মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন হয়ে গেল। একই দিনে দেশে কয়েকটি উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউপি নির্বাচন ও উপনির্বাচনও হয়েছে। তবে সবার চোখ ছিল কুসিক নির্বাচনের প্রতি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় গণমাধ্যমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে নানা খবর, আলোচনা, পর্যালোচনা নিয়মিত বিষয় ছিল। এর প্রধান কারণ, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। অন্য নির্বাচনগুলোও একই দিনে হওয়ায় এগুলোও গুরুত্ব পাওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও গণমাধ্যমে তা ঘটতে দেখা যায়নি।
সিটি করপোরেশনের মর্যাদাই বোধ হয় আলাদা! তাই কুসিক নির্বাচন নিয়ে প্রথম থেকেই গণমাধ্যমগুলো সজাগ ছিল। মেয়র পদে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে আরফানুল হক রিফাতকে মনোনয়ন দিয়েছে। বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় অটল থেকেছে। কিন্তু বিএনপির দুজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। তাঁদের একজন দুবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, অন্যজন স্বেচ্ছাসেবক দলের নিজাম উদ্দিন কায়সার। দুজনকেই বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম এবং কামরুল আহসানসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কুসিক নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে মাত্র ৩৪৩ ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করেন। সব প্রার্থী সারা দিন নির্বাচনে নিজ নিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও দিন শেষে বোঝা যাচ্ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে রিফাত বনাম সাক্কুর মধ্যে।
ফলাফল গণনার শুরুতেই সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট হতে থাকে। যদিও মধ্যখানে কিছুক্ষণ রিফাত প্রায় ৮-১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ক্রমেই উভয়ের ভোটের ব্যবধান কমতে কমতে ওপর এবং নিচে নামার চক্র তৈরি হতে থাকে। তখন জয়-পরাজয়ের ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার শেষ মুহূর্তে উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা হট্টগোলের কারণে কিছু সময় ফলাফল ঘোষণা বন্ধ রেখে শেষ কেন্দ্রের ফলাফলগুলো দ্রুত ঘোষণা করেন। তাতে রিফাতের ৫০ হাজার ৩১০ এবং সাক্কুর ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট হওয়ায় রিটার্নিং অফিসার বেসরকারিভাবে রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। সাক্কু এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। আগে থেকেই দুজনের ফলাফলের মধ্যে যে ধরনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছিল তাতে জয়-পরাজয়টি শেষ মুহূর্তে কেবল সামান্য ভোটে নির্ধারিত হবে, সেটি অনুমান করা যাচ্ছিল, ঘটেছেও তা-ই। রিফাত হেরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। শেষ ৪-৫টি কেন্দ্রের ফলাফলেই চূড়ান্ত বিজয়ী বা পরাজিত হওয়ার ভাগ্য নির্ধারণ করছিল। সাক্কু যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলো লিখিতভাবে করলে নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারে। কিন্তু ইভিএমের কেন্দ্রভিত্তিক গণনা করা ফলাফল সেই মুহূর্তে সাক্কুর দাবি মোতাবেক পরিবর্তন করার সুযোগ বা প্রয়োজনীয়তা রিটার্নিং কর্মকর্তার থাকার কোনো কারণ দেখি না।
তা ছাড়া, সিইসি এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় অবস্থান কারও অজানা নয়। আমরা আশা করব, নতুন কমিশন সাক্কুর অভিযোগের যথার্থ জবাব দেবে। রিফাতের কর্মীদের ভোট গণনাস্থলে গিয়ে এভাবে মুহুর্মুহু স্লোগান ও উত্তেজনা ছড়ানোতে অংশ নেওয়া দেশের টিভি দর্শকদের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য হয়নি। এর ফলে সাক্কুর সমর্থকদের মধ্যেও অতি উত্তেজনা ছড়াতে সুযোগ করে দিয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি সেই মুহূর্তে মোটেও এভাবে মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রয়োজন ছিল না। রিটার্নিং কর্মকর্তার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের আহ্বান কিংবা নির্দেশ কাউকে না দিয়ে বসে থাকাটিও যথার্থ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরং স্বীয় উদ্যোগেই দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিল। কুসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত দিনগুলোতে কিংবা নির্বাচনের দিন কোথাও কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এটি সবার কাছেই প্রশংসনীয় হয়েছিল। প্রচারকালে মূল তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বাগ্যুদ্ধ, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু কারও কর্মীদের মধ্যে কোনো ছোটখাটো মারামারিও হয়নি বলেই সবাই জানে। কিন্তু শেষ কয়েকটি মুহূর্তে কেন স্লোগান-পাল্টা স্লোগানে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থকেরা এভাবে উত্তেজনা ছড়ালেন, সেটি কারও বোধগম্য নয়। তবে জয়-পরাজয়ের দোলাচলে যখন শেষ মুহূর্তে রিফাতের সমর্থকেরা গণনাস্থলে মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছিলেন তখন দর্শক হিসেবে আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, মাঠের শেষ ফলে রিফাতের জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই সমর্থকেরা এভাবে স্লোগান তুলেছিলেন। পরাজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকলে অনেকেই হয়তো ঘটনাস্থল ত্যাগ করতেন। কিন্তু তারপরও তাঁদের ওই উত্তেজনাটুকু না ছড়ালেই ভালো হতো। সাক্কু ফলাফলে ইঞ্জিনিয়ারিং করার অভিযোগ আনার তাৎক্ষণিক কোনো সুযোগ পেতেন না।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। কিন্তু ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪ জন, বাতিল হয়েছে ৩১৯ ভোট। মোট ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সিইসি নির্বাচন শেষে ঢাকা থেকে কুমিল্লার নির্বাচনের সামগ্রিক চিত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। বর্তমান কমিশনের জন্য এটা একটি টেস্ট কেস ছিল। সে ক্ষেত্রে তারা সামগ্রিক বিচারে উত্তীর্ণ হওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েছিল। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অংশীজনের সবাই যাঁর যাঁর দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করেছিলেন। এ কারণে নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং অংশগ্রহণও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে সব মহলই মনে করছে।
এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কুমিল্লার ভোটার এবং দেশের অনেকেরই অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। কারণ, কুমিল্লা একসময় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এই শহরে মরহুম আফজল খান এবং এমপি বাহারের দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব আওয়ামী লীগকে কখনো ঐক্যবদ্ধ হতে দেয়নি। ২০১২ সালে প্রথম কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হন সাক্কুর কাছে। পরের নির্বাচনেও সাক্কু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। দুই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হন। সেই পরাজয়ের নেতৃত্বেও আফজল-বাহার দ্বন্দ্বের কথা উচ্চারিত হয়েছে। সাক্কুকে বাহার আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এবার মনোনয়ন দানে বাহারের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন রিফাত। কিন্তু আওয়ামী লীগে মেয়র পদে নির্বাচন করার মতো যোগ্য প্রার্থীর অভাব ছিল না, যাঁরা অনায়াসে বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে পারতেন। কিন্তু সেটি ঘটেনি। এর ফলে সাধারণ ভোটার এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ যেমন ছিল, নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণেও তেমন স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায়নি। এর প্রভাব নির্বাচনে কতটা পড়েছে, সেটি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। তা ছাড়া, এমপি বাহার কুমিল্লায় থাকা না-থাকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি দেওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি একটা বড় ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করেছিল। রিফাতকে জয়ী করে ঢাকায় যাবেন—এমন বক্তব্য দানটিও তাঁর অবস্থান থেকে সেই সময় সচেতন ভোটারদের কাছে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে। সামগ্রিকভাবে কুসিক নির্বাচনে যা পাওয়া গেল, তাতে আওয়ামী লীগের সন্তুষ্ট হওয়ার খুব বেশি সুযোগ রয়েছে বলে মনে হয় না।
অন্যদিকে বিএনপির সাবেক দুই নেতা বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে নির্বাচনটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে সাহায্য করেছেন। তাঁরা দুজন না দাঁড়িয়ে একজন দাঁড়ালে রিফাতের গোমতী নদীতে ভেসে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। নির্বাচনী প্রচারকালেও রিফাতের বক্তব্য, আচরণ টিভি দর্শকদের খুব আকর্ষণ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। সত্যিকার অর্থে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে একটি জনবসতিপূর্ণ নগরীতে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রার্থী কুমিল্লাবাসী পেয়েছেন বলে হয় না। রিফাত দায়িত্ব নিয়ে কী করতে পারবেন, সেটি কেবল ৫ বছর পর বোঝা যাবে। সাক্কু ১০ বছর কী করতে পেরেছেন? তারপরও তাঁর এবার শক্ত অবস্থানের পেছনে ভোটারদের কী বার্তা পাওয়া গেল, সেটি কোন ধরনের ভোটার ও সমর্থক, তা কান দিয়ে শুনতে হবে, মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করতে হবে। ১৫ জুন কুমিল্লা শহরের পাশাপাশি পাঁচটি পৌরসভা, চারটি উপজেলা পরিষদ এবং দেড় শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেসব নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। ইভিএম নিয়ে ধীরগতির একটি অভিযোগ সর্বত্রই শোনা গেছে। তবে গণমাধ্যমে কুসিক নির্বাচন ওই সব নির্বাচনকে স্থান দেয়নি। তারপরও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে অনেকটাই সফল হয়েছে বলা যায়। আগামী দিনে আরও বেশ কিছু সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আউয়াল কমিশনকে ক্রমাগত পরীক্ষা দিয়েই যেতে হবে। সেই পরীক্ষায় তাদের সাফল্যেই জনগণের সাফল্য নির্ভর করবে।
১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন হয়ে গেল। একই দিনে দেশে কয়েকটি উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউপি নির্বাচন ও উপনির্বাচনও হয়েছে। তবে সবার চোখ ছিল কুসিক নির্বাচনের প্রতি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় গণমাধ্যমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে নানা খবর, আলোচনা, পর্যালোচনা নিয়মিত বিষয় ছিল। এর প্রধান কারণ, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। অন্য নির্বাচনগুলোও একই দিনে হওয়ায় এগুলোও গুরুত্ব পাওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও গণমাধ্যমে তা ঘটতে দেখা যায়নি।
সিটি করপোরেশনের মর্যাদাই বোধ হয় আলাদা! তাই কুসিক নির্বাচন নিয়ে প্রথম থেকেই গণমাধ্যমগুলো সজাগ ছিল। মেয়র পদে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে আরফানুল হক রিফাতকে মনোনয়ন দিয়েছে। বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় অটল থেকেছে। কিন্তু বিএনপির দুজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। তাঁদের একজন দুবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, অন্যজন স্বেচ্ছাসেবক দলের নিজাম উদ্দিন কায়সার। দুজনকেই বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম এবং কামরুল আহসানসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কুসিক নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে মাত্র ৩৪৩ ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করেন। সব প্রার্থী সারা দিন নির্বাচনে নিজ নিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও দিন শেষে বোঝা যাচ্ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে রিফাত বনাম সাক্কুর মধ্যে।
ফলাফল গণনার শুরুতেই সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট হতে থাকে। যদিও মধ্যখানে কিছুক্ষণ রিফাত প্রায় ৮-১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ক্রমেই উভয়ের ভোটের ব্যবধান কমতে কমতে ওপর এবং নিচে নামার চক্র তৈরি হতে থাকে। তখন জয়-পরাজয়ের ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার শেষ মুহূর্তে উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা হট্টগোলের কারণে কিছু সময় ফলাফল ঘোষণা বন্ধ রেখে শেষ কেন্দ্রের ফলাফলগুলো দ্রুত ঘোষণা করেন। তাতে রিফাতের ৫০ হাজার ৩১০ এবং সাক্কুর ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট হওয়ায় রিটার্নিং অফিসার বেসরকারিভাবে রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। সাক্কু এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। আগে থেকেই দুজনের ফলাফলের মধ্যে যে ধরনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছিল তাতে জয়-পরাজয়টি শেষ মুহূর্তে কেবল সামান্য ভোটে নির্ধারিত হবে, সেটি অনুমান করা যাচ্ছিল, ঘটেছেও তা-ই। রিফাত হেরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। শেষ ৪-৫টি কেন্দ্রের ফলাফলেই চূড়ান্ত বিজয়ী বা পরাজিত হওয়ার ভাগ্য নির্ধারণ করছিল। সাক্কু যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলো লিখিতভাবে করলে নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারে। কিন্তু ইভিএমের কেন্দ্রভিত্তিক গণনা করা ফলাফল সেই মুহূর্তে সাক্কুর দাবি মোতাবেক পরিবর্তন করার সুযোগ বা প্রয়োজনীয়তা রিটার্নিং কর্মকর্তার থাকার কোনো কারণ দেখি না।
তা ছাড়া, সিইসি এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় অবস্থান কারও অজানা নয়। আমরা আশা করব, নতুন কমিশন সাক্কুর অভিযোগের যথার্থ জবাব দেবে। রিফাতের কর্মীদের ভোট গণনাস্থলে গিয়ে এভাবে মুহুর্মুহু স্লোগান ও উত্তেজনা ছড়ানোতে অংশ নেওয়া দেশের টিভি দর্শকদের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য হয়নি। এর ফলে সাক্কুর সমর্থকদের মধ্যেও অতি উত্তেজনা ছড়াতে সুযোগ করে দিয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি সেই মুহূর্তে মোটেও এভাবে মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রয়োজন ছিল না। রিটার্নিং কর্মকর্তার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের আহ্বান কিংবা নির্দেশ কাউকে না দিয়ে বসে থাকাটিও যথার্থ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরং স্বীয় উদ্যোগেই দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিল। কুসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত দিনগুলোতে কিংবা নির্বাচনের দিন কোথাও কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এটি সবার কাছেই প্রশংসনীয় হয়েছিল। প্রচারকালে মূল তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বাগ্যুদ্ধ, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু কারও কর্মীদের মধ্যে কোনো ছোটখাটো মারামারিও হয়নি বলেই সবাই জানে। কিন্তু শেষ কয়েকটি মুহূর্তে কেন স্লোগান-পাল্টা স্লোগানে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থকেরা এভাবে উত্তেজনা ছড়ালেন, সেটি কারও বোধগম্য নয়। তবে জয়-পরাজয়ের দোলাচলে যখন শেষ মুহূর্তে রিফাতের সমর্থকেরা গণনাস্থলে মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছিলেন তখন দর্শক হিসেবে আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, মাঠের শেষ ফলে রিফাতের জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই সমর্থকেরা এভাবে স্লোগান তুলেছিলেন। পরাজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকলে অনেকেই হয়তো ঘটনাস্থল ত্যাগ করতেন। কিন্তু তারপরও তাঁদের ওই উত্তেজনাটুকু না ছড়ালেই ভালো হতো। সাক্কু ফলাফলে ইঞ্জিনিয়ারিং করার অভিযোগ আনার তাৎক্ষণিক কোনো সুযোগ পেতেন না।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। কিন্তু ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪ জন, বাতিল হয়েছে ৩১৯ ভোট। মোট ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সিইসি নির্বাচন শেষে ঢাকা থেকে কুমিল্লার নির্বাচনের সামগ্রিক চিত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। বর্তমান কমিশনের জন্য এটা একটি টেস্ট কেস ছিল। সে ক্ষেত্রে তারা সামগ্রিক বিচারে উত্তীর্ণ হওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েছিল। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অংশীজনের সবাই যাঁর যাঁর দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করেছিলেন। এ কারণে নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং অংশগ্রহণও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে সব মহলই মনে করছে।
এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কুমিল্লার ভোটার এবং দেশের অনেকেরই অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। কারণ, কুমিল্লা একসময় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এই শহরে মরহুম আফজল খান এবং এমপি বাহারের দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব আওয়ামী লীগকে কখনো ঐক্যবদ্ধ হতে দেয়নি। ২০১২ সালে প্রথম কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হন সাক্কুর কাছে। পরের নির্বাচনেও সাক্কু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। দুই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হন। সেই পরাজয়ের নেতৃত্বেও আফজল-বাহার দ্বন্দ্বের কথা উচ্চারিত হয়েছে। সাক্কুকে বাহার আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এবার মনোনয়ন দানে বাহারের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন রিফাত। কিন্তু আওয়ামী লীগে মেয়র পদে নির্বাচন করার মতো যোগ্য প্রার্থীর অভাব ছিল না, যাঁরা অনায়াসে বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে পারতেন। কিন্তু সেটি ঘটেনি। এর ফলে সাধারণ ভোটার এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ যেমন ছিল, নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণেও তেমন স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায়নি। এর প্রভাব নির্বাচনে কতটা পড়েছে, সেটি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। তা ছাড়া, এমপি বাহার কুমিল্লায় থাকা না-থাকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি দেওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি একটা বড় ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করেছিল। রিফাতকে জয়ী করে ঢাকায় যাবেন—এমন বক্তব্য দানটিও তাঁর অবস্থান থেকে সেই সময় সচেতন ভোটারদের কাছে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে। সামগ্রিকভাবে কুসিক নির্বাচনে যা পাওয়া গেল, তাতে আওয়ামী লীগের সন্তুষ্ট হওয়ার খুব বেশি সুযোগ রয়েছে বলে মনে হয় না।
অন্যদিকে বিএনপির সাবেক দুই নেতা বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে নির্বাচনটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে সাহায্য করেছেন। তাঁরা দুজন না দাঁড়িয়ে একজন দাঁড়ালে রিফাতের গোমতী নদীতে ভেসে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। নির্বাচনী প্রচারকালেও রিফাতের বক্তব্য, আচরণ টিভি দর্শকদের খুব আকর্ষণ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। সত্যিকার অর্থে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে একটি জনবসতিপূর্ণ নগরীতে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রার্থী কুমিল্লাবাসী পেয়েছেন বলে হয় না। রিফাত দায়িত্ব নিয়ে কী করতে পারবেন, সেটি কেবল ৫ বছর পর বোঝা যাবে। সাক্কু ১০ বছর কী করতে পেরেছেন? তারপরও তাঁর এবার শক্ত অবস্থানের পেছনে ভোটারদের কী বার্তা পাওয়া গেল, সেটি কোন ধরনের ভোটার ও সমর্থক, তা কান দিয়ে শুনতে হবে, মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করতে হবে। ১৫ জুন কুমিল্লা শহরের পাশাপাশি পাঁচটি পৌরসভা, চারটি উপজেলা পরিষদ এবং দেড় শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেসব নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। ইভিএম নিয়ে ধীরগতির একটি অভিযোগ সর্বত্রই শোনা গেছে। তবে গণমাধ্যমে কুসিক নির্বাচন ওই সব নির্বাচনকে স্থান দেয়নি। তারপরও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে অনেকটাই সফল হয়েছে বলা যায়। আগামী দিনে আরও বেশ কিছু সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আউয়াল কমিশনকে ক্রমাগত পরীক্ষা দিয়েই যেতে হবে। সেই পরীক্ষায় তাদের সাফল্যেই জনগণের সাফল্য নির্ভর করবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে