দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম ভারী শিল্প মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস্ লিমিটেডে ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মিলের ডোঙায় আখ ফেলে মাড়াইয়ের উদ্বোধন করেন বিএসএফআইসির প্রধান প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম। এদিকে চলতি মৌসুমে মূল্যবৃদ্ধি করায় কৃষকেরা আবার আখ চাষে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস্ লি. এ চলতি মাড়াই মৌসুমে ৪০ দিনে ৫০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চিনি আহরণের গড় ৬ শতাংশ হলে এ পরিমাণ উৎপাদিত হবে। এ বছর মিলে প্রতি মণ আখের মূল্য ধরা হয়েছে ২২০ টাকা। আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম। 

মিলের রেকর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ মাড়াই মৌসুমে আখের অভাবে মাত্র ২৮ দিনে চালু ছিল মিল। কৃষকেরা মাঠে আখের আবাদ না করায় মিলটি সব থেকে কম সময় উৎপাদনে ছিল এ মৌসুমে। ২৮ দিনে ৩৫ হাজার ৩৬০ টন আখ মাড়াই করে ১ হাজার ৭৪৫ টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছিল। ওই বছর আখের মণ ছিল ১৮০ টাকা। এর আগে প্রতি মৌসুমে মিল এলাকার কৃষকেরা ৮ থেকে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আখের আবাদ করতেন। কিন্তু নানা প্রতিকূল পরিবেশ এবং অল্প সময়ে বিভিন্ন লাভজনক ফসল চাষ হওয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছিল এর আবাদ। চলতি মৌসুমে মূল্যবৃদ্ধি করায় কৃষকেরা আবার আখ চাষে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

উপজেলার খামার মন্দিয়া গ্রামের আখচাষি দলিল উদ্দীন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর আখের দাম বাড়ায় আমরা অনেক খুশি। আমার দুই বিঘা জমিতে আখ আছে, মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় আরও দুই বিঘায় চাষ করব। দাম বাড়ার কারণে এলাকার অনেকে এবার চাষ করছেন।’ 

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলসের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) গৌতম কুমার মণ্ডল বলেন, চলতি মৌসুমে ৫ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত এক মাসে ২ হাজার ৫০ একর জমিতে চাষ হয়েছে। সামনে এক মাসে আরও ১ হাজার একর জমিতে কৃষকেরা আখ চাষ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মাঠে দণ্ডায়মান ৩ হাজার একরের মধ্যে প্রায় ২ হাজার একর মুড়ি আখ থাকবে। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমে আখ রোপণ ও চিনি উৎপাদন বাড়বে। আখের মূল্য বেশি পাওয়ায় এ বছর কৃষকেরা আবাদ করার দিকে ঝুঁকছেন বলেও যোগ করেন এ কর্মকর্তা। 

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ১৯৬৫ সালে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০৭.৯৩ একর নিজস্ব জমির ওপর মোবারকগঞ্জ সুগার মিলটি স্থাপন করে নেদারল্যান্ডস সরকার। এর মধ্যে ২০.৬২ একর জমিতে কারখানা, ৩৮. ২২ একর জমিতে কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক কলোনি, ২৩. ৯৮ একরে পুকুর এবং ১০৭ একর জমিতে পরীক্ষামূলক আখের খামার করা হয়। এ ছাড়া ১৮.১২ একর জমিজুড়ে রয়েছে সাবজোন অফিস ও আখ ক্রয়কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠাকালে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০ কর্মদিবস আখমাড়াই চলে। লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় ১৯৬৭-৬৮ মাড়াই মৌসুম থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু করে মিলটি। ঝিনাইদহের ৬ উপজেলা ছাড়াও যশোরের দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত মিলে আটটি জোনের আওতায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ একর। এ ছাড়া আখ ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে ৪৮টি।

মধুখালী (ফরিদপুর): গতকাল শুক্রবার বিকেলে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে ফরিদপুর সুগার মিলস্ লিমিটেডে ২০২৩-২৪ (৩৮ তম) আখমাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই চিনিকলে ৫০ দিনে ৫০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ১২৫ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছে ৬.২৫ শতাংশ। চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান শেখ শোয়েবুল আলম।