রাজবাড়ীর পাংশায় বিজয়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরাজিত ইউপি সদস্যের সমর্থকদের ১০টি বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার বিকেলে উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। এ নির্বাচনে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে ফুটবল প্রতীক নিয়ে অংশ নেন আরিফুল ইসলাম পিল্টু। মোরগ প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করেন মো. মহাসিন উদ্দিন। বিজয়ী হন আরিফুল ইসলাম পিল্টু। পরবর্তী সময়ে ৮ জানুয়ারি পিল্টু তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিজয় মিছিল বের করেন। একপর্যায়ে মিছিলটি পরাজিত প্রার্থী মহাসিন উদ্দিনের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া শুরু করে। এ সময় হঠাৎ করেই মিছিলের মধ্য থেকে পিল্টুর সমর্থকেরা মহাসিনের সমর্থকদের অন্তত ১০টি বাড়ি ভাঙচুর করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুধু বসতবাড়ি ভাঙচুর নয় মহাসিনের সমর্থদের মারপিট করার পাশাপাশি তাঁদের দুটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেছেন হামলাকারীরা। তা ছাড়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক নামের এক ব্যক্তির স্ত্রী জাহানারা খাতুন রনি (৩০) নামের এক গর্ভবতী নারীকেও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে রনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান তাঁর শাশুড়ি সালেহা খাতুন।

জাহানারা খাতুন রনির শাশুড়ি সালেহা খাতুন (৬০) জানান, রনি ৪ মাসের গর্ভবতী। তাঁর পেটের ওপর লাথি দেওয়া হয়েছে এবং পায়ে কোপানো হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মহাসিন উদ্দিনের সমর্থক মো. দবির প্রামাণিক বলেন, ‘পিল্টুর লোকজন আমাদের ঘরের বারান্দার গ্রিল ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে ঘরের আসবাব ভাঙচুর করেন। ঘরের মধ্যে থাকা একটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেন।

মহাসিনের আরেক সমর্থক ফজলু প্রামাণিকের স্ত্রী এলিনা খাতুন বলেন, ‘মিছিলের সময় ২০০-৩০০ লোকজন আমাদের এলাকায় ঢুকে আমাদের অনেকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।’

নির্বাচনে পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী মো. মহাসিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছি। নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই। পিল্টু বিজয়ী হয়ে তাঁর কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে শনিবার বিকেলে বিজয় মিছিল করেন। মিছিলের সময় তাঁর কর্মী ও সমর্থকেরা আমার সমর্থক মসলেম প্রামাণিক, নূর আলী প্রামাণিক, আবু বক্কার প্রামাণিক, লালন শেখ, শহীদ কারিকর, ইউনুস কারিকর, সুজন খা, রিপন খুনকার, মতিন শেখ ও আফতাব প্রামাণিকের বাড়ি ভাঙচুর করে অর্থ লুটপাট করেছেন। এ ছাড়া শফিক শেখ ও আবু বক্কর প্রামাণিকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন। আমরা মামলা করেছি। এ হামলার বিচার চাই।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিজয়ী ইউপি সদস্য মো. আরিফুল ইসলাম পিল্টু বলেন, ‘আমি বিজয় মিছিল করেছি। কিন্তু আমার মিছিলের সময় কে বা কারা মহাসিনের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছেন তা আমি জানি না। আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ চাপাচ্ছেন তাঁরা।’

পাংশা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) উত্তম কুমার ঘোষ বলেন, ‘এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমিও ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙচুরের বিষয়টি দেখতে পাই।