শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডসহ নানা রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে কিছু রাসায়নিক পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আবার দেশে উৎপাদিত কিছু রাসায়নিক বিদেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু চট্টগ্রামের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর রাসায়নিক পণ্যের আমদানি-রপ্তানি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তার ফলে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেয় সিঙ্গাপুর বন্দর। এবার বিশ্বব্যাপী ডিজি কার্গো (বিপজ্জনক পণ্য) আমদানিতেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শিপিং এজেন্টরা রপ্তানিকারকদের ডিজি কার্গো-জাতীয় প্রায় ৩০ ধরনের পণ্য বুকিং বন্ধ রেখেছে। চীনের বিভিন্ন বন্দর আমদানি করা কাঁচামাল হিসেবে রাসায়নিক পরিবহন করতে চাচ্ছে না। এতে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। শিপিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন থেকে সব শিপিং এজেন্টকে জরুরি চিঠি দিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে ডিজি কার্গোর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখার জন্য বলা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, এর ফলে বিশ্বব্যাপী আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই চিঠির অনুলিপি বন্দর চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘বিভিন্ন শিপিং লাইন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভর্তি কোনো কনটেইনার পরিবহন করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক এজেন্ট আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে রাসায়নিক পণ্য পরিবহনে অনীহা প্রকাশ করছে। এতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি চালু রাখতে আমাদের সকল শিপিং এজেন্টকে বলেছি।’

শিপিং লাইনগুলো বাংলাদেশ থেকে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড পরিবহন করতে না চাওয়ায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে রপ্তানিযোগ্য ৫০০ কোটি টাকার হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের বাজার। এবার নতুন করে রাসায়নিক পণ্য আমদানিতেও অনীহা দেখাচ্ছে শিপিং এজেন্টরা। সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ ৯ জুন সব শিপিং লাইনকে নিরাপত্তা ও স্থানসংকটের কারণে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড পরিবহন না করতে বলেছে। চিঠির একটি অংশে, ৪ জুন বাংলাদেশে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের কথা বলা হয়েছে। এ সময় ডিজি (ডেনজারাস কার্গো) ইনভেনটরি লেবেল স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড গ্রহণ বন্ধ রাখতে বলেছে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ।

শিপিং এজেন্ট ওসান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (আমদানি) ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘প্রিন্সিপাল (মূল মালিক) থেকে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর ডিজি কার্গো-জাতীয় কিছু পণ্যের বুকিং নিষেধ করা হয়েছে। কিছু রাসায়নিক জাতীয় পণ্য তাই আপাতত পরিবহন করা যাচ্ছে না।’

শিপিং এজেন্টগুলো যেসব রাসায়নিক পণ্য ডিজি কার্গো পরিবহন করতে চাচ্ছে না সেগুলো হলো—বুথানল, মিথানল, ইথানল, প্রোপানল, বুথাইল অ্যাসিটেড, আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল, থিনার, ইথাইল অ্যাসিটেড, সলভেন্ট এমটিটি, মিথাইল ইথাইল কে টোন, সোডিয়াম নাইট্রেট, সালফার, ইথাইল আইএসও বুথাইল কিটোন, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম নাইট্রেড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ইথিলিন ডাই-অক্সাইড গ্যাস, সালফার ডাই-অক্সাইড গ্যাসসহ সব ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সূত্র জানিয়েছে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর চারটি ডিপোতে ১১১ কনটেইনার হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড আটকা পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল এসব পণ্য। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ওসিএল ডিপোতে ৪৯ কনটেইনার, পোর্টলিংক ডিপোতে ৩১ কনটেইনার, ইস্টার্ন লজিস্টিকে ২৪ কনটেইনার এবং কেএনটিতে ৭ কনটেইনার হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে যে রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়, সেগুলো ট্রান্সশিপমেন্ট সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বন্দর হয়ে যায়। বাংলাদেশে উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভিয়েতনাম, চীন, কোরিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারসহ ১৪টি দেশে রপ্তানি হয়।