অরুণ কর্মকার
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার দেশান্তরে আশ্রয় গ্রহণ ও তাঁর নেতৃত্বাধীন দেড় দশকের আওয়ামী স্বৈরশাসন অবসানের পর মনে হচ্ছে, ওই সরকারের শাসনামলে দেশে হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কোনো দুর্বিপাক ছিল না। দেশে কোনো গুম হয়নি। কোনো দুর্নীতি হয়নি। ব্যাংক লুট এবং বিদেশে অর্থ পাচার হলেও তার দায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারের অন্য কোনো মন্ত্রী অথবা সরকারি দলের কারও ওপর বর্তায় না। দেশে হয়েছে শুধু হত্যাকাণ্ড এবং বিগত সরকারের সবাই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে শুধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই জড়িত। সে জন্যই শেখ হাসিনাসহ যাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন কিংবা যাঁরা এখনো গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মগোপন করে আছেন, সবার বিরুদ্ধেই অভিযোগ হত্যাকাণ্ডের। তাই সবার বিরুদ্ধে শুধু হত্যা মামলাই দেওয়া হচ্ছে।
এই সব মামলা দায়েরের ডামাডোলের মধ্যেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ কৌতূহলোদ্দীপক নড়াচড়া শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রীয় জরুরি সংস্কারের জন্য সরকারকে সময় দেওয়ার কথা বলে এসেছে। তারপর দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের পরিকল্পিত কার্যক্রমের পথনকশা (রোডম্যাপ) দেওয়ার দাবি তুলেছে। প্রায় একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করার কথাও উত্থাপন করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘গণতন্ত্রে নির্বাচিত সংসদ ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার কেন, কোনো সমস্যারই সমাধান হয় না’; ‘১ / ১১-এর কথা আমরা ভুলি নাই’ প্রভৃতি অনেক কথা বলেছেন।
অন্যদিকে জামায়াত এ ধরনের কোনো কথাই বলছে না। তারা দলীয় কর্মকাণ্ড, কিছু মতবিনিময় প্রভৃতির মধ্যেই ব্যস্ত আছে। রাজনীতির আরেকটি কৌতূহলোদ্দীপক দিক হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘নাগরিক কমিটি’ গঠনের উদ্যোগ। ২৩ আগস্ট তাদের লিয়াজোঁ কমিটির সভায় পাঁচটি আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে—‘গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান তৈরির জন্য গণ-আলোচনা শুরু করা’। এই আকাঙ্ক্ষাটিকে অনেকেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যাভিমুখী উদ্যোগ বলে মনে করছেন। কিন্তু এই দারুণ ইন্টারেস্টিং ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়গুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে অগণিত হত্যা মামলার ডামাডোলের মধ্যে।
বিস্ময়করভাবে এই সব হত্যা মামলার কোনো কোনোটিতে অভিযুক্ত করা হচ্ছে একাধিক সিনিয়র সাংবাদিককে। এমনকি জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানকেও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের বিরুদ্ধেও হত্যাকাণ্ডে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এক সাংবাদিক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে হত্যা মামলায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। যেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা কিংবা হত্যাকাণ্ডে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁরা সত্যি সত্যি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন—এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তাঁদের কেউ কেউ হয়তো বিগত সরকারের তাঁবেদারি করেছেন কিংবা ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের বিরোধিতাও করেছেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, এটা প্রমাণ করা কি কঠিন হবে না?
জুলাই-আগস্টের যে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানকে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা (কেউ কেউ তৃতীয়ও বলেন) বলে মনে করছি, তেমন একটি পরিবেশে তো এমনটা হওয়ার কথা নয়! শ্রদ্ধাভাজন একজন অগ্রজ সাংবাদিক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘কেউ কথা বলতে নিষেধ করছে না, কিন্তু কেউ কথা বলার সাহস করছে না। ঘাড়ের ওপর কোনো খাঁড়া ঝুলছে না, কিন্তু খাঁড়ার ভয়ে সবাই ভীত। এ রকম একটি অবস্থা সবচেয়ে অস্বস্তিকর।’ ভয়ংকরও বটে। এই অবস্থার অবসান দরকার, বিশেষ করে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে। অন্যথায় আমরা অতীতের চক্র থেকে বের হয়ে নতুন সময়ের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হব। কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু গড়পড়তা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে চাপে রাখা কিংবা কারাবন্দী করার ঘটনা কি ভয়ের সংস্কৃতিকেই বিস্তৃত করবে না? এসব ঘটনায় সামনে নতুন দিনের কোনো আভাস পাওয়া যায় না।
বিগত সরকার, সরকার-সংশ্লিষ্ট এবং সরকারদলীয়দের বিরুদ্ধে গড়পড়তা হত্যা মামলা করার একটা কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে—তা হলো, তাদের আটকে রাখার জন্য আপাতত জামিন অযোগ্য মামলায় বা ধারায় অভিযুক্ত করা। এরপর রিমান্ডে নিয়ে নানা তথ্য বের করে এবং সরকারি নথিপত্র ঘেঁটে অন্যান্য মামলা করা। এ ধরনের মামলার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে সাকিব আল হাসানের মামলা নিয়ে। যদিও সাবেক সরকারের প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, দলীয় নেতা এবং সংসদ সদস্যদের মতো তাঁকেও হুকুমের আসামি করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবু ঘটনাবলির সময় সাকিবের অবস্থান, জাতীয় দলের হয়ে বিদেশের মাটিতে খেলায় অংশ নেওয়া, বিশ্বখ্যাত একজন খেলোয়াড় হিসেবে দল-মতের ঊর্ধ্বে সাকিবের প্রতি জনসমর্থন প্রভৃতি পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টাকে সাকিবের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলার বিষয়ে সরকারের একটা অবস্থান জানাতে হয়েছে।
কিন্তু সাংবাদিকদের বিষয়ে তেমন কোনো সরকারি ভাষ্য আসেনি। তা না আসুক, কিন্তু মামলার বিষয়ে ন্যূনতম একটা বিশ্বাসযোগ্যতা তো থাকা দরকার। রাজনীতিকদের বিষয়টা যেমন সবাই একরকম বুঝে নিয়েছে। সাংবাদিকদের বিষয়টা বোধ হয় তেমন নয়।
যেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে, তাঁদের ওপর বিভিন্ন কারণে অনেকের রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে। অনেকের অভিযোগও থাকতে পারে। তাঁদের মধ্যে যদি ক্ষমতাবান কেউ থাকেন, তিনি তাঁদের মামলায় ঝোলাতেও পারেন। কিন্তু দিন শেষে ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাটা রাখতে হবে। না হলে বুমেরাং হতে পারে। এখন কথা হলো এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেনি। করেছেন কোনো নিহতের স্বজন। এ রকম কোনো স্বজন যদি কারও বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ নিয়ে থানায় কিংবা আদালতে যান, তাহলে সেই অভিযোগ গ্রহণ ও অনুসন্ধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্র তা না করে পারে না। কিন্তু যেহেতু দেশের একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে শোক-ক্ষোভের কারণে এই মামলাগুলো হচ্ছে, সেহেতু পুলিশ একটা প্রাথমিক স্ক্রুটিনির ব্যবস্থা করতে পারে। কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে পুলিশের আগাম যাচাই সাপেক্ষে অনুমোদন ছাড়া মামলা করা যাবে না বলে একটা গেটকিপিংয়ের ব্যবস্থা পুলিশ বিভাগ করতে পারে। তাতে সরকার অহেতুক সমালোচনা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে বলে মনে হয়।
এই মুহূর্তে অন্যান্য জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় হচ্ছে—নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো পূর্ণ শৃঙ্খলা ফেরেনি বা পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। সামাজিক মাধ্যমের পাশাপাশি একশ্রেণির গণমাধ্যমেও বিভ্রান্তিকর খবরাখবর প্রকাশ ও গুজব ছড়ানো অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার সময় আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সমালোচিত হচ্ছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার দেশান্তরে আশ্রয় গ্রহণ ও তাঁর নেতৃত্বাধীন দেড় দশকের আওয়ামী স্বৈরশাসন অবসানের পর মনে হচ্ছে, ওই সরকারের শাসনামলে দেশে হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কোনো দুর্বিপাক ছিল না। দেশে কোনো গুম হয়নি। কোনো দুর্নীতি হয়নি। ব্যাংক লুট এবং বিদেশে অর্থ পাচার হলেও তার দায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারের অন্য কোনো মন্ত্রী অথবা সরকারি দলের কারও ওপর বর্তায় না। দেশে হয়েছে শুধু হত্যাকাণ্ড এবং বিগত সরকারের সবাই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে শুধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই জড়িত। সে জন্যই শেখ হাসিনাসহ যাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন কিংবা যাঁরা এখনো গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মগোপন করে আছেন, সবার বিরুদ্ধেই অভিযোগ হত্যাকাণ্ডের। তাই সবার বিরুদ্ধে শুধু হত্যা মামলাই দেওয়া হচ্ছে।
এই সব মামলা দায়েরের ডামাডোলের মধ্যেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ কৌতূহলোদ্দীপক নড়াচড়া শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রীয় জরুরি সংস্কারের জন্য সরকারকে সময় দেওয়ার কথা বলে এসেছে। তারপর দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের পরিকল্পিত কার্যক্রমের পথনকশা (রোডম্যাপ) দেওয়ার দাবি তুলেছে। প্রায় একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করার কথাও উত্থাপন করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘গণতন্ত্রে নির্বাচিত সংসদ ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার কেন, কোনো সমস্যারই সমাধান হয় না’; ‘১ / ১১-এর কথা আমরা ভুলি নাই’ প্রভৃতি অনেক কথা বলেছেন।
অন্যদিকে জামায়াত এ ধরনের কোনো কথাই বলছে না। তারা দলীয় কর্মকাণ্ড, কিছু মতবিনিময় প্রভৃতির মধ্যেই ব্যস্ত আছে। রাজনীতির আরেকটি কৌতূহলোদ্দীপক দিক হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘নাগরিক কমিটি’ গঠনের উদ্যোগ। ২৩ আগস্ট তাদের লিয়াজোঁ কমিটির সভায় পাঁচটি আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে—‘গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান তৈরির জন্য গণ-আলোচনা শুরু করা’। এই আকাঙ্ক্ষাটিকে অনেকেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যাভিমুখী উদ্যোগ বলে মনে করছেন। কিন্তু এই দারুণ ইন্টারেস্টিং ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়গুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে অগণিত হত্যা মামলার ডামাডোলের মধ্যে।
বিস্ময়করভাবে এই সব হত্যা মামলার কোনো কোনোটিতে অভিযুক্ত করা হচ্ছে একাধিক সিনিয়র সাংবাদিককে। এমনকি জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানকেও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের বিরুদ্ধেও হত্যাকাণ্ডে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এক সাংবাদিক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে হত্যা মামলায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। যেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা কিংবা হত্যাকাণ্ডে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁরা সত্যি সত্যি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন—এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তাঁদের কেউ কেউ হয়তো বিগত সরকারের তাঁবেদারি করেছেন কিংবা ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের বিরোধিতাও করেছেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, এটা প্রমাণ করা কি কঠিন হবে না?
জুলাই-আগস্টের যে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানকে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা (কেউ কেউ তৃতীয়ও বলেন) বলে মনে করছি, তেমন একটি পরিবেশে তো এমনটা হওয়ার কথা নয়! শ্রদ্ধাভাজন একজন অগ্রজ সাংবাদিক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘কেউ কথা বলতে নিষেধ করছে না, কিন্তু কেউ কথা বলার সাহস করছে না। ঘাড়ের ওপর কোনো খাঁড়া ঝুলছে না, কিন্তু খাঁড়ার ভয়ে সবাই ভীত। এ রকম একটি অবস্থা সবচেয়ে অস্বস্তিকর।’ ভয়ংকরও বটে। এই অবস্থার অবসান দরকার, বিশেষ করে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে। অন্যথায় আমরা অতীতের চক্র থেকে বের হয়ে নতুন সময়ের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হব। কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু গড়পড়তা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে চাপে রাখা কিংবা কারাবন্দী করার ঘটনা কি ভয়ের সংস্কৃতিকেই বিস্তৃত করবে না? এসব ঘটনায় সামনে নতুন দিনের কোনো আভাস পাওয়া যায় না।
বিগত সরকার, সরকার-সংশ্লিষ্ট এবং সরকারদলীয়দের বিরুদ্ধে গড়পড়তা হত্যা মামলা করার একটা কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে—তা হলো, তাদের আটকে রাখার জন্য আপাতত জামিন অযোগ্য মামলায় বা ধারায় অভিযুক্ত করা। এরপর রিমান্ডে নিয়ে নানা তথ্য বের করে এবং সরকারি নথিপত্র ঘেঁটে অন্যান্য মামলা করা। এ ধরনের মামলার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে সাকিব আল হাসানের মামলা নিয়ে। যদিও সাবেক সরকারের প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, দলীয় নেতা এবং সংসদ সদস্যদের মতো তাঁকেও হুকুমের আসামি করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবু ঘটনাবলির সময় সাকিবের অবস্থান, জাতীয় দলের হয়ে বিদেশের মাটিতে খেলায় অংশ নেওয়া, বিশ্বখ্যাত একজন খেলোয়াড় হিসেবে দল-মতের ঊর্ধ্বে সাকিবের প্রতি জনসমর্থন প্রভৃতি পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টাকে সাকিবের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলার বিষয়ে সরকারের একটা অবস্থান জানাতে হয়েছে।
কিন্তু সাংবাদিকদের বিষয়ে তেমন কোনো সরকারি ভাষ্য আসেনি। তা না আসুক, কিন্তু মামলার বিষয়ে ন্যূনতম একটা বিশ্বাসযোগ্যতা তো থাকা দরকার। রাজনীতিকদের বিষয়টা যেমন সবাই একরকম বুঝে নিয়েছে। সাংবাদিকদের বিষয়টা বোধ হয় তেমন নয়।
যেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে, তাঁদের ওপর বিভিন্ন কারণে অনেকের রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে। অনেকের অভিযোগও থাকতে পারে। তাঁদের মধ্যে যদি ক্ষমতাবান কেউ থাকেন, তিনি তাঁদের মামলায় ঝোলাতেও পারেন। কিন্তু দিন শেষে ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাটা রাখতে হবে। না হলে বুমেরাং হতে পারে। এখন কথা হলো এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেনি। করেছেন কোনো নিহতের স্বজন। এ রকম কোনো স্বজন যদি কারও বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ নিয়ে থানায় কিংবা আদালতে যান, তাহলে সেই অভিযোগ গ্রহণ ও অনুসন্ধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্র তা না করে পারে না। কিন্তু যেহেতু দেশের একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে শোক-ক্ষোভের কারণে এই মামলাগুলো হচ্ছে, সেহেতু পুলিশ একটা প্রাথমিক স্ক্রুটিনির ব্যবস্থা করতে পারে। কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে পুলিশের আগাম যাচাই সাপেক্ষে অনুমোদন ছাড়া মামলা করা যাবে না বলে একটা গেটকিপিংয়ের ব্যবস্থা পুলিশ বিভাগ করতে পারে। তাতে সরকার অহেতুক সমালোচনা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে বলে মনে হয়।
এই মুহূর্তে অন্যান্য জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় হচ্ছে—নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো পূর্ণ শৃঙ্খলা ফেরেনি বা পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। সামাজিক মাধ্যমের পাশাপাশি একশ্রেণির গণমাধ্যমেও বিভ্রান্তিকর খবরাখবর প্রকাশ ও গুজব ছড়ানো অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার সময় আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সমালোচিত হচ্ছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে