মামুনুর রশীদ নাট্যব্যক্তিত্ব
রাজধানীসহ সারা দেশে একটি জ্বলন্ত সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় বহুবার লিখেছি কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে জবাব দেয়নি। আশা করছি এ লেখার পর বিষয়টির মীমাংসা না হলেও অন্তত নীতিনির্ধারকেরা একটা প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। আমরা তখন বুঝতে পারব কেনইবা এটা হচ্ছে না, প্রতিবন্ধকতা কত বড় যে দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আজকে রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার বাইরেও যানজট একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটের সমস্যা সমাধানে ট্রাফিক পুলিশ, ট্রাফিক সার্জেন্ট প্রাণপণে চেষ্টা করে যান। এই বিপুল যানবাহনের জন্য সেই প্রাচীন যুগের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা দিয়ে কি সম্ভব? ট্রাফিক পুলিশ দুই হাত তুলে যানবাহন ও জন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। একটি আধুনিক শহরে এটা কী করে যৌক্তিক হতে পারে? গত নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিশুকিশোরেরা ট্রাফিকব্যবস্থাকে নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে একটা বড় কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। তখন বোঝা গিয়েছিল যে ঢাকার তীব্র যানজটের সমস্যা দূর করা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারপর অনেক সময় চলে গেছে, প্রতিদিন পথে-ঘাটে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। ঈদের সময় এই মৃত্যুর হার অনেকাংশে বেড়ে যায়। তবু শহরের বহু বছরের পুরোনো ট্রাফিক লাইটগুলো নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। লাল, নীল, হলুদ বাতিগুলো তখন জ্বলে না। কেন জ্বলে না, এই প্রশ্নের কোনো জবাবও পাওয়া যায় না। যখন জ্বলত তখন দেখা যেত লাল আলোতে গাড়ি চলে, সবুজ আলোতে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সারা বিশ্বের যে নিয়মনীতি বা বিধিমালা সেটা বারবার ভঙ্গ হয়েছে। আজকের ঢাকা শহর এবং বিভিন্ন জেলা শহরে বিপুল পরিমাণে গাড়ি চলাচল করে। দক্ষ, অদক্ষ গাড়িচালকেরা নিজেদের খামখেয়ালিতে সেই সনাতন ট্রাফিক নিয়মকে ভঙ্গ করে। শুধু মানুষ নয়, মানুষের ঘরবাড়ির ওপর দিয়েও গাড়ি চালিয়ে দিচ্ছে। কোনো কোনো শ্রমিকনেতা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনা পরীক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই চাপে কাজও হয়েছে। আজকের আধুনিক বিশ্বে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষই করা যায় না। সেখানে লাল, সবুজ, হলুদ বাতি জ্বলে এবং যেকোনো আইনভঙ্গের ছবি ক্যামেরায় ধরা হয়। পরের দিন প্রত্যুষে সেই গাড়ির মালিকের কাছে জরিমানাসহ কোর্টের আদেশ জারি হয়ে যায়। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। শহরগুলোকে ভিআইপি শহরে পরিণত করার জন্য এই ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে।
দেশের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বিশেষ ধরনের শব্দ করে ট্রাফিক সিস্টেমকে নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালিত করছেন। মানুষ, গাড়ি সব দাঁড়িয়ে থাকত আর ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা খুব সহজেই সবার আগে গন্তব্যে পৌঁছে যেতেন। তাঁদের গাড়ির সঙ্গে থাকত পুলিশের বহর, তাঁদের হাতে লাল সিগন্যাল বাতি এবং সমস্ত আইনকানুন প্রত্যাখ্যান করে তাঁরা চলে যেতেন সবার আগে। কিন্তু ২০২৪ সালে যখন শোনা যায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ও বিভিন্ন স্থানে ক্যামেরা বসানো হয়েছে, সেখানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এত কঠিন হবে কেন? নাগরিকেরা নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে থাকে কিন্তু এই বিষয়ে তাদের কোনো আওয়াজ তুলতে দেখা যায় না। ঢাকা শহর পৃথিবীর বিরল একটি শহর। যেখানে আধুনিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নেই। কিন্তু যানজট তীব্রভাবে বেড়ে চলেছে। শুধু যানজট নয়, দুর্ঘটনাও একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এ বিষয়ে কেনইবা কর্তৃপক্ষ এবং সচেতন নাগরিকেরা নিশ্চুপ, তা রহস্যময়!
আজকে যদি পৃথিবীর বড় শহরগুলোতে ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকে তাহলে যানবাহনচালকেরাই একটা বিদ্রোহ করে বসবেন। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায় যানবাহনচালকেরা সিগন্যাল না থাকাতে যেন খুবই খুশি। একদা সিগন্যাল না মানার জন্য প্রচুর জরিমানা হতো, এখন স্থানীয়ভাবে ট্রাফিক পুলিশদের সঙ্গে তা মিটিয়ে নেওয়া যায়। এ কারণেই হয়তো সিগন্যাল না মানাটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদা ব্যাংকক, কলকাতায় তীব্র যানজট হতো। কিন্তু কঠোরভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সেই যানজট অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন জাগে, আদৌ আমাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সিস্টেমে কোনো বিশেষত্ব তৈরি হয়েছে কি না? ধানমন্ডির ৯/এ রোডে একসময় কোনো যানজটই ছিল না। কিন্তু তারপর একের পর এক স্কুল, কোচিং সেন্টার গড়ে উঠতে থাকে। সম্প্রতি একটি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ায় এই রাস্তাটি মাঝে মাঝে স্থবির হয়ে পড়ে। দিনে স্কুল, কলেজ, ক্লিনিক এবং রাতে কোচিং সেন্টারের ফলে এই যানজট দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
চালকেরা সব সময়ই সাবধানবাণী করে থাকে যে এই সময়গুলোতে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না। যানজটে আটকে যেতে হবে।
যানজটের আরেকটা প্রধান কারণ হচ্ছে পায়ে চালানো রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং অটোবাইক—এগুলো সমস্ত রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। শুধু ঢাকায়ই নয়, ঢাকার বাইরের জেলা শহর, মফস্বল শহরসহ সর্বত্রই তাদের দাপট। অল্প টাকার বিনিয়োগের ফলে এই যানবাহনগুলো কেনা যায়, ফলে বেকার যুবকেরা কোনো কিছু না ভেবেই এগুলো নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। যার ভয়াবহ পরিণতি নগরের বিশৃঙ্খলা প্রতিদিনই বাড়ছে। রাজনীতিবিদেরা ভোটের আশায় এই ব্যবস্থাকে চালু করে রেখেছেন। প্রতিদিন রাস্তার অবস্থা চিন্তা না করেই কর্তৃপক্ষ ও মোটরগাড়ির লাইসেন্স নতুন নতুন রুট পারমিট দিচ্ছে। বাস, ট্রাকস্টেশন গড়ে ওঠার পেছনে সেখানে ব্যাপক ঘুষ আদান-প্রদানের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। বিআরটিএর কেন্দ্রগুলোতে একশ্রেণির দালালের উপস্থিতি লক্ষণীয়। রাস্তার অপ্রতুলতা সত্ত্বেও বিপুল গাড়ি প্রতিদিন রাস্তায় নামছে। গত সরকারের আমলে গাড়ি বেচাকেনার অনেক শোরুম গড়ে উঠেছে। সেই গাড়িগুলো এত প্রশস্ত ও লম্বা বলে রাস্তায় অন্যদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
রাজউক কর্তৃপক্ষ কোনো কিছু বিবেচনায় না রেখেই রাস্তার পাশে বড় বড় অট্টালিকা, বিপণিকেন্দ্র এবং অ্যাপার্টমেন্টের অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে। সবটাই হচ্ছে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে। পান্থপথে একটি বড় বিপণিকেন্দ্র থাকার পরেও তার পাশে পানি ভবন নামে একটি সরকারি স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন শত শত গাড়ির আনাগোনা দেখা যায়। একই পথে অনেকগুলো হাসপাতাল, যে হাসপাতালগুলোতে সব সময়ই রোগী এবং রোগীর লোকজন চলাফেরা করেন গাড়িতে। বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করে। এখানে কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে তা রাজউক কর্তৃপক্ষ হিসাব রাখার প্রয়োজনই বোধ করে না। তাতে এটাই প্রতীয়মান হয়, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ পুলিশের অধীনে একটি সংস্থামাত্র, যার নিয়ন্ত্রণে কোনো ট্রাফিক বিশেষজ্ঞ নেই। যার প্রধান হিসেবে কাজ করেন তাঁরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তাঁদের প্রায়ই বদলি হয়ে যেতে হয়। কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা সেখানে নেই।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও একটি আধুনিক ট্রাফিকব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অথচ অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ট্রাফিক অনেক বেশি। এই সংস্থার সঙ্গে রাজউক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেখা যায়, কারও সঙ্গে কারও তেমন কোনো যোগাযোগ নেই এবং প্রত্যেকেই নিজেদের অ্যাজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত। এজেন্ডাটি প্রায়ই অর্থনৈতিক। কারও মধ্যে দেশের উন্নয়ন বা সৌন্দর্য্যর স্বপ্ন নেই। স্বপ্ন একটিই, তা হলো ব্যক্তিগত এবং অর্থনৈতিক, এর জলজ্যান্ত প্রমাণ ওয়াসা এবং তিতাস গ্যাস কোম্পানি। উচ্চপদস্থ থেকে একেবারেই নিম্নপদস্থ কর্মচারীর মধ্যে অর্থ ভাগাভাগির এক মহোৎসব লক্ষণীয়। তেমনি সিটি করপোরেশন বা পৌরসভাগুলোতেও একই অবস্থা। এসবের মধ্য দিয়েই যাঁরা গাড়ির মালিক ও চালক, তাঁদের মধ্যে গত সত্তর-আশি বছরেও কোনো সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। একটা দেশকে চিনতে হলে সেই দেশের পথঘাটের শৃঙ্খলা প্রথমেই চোখে পড়ে। এর জন্য নাগরিক সমাজ, গাড়ির চালক, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এবং সবশেষে রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার (যারা শাসন করে এবং যারা বিরোধী দলে থাকে) প্রতিফলন ঘটে।
আজ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের মেনুফেস্টোতে ট্রাফিক সিস্টেমের ওপর কারও কোনো বক্তব্য নেই। ক্ষমতা দখলই একমাত্র উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত হয়। আজকে যখন সব বিষয়েই সংস্কার হচ্ছে, তখন এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারটির প্রয়োজন বোধ করছি। আশা করি, বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।
রাজধানীসহ সারা দেশে একটি জ্বলন্ত সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় বহুবার লিখেছি কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে জবাব দেয়নি। আশা করছি এ লেখার পর বিষয়টির মীমাংসা না হলেও অন্তত নীতিনির্ধারকেরা একটা প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। আমরা তখন বুঝতে পারব কেনইবা এটা হচ্ছে না, প্রতিবন্ধকতা কত বড় যে দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আজকে রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার বাইরেও যানজট একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটের সমস্যা সমাধানে ট্রাফিক পুলিশ, ট্রাফিক সার্জেন্ট প্রাণপণে চেষ্টা করে যান। এই বিপুল যানবাহনের জন্য সেই প্রাচীন যুগের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা দিয়ে কি সম্ভব? ট্রাফিক পুলিশ দুই হাত তুলে যানবাহন ও জন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। একটি আধুনিক শহরে এটা কী করে যৌক্তিক হতে পারে? গত নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিশুকিশোরেরা ট্রাফিকব্যবস্থাকে নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে একটা বড় কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। তখন বোঝা গিয়েছিল যে ঢাকার তীব্র যানজটের সমস্যা দূর করা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারপর অনেক সময় চলে গেছে, প্রতিদিন পথে-ঘাটে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। ঈদের সময় এই মৃত্যুর হার অনেকাংশে বেড়ে যায়। তবু শহরের বহু বছরের পুরোনো ট্রাফিক লাইটগুলো নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। লাল, নীল, হলুদ বাতিগুলো তখন জ্বলে না। কেন জ্বলে না, এই প্রশ্নের কোনো জবাবও পাওয়া যায় না। যখন জ্বলত তখন দেখা যেত লাল আলোতে গাড়ি চলে, সবুজ আলোতে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সারা বিশ্বের যে নিয়মনীতি বা বিধিমালা সেটা বারবার ভঙ্গ হয়েছে। আজকের ঢাকা শহর এবং বিভিন্ন জেলা শহরে বিপুল পরিমাণে গাড়ি চলাচল করে। দক্ষ, অদক্ষ গাড়িচালকেরা নিজেদের খামখেয়ালিতে সেই সনাতন ট্রাফিক নিয়মকে ভঙ্গ করে। শুধু মানুষ নয়, মানুষের ঘরবাড়ির ওপর দিয়েও গাড়ি চালিয়ে দিচ্ছে। কোনো কোনো শ্রমিকনেতা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনা পরীক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই চাপে কাজও হয়েছে। আজকের আধুনিক বিশ্বে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষই করা যায় না। সেখানে লাল, সবুজ, হলুদ বাতি জ্বলে এবং যেকোনো আইনভঙ্গের ছবি ক্যামেরায় ধরা হয়। পরের দিন প্রত্যুষে সেই গাড়ির মালিকের কাছে জরিমানাসহ কোর্টের আদেশ জারি হয়ে যায়। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। শহরগুলোকে ভিআইপি শহরে পরিণত করার জন্য এই ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে।
দেশের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বিশেষ ধরনের শব্দ করে ট্রাফিক সিস্টেমকে নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালিত করছেন। মানুষ, গাড়ি সব দাঁড়িয়ে থাকত আর ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা খুব সহজেই সবার আগে গন্তব্যে পৌঁছে যেতেন। তাঁদের গাড়ির সঙ্গে থাকত পুলিশের বহর, তাঁদের হাতে লাল সিগন্যাল বাতি এবং সমস্ত আইনকানুন প্রত্যাখ্যান করে তাঁরা চলে যেতেন সবার আগে। কিন্তু ২০২৪ সালে যখন শোনা যায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ও বিভিন্ন স্থানে ক্যামেরা বসানো হয়েছে, সেখানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এত কঠিন হবে কেন? নাগরিকেরা নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে থাকে কিন্তু এই বিষয়ে তাদের কোনো আওয়াজ তুলতে দেখা যায় না। ঢাকা শহর পৃথিবীর বিরল একটি শহর। যেখানে আধুনিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নেই। কিন্তু যানজট তীব্রভাবে বেড়ে চলেছে। শুধু যানজট নয়, দুর্ঘটনাও একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এ বিষয়ে কেনইবা কর্তৃপক্ষ এবং সচেতন নাগরিকেরা নিশ্চুপ, তা রহস্যময়!
আজকে যদি পৃথিবীর বড় শহরগুলোতে ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকে তাহলে যানবাহনচালকেরাই একটা বিদ্রোহ করে বসবেন। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায় যানবাহনচালকেরা সিগন্যাল না থাকাতে যেন খুবই খুশি। একদা সিগন্যাল না মানার জন্য প্রচুর জরিমানা হতো, এখন স্থানীয়ভাবে ট্রাফিক পুলিশদের সঙ্গে তা মিটিয়ে নেওয়া যায়। এ কারণেই হয়তো সিগন্যাল না মানাটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদা ব্যাংকক, কলকাতায় তীব্র যানজট হতো। কিন্তু কঠোরভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সেই যানজট অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন জাগে, আদৌ আমাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সিস্টেমে কোনো বিশেষত্ব তৈরি হয়েছে কি না? ধানমন্ডির ৯/এ রোডে একসময় কোনো যানজটই ছিল না। কিন্তু তারপর একের পর এক স্কুল, কোচিং সেন্টার গড়ে উঠতে থাকে। সম্প্রতি একটি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ায় এই রাস্তাটি মাঝে মাঝে স্থবির হয়ে পড়ে। দিনে স্কুল, কলেজ, ক্লিনিক এবং রাতে কোচিং সেন্টারের ফলে এই যানজট দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
চালকেরা সব সময়ই সাবধানবাণী করে থাকে যে এই সময়গুলোতে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না। যানজটে আটকে যেতে হবে।
যানজটের আরেকটা প্রধান কারণ হচ্ছে পায়ে চালানো রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং অটোবাইক—এগুলো সমস্ত রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। শুধু ঢাকায়ই নয়, ঢাকার বাইরের জেলা শহর, মফস্বল শহরসহ সর্বত্রই তাদের দাপট। অল্প টাকার বিনিয়োগের ফলে এই যানবাহনগুলো কেনা যায়, ফলে বেকার যুবকেরা কোনো কিছু না ভেবেই এগুলো নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। যার ভয়াবহ পরিণতি নগরের বিশৃঙ্খলা প্রতিদিনই বাড়ছে। রাজনীতিবিদেরা ভোটের আশায় এই ব্যবস্থাকে চালু করে রেখেছেন। প্রতিদিন রাস্তার অবস্থা চিন্তা না করেই কর্তৃপক্ষ ও মোটরগাড়ির লাইসেন্স নতুন নতুন রুট পারমিট দিচ্ছে। বাস, ট্রাকস্টেশন গড়ে ওঠার পেছনে সেখানে ব্যাপক ঘুষ আদান-প্রদানের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। বিআরটিএর কেন্দ্রগুলোতে একশ্রেণির দালালের উপস্থিতি লক্ষণীয়। রাস্তার অপ্রতুলতা সত্ত্বেও বিপুল গাড়ি প্রতিদিন রাস্তায় নামছে। গত সরকারের আমলে গাড়ি বেচাকেনার অনেক শোরুম গড়ে উঠেছে। সেই গাড়িগুলো এত প্রশস্ত ও লম্বা বলে রাস্তায় অন্যদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
রাজউক কর্তৃপক্ষ কোনো কিছু বিবেচনায় না রেখেই রাস্তার পাশে বড় বড় অট্টালিকা, বিপণিকেন্দ্র এবং অ্যাপার্টমেন্টের অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে। সবটাই হচ্ছে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে। পান্থপথে একটি বড় বিপণিকেন্দ্র থাকার পরেও তার পাশে পানি ভবন নামে একটি সরকারি স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন শত শত গাড়ির আনাগোনা দেখা যায়। একই পথে অনেকগুলো হাসপাতাল, যে হাসপাতালগুলোতে সব সময়ই রোগী এবং রোগীর লোকজন চলাফেরা করেন গাড়িতে। বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করে। এখানে কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে তা রাজউক কর্তৃপক্ষ হিসাব রাখার প্রয়োজনই বোধ করে না। তাতে এটাই প্রতীয়মান হয়, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ পুলিশের অধীনে একটি সংস্থামাত্র, যার নিয়ন্ত্রণে কোনো ট্রাফিক বিশেষজ্ঞ নেই। যার প্রধান হিসেবে কাজ করেন তাঁরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তাঁদের প্রায়ই বদলি হয়ে যেতে হয়। কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা সেখানে নেই।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও একটি আধুনিক ট্রাফিকব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অথচ অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ট্রাফিক অনেক বেশি। এই সংস্থার সঙ্গে রাজউক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেখা যায়, কারও সঙ্গে কারও তেমন কোনো যোগাযোগ নেই এবং প্রত্যেকেই নিজেদের অ্যাজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত। এজেন্ডাটি প্রায়ই অর্থনৈতিক। কারও মধ্যে দেশের উন্নয়ন বা সৌন্দর্য্যর স্বপ্ন নেই। স্বপ্ন একটিই, তা হলো ব্যক্তিগত এবং অর্থনৈতিক, এর জলজ্যান্ত প্রমাণ ওয়াসা এবং তিতাস গ্যাস কোম্পানি। উচ্চপদস্থ থেকে একেবারেই নিম্নপদস্থ কর্মচারীর মধ্যে অর্থ ভাগাভাগির এক মহোৎসব লক্ষণীয়। তেমনি সিটি করপোরেশন বা পৌরসভাগুলোতেও একই অবস্থা। এসবের মধ্য দিয়েই যাঁরা গাড়ির মালিক ও চালক, তাঁদের মধ্যে গত সত্তর-আশি বছরেও কোনো সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। একটা দেশকে চিনতে হলে সেই দেশের পথঘাটের শৃঙ্খলা প্রথমেই চোখে পড়ে। এর জন্য নাগরিক সমাজ, গাড়ির চালক, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এবং সবশেষে রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার (যারা শাসন করে এবং যারা বিরোধী দলে থাকে) প্রতিফলন ঘটে।
আজ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের মেনুফেস্টোতে ট্রাফিক সিস্টেমের ওপর কারও কোনো বক্তব্য নেই। ক্ষমতা দখলই একমাত্র উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত হয়। আজকে যখন সব বিষয়েই সংস্কার হচ্ছে, তখন এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারটির প্রয়োজন বোধ করছি। আশা করি, বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে