গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ছাত্র নেতা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার।
আজকের পত্রিকা: নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন। আপনি একজন রাজনীতির মানুষ। ইদানীং বলা হয়, রাজনীতি আর রাজনীতিবিদের হাতে নেই। অথচ রাজনীতিবিদ হিসেবেই আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এটাতে কি আপনি নতুন চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন?
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী:
রাজনীতি তো রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। আমার মনে হয়, আমাদের বর্তমান যে কেবিনেট, এখানে রাজনীতিবিদদের প্রাধান্যই আছে। আর যেকোনো দায়িত্বই চ্যালেঞ্জিং। শুধু রাজনীতিবিদদের জন্য নয়, যেকোনো লোকই মন্ত্রিসভায় আসুক না কেন তার জন্য একটা মন্ত্রিসভার কাজ সব সময় চ্যালেঞ্জিং। মন্ত্রিসভার কাজ তো কোনো একমুখী কাজ না, বহুমুখী। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি মন্ত্রীদের সঙ্গে জড়িত, সম্পর্কযুক্ত। মানুষের ভালো-মন্দ মন্ত্রীদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।
যেখানে মানুষের কাজ আছে, সেখানে সবকিছুতেই চ্যালেঞ্জ থাকে। মানুষের কাজ চ্যালেঞ্জ ছাড়া হয় না। যেমন দ্রব্যমূল্য বেশি থাকলে এর চাপে মানুষের ওপর অনেক সময় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দ্রব্যমূল্য সহনশীল বা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সুতরাং, আমি মনে করি সরকারের সব কাজই চ্যালেঞ্জিং। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি।
আজকের পত্রিকা: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের সমালোচনা আছে। মন্ত্রণালয়ের কাজ নিয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তার তদন্ত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আমরা আপনার থেকে কতটুকু নিশ্চিত থাকতে পারি?
মোকতাদির চৌধুরী: আপনি শতভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন। কোনো গুরুতর অভিযোগ আমার সামনে দিয়ে বিনা তদন্তে বা বিনা অ্যাটেনশনে যাবে না। অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিযোগ সব সময় যে সঠিকভাবে উত্থাপিত হয়, তা-ও কিন্তু নয়। অভিযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থেরও ব্যাপার থাকে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, অনেক সময় ব্যক্তিস্বার্থ ক্ষুণ্ন হলেও আমরা অভিযোগ করে থাকি। তবে এটা ঠিক যে আমার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা আছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে।
এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। চেষ্টা থাকবে, অভিযোগের মাত্রা যাতে শূন্যের দিকে নিয়ে আসতে পারি। নতুন অভিযোগ যাতে আর উত্থাপিত না হয়। এ জন্য আমি একটা বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছি সেটা হলো, একজন অফিসার যে কাজই করুক, তা আইনানুগভাবে করতে হবে। প্রচলিত আইন মেনে কাজ করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়ে আপনি কতটুকু মনোযোগ দেবেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আমি মনে করি, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও নগরায়ণ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সমস্যা অন্য জায়গায়। আমরা যখন নিজেদের কাজগুলো করি, তখন প্রায়ই অন্যের সমস্যার কথা, দেশের কথা ভাবি না। অনেক সময় পড়শির কথাও ভাবা হয় না। পড়শি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, এটা দেখার সময় আমাদের নেই।
একজন বড় সেনাকর্মকর্তা একসময় বিশাল বড় দায়িত্বে ছিলেন। দেশের নীতি-দুর্নীতি নিয়ে কাজ করতেন। শোনা যায়, তিনি যখন তাঁর ভবন তৈরি করেন, তখন ভবন নির্মাণের যে সাধারণ নির্মাণকৌশল আছে, সেটাও তিনি ভঙ্গ করেছেন। আমার হয়তো যে পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা, আমি তা ছাড়ছি না। অন্যের অসুবিধা করেও আমি আমার নিজের সুবিধার পক্ষে দাঁড়াই।
এসব বিষয়ে জনগণের ভেতরেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা ছাড়া রাজউক বা অন্যান্য সিটি করপোরেশনের পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে তারা সঠিক কাজটা করতে পারে না। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে এর উন্নতি হবে। তবে রাতারাতি কোনো অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। একটু অপেক্ষা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: এই সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে?
মোকতাদির চৌধুরী: এ জন্য আমরা ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাব এবং কর্মকর্তাদের বলব যে আপনি যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটান, তাহলে আপনি যে-ই হোন না কেন আপনাকে আমরা ধরব। আপনাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আগে একটা সময় ছিল যখন তথাকথিত প্রভাবশালীরা বিভিন্ন রকমের বেআইনি সুযোগ নিত বা পেত। কিন্তু এখন সেটা হবে না। আমি মনে করি, সরকারই সবচেয়ে বড় প্রভাবশালী। কাউকে কোনো বেআইনি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না।
আজকের পত্রিকা: অনেক দেশেই দেখা যায়, নতুন মন্ত্রীরা অগ্রাধিকার পরিকল্পনা করেন, আপনি কি এ রকম কিছু করেছেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আমার অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় অনেক বিষয় আছে। এক নম্বর বিষয় হচ্ছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইন মেনে চলতে হবে। ৯টায় অফিস হলে ৮টা ৫৯ মিনিটে ঢুকতে হবে। ৯টার অফিস মানে ৯টা ১৫ বা ৯টা ৫ মিনিট নয়। এই দায়িত্ববোধটা থাকতে হবে। দুই নম্বর যেটা আমি বলেছি, আমাদের পুরো দেশই অপরিকল্পনার ভেতর দিয়ে চলছে। এটাকে পরিকল্পার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
আমি বলেছি, শুধু ঢাকা শহর ঘিরে আমাদের যে চেষ্টা বা ফোকাস, এটা না করে আমরা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যাব। সেখানে আমরা দেখব যাতে কৃষিজমির অপব্যবহার না হয় বা কমে না যায়। গ্রামের অবকাঠামো যাতে পরিকল্পনায় আনা যায়, সেই লক্ষ্যে আমি ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভার একজন সিনিয়র সহকর্মীকে অনুরোধ করেছি একটা মিটিং করার জন্য, যেখানে কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং অন্য যারা গ্রাম্য উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে, সবাই মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে সবক্ষেত্রেই যাতে তা মানা হয়, সেটির ওপর নজরদারি করতে হবে।
তৃতীয়ত, চেষ্টা করব প্রভাবশালীদের প্রভাব উপেক্ষা করার। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, কিছুদিন আগে জানতে পারি, কোনো একটি বড় জনকল্যাণমূলক সংস্থার জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই জমি হঠাৎ করে আরেকজন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই সংস্থাকে ছোট জমি দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি, না, সেটা হবে না। প্রভাবশালী সেই ব্যক্তিও হয়তো ভালো কাজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু একজন ব্যক্তি ও একটি সংস্থা যে কাজ করবে তার মধ্যে পার্থক্য আছে। ব্যক্তি নিজের আর সংস্থা সমাজের কল্যাণে কাজ করবে, তাই সংস্থাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: এবারের সংসদে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন মতের বা ভিন্ন চিন্তার উপস্থিতি একেবারেই নেই। এটাকে কি আপনি গণতন্ত্রের জন্য খুব ভালো মনে করেন?
মোকতাদির চৌধুরী: এটাকে তো কখনোই গণতন্ত্রের জন্য ভালো মনে করি না; তবে বর্তমান সরকার স্বতন্ত্রদের একটা সেপারেট এনটিটি বজায় রেখে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। তাঁদের কোনো দলে যুক্ত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। আমাদের দল থেকেও অনেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন, তাঁদেরও স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করতেই বলা হচ্ছে। ৬২ জন সদস্য স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করলে কিছু কিছু ভিন্ন কথা তো আসবেই। আর জাতীয় পার্টি যেটা আছে, যদিও তারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেই থাকে। এটা তাদের একটা চরিত্র। তারপরও তারা বলেছে যে এবার তারা সত্যিকার বিরোধী ভূমিকা পালন করবে।
গত সংসদে যাঁরা জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি করেছেন, তাঁরা কিন্তু সংসদে কথা বলতে পারতেন অথচ তাঁরা বলেননি। আমার মনে হয়, তাঁরা যদি তাঁদের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করেন, তাহলে কাজ হবে। এটা তো ঠিক, সার্বিকভাবে বিরোধী উচ্চারণ যত কম হবে, গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে আমরা তত অসুবিধায় পড়ব। আমার আস্থা আছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি শুধু যে পার্লামেন্টের ভয়েসই শুনবেন তা নয়, রাস্তাতেও যদি সঠিক ভয়েস উঠে আসে, গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়েস উঠে আসে, তাহলেও তিনি তা শুনবেন।
বিএনপি যদি নির্বাচনে আসত, আমি মনে করি সেটা বেশি ভালো হতো। কিন্তু বিএনপিকে ক্ষমতার নিশ্চয়তা দিয়ে নির্বাচনে আনা তো সম্ভব নয়। এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। এমনও তো হতে পারত তারা যদি নির্বাচনে অংশ নিত, মেজরিটি পেয়েও যেতে পারত। কিন্তু তারা সেই পথে এগোতে চায়নি। তা ছাড়া বিএনপি তাদের সময়ে কখনোই গণতন্ত্রের চর্চাকে সমর্থন করেনি।
সবচেয়ে ন্যক্কারজনক হলো বিএনপির আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে বিএনপি সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে প্রাতিষ্ঠানিক করে ফেলেছিল। সাম্প্রদায়িকতা এখনো আছে। আমাদের সময়েও সাম্প্রদায়িক শক্তি নিশ্চুপ বা নিষ্ক্রিয় ছিল বা আছে তা নয়। তারা অনেক সময়, অনেকভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিতে চেয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করি।
আজকের পত্রিকা: অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেও এখন সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আমি বলব, কথাটা সঠিক নয়। আমাদের দলীয় নীতির দিক থেকে যদি বলেন সাম্প্রদায়িকতার স্থান এখানে কখনোই ছিল না, এখনো নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। কিন্তু ব্যক্তিমানুষ হিসেবে অনেকের ভেতরে সাম্প্রদায়িকতা আছে। নেই এ কথা বলব না। কারও কারও মন ও মস্তিষ্কে সাম্প্রদায়িকতা থাকার কারণে আমরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ কখনোই সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয়নি। ভবিষ্যতেও দেবে না। শুধু তা-ই নয়, নীতিগতভাবে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করে এবং এটা তার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে নিয়েছে।
তবে এটাও ঠিক যে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী একেবারে মরে যায়নি, তারা আছে। যেমন ধরেন বাংলাদেশে আমার খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখি যে আমরা অনেক চেষ্টা করেও যারা জাতীয় সংগীত গায় না, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না। এটা নেওয়া উচিত অথবা যারা জাতীয় সংগীত গায় না, তারা যাতে জাতীয় সংগীত গায়, সে ব্যাপারে তাদের অনুপ্রাণিত করা উচিত। যদি অনুপ্রাণিত বিষয়টা থাকে তাহলেও আমরা অনেক দিক দিয়ে এগোতে পারব। আমি মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি যারা গায় না আরকি, তাদের যদি আমরা ঠিকমতো মোটিভেট করতে পারি, তাহলে গাইবে। আমি অনেক মাদ্রাসাছাত্রদের দেখছি তারা ব্যান্ড করে, মিউজিক করে। তারা আগে করত না কিন্তু এখন তারা করে।
সুতরাং পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সাধারণ মানুষদেরও এগিয়ে যেতে হবে। যেমন ধরেন মঙ্গল শোভাযাত্রা এটা এখন কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যত বেশি উজ্জীবিত করতে পারব, তত বেশি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলা করতে পারব। আমরা একটা মাল্টি ক্লাস অর্গানাইজেশন, আমরা কখনোই ক্লাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ছিলাম না। আমাদের এখানে সব ধরনের লোকই আসে। এখন তো আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতির ভেতরে আছি, এখান থেকে আপনাকে একেবারে কট্টরপন্থী বা ক্যাডারবেসড অর্গানাইজেশন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আমরা ছিলামও না, সম্ভবও না। সুতরাং আমাকে এখানে যা করতে হবে সেটা হলো, অসাম্প্রদায়িক যে কালচারাল হেরিটেজ আছে, এটাকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আমরা শেষ করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারপ্রধান হয়েছেন। তাঁর সময়ে দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। আবার এটাও দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে প্রতিবছর কোটিপতির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, আবার নিঃস্ব মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে এই বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা পালন করবে বলে আপনি মনে করেন?
মোকতাদির চৌধুরী: বৈষম্য একেবারে দূর করা যাবে কি না, আমি জানি না। তা ছাড়া বাজারব্যবস্থায়, বাজারভিত্তিক অর্থনীতিতে স্লোগান দিয়ে বৈষম্য দূর করা যাবে না। বৈষম্য বন্ধ করার শর্টকাট পথও নেই। কিন্তু যারা নিম্নপর্যায়ে আছে, তাদের উঠিয়ে আনার কিছু সুযোগ আছে। সেটা যদি আমরা করতে পারি এবং তাদের যদি সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারি, তাহলে তারা নিজেরাই এই বাজার অর্থনীতির ভেতরে ঢুকে ওপরে আসতে পারবে। যেমন আমরা গৃহহীনদের ঘর দিয়ে দিচ্ছি, আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ করছি। এভাবে আমরা ভিত্তিটাকে তৈরি করে দিচ্ছি। আর একেবারেই যারা চলতে-ফিরতে পারে না, তাদের নানান ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন আমরা প্রচুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। শিক্ষাকে সহজলভ্য করে দিয়েছি। একেবারে প্রান্তিক পর্যায়েও শিক্ষা সহজলভ্য। হাওর এলাকায়ও এখন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে উঠছে।
হাওর এলাকার জন্য আলাদাভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেসব এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি, তাদের উন্নতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হয়তো বিশাল আকারে বৈষম্য নিরসন করতে পারব না, তবে নিচের দিকের যে মানুষগুলো তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারব। এটাও একটা বিরাট ব্যাপার।
আমি মনে করি, বৈষম্য কখনো পুরোপুরি দূর করা যাবে না। তবে এর মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। এখন সব জায়গায় ইন্টারনেট চলে গেছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ইন্টারনেট নেই। আপনি বোধ হয় কিছুদিন আগে দেখেছেন প্রথম আলোয় একটা রিপোর্ট ছিল যে গারো পাহাড়ের এদিকে, ওই পুরো একটা গ্রামে স্বাচ্ছন্দ্য চলে আসছে। পুরো গ্রামের অধিবাসী ফ্রিল্যান্সিং করে তারা ভালো আছে। ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য গত একনেক বৈঠকে আমরা টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।
আপনারা দেখতে পাবেন মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনটাকে কাজে লাগালে বৈষম্য কমে আসবে। এখন অলস লোকের তো পৃথিবীতে কোনো স্থান নেই। সুতরাং সব সময় কর্মে নিয়োজিত থাকতে হবে এবং সক্রিয় থাকতে হবে। তাহলেই হবে ইনশা আল্লাহ।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মোকতাদির চৌধুরী: আপনাদেরও ধন্যবাদ!
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ছাত্র নেতা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার।
আজকের পত্রিকা: নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন। আপনি একজন রাজনীতির মানুষ। ইদানীং বলা হয়, রাজনীতি আর রাজনীতিবিদের হাতে নেই। অথচ রাজনীতিবিদ হিসেবেই আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এটাতে কি আপনি নতুন চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন?
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী:
রাজনীতি তো রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। আমার মনে হয়, আমাদের বর্তমান যে কেবিনেট, এখানে রাজনীতিবিদদের প্রাধান্যই আছে। আর যেকোনো দায়িত্বই চ্যালেঞ্জিং। শুধু রাজনীতিবিদদের জন্য নয়, যেকোনো লোকই মন্ত্রিসভায় আসুক না কেন তার জন্য একটা মন্ত্রিসভার কাজ সব সময় চ্যালেঞ্জিং। মন্ত্রিসভার কাজ তো কোনো একমুখী কাজ না, বহুমুখী। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি মন্ত্রীদের সঙ্গে জড়িত, সম্পর্কযুক্ত। মানুষের ভালো-মন্দ মন্ত্রীদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।
যেখানে মানুষের কাজ আছে, সেখানে সবকিছুতেই চ্যালেঞ্জ থাকে। মানুষের কাজ চ্যালেঞ্জ ছাড়া হয় না। যেমন দ্রব্যমূল্য বেশি থাকলে এর চাপে মানুষের ওপর অনেক সময় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দ্রব্যমূল্য সহনশীল বা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সুতরাং, আমি মনে করি সরকারের সব কাজই চ্যালেঞ্জিং। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি।
আজকের পত্রিকা: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের সমালোচনা আছে। মন্ত্রণালয়ের কাজ নিয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তার তদন্ত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আমরা আপনার থেকে কতটুকু নিশ্চিত থাকতে পারি?
মোকতাদির চৌধুরী: আপনি শতভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন। কোনো গুরুতর অভিযোগ আমার সামনে দিয়ে বিনা তদন্তে বা বিনা অ্যাটেনশনে যাবে না। অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিযোগ সব সময় যে সঠিকভাবে উত্থাপিত হয়, তা-ও কিন্তু নয়। অভিযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থেরও ব্যাপার থাকে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, অনেক সময় ব্যক্তিস্বার্থ ক্ষুণ্ন হলেও আমরা অভিযোগ করে থাকি। তবে এটা ঠিক যে আমার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা আছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে।
এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। চেষ্টা থাকবে, অভিযোগের মাত্রা যাতে শূন্যের দিকে নিয়ে আসতে পারি। নতুন অভিযোগ যাতে আর উত্থাপিত না হয়। এ জন্য আমি একটা বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছি সেটা হলো, একজন অফিসার যে কাজই করুক, তা আইনানুগভাবে করতে হবে। প্রচলিত আইন মেনে কাজ করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়ে আপনি কতটুকু মনোযোগ দেবেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আমি মনে করি, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও নগরায়ণ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সমস্যা অন্য জায়গায়। আমরা যখন নিজেদের কাজগুলো করি, তখন প্রায়ই অন্যের সমস্যার কথা, দেশের কথা ভাবি না। অনেক সময় পড়শির কথাও ভাবা হয় না। পড়শি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, এটা দেখার সময় আমাদের নেই।
একজন বড় সেনাকর্মকর্তা একসময় বিশাল বড় দায়িত্বে ছিলেন। দেশের নীতি-দুর্নীতি নিয়ে কাজ করতেন। শোনা যায়, তিনি যখন তাঁর ভবন তৈরি করেন, তখন ভবন নির্মাণের যে সাধারণ নির্মাণকৌশল আছে, সেটাও তিনি ভঙ্গ করেছেন। আমার হয়তো যে পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা, আমি তা ছাড়ছি না। অন্যের অসুবিধা করেও আমি আমার নিজের সুবিধার পক্ষে দাঁড়াই।
এসব বিষয়ে জনগণের ভেতরেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা ছাড়া রাজউক বা অন্যান্য সিটি করপোরেশনের পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে তারা সঠিক কাজটা করতে পারে না। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে এর উন্নতি হবে। তবে রাতারাতি কোনো অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। একটু অপেক্ষা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: এই সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে?
মোকতাদির চৌধুরী: এ জন্য আমরা ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাব এবং কর্মকর্তাদের বলব যে আপনি যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটান, তাহলে আপনি যে-ই হোন না কেন আপনাকে আমরা ধরব। আপনাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আগে একটা সময় ছিল যখন তথাকথিত প্রভাবশালীরা বিভিন্ন রকমের বেআইনি সুযোগ নিত বা পেত। কিন্তু এখন সেটা হবে না। আমি মনে করি, সরকারই সবচেয়ে বড় প্রভাবশালী। কাউকে কোনো বেআইনি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না।
আজকের পত্রিকা: অনেক দেশেই দেখা যায়, নতুন মন্ত্রীরা অগ্রাধিকার পরিকল্পনা করেন, আপনি কি এ রকম কিছু করেছেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আমার অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় অনেক বিষয় আছে। এক নম্বর বিষয় হচ্ছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইন মেনে চলতে হবে। ৯টায় অফিস হলে ৮টা ৫৯ মিনিটে ঢুকতে হবে। ৯টার অফিস মানে ৯টা ১৫ বা ৯টা ৫ মিনিট নয়। এই দায়িত্ববোধটা থাকতে হবে। দুই নম্বর যেটা আমি বলেছি, আমাদের পুরো দেশই অপরিকল্পনার ভেতর দিয়ে চলছে। এটাকে পরিকল্পার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
আমি বলেছি, শুধু ঢাকা শহর ঘিরে আমাদের যে চেষ্টা বা ফোকাস, এটা না করে আমরা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যাব। সেখানে আমরা দেখব যাতে কৃষিজমির অপব্যবহার না হয় বা কমে না যায়। গ্রামের অবকাঠামো যাতে পরিকল্পনায় আনা যায়, সেই লক্ষ্যে আমি ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভার একজন সিনিয়র সহকর্মীকে অনুরোধ করেছি একটা মিটিং করার জন্য, যেখানে কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং অন্য যারা গ্রাম্য উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে, সবাই মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে সবক্ষেত্রেই যাতে তা মানা হয়, সেটির ওপর নজরদারি করতে হবে।
তৃতীয়ত, চেষ্টা করব প্রভাবশালীদের প্রভাব উপেক্ষা করার। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, কিছুদিন আগে জানতে পারি, কোনো একটি বড় জনকল্যাণমূলক সংস্থার জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই জমি হঠাৎ করে আরেকজন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই সংস্থাকে ছোট জমি দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি, না, সেটা হবে না। প্রভাবশালী সেই ব্যক্তিও হয়তো ভালো কাজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু একজন ব্যক্তি ও একটি সংস্থা যে কাজ করবে তার মধ্যে পার্থক্য আছে। ব্যক্তি নিজের আর সংস্থা সমাজের কল্যাণে কাজ করবে, তাই সংস্থাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: এবারের সংসদে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন মতের বা ভিন্ন চিন্তার উপস্থিতি একেবারেই নেই। এটাকে কি আপনি গণতন্ত্রের জন্য খুব ভালো মনে করেন?
মোকতাদির চৌধুরী: এটাকে তো কখনোই গণতন্ত্রের জন্য ভালো মনে করি না; তবে বর্তমান সরকার স্বতন্ত্রদের একটা সেপারেট এনটিটি বজায় রেখে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। তাঁদের কোনো দলে যুক্ত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। আমাদের দল থেকেও অনেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন, তাঁদেরও স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করতেই বলা হচ্ছে। ৬২ জন সদস্য স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করলে কিছু কিছু ভিন্ন কথা তো আসবেই। আর জাতীয় পার্টি যেটা আছে, যদিও তারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেই থাকে। এটা তাদের একটা চরিত্র। তারপরও তারা বলেছে যে এবার তারা সত্যিকার বিরোধী ভূমিকা পালন করবে।
গত সংসদে যাঁরা জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি করেছেন, তাঁরা কিন্তু সংসদে কথা বলতে পারতেন অথচ তাঁরা বলেননি। আমার মনে হয়, তাঁরা যদি তাঁদের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করেন, তাহলে কাজ হবে। এটা তো ঠিক, সার্বিকভাবে বিরোধী উচ্চারণ যত কম হবে, গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে আমরা তত অসুবিধায় পড়ব। আমার আস্থা আছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি শুধু যে পার্লামেন্টের ভয়েসই শুনবেন তা নয়, রাস্তাতেও যদি সঠিক ভয়েস উঠে আসে, গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়েস উঠে আসে, তাহলেও তিনি তা শুনবেন।
বিএনপি যদি নির্বাচনে আসত, আমি মনে করি সেটা বেশি ভালো হতো। কিন্তু বিএনপিকে ক্ষমতার নিশ্চয়তা দিয়ে নির্বাচনে আনা তো সম্ভব নয়। এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। এমনও তো হতে পারত তারা যদি নির্বাচনে অংশ নিত, মেজরিটি পেয়েও যেতে পারত। কিন্তু তারা সেই পথে এগোতে চায়নি। তা ছাড়া বিএনপি তাদের সময়ে কখনোই গণতন্ত্রের চর্চাকে সমর্থন করেনি।
সবচেয়ে ন্যক্কারজনক হলো বিএনপির আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে বিএনপি সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে প্রাতিষ্ঠানিক করে ফেলেছিল। সাম্প্রদায়িকতা এখনো আছে। আমাদের সময়েও সাম্প্রদায়িক শক্তি নিশ্চুপ বা নিষ্ক্রিয় ছিল বা আছে তা নয়। তারা অনেক সময়, অনেকভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিতে চেয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করি।
আজকের পত্রিকা: অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেও এখন সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
মোকতাদির চৌধুরী: আমি বলব, কথাটা সঠিক নয়। আমাদের দলীয় নীতির দিক থেকে যদি বলেন সাম্প্রদায়িকতার স্থান এখানে কখনোই ছিল না, এখনো নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। কিন্তু ব্যক্তিমানুষ হিসেবে অনেকের ভেতরে সাম্প্রদায়িকতা আছে। নেই এ কথা বলব না। কারও কারও মন ও মস্তিষ্কে সাম্প্রদায়িকতা থাকার কারণে আমরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ কখনোই সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয়নি। ভবিষ্যতেও দেবে না। শুধু তা-ই নয়, নীতিগতভাবে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করে এবং এটা তার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে নিয়েছে।
তবে এটাও ঠিক যে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী একেবারে মরে যায়নি, তারা আছে। যেমন ধরেন বাংলাদেশে আমার খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখি যে আমরা অনেক চেষ্টা করেও যারা জাতীয় সংগীত গায় না, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না। এটা নেওয়া উচিত অথবা যারা জাতীয় সংগীত গায় না, তারা যাতে জাতীয় সংগীত গায়, সে ব্যাপারে তাদের অনুপ্রাণিত করা উচিত। যদি অনুপ্রাণিত বিষয়টা থাকে তাহলেও আমরা অনেক দিক দিয়ে এগোতে পারব। আমি মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি যারা গায় না আরকি, তাদের যদি আমরা ঠিকমতো মোটিভেট করতে পারি, তাহলে গাইবে। আমি অনেক মাদ্রাসাছাত্রদের দেখছি তারা ব্যান্ড করে, মিউজিক করে। তারা আগে করত না কিন্তু এখন তারা করে।
সুতরাং পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সাধারণ মানুষদেরও এগিয়ে যেতে হবে। যেমন ধরেন মঙ্গল শোভাযাত্রা এটা এখন কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যত বেশি উজ্জীবিত করতে পারব, তত বেশি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলা করতে পারব। আমরা একটা মাল্টি ক্লাস অর্গানাইজেশন, আমরা কখনোই ক্লাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ছিলাম না। আমাদের এখানে সব ধরনের লোকই আসে। এখন তো আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতির ভেতরে আছি, এখান থেকে আপনাকে একেবারে কট্টরপন্থী বা ক্যাডারবেসড অর্গানাইজেশন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আমরা ছিলামও না, সম্ভবও না। সুতরাং আমাকে এখানে যা করতে হবে সেটা হলো, অসাম্প্রদায়িক যে কালচারাল হেরিটেজ আছে, এটাকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আমরা শেষ করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারপ্রধান হয়েছেন। তাঁর সময়ে দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। আবার এটাও দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে প্রতিবছর কোটিপতির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, আবার নিঃস্ব মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে এই বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা পালন করবে বলে আপনি মনে করেন?
মোকতাদির চৌধুরী: বৈষম্য একেবারে দূর করা যাবে কি না, আমি জানি না। তা ছাড়া বাজারব্যবস্থায়, বাজারভিত্তিক অর্থনীতিতে স্লোগান দিয়ে বৈষম্য দূর করা যাবে না। বৈষম্য বন্ধ করার শর্টকাট পথও নেই। কিন্তু যারা নিম্নপর্যায়ে আছে, তাদের উঠিয়ে আনার কিছু সুযোগ আছে। সেটা যদি আমরা করতে পারি এবং তাদের যদি সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারি, তাহলে তারা নিজেরাই এই বাজার অর্থনীতির ভেতরে ঢুকে ওপরে আসতে পারবে। যেমন আমরা গৃহহীনদের ঘর দিয়ে দিচ্ছি, আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ করছি। এভাবে আমরা ভিত্তিটাকে তৈরি করে দিচ্ছি। আর একেবারেই যারা চলতে-ফিরতে পারে না, তাদের নানান ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন আমরা প্রচুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। শিক্ষাকে সহজলভ্য করে দিয়েছি। একেবারে প্রান্তিক পর্যায়েও শিক্ষা সহজলভ্য। হাওর এলাকায়ও এখন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে উঠছে।
হাওর এলাকার জন্য আলাদাভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেসব এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি, তাদের উন্নতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হয়তো বিশাল আকারে বৈষম্য নিরসন করতে পারব না, তবে নিচের দিকের যে মানুষগুলো তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারব। এটাও একটা বিরাট ব্যাপার।
আমি মনে করি, বৈষম্য কখনো পুরোপুরি দূর করা যাবে না। তবে এর মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। এখন সব জায়গায় ইন্টারনেট চলে গেছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ইন্টারনেট নেই। আপনি বোধ হয় কিছুদিন আগে দেখেছেন প্রথম আলোয় একটা রিপোর্ট ছিল যে গারো পাহাড়ের এদিকে, ওই পুরো একটা গ্রামে স্বাচ্ছন্দ্য চলে আসছে। পুরো গ্রামের অধিবাসী ফ্রিল্যান্সিং করে তারা ভালো আছে। ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য গত একনেক বৈঠকে আমরা টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।
আপনারা দেখতে পাবেন মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনটাকে কাজে লাগালে বৈষম্য কমে আসবে। এখন অলস লোকের তো পৃথিবীতে কোনো স্থান নেই। সুতরাং সব সময় কর্মে নিয়োজিত থাকতে হবে এবং সক্রিয় থাকতে হবে। তাহলেই হবে ইনশা আল্লাহ।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মোকতাদির চৌধুরী: আপনাদেরও ধন্যবাদ!
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে