মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
‘সরকার তো খালি টিভিত কয় বিদ্যুৎ শতভাগ বাড়াইছে। কিন্তু বিদ্যুৎ থাকে কতক্ষণ? খালি টিভিতে খবর দেখি, বাস্তবে আর বিদ্যুৎ সার্ভিস পাই না। অফিসোত ফোন দিলে ফোনও ধরে না। সামান্য বৃষ্টি হলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। খালি বছরে বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, সার্ভিসের খবর নাই।’ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের শফিকুল ইসলাম। গঙ্গাচড়ার মতোই অবস্থা রাজধানীসহ সারা দেশে। দিনে কমবেশি কয়েকবার লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকেরা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। চাহিদা অনুযায়ীই উৎপাদন হচ্ছে। বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে রাখতে হয়।
সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদার তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগ বিতরণ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। তারা বলছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এই ঘাটতি সমন্বয় করতে গিয়েই লোডশেডিং হচ্ছে। বিতরণ লাইনের সমস্যা ও ঝড়-বৃষ্টির কারণে সংকট আরও বেড়ে যায়।
চলতি মাসের ১২ তারিখে পিডিবির সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৫৬ মেগাওয়াট। প্রতিদিন বিদ্যুতের গড় চাহিদা ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। উৎপাদনও হচ্ছে ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এ হিসাব ঠিক থাকলে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকার কথা নয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পিডিবি দেশে লোডশেডিং আছে—এটা অস্বীকার করলেও মাঠপর্যায়ের তথ্য হচ্ছে দেশে লোডশেডিং আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। পিডিবি এখন চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করে খরচ কমাতে চাইছে। এ জন্যই লোডশেডিং হচ্ছে।’
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। রাজধানী এবং ঢাকার বাইরের কয়েকটি স্থানে খোঁজ নিয়েছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, গত কয়েক দিন দিনে তিন থেকে চারবার লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকেরা।
বনশ্রীর জি ব্লকের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা শোয়েব আহম্মেদ। তিনি আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘তিন দিন ধরে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দিনে দুই-তিনবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। বাসায় জেনারেটর ও আইপিএস না থাকার কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে ছোট বাচ্চারা গরমে হাঁসফাঁস করে। সব সময় শুনি দেশে নাকি বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তাহলে লোডশেডিং কেন করা হয়?’
শোয়েবের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। সেখানকার পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘গ্রামে বসবাস করা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা প্রায় সময় জানান, একটু বাতাস বা আকাশ মেঘলা হলে বিদ্যুৎ চলে যায়। কখন আসে তার ঠিক-ঠিকানা থাকে না।’
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে খোঁজ নেওয়া হয়েছিল সেখানকার পরিস্থিতি জানতে। বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন গড়ে ২-৩ বার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েন তাঁরা। পৌর এলাকার সফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বৃষ্টি দেখা দিলেই বিদ্যুতের ভেলকিবাজি আরম্ভ হয়। বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ থাকবে না—এটা কোন নিয়ম? আর পল্লী বিদ্যুতে ফোন দিলে শুধু ব্যস্ত কয়।’
জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুতের মতলব উত্তর জোনাল অফিসের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকলে লাইন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বৃষ্টির শুরুতেই সংযোগ বন্ধ করা হয়।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের লোকজনও শিকার হচ্ছেন লোডশেডিংয়ের। সেখানকার কর্তৃপক্ষও দায় চাপাচ্ছে প্রকৃতির ওপর। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ শাহগঞ্জ শাখা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঝড়বৃষ্টি ও বাতাসে বিদ্যুতের তারের ওপর গাছের ডালপালা পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ঝড়বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চলে যায়।’
লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ একবার গেলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায় আবার ফিরে আসতে। ঝোড়ো হাওয়া হলে তো কথাই নেই। কখনো কখনো বিদ্যুৎ আসতে এক থেকে দুই দিনও লেগে যায়। পৌরসভার কাঞ্চনপুর গ্রামের গ্রাহক আকলিমা বেগম বলেন, ‘আগে বাতাস বাড়লে ঘর-দরজা ভেঙে পড়া নিয়ে আতঙ্কে থাকতাম। এখন সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া।’
রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলমবিদিতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন সুজন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় চার দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। আজকে আমি রংপুর শহরে এসে আমার ব্যবহার করা মুঠোফোনটি চার্জ করলাম। বিদ্যুতের কারণে আমার ইউনিয়নের লোকজন এবার বোরো খেতে সেচ দিতে খুব সমস্যায় পড়েছিল।’
নীলফামারীর ডিমলা দোকান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরোয়ার জাহান সোহাগ জানান, বিদ্যুতের বিড়ম্বনায় মানুষ অতিষ্ঠ। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরের ইলেকট্রনিক পণ্য নষ্ট হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এমন অভিযোগ করলেও পিডিবির দাবি, দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। পিডিবির জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন মেরামত করতে গিয়ে অনেক সময় বিদ্যুৎ-সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করতে হয়। বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই।’
পিডিবি স্বীকার না করলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বলছে, চাহিদার তুলনায় পিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না তারা। তাদের বর্তমান গ্রাহক ৩ কোটি ২৭ লাখ। এই গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে হলে প্রয়োজন প্রতিদিন ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু পিডিবি দিতে পারছে ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৫০০ মেগাওয়াট।
এই ঘাটতি সমন্বয় করতে গিয়েই দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানান আরইবির বিতরণ ও পরিচালন বিভাগের সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় আমাদের প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। এই সংকট আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তখন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আনা গেলে এই সমস্যা আর থাকবে না।’
ঘাটতির পাশাপাশি বিতরণব্যবস্থা ও প্রকৃতিকেও দায়ী করলেন দেবাশীষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে আমাদের বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন অনেক জায়গায় গাছপালার আশপাশ দিয়ে টানা হয়। ঝোড়ো হাওয়া কিংবা কালবৈশাখীর সময়ে আমরা সতর্কতা হিসেবে অনেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখি।’
ম তামিম বলেন, ‘উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ওপর থেকে নজর সরে গেছে। এটা সত্য যে আমাদের সঞ্চালন লাইনগুলো দুর্বল ও বেশ পুরোনো। সরকারের উচিত এখন বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনে বেশি বিনিযোগ করা।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), মতলব উত্তর (চাঁদপুর), লক্ষ্মীপুর, গঙ্গাচড়া (রংপুর) ও ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি]
বিদ্যুৎ বিভ্রাট সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
‘সরকার তো খালি টিভিত কয় বিদ্যুৎ শতভাগ বাড়াইছে। কিন্তু বিদ্যুৎ থাকে কতক্ষণ? খালি টিভিতে খবর দেখি, বাস্তবে আর বিদ্যুৎ সার্ভিস পাই না। অফিসোত ফোন দিলে ফোনও ধরে না। সামান্য বৃষ্টি হলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। খালি বছরে বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, সার্ভিসের খবর নাই।’ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের শফিকুল ইসলাম। গঙ্গাচড়ার মতোই অবস্থা রাজধানীসহ সারা দেশে। দিনে কমবেশি কয়েকবার লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকেরা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। চাহিদা অনুযায়ীই উৎপাদন হচ্ছে। বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে রাখতে হয়।
সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদার তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগ বিতরণ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। তারা বলছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এই ঘাটতি সমন্বয় করতে গিয়েই লোডশেডিং হচ্ছে। বিতরণ লাইনের সমস্যা ও ঝড়-বৃষ্টির কারণে সংকট আরও বেড়ে যায়।
চলতি মাসের ১২ তারিখে পিডিবির সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৫৬ মেগাওয়াট। প্রতিদিন বিদ্যুতের গড় চাহিদা ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। উৎপাদনও হচ্ছে ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এ হিসাব ঠিক থাকলে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকার কথা নয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পিডিবি দেশে লোডশেডিং আছে—এটা অস্বীকার করলেও মাঠপর্যায়ের তথ্য হচ্ছে দেশে লোডশেডিং আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। পিডিবি এখন চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করে খরচ কমাতে চাইছে। এ জন্যই লোডশেডিং হচ্ছে।’
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। রাজধানী এবং ঢাকার বাইরের কয়েকটি স্থানে খোঁজ নিয়েছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, গত কয়েক দিন দিনে তিন থেকে চারবার লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকেরা।
বনশ্রীর জি ব্লকের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা শোয়েব আহম্মেদ। তিনি আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘তিন দিন ধরে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দিনে দুই-তিনবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। বাসায় জেনারেটর ও আইপিএস না থাকার কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে ছোট বাচ্চারা গরমে হাঁসফাঁস করে। সব সময় শুনি দেশে নাকি বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তাহলে লোডশেডিং কেন করা হয়?’
শোয়েবের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। সেখানকার পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘গ্রামে বসবাস করা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা প্রায় সময় জানান, একটু বাতাস বা আকাশ মেঘলা হলে বিদ্যুৎ চলে যায়। কখন আসে তার ঠিক-ঠিকানা থাকে না।’
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে খোঁজ নেওয়া হয়েছিল সেখানকার পরিস্থিতি জানতে। বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন গড়ে ২-৩ বার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েন তাঁরা। পৌর এলাকার সফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বৃষ্টি দেখা দিলেই বিদ্যুতের ভেলকিবাজি আরম্ভ হয়। বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ থাকবে না—এটা কোন নিয়ম? আর পল্লী বিদ্যুতে ফোন দিলে শুধু ব্যস্ত কয়।’
জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুতের মতলব উত্তর জোনাল অফিসের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকলে লাইন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বৃষ্টির শুরুতেই সংযোগ বন্ধ করা হয়।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের লোকজনও শিকার হচ্ছেন লোডশেডিংয়ের। সেখানকার কর্তৃপক্ষও দায় চাপাচ্ছে প্রকৃতির ওপর। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ শাহগঞ্জ শাখা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঝড়বৃষ্টি ও বাতাসে বিদ্যুতের তারের ওপর গাছের ডালপালা পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ঝড়বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চলে যায়।’
লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ একবার গেলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায় আবার ফিরে আসতে। ঝোড়ো হাওয়া হলে তো কথাই নেই। কখনো কখনো বিদ্যুৎ আসতে এক থেকে দুই দিনও লেগে যায়। পৌরসভার কাঞ্চনপুর গ্রামের গ্রাহক আকলিমা বেগম বলেন, ‘আগে বাতাস বাড়লে ঘর-দরজা ভেঙে পড়া নিয়ে আতঙ্কে থাকতাম। এখন সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া।’
রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলমবিদিতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন সুজন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় চার দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। আজকে আমি রংপুর শহরে এসে আমার ব্যবহার করা মুঠোফোনটি চার্জ করলাম। বিদ্যুতের কারণে আমার ইউনিয়নের লোকজন এবার বোরো খেতে সেচ দিতে খুব সমস্যায় পড়েছিল।’
নীলফামারীর ডিমলা দোকান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরোয়ার জাহান সোহাগ জানান, বিদ্যুতের বিড়ম্বনায় মানুষ অতিষ্ঠ। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরের ইলেকট্রনিক পণ্য নষ্ট হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এমন অভিযোগ করলেও পিডিবির দাবি, দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। পিডিবির জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন মেরামত করতে গিয়ে অনেক সময় বিদ্যুৎ-সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করতে হয়। বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই।’
পিডিবি স্বীকার না করলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বলছে, চাহিদার তুলনায় পিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না তারা। তাদের বর্তমান গ্রাহক ৩ কোটি ২৭ লাখ। এই গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে হলে প্রয়োজন প্রতিদিন ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু পিডিবি দিতে পারছে ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৫০০ মেগাওয়াট।
এই ঘাটতি সমন্বয় করতে গিয়েই দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানান আরইবির বিতরণ ও পরিচালন বিভাগের সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় আমাদের প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। এই সংকট আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তখন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আনা গেলে এই সমস্যা আর থাকবে না।’
ঘাটতির পাশাপাশি বিতরণব্যবস্থা ও প্রকৃতিকেও দায়ী করলেন দেবাশীষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে আমাদের বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন অনেক জায়গায় গাছপালার আশপাশ দিয়ে টানা হয়। ঝোড়ো হাওয়া কিংবা কালবৈশাখীর সময়ে আমরা সতর্কতা হিসেবে অনেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখি।’
ম তামিম বলেন, ‘উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ওপর থেকে নজর সরে গেছে। এটা সত্য যে আমাদের সঞ্চালন লাইনগুলো দুর্বল ও বেশ পুরোনো। সরকারের উচিত এখন বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনে বেশি বিনিযোগ করা।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), মতলব উত্তর (চাঁদপুর), লক্ষ্মীপুর, গঙ্গাচড়া (রংপুর) ও ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি]
বিদ্যুৎ বিভ্রাট সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে