অরুণ কর্মকার
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ঘুরেফিরে একটা কথা আজকাল প্রায়ই দেখা যায়। কথাটা এ রকম—আপনি চীনের কোনো অলিগলিতে ঘুরলে অনেক ইঞ্জিনিয়ারের দেখা পাবেন। জার্মানির অলিগলিতে ঘুরলে দেখা পাবেন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের। আর বাংলাদেশের অলিগলিতে ঢুঁ মারলে দেখা পাবেন অসংখ্য সভাপতি-সেক্রেটারির। অবস্থাদৃষ্টে কথাটা সর্বাংশে সত্য বলেই মনে হয়।
এই সভাপতি-সেক্রেটারিরা রয়েছেন একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে। ওয়ার্ড, পাড়া, মহল্লা পর্যন্ত। শুধু তো সভাপতি-সেক্রেটারি থাকতে পারেন না। আছেন তাঁদের পারিষদবর্গও। অনেক পারিষদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া আছে সহ এবং উপপদাধিকারীও। ফলে আয়তনটা বেশ বড়ই। দেশের বড় দলগুলোর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এ ধরনের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত সারা দেশে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জামায়াত এবং আরও কয়েকটি ইসলামি দলেরও সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত আছে। তবে তা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো অতটা বিস্তৃত নয়।
হিসাব-নিকাশ করলে দেখা যায়, একেকটা ওয়ার্ড এবং বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যদি দুটি বড় রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রতিটি দলের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর ১০টি করে কমিটি থাকে, তাহলে সেখানে সংখ্যায় তো তারাই গরিষ্ঠ। তারপর অন্যান্য দলেরও দু-চারটি কমিটি অন্তত সব জায়গাতেই থাকে। সুতরাং বাংলাদেশের অলিগলিতে সভাপতি-সেক্রেটারিদের সাক্ষাৎ মেলা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এমনিতে এই সভাপতি-সেক্রেটারিরা অনেক দিন ধরেই আছেন। পাড়া-মহল্লাজুড়ে তাঁদের বিচরণও অনেক দিনের। তবে দেশের রাজনীতিতে যখন ঝোড়ো হাওয়ার পরশ লাগে, তখন তাঁরা প্রকটভাবে ভেসে ওঠেন। মোটকথা, তাঁদের ভূমিকা দলের প্রয়োজন অনুযায়ী বেশকম হয়। তাহলে তাঁদের দলের জন্য বোঝা বলছি কেন? আর শুধু আওয়ামী লীগের পিঠে তাঁদের বোঝা, এ কথাই বা বলছি কোন যুক্তিতে! বিষয়টি নিয়ে আর বেশি কেঁচেগণ্ডূষ না করে সরাসরি উদাহরণ দিয়েই বলা বোধকরি ভালো।
যেমন ধরুন ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের একটি আলোচিত ঘটনা। ঘটনাটি অবাঞ্ছিত বটে। আশরাফুল হোসেন আলম নামে একজন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীকে হেনস্তা করার কথা, জনারণ্যে মারধর করার ঘটনার কথা বলছি। (উপনাম কিংবা ছদ্মনামে (নিকনেম) এই প্রার্থীর সার্কুলেশন বিপুল। যদিও হিরো কোনো ব্যক্তির নাম হতে পারে বলে আমি মনে করি না। তবু যেহেতু তাঁর অগণিত ভক্ত এবং গুণগ্রাহী ভালোবেসে তাঁকে স্থায়ীভাবে নিজ নিজ হিরোর আসনে বসানোর অভিলাষ থেকে নামটি অন্তর থেকে গ্রহণ করেছেন, সেহেতু তা উল্লেখ করার দায় আমার আছে। অন্যথায় তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার, এমনকি মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে, যা আমি কারও ক্ষেত্রে কখনোই করতে চাই না। তাই নিকনেমটি বলছি হিরো আলম)।
সেই যে আলম সাহেবের ওপর চড়াও হলেন কিছু তরুণ, তাঁরাও কিন্তু ওই সভাপতি-সেক্রেটারি এবং তাঁদের পারিষদবর্গের অংশ। দলের পক্ষে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার জন্য তাঁরা সেদিন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে। হয়তো দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই গিয়েছিলেন। কিন্তু দলের পক্ষে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হয়ে গেলেন দলের দায়। কাঁধের বোঝা। সে বোঝা এতটাই ভারী যে জাতিসংঘ পর্যন্ত উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে ১২টি বিদেশি রাষ্ট্রের দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার প্রতিকার দাবি করেছে (দূতাবাসগুলোর এ ধরনের বিবৃতি কি এবারই প্রথম! অন্যান্য দেশেও কি তারা একই রকম ঘটনায় বিবৃতি দেয়!)।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকেই ওই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাই দল এখন তাঁদের এহেন কর্মকাণ্ড আর উপেক্ষা করতে পারছে না। ফলে তাঁদের পস্তাতে হচ্ছে। তবে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া সভাপতি-সেক্রেটারিগোষ্ঠীকে এ রকম বেকায়দায় সাধারণত পড়তে হয় না।
নিজ নিজ এলাকায় সাধারণত কী কাজ করেন এসব সভাপতি-সেক্রেটারি এবং তাঁদের পারিষদবর্গ? এককথায় বলতে গেলে রাজনীতির চর্চা ছাড়া আর প্রায় সবকিছুই করেন। তাঁদের রাজনীতিচর্চা বলতে দলীয় কর্মসূচিতে সদলবলে যোগদান করা এবং প্রয়োজনে সংঘাত-সংঘর্ষে অংশ নেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই দৃশ্যমান নয়।
অন্যান্য কাজের মধ্যে আছে মূলত তাঁদের ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত আয়-উপার্জনের ব্যাপারস্যাপার। এই আয়-উপার্জনের জন্য তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য করার চেষ্টা করেন। ছোটখাটো ঠিকাদারিও করেন অনেকে। অনেকে বড় কিছুও করে ফেলেন। এলাকায় নতুন কোনো ভবন নির্মাণে তাঁদের কিছু ভূমিকা রাখতে দিতে হয়। অনেকে আবার জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করে ফ্ল্যাট বিক্রি করেন, যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে প্রতারণা ও অবৈধ প্রভাব খাটানোর অভিযোগ। অনেকে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেন।
ঘর তুলে ভাড়া দেন। এরও নিচের একটি গোষ্ঠী রয়েছে তাঁদের পারিষদবর্গের মধ্যে, যাঁদের যাতায়াত বেশি দেখা যায় এলাকার বাজার, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন যাঁরা, তাঁরাও তাঁদের আওতাধীন। তাই বলা যায় রাজনীতিবহির্ভূত এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার মতো কাজের তাঁদের কোনো অভাব নেই।
এসব আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে আবার রাজনৈতিক বৈরিতার কোনো স্থান থাকে না। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের সভাপতি-সেক্রেটারিরা হরিহর আত্মা। এমন ঘটনার কথাও শোনা যায় যে আওয়ামী লীগের এক ওয়ার্ড কমিটির নেতার ব্যবসা-বাণিজ্যের অংশীদারদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছেন, যিনি আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশে বোমা মারার মামলায় আসামি হিসেবে হাজত খেটেছেন।
এখনো মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। আয়-উপার্জনের ভাগ তাঁরা সমান সমানই পাচ্ছেন। দায়টা নিতে হচ্ছে সরকারি দলের। অবশ্য কোনো কারণে রাষ্ট্রক্ষমতায় দলের পরিবর্তন হলে এই শ্রেণির সভাপতি-সেক্রেটারিরা নিরাপদে এবং বহাল তবিয়তেই থাকবেন। সে কারণেই ওই যৌথ অংশীদারত্বের সৃজনশীল উদ্ভাবন তাঁরা করে নিয়েছেন। এই সৃজনশীলতা আরও ওপরের পর্যায়েও বিদ্যমান। তবে তাঁরা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় নন।
আওয়ামী লীগের কাঁধে এই বোঝা সবচেয়ে ভারী হওয়ার কারণ দলটি একটানা প্রায় সাড়ে ১৪ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। এই সময়ে, এই দলের একধরনের প্রাধান্য সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়েও এই দলের সভাপতি-সেক্রেটারি গোষ্ঠীই সামনের সারিতে অবস্থান নিয়েছেন।মানুষ তাঁদেরই বেশি দেখেন। তাঁদের আচরণ ও কর্মকাণ্ড দেখেই ভোট দেওয়ার জন্য মন স্থির করেন। সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলাদেশের জনমানসে নির্বাচন যেমন একটি উৎসব, তেমনি শোধ তোলারও একটি উপলক্ষ। ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কারও কাছে নির্বাচনের সময় দল, মার্কা, দেশের উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সম্মানের স্থান—কোনো কিছুই বড় হয়ে উঠতে পারে না। যিনি নিজের ওপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিকার অন্য সময়ে পান না, তিনি ভোটের ক্ষমতা প্রয়োগ করে শোধ তুলতে চান।
ভোটারদের মধ্যে এই জনগোষ্ঠীটিই আসলে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করেন। তাঁরা কোনো দলভুক্ত নন। দলীয় রাজনীতির ডামাডোলের মধ্যেও তাঁরা স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করে ভোট দেন। এই কারণে তৃণমূল পর্যায়ের সভাপতি-সেক্রেটারি গোষ্ঠীর ভূমিকা ও কর্মকাণ্ড ভোটের মাঠের অন্যতম প্রধান নিয়ামক হয়ে ওঠে।
সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাঁধে যেহেতু এই বোঝা সবচেয়ে ভারী, দায় সবচেয়ে বেশি, সেহেতু ভোটের মুখে ভাবতে হবে এর প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে। সাংগঠনিক নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি যেমন দলের জন্য অতীব দরকারি, তেমনি বিপুল পরিসরে বিস্তৃত এই নেটওয়ার্ক যদি দলের স্বার্থ বড় করে না দেখতে পারে, যদি কায়েমি স্বার্থই তাঁদের কাছে বড় হয়ে ওঠে, সে হবে বিরাট ক্ষতির কারণ। দলীয় অনুগত ছাড়া অন্যরা তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ঘুরেফিরে একটা কথা আজকাল প্রায়ই দেখা যায়। কথাটা এ রকম—আপনি চীনের কোনো অলিগলিতে ঘুরলে অনেক ইঞ্জিনিয়ারের দেখা পাবেন। জার্মানির অলিগলিতে ঘুরলে দেখা পাবেন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের। আর বাংলাদেশের অলিগলিতে ঢুঁ মারলে দেখা পাবেন অসংখ্য সভাপতি-সেক্রেটারির। অবস্থাদৃষ্টে কথাটা সর্বাংশে সত্য বলেই মনে হয়।
এই সভাপতি-সেক্রেটারিরা রয়েছেন একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে। ওয়ার্ড, পাড়া, মহল্লা পর্যন্ত। শুধু তো সভাপতি-সেক্রেটারি থাকতে পারেন না। আছেন তাঁদের পারিষদবর্গও। অনেক পারিষদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া আছে সহ এবং উপপদাধিকারীও। ফলে আয়তনটা বেশ বড়ই। দেশের বড় দলগুলোর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এ ধরনের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত সারা দেশে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জামায়াত এবং আরও কয়েকটি ইসলামি দলেরও সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত আছে। তবে তা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো অতটা বিস্তৃত নয়।
হিসাব-নিকাশ করলে দেখা যায়, একেকটা ওয়ার্ড এবং বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যদি দুটি বড় রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রতিটি দলের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর ১০টি করে কমিটি থাকে, তাহলে সেখানে সংখ্যায় তো তারাই গরিষ্ঠ। তারপর অন্যান্য দলেরও দু-চারটি কমিটি অন্তত সব জায়গাতেই থাকে। সুতরাং বাংলাদেশের অলিগলিতে সভাপতি-সেক্রেটারিদের সাক্ষাৎ মেলা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এমনিতে এই সভাপতি-সেক্রেটারিরা অনেক দিন ধরেই আছেন। পাড়া-মহল্লাজুড়ে তাঁদের বিচরণও অনেক দিনের। তবে দেশের রাজনীতিতে যখন ঝোড়ো হাওয়ার পরশ লাগে, তখন তাঁরা প্রকটভাবে ভেসে ওঠেন। মোটকথা, তাঁদের ভূমিকা দলের প্রয়োজন অনুযায়ী বেশকম হয়। তাহলে তাঁদের দলের জন্য বোঝা বলছি কেন? আর শুধু আওয়ামী লীগের পিঠে তাঁদের বোঝা, এ কথাই বা বলছি কোন যুক্তিতে! বিষয়টি নিয়ে আর বেশি কেঁচেগণ্ডূষ না করে সরাসরি উদাহরণ দিয়েই বলা বোধকরি ভালো।
যেমন ধরুন ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের একটি আলোচিত ঘটনা। ঘটনাটি অবাঞ্ছিত বটে। আশরাফুল হোসেন আলম নামে একজন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীকে হেনস্তা করার কথা, জনারণ্যে মারধর করার ঘটনার কথা বলছি। (উপনাম কিংবা ছদ্মনামে (নিকনেম) এই প্রার্থীর সার্কুলেশন বিপুল। যদিও হিরো কোনো ব্যক্তির নাম হতে পারে বলে আমি মনে করি না। তবু যেহেতু তাঁর অগণিত ভক্ত এবং গুণগ্রাহী ভালোবেসে তাঁকে স্থায়ীভাবে নিজ নিজ হিরোর আসনে বসানোর অভিলাষ থেকে নামটি অন্তর থেকে গ্রহণ করেছেন, সেহেতু তা উল্লেখ করার দায় আমার আছে। অন্যথায় তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার, এমনকি মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে, যা আমি কারও ক্ষেত্রে কখনোই করতে চাই না। তাই নিকনেমটি বলছি হিরো আলম)।
সেই যে আলম সাহেবের ওপর চড়াও হলেন কিছু তরুণ, তাঁরাও কিন্তু ওই সভাপতি-সেক্রেটারি এবং তাঁদের পারিষদবর্গের অংশ। দলের পক্ষে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার জন্য তাঁরা সেদিন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে। হয়তো দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই গিয়েছিলেন। কিন্তু দলের পক্ষে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হয়ে গেলেন দলের দায়। কাঁধের বোঝা। সে বোঝা এতটাই ভারী যে জাতিসংঘ পর্যন্ত উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে ১২টি বিদেশি রাষ্ট্রের দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার প্রতিকার দাবি করেছে (দূতাবাসগুলোর এ ধরনের বিবৃতি কি এবারই প্রথম! অন্যান্য দেশেও কি তারা একই রকম ঘটনায় বিবৃতি দেয়!)।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকেই ওই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাই দল এখন তাঁদের এহেন কর্মকাণ্ড আর উপেক্ষা করতে পারছে না। ফলে তাঁদের পস্তাতে হচ্ছে। তবে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া সভাপতি-সেক্রেটারিগোষ্ঠীকে এ রকম বেকায়দায় সাধারণত পড়তে হয় না।
নিজ নিজ এলাকায় সাধারণত কী কাজ করেন এসব সভাপতি-সেক্রেটারি এবং তাঁদের পারিষদবর্গ? এককথায় বলতে গেলে রাজনীতির চর্চা ছাড়া আর প্রায় সবকিছুই করেন। তাঁদের রাজনীতিচর্চা বলতে দলীয় কর্মসূচিতে সদলবলে যোগদান করা এবং প্রয়োজনে সংঘাত-সংঘর্ষে অংশ নেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই দৃশ্যমান নয়।
অন্যান্য কাজের মধ্যে আছে মূলত তাঁদের ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত আয়-উপার্জনের ব্যাপারস্যাপার। এই আয়-উপার্জনের জন্য তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য করার চেষ্টা করেন। ছোটখাটো ঠিকাদারিও করেন অনেকে। অনেকে বড় কিছুও করে ফেলেন। এলাকায় নতুন কোনো ভবন নির্মাণে তাঁদের কিছু ভূমিকা রাখতে দিতে হয়। অনেকে আবার জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করে ফ্ল্যাট বিক্রি করেন, যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে প্রতারণা ও অবৈধ প্রভাব খাটানোর অভিযোগ। অনেকে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেন।
ঘর তুলে ভাড়া দেন। এরও নিচের একটি গোষ্ঠী রয়েছে তাঁদের পারিষদবর্গের মধ্যে, যাঁদের যাতায়াত বেশি দেখা যায় এলাকার বাজার, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন যাঁরা, তাঁরাও তাঁদের আওতাধীন। তাই বলা যায় রাজনীতিবহির্ভূত এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার মতো কাজের তাঁদের কোনো অভাব নেই।
এসব আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে আবার রাজনৈতিক বৈরিতার কোনো স্থান থাকে না। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের সভাপতি-সেক্রেটারিরা হরিহর আত্মা। এমন ঘটনার কথাও শোনা যায় যে আওয়ামী লীগের এক ওয়ার্ড কমিটির নেতার ব্যবসা-বাণিজ্যের অংশীদারদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছেন, যিনি আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশে বোমা মারার মামলায় আসামি হিসেবে হাজত খেটেছেন।
এখনো মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। আয়-উপার্জনের ভাগ তাঁরা সমান সমানই পাচ্ছেন। দায়টা নিতে হচ্ছে সরকারি দলের। অবশ্য কোনো কারণে রাষ্ট্রক্ষমতায় দলের পরিবর্তন হলে এই শ্রেণির সভাপতি-সেক্রেটারিরা নিরাপদে এবং বহাল তবিয়তেই থাকবেন। সে কারণেই ওই যৌথ অংশীদারত্বের সৃজনশীল উদ্ভাবন তাঁরা করে নিয়েছেন। এই সৃজনশীলতা আরও ওপরের পর্যায়েও বিদ্যমান। তবে তাঁরা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় নন।
আওয়ামী লীগের কাঁধে এই বোঝা সবচেয়ে ভারী হওয়ার কারণ দলটি একটানা প্রায় সাড়ে ১৪ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। এই সময়ে, এই দলের একধরনের প্রাধান্য সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়েও এই দলের সভাপতি-সেক্রেটারি গোষ্ঠীই সামনের সারিতে অবস্থান নিয়েছেন।মানুষ তাঁদেরই বেশি দেখেন। তাঁদের আচরণ ও কর্মকাণ্ড দেখেই ভোট দেওয়ার জন্য মন স্থির করেন। সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলাদেশের জনমানসে নির্বাচন যেমন একটি উৎসব, তেমনি শোধ তোলারও একটি উপলক্ষ। ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কারও কাছে নির্বাচনের সময় দল, মার্কা, দেশের উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সম্মানের স্থান—কোনো কিছুই বড় হয়ে উঠতে পারে না। যিনি নিজের ওপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিকার অন্য সময়ে পান না, তিনি ভোটের ক্ষমতা প্রয়োগ করে শোধ তুলতে চান।
ভোটারদের মধ্যে এই জনগোষ্ঠীটিই আসলে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করেন। তাঁরা কোনো দলভুক্ত নন। দলীয় রাজনীতির ডামাডোলের মধ্যেও তাঁরা স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করে ভোট দেন। এই কারণে তৃণমূল পর্যায়ের সভাপতি-সেক্রেটারি গোষ্ঠীর ভূমিকা ও কর্মকাণ্ড ভোটের মাঠের অন্যতম প্রধান নিয়ামক হয়ে ওঠে।
সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাঁধে যেহেতু এই বোঝা সবচেয়ে ভারী, দায় সবচেয়ে বেশি, সেহেতু ভোটের মুখে ভাবতে হবে এর প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে। সাংগঠনিক নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি যেমন দলের জন্য অতীব দরকারি, তেমনি বিপুল পরিসরে বিস্তৃত এই নেটওয়ার্ক যদি দলের স্বার্থ বড় করে না দেখতে পারে, যদি কায়েমি স্বার্থই তাঁদের কাছে বড় হয়ে ওঠে, সে হবে বিরাট ক্ষতির কারণ। দলীয় অনুগত ছাড়া অন্যরা তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৮ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে