অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবার দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ছড়িয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ সারা দেশে। অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যু হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও লাখ ছুঁইছুঁই। তবে ঢাকার বাইরে এবার ডেঙ্গুর বাহক এডিসের ভয়াবহ দাপট দেখা গেছে সাত জেলায়। এর মধ্যে পটুয়াখালী ও পিরোজপুরের ৭০ শতাংশ বাড়িতেই এডিস মশা পাওয়া গেছে। বিষয়টিকে আশঙ্কাজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ন্যাশনাল ম্যালেরিয়া এলিমিনেশন অ্যান্ড এডিস ট্রান্সমিটেড ডিজিস কন্ট্রোল প্রোগ্রামের এক জরিপে দেশের সাত জেলার এডিস মশার ঘনত্বের চিত্র উঠে এসেছে। এই জেলাগুলো হলো রাজশাহী, যশোর, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও সিলেট।
জরিপের তথ্য বলছে, রাজশাহী নগরীর ৭, ৮, ১০, ১৩ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। নগরীতে এডিসের লার্ভার গড় ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এই নগরীর ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ কনটেইনারে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
যশোরে ৫৫ শতাংশ বাড়িতেই এডিস মশার বসবাস। যশোর পৌরসভায় এডিসের লার্ভার ঘনত্ব ৮০ শতাংশ, যা ঢাকার চেয়ে বেশি। তবে এই শহরে কনটেইনার ইনডেক্স তুলনামূলক কম, ১৬ দশমিক ২ শতাংশ।
বরিশাল বিভাগে পটুয়াখালী জেলার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। এখানে ৭০ শতাংশ বাড়িতেই এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এডিসের লার্ভার ঘনত্ব ৯৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। কনটেইনার ইনডেক্স ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ। পিরোজপুর জেলা শহরেও ৭০ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার বসবাস। এডিসের লার্ভার ঘনত্ব ৭৫ দশমিক ২১ শতাংশ। এখানে কনটেইনার ইনডেক্স ৫০ শতাংশ।
জরিপের তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম নগরীর ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার বিস্তার ঘটেছে। এডিসের লার্ভার ঘনত্ব ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে কনটেইনার ইনডেক্স ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
সিলেট নগরীর ৪০ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার বিস্তার দেখা গেছে। এডিসের লার্ভার ঘনত্ব ৪০ শতাংশ। রাঙামাটিতেও পৌঁছে গেছে এডিস মশা। এই জেলার ২২ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশা পাওয়া গেছে। এডিসের লার্ভার ঘনত্ব ৩৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশব্যাপী মানুষের আন্তসংযোগ বেড়েছে। তাই সারা দেশে এডিস মশা ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিকল্প নেই আপাতত।
৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ২২৮৮
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ হাজার ২৮৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩১২ জনে, মৃত্যু হয়েছে ৪৪৪ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ৮৯৯ জন ঢাকার এবং ১ হাজার ৩৮৯ জন ঢাকার বাইরের। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮ হাজার ৬৬১ জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৮০৪ জন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪ হাজার ৮৫৭ জন।