টানা তিন দিনের বৃষ্টির সবজিখেতে পানি জমেছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে খুলনার কাঁচাবাজারে। বেড়েছে পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, বেগুন, বরবটি, বাঁধাকপি, কাঁচা মরিচ ও বাঁধাকপিসহ অধিকাংশ সবজির দাম। বিক্রেতারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে সবজিখেতে পানি জমেছে। ফলে খুলনার বাজারে পেঁয়াজ ও সবজি আসছে কম। এ কারণেই দাম বেড়ে গেছে। এদিকে হঠাৎ করে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী।

সব থেকে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। কেজিতে বেড়েছে ২৫ টাকা। গতকাল শুক্রবার খুলনার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। অথচ গত সপ্তাহের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার কেসিসি কাঁচাবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক আব্দুল মালেক বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বড় মোকামে পুরোনো পেঁয়াজের সরবরাহ কম। যা আছে, তা বেশি দাম দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে দেশি পুরোনো পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

একই বাজারের জাকারিয়া ভান্ডারের মালিক চান মিয়া বলেন, প্রতিদিন এ বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে ৫০০ বস্তা। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে এ বাজারে পেঁয়াজ আসছে মাত্র ৮০-৮৫ বস্তা করে। সরবরাহ সংকট থাকায় দাম বেড়েছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এখনো আসেনি। নতুন পেঁয়াজ এলে বাজার স্থিতিশীল হবে।

এদিকে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে টিসিবি শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন রূপসা, খালিশপুর, দৌলতপুর ও ফুলবাড়ি গেট এলাকায় ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। টিসিবি প্রতিটি পয়েন্টে প্রতিদিন ৪০০ কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

শুধু পেঁয়াজ নয়, বেড়েছে অন্যান্য সবজির দামও। গতকাল খুলনার বাজারে কেজি প্রতি বাঁধাকপি ৩০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, এক আঁটি লালশাক ৩০ টাকা করে কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ গত সপ্তাহে প্রতি কেজি বাঁধাকপি ২৫ টাকা, আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, টমেটো ৭০ টাকা, বেগুন ৩৫ টাকা, বরবটি ৩৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ টাকা ও এক আঁটি লালশাক ২৫ টাকায় বিক্রি হয়।

বাজার করতে আসা শামিম হাসান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বৃষ্টির পর থেকেই বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতে এসে তিন কেজি নিয়ে যাচ্ছি। দোকানদারেরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট তাই দাম এত বেড়েছে।’

ঈষাণ খাঁ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘সকাল সকাল সবজি নিতে এসেছি। বাজারে এসে দেখি, প্রায় সব সবজির দাম কিছু না কিছু বেড়েছে। এমন চলতে থাকলে আমাদের মতো নিম্নবিত্তের মানুষদের বাজার করে খাওয়া কষ্ট হয়ে যাবে।’

সবজির দাম বাড়ার বিষয়ে জেলা বাজার কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার বলেন, ‘গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে সবজিখেত ডুবে গেছে। এতে অনেক জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। এ কারণে সবকিছুর দামই একটু বেড়েছে।’

এদিকে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি বৃষ্টিতে খুলনার শস্যভান্ডার খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলার ৮ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। কিছু জমিতে পানি জমে আছে। যে কারণে উঠতি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে এই অঞ্চলের কৃষি পণ্যর ওপর। দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে যে সব জমিতে পানি জমে আছে তা দ্রুত সরানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে সবজি গাছ মরে না যায়। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে দাম কমে যাবে।’

অপরদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জেলায় সব মিলিয়ে ১২ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তবে কৃষকেরা যাতে দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে সবজি চাষ করতে পারেন সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’