা। এতে কাঁচা মরিচসহ সবজির বেজায় ক্ষতি হচ্ছে। রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ। সময় ও ব্যয় বেশি লাগছে পণ্য পরিবহনে। বৃষ্টিবাদলে পচনশীল পণ্যের অপচয়ও বাড়ে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে দামে। শোনা যাচ্ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সড়ক ও নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধ। তা ইতিমধ্যে আবার শুরু হলো কি না, সেটাই বা কে বলবে! চাঁদাবাজি তো বন্ধ হয় না; চাঁদাবাজ বদলায় মাত্র।
এসবের পাশাপাশি এ সময়ে ভারত থেকে সবজি আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়। এ অবস্থায় ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আসার কথা যে দোকানি বলছিলেন, তিনি কি ঠিক বলেছেন? দোকানিরা অনেক সময় ভুলভাল বলে থাকেন। প্রতারণামূলক তথ্যও দেন। এই নিবন্ধ লেখার সময় রাজধানীতে কাঁচা মরিচের দাম কেমন, তা অবশ্য জানি না। দাম কমেও আসতে পারে। বৃষ্টিবাদলে এসব পণ্যের দাম দ্রুত ওঠানামা করে। বাজারে দেখলাম, ধনেপাতার দামও চড়া। এটাও কিন্তু আমদানি হয়ে থাকে সময়ে সময়ে। পূজার পর আমদানি শুরু হলে টমেটোর দামও কমে আসবে। এ সময় টমেটো না হলেও অবশ্য চলে। কিন্তু কাঁচা মরিচ আর ধনেপাতা ছাড়া চলে না। বিগত সরকারের আমলে একবার কাঁচা মরিচের কেজিপ্রতি দাম হাজার টাকা হয়ে গিয়েছিল। সেটা অবশ্য বেশি দিন স্থায়ী হয়নি আমদানির কারণেই। অনেক কমে এটা আনা গিয়েছিল ভারত থেকে। এবারও যাবে নিশ্চয়ই।
এই সময়ে সব সবজির দামই কিন্তু চড়া। চড়াই ছিল; হালে আরও বেড়েছে। সে জন্য নাকি অজুহাত দেওয়া হচ্ছে বৃষ্টি ও বন্যার। বৃষ্টি ও বন্যা তো ‘অজুহাত’ নয়। এসব কি হচ্ছে না দেশে? বিশাল অঞ্চলজুড়ে টানা ও ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এক দেশে হওয়া প্রবল বৃষ্টি আবার অন্য দেশে ঘটাচ্ছে বন্যা। দেশের এমন অঞ্চলেও এবার বন্যা হচ্ছে, যারা দীর্ঘদিন বন্যা দেখেনি। পূর্বাঞ্চলের ১২ জেলার বহু মানুষ ও তাদের অর্থনীতি বন্যায় ভেসে গেছে। এই মুহূর্তে ময়মনসিংহ বেল্টের একটা অঞ্চল ভেসে যাচ্ছে একই ধরনের বন্যায়। রাজধানীতে যারা হয়তো কিছুটা নিরাপদে আছি, তাদের বাজারে পণ্য সরবরাহও কিন্তু ব্যাহত হচ্ছে ওই সব অঞ্চলের বন্যায়। ঘন ঘন নিম্নচাপে সাগর উত্তাল থাকলে মাছ ধরা ব্যাহত হতে পারে আর তাতেও বাজারে মাছের সরবরাহ যেতে পারে কমে। একটি বিজনেস টিভির খবরে দেখছিলাম, সাতক্ষীরায় প্রবল বৃষ্টিতে মাছের খামার ভেসে যাওয়ায় এর আহরণ কমেছে। বানভাসি এলাকায়ও মাছ উৎপাদন কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি? ক্ষতি হয়নি গবাদিপশুর? পোলট্রির? পোলট্রির ক্ষতি মানে শুধু মুরগি নয়; ডিমের সরবরাহও কমে যাওয়া।
এই মুহূর্তে বড় দুঃসংবাদ ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া। বিগত সরকারের শেষ সময় থেকেই ডিমের বাজার অস্থিতিশীল বলে এটা আমদানিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে ডিম বেশি আসেনি। ইতিমধ্যে দাম কমে আসাটাও এর কারণ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও ডিমের একটি চালান এসেছে ভারত থেকে। কিন্তু পরিমাণে এত কম যে, তা রাজধানী অবধি পৌঁছায়নি। বিগত সরকারের সময় দেওয়া অনুমোদন বহাল এখনো। কেউ চাইলে ডিম আমদানি এখনো করতে পারে। ভারতে ডিমের দাম তো অনেক কম। তবে এতে উচ্চ শুল্ক এখনো বহাল। ডিমের শুল্ক না কমানোর কারণ হয়তো আছে। দেশীয় খামারিদের আপত্তি আছে আমদানিতে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাও তাদের সঙ্গে একমত। কিন্তু একমত হলেই তো হবে না; ডিমের দাম সহনীয় করে আনতে হবে। প্রোটিনের এই উৎসটাকে সহজলভ্যও রাখতে হবে।
দেশে নাকি রোজ প্রায় ৪ কোটি ডিম লাগে। ১৬-১৭ কোটি মানুষের দেশে ডিম পরিভোগ দেখা যাচ্ছে এখনো খুব কম। খেটে খাওয়া মানুষের সবারই ডিম খাওয়া প্রয়োজন রোজ। তারা তো গোমাংস কিনে খেতে পারে না। প্রোটিনের আরেক বড় উৎস ব্রয়লার মুরগি। ডিমের সঙ্গে এর দামও কিন্তু বেড়েছে। যেদিন বাজারে গিয়েছিলাম, দেখলাম এর কেজিপ্রতি দাম চাইছে ২১০ টাকা। দীর্ঘদিন নিম্ন পর্যায়ে স্থিতিশীল থাকার পর ব্রয়লারের দাম সেই যে বাড়তে শুরু করেছিল, তাতে যেন বিরতি নেই। ডিম ১৮০ আর ব্রয়লার ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়াটা কিন্তু উদ্বেগজনক। ব্রয়লারও কি আমদানি করতে হবে! কোনো পণ্যের দাম উদ্বেগজনক হয়ে গেলেই আমদানির সিদ্ধান্ত কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হতে পারে আত্মঘাতী। কম দামে আমদানি সম্ভব বলে ঢালাও আমদানি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়ে উঠতে পারে। এর প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থান শুধু নয়; পণ্যটির পরবর্তী সরবরাহে। ডিমের উৎপাদকেরা এটি জোর দিয়ে বলছেন। তাঁরা বলছেন এর উৎপাদন ব্যয় কমানোর কথা।
সে ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে পোলট্রি ফিডের দাম কমানোর ওপর। এর উপকরণে আমরা আবার আমদানিনির্ভর। এ ক্ষেত্রে ভারতই সুবিধাজনক উৎস। সেখান থেকে হালে আগের চেয়ে কম দামে পেঁয়াজ আনা যাচ্ছে। এর ওপর বিধিনিষেধ তারা শিথিল করেছে নিজ স্বার্থেই। তার সুবিধা পাচ্ছি আমরা। কিছু বিরল ব্যতিক্রম বাদে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কেউ স্বার্থ পরিহার করে চলে না। হালে আমরা যেমন ভারতে কিছু ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলাম দুর্গাপূজা ঘিরে, এটা ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। কেননা, ইলিশ রপ্তানির খবরেই দেশে এর দাম গেছে আরও বেড়ে। মাঝে একটি টিভি টক শোয় কথা হচ্ছিল একজন ইলিশ গবেষকের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ইলিশ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণায় থাকতে থাকতে একপর্যায়ে মনে প্রশ্ন জেগেছিল—কেন এ নিয়ে লেগে আছি? সাধারণ মানুষ তো ইলিশ খেতে পারছে না! বিবেকবান মানুষ মাত্রই এভাবে চিন্তা করবেন। প্রশ্ন তুলবেন, ইলিশ আহরণ ব্যয়ের সঙ্গে এর দামের যৌক্তিক সম্পর্ক আছে কি না।
সামনেই ইলিশ ধরা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই বাজারে এর দাম এখন আরও চড়া। কয়েক বছর আগেও যত গ্রাম ওজনের ইলিশ, মোটামুটি তত টাকা ছিল এর কেজিপ্রতি দাম। সেই ধারাও বাতিল হয়েছে দ্রুত। এ অবস্থায় ইলিশ বিষয়ে একটা তদন্ত হওয়া দরকার। বাজারে কিছুটা সস্তায় মিলত যেসব মাছ, সেগুলোর দামও কিন্তু বাড়ছে। খামারে উৎপাদিত মাছই লোকে বেশি কিনে থাকে। এই খাতে আমরা রেকর্ড করেছি বলেও দাবি করা হয়। এসব মাছের দামের ঊর্ধ্বগতিতে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতিফলন কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। বাজারে আমদানি হয়ে আসা মাছও কম নেই। কিছু সামুদ্রিক মাছও কিন্তু আমদানি হয়ে থাকে। এটা ভালো যে, আমরা সামুদ্রিক মাছে অভ্যস্ত হচ্ছি। অপেক্ষাকৃত সস্তা বলেও লোকে এই মাছ খাচ্ছে। যে জিনিস কিছুটা কমে মেলে, সেদিকেই ঝুঁকে পড়ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। দাম বাড়ার সঙ্গে তারা তো আয় বাড়াতে পারছে না। এটা বেদনাদায়ক।
দেশের প্রধান শিল্প খাত তৈরি পোশাকেও বেশ কিছু কারখানা ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না। সেই সব কারখানায় সৃষ্ট বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে পাশের কারখানায়। সেটা ঘিরে হচ্ছে মহাসড়ক অবরোধ। তাতেও কিন্তু বাজারে খাদ্যপণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। অর্থনীতির বিভিন্ন উপাদান এভাবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে আমাদের ভোগায়। পূর্বাঞ্চলের বন্যায়ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে বেশ কদিন। তাতে শঙ্কা জেগেছিল আমদানি-রপ্তানি গভীরভাবে ব্যাহত হওয়ার। অনেক জরুরি পণ্য তো আমরা আমদানি করি এ পথ দিয়েই। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যও রয়েছে। অনেক দিন ধরে আমরা অবশ্য চাল আমদানি করছি না। গত অর্থবছরে এটা করতেই হয়নি বলা চলে। তবে এবারের প্রলম্বিত বর্ষা ও বন্যায় আউশ আর আমনের ফলন ব্যাহত হয়ে খাদ্যনিরাপত্তা বিপন্ন হয় কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর চালের দামেও কিন্তু একটা ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত। এ ক্ষেত্রে সুখবরও মিলেছে সম্প্রতি। প্রধান চাল রপ্তানিকারক ভারত এর ওপর থেকে বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিয়েছে। আমরা এখন ওখান থেকে সহজে চাল আনতে পারব। এই লক্ষ্যে বিদ্যমান উচ্চ কর-শুল্ক কমানোর প্রক্রিয়াও চলমান। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি এড়াতে সরকারকেও চাল আমদানি করে এর মজুত সন্তোষজনক রাখতে হবে। সামনে প্রধান যে চাল উৎপাদন মৌসুম (অর্থাৎ বোরো) রয়েছে, তার জন্য সারের প্রস্তুতিও রাখতে হবে। আমদানির পাশাপাশি গ্যাস সরবরাহ করে সার কারখানাগুলো সচল রাখা যাবে তো? এমন কিছু জটিল প্রশ্ন কিন্তু সামনে রয়েছে।
লেখক: হাসান মামুন
সাংবাদিক, বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে