কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের ফ্রিজ এক বছরের বেশি সময় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ছাত্রীরা। বাধ্য হয়ে তাঁদের দৈনিক ৫ টাকা এবং মাসিক ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে হলের পাশের দোকানগুলোর ফ্রিজে কাঁচা মাছ-গোশত, তরকারি রাখতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রীদের একমাত্র আবাসিক হল নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে খাবারের জন্য কোনো কেন্দ্রীয় ডাইনিং ব্যবস্থা নেই। এতে সব হলের শিক্ষার্থীদেরই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ জন্য ছাত্রীরা হলে মেস ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজেদের তত্ত্বাবধানে খাবার রান্নার ব্যবস্থা করেন। আবার অনেকে ব্যক্তিগতভাবে রান্না করে খান। এসব শিক্ষার্থী কাঁচা শাকসবজি দিনেরটা দিনে কেনার চেষ্টা করেন। কিন্তু মাছ-গোশতের মতো অন্যান্য জিনিস সপ্তাহের জন্য একসঙ্গে কিনে রাখেন। এসব আগে হলটির ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হতো। বর্তমানে তাঁরা বাধ্য হয়ে ভাড়া দিয়ে দোকানের ফ্রিজে মাছ-গোশতসহ অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য রাখছেন।

জানা গেছে, এই হলে ২০০ থেকে ২৫০ জন শিক্ষার্থী থাকেন। তাঁদের মধ্যে চলতি মাসে ছাত্রীদের পরিচালিত মেসে ৪০ জন খাচ্ছেন, আর বাকিরা নিজেরাই রান্না করে খাবার খান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, ‘হলে আমরা যাঁরা থাকি, তাঁদের খাবার নিয়ে এমনিতেই কষ্ট করতে হয়। এর মধ্যে হলের ফ্রিজ অনেক দিন ধরে নষ্ট। এতে আমাদের কাঁচা মাছ-গোশত বাইরের দোকানে রাখতে হচ্ছে। এ জন্য বাড়তি একটি খরচ যোগ হয়েছে। এ ব্যাপারে হল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্রী বলেন, ‘একটা ফ্রিজ ঠিক করতে এত দিন কেন লাগছে, সেটা বোধগম্য নয়। কিছু বলতে গেলেই শুধু নিয়ম আর নিয়ম! হলের ফ্রিজ নষ্ট থাকায় আমরা একবার বাইরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে মাছ-গোশত আনি, আবার রুমে এসে সেগুলো রান্না করি। পড়ালেখার পাশাপাশি রান্নাবান্না করা কঠিন, সেটা আরও কঠিন বানিয়ে দিয়েছে ফ্রিজ নষ্ট হয়ে। এই কষ্ট থেকে বাঁচতে অনেকে শুধু শাকসবজি, ডিম রান্না করে খাচ্ছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় হল-সংলগ্ন মুদিদোকানি ইমতিয়াজ বলেন, ‘হলের ছাত্রীদের ফ্রিজ নষ্ট। তাঁরা আমার এখানে মাছ-গোশত রাখেন। প্রথম দিকে কোনো টাকাপয়সা না নিলেও দীর্ঘদিন ধরে রাখার ফলে আমার ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে। তাই চার্জ যোগ করে দিয়েছি। এখন দৈনিক ৫ টাকা দিয়ে কিংবা মাসিক ১০০ টাকা দিয়ে ফ্রিজে জিনিসপত্র রাখছেন তাঁরা।’

এ ব্যাপারে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। ব্যক্তিগতভাবে মেকানিক এনে দেখিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, নতুন ফ্রিজ লাগবে। এরপর হলের ফ্রিজের চাহিদার ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।’

অফিস সরঞ্জামাদি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয় কমিটির সদস্যসচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সবুজ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা ফ্রিজের চাহিদার ব্যাপারটি জেনেছি। ছাত্রীদের হল মিলিয়ে মোট তিনটি ফ্রিজ কেনার চাহিদা পেয়েছি। শিগগিরই ফ্রিজ দেওয়া হবে।’