শাইখ সিরাজ
একটা সময় তর্ক ছিল—‘খাঁটি গরুর দুধ’ নাকি ‘গরুর খাঁটি দুধ’। সেই আশির দশকে টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে গিয়ে শিখেছি এবং শিখিয়েছি যে গরুটা তো খাঁটিই, দুধে পানি মেশানোর জন্য বলা হতো ‘দুধটা খাঁটি না’। অর্থাৎ দুধের খাঁটিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু সময়ের স্রোতে এখন ‘গরু’টা খাঁটি কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে।
শুধু তা-ই নয়, ‘খাঁটি’ শব্দটিই যেন এখন বহু দূরে অবস্থান করছে। কোন পণ্যটি খাঁটি আর কোনটি নয়, সেটা খুঁজে পেতে বিশ্বাসের ওপর ভর করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। খাঁটির প্রশ্নে সারা দেশের মানুষেরই বিশ্বাস প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। কারণ, এখন খাঁটি যত দ্রুত হাঁটে, ভেজাল হাঁটে তার চেয়ে দ্রুত।
যাহোক, এই ঢাকা শহরে মানুষের ঘরে খাঁটি দুধ পৌঁছে দিতে বহুসংখ্যক দুগ্ধখামার গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে খামারপল্লি। এমনকি তিনতলা ফ্ল্যাট বাড়িতেও গরুর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। ভোক্তা বা ক্রেতাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দুধ দোহন করা হয়। ভোক্তা চোখ-কান খোলা রেখে খাঁটি দুধ খরিদ করেন। সেখানেও থেকে যায় দু-এক কথা। ওই সব গাভির খাদ্যের উপকরণ ও মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। খাদ্যের ভেজাল-খাঁটির ওপরও নির্ভর করে দুধের শুদ্ধতা।
এই ভেজালের ভিড় ঠেলে কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ‘খাঁটি পণ্য’ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। এমন একজনের সন্ধান পেয়েছিলাম বছর তিনেক আগে। তাঁর নাম মকবুল হোসেন। ছিলেন প্রকৌশলী। নামকরা প্রতিষ্ঠানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পেতেন লাখ টাকা বেতন। স্ত্রী শিক্ষক। বেশ সচ্ছলতায় দিন কাটছিল তাঁদের। একদিন শিশুসন্তানের জন্য কেনা দুধের মধ্যে পেলেন চিংড়ি!
টনক নড়ল মকবুলের। সন্তানের পাতে যদি নিরাপদ খাদ্য তুলে দিতে না-ই পারলেন, তবে সচ্ছলতা কিসের? চারটি গাভি কিনে নিজেই খামার গড়তে শুরু করলেন। চাকরি ছেড়ে নিজের জন্য তো বটেই, যতটা পারেন অন্য মানুষকেও খাঁটি পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করলেন।
মকবুল হোসেনের খামারের অভিজ্ঞতা ১১ বছরের। এই ১১ বছরে তিনি আয়োজন করেছেন দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল-ভেড়া পালন, সরিষার খাঁটি তেল-ঘি উৎপাদনসহ নানা রকম উৎপাদনমুখী কৃষি কার্যক্রম। চারটি গাভি থেকে এখন তাঁর খামারে শতাধিক গাভি। না, চারটি গাভির পর তিনি আর গাভি কেনেননি। সেই চারটি থেকেই বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে গাভির সংখ্যা বেড়েছে।
প্রতিদিন দুধ পাওয়া যায় হাজার লিটারের বেশি। সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুধ প্যাকেটজাত করে পৌঁছে দেন তালিকাভুক্ত ক্রেতাদের ঘরে ঘরে। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয়টি হলো, দুধের এই বাজার তিনি নিজে গড়ে তুলেছেন, যাকে বলা যেতে পারে কমিউনিটি মার্কেটিং।
আজকের দিনে এই উদ্যোগ অনেকে গ্রহণ করছে। সম্প্রতি হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে একটি প্রতিবেদনে প্রচার করেছিলাম গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত একটি পোলট্রি খামার নিয়ে। খামারটি গড়ে তুলেছেন কম্পিউটার প্রকৌশলী ইমরুল হাসান। তিনিও শতভাগ শুদ্ধতার শর্ত মাথায় রেখেই তাঁর বাণিজ্যিক উদ্যোগকে এগিয়ে নিচ্ছেন। ভোক্তার চাহিদা নিরূপণ করে বাজারটি তিনি নিজেই গড়েছেন। তাঁর উদ্যোগটিও ভোক্তার ঘরে অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত মুরগির মাংস পৌঁছে দেওয়ার।
যাহোক, প্রকৌশলী মকবুল নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে রপ্ত করেছেন অনেক কিছু। খাঁটি দুধ উৎপাদনের পূর্বশর্তই হচ্ছে গাভিকে পুষ্টিকর ও ভেজালমুক্ত খাদ্য খাওয়ানো। এ ক্ষেত্রে অন্যতম পুষ্টিকর উপাদান হলো মানসম্মত সরিষার খৈল। গাভির জন্য সরিষার খৈল সংগ্রহ করতে মকবুল হোসেন স্থাপন করেন তেল উৎপাদনের ঘানি। সেখানে তিনি উৎপাদন করছেন সরিষার তেল। যদিও তা বৈদ্যুতিক শক্তিতে চলে।
কিন্তু উৎপাদন প্রক্রিয়াটি ঐতিহ্যবাহী ও সনাতন। তিনি বলছিলেন, এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তেল তুলনামূলক অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। এতে এক কাজে দুই কাজ হচ্ছে। একদিকে খামারে গাভির খাদ্যচাহিদা পূরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সরিষার খৈল, অন্যদিকে ভোক্তার চাহিদা পূরণের জন্য আসছে সরিষার তেল। মকবুল জানালেন, তাঁর ওখানে দৈনিক প্রায় ৫০০ লিটার তেল উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদনের শতভাগ পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট ভোক্তার কাছে।
এরই মধ্যে এই শহরের অনেকে জেনে গেছেন, মকবুলের এই খাঁটি পণ্যের খামারের খবর। বিশেষ করে গুলশান, বসুন্ধরা, বারিধারা এলাকায় বড় একটা নেটওয়ার্ক রয়েছে তাঁর। তিনি যেমন ঘরে ঘরে খাঁটি পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন, তেমনি অনেকে নিয়মিত এখানে এসে এসব পণ্য সংগ্রহ করেন।
উদ্যোক্তা মকবুল মনে করেন, নির্ভেজাল পণ্যের বিষয়টি তাঁর নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত। খামারের প্রতিটি অংশে নিজেকে যুক্ত রাখেন তিনি। প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিতে একধরনের আবর্তন প্রচলিত রয়েছে। এখানে সেই অনুশীলনই যেন করেছেন মকবুল। খামারের গাভির পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য তিনি খৈলের উৎস হিসেবে তেলের ঘানি গড়ে তুলেছেন। অন্যদিকে দুধ থেকে তিনি ঘি তৈরি করছেন।
এই জায়গাগুলোতে তিনি যেমন ভ্যালু অ্যাড করেছেন, একইভাবে পণ্যকে ভেজালমুক্ত করার ক্ষেত্রেও রয়েছে একটি দূরদর্শী প্রয়াস।
এখানেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না মকবুল। গরু-ছাগল-ভেড়ার বিষ্ঠা থেকে তৈরি করছেন বায়োগ্যাস। বায়োগ্যাসেই মিটছে তার খামারের বিদ্যুতের চাহিদা। বলছিলেন, রাজধানীতে ছাদকৃষির সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে ছাদকৃষি গড়ছেন। এখানেও তিনি একটা ব্যবসার খোঁজ পেয়েছেন। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া অবশিষ্ট স্লারি তিনি রূপান্তর করবেন জৈব সারে। ছাদকৃষকদের কাছে তিনি সেই জৈব সার বিক্রি করবেন। এ ব্যাপারে চীন থেকে তিনি যন্ত্রপাতি আনার ব্যবস্থাও করেছেন।
আশার কথা হচ্ছে, নিরাপদ খাদ্যের কথা ভাবছেন অনেক তরুণ। তাঁরা বিষ বা রাসায়নিক প্রয়োগ না করে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে উদ্যোগী হচ্ছেন। সম্প্রতি ঢাকার মিরপুরের উদ্যোক্তা পারভীন আক্তারের ঘরের ভেতরে সবজি উৎপাদনের একটি প্রকল্প দেখার সুযোগ হয়েছিল। একটি পরিত্যক্ত বাড়ি ভাড়া নিয়ে চার তরুণ উদ্যোক্তা সেখানে গড়ে তুলেছেন ভার্টিক্যাল ফার্ম। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফার্ম ইমাজিনেশন’।
ঘরের ভেতরে হাইড্রোপনিক সিস্টেমে ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ে উৎপাদন হচ্ছে লেটুস, বক চয়, বেসিল, সেলারি, ক্যাপসিকাম, চেরি টমেটোসহ বেশ কয়েক রকমের সালাদ ও সবজি ফসল। এই আয়োজন উন্নত বিশ্বের সর্বাধুনিক কৃষি আয়োজনগুলোর মতোই। পরিমিত আলো ও তাপের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষায়িত এলইডি আলো। শতভাগ ‘গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস’ অনুসরণ করছেন অনেকে। ফলে ফসলের বিশুদ্ধতা নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকছে না। উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি উৎসাহব্যঞ্জক।
আধুনিক ও প্রযুক্তির কৃষিতে দারুণ আগ্রহী আমাদের তরুণেরা। শার্ট, প্যান্ট, জুতা পরেই দিব্যি কাজ করা যাচ্ছে সেখানে। তাঁদের হাত ধরে বাণিজ্যিক কৃষি বাড়ছে। বাণিজ্যিক কৃষিতে উদ্যোক্তা খামারির অভিজ্ঞতা, সচেতনতা যেমন বাড়ছে, একইভাবে প্রতিদিন বাড়ছে ভোক্তা সচেতনতা। খাঁটি পণ্যের জন্য ভোক্তারা এখন মরিয়া। এই সময়ে বিশ্বব্যাপীই খাদ্যপণ্যের উৎপাদনব্যবস্থার ভেতরে শুদ্ধতার অনুশীলনটি বাড়ছে।
মাছ চাষের ক্ষেত্রে বদ্ধ পানির চেয়ে চলমান ও স্রোতস্বিনী পানিতে মানসম্পন্ন খাদ্য উপকরণ দিয়ে মাছ চাষের জন্য পৃথিবীতে এসেছে নতুন চাষ কৌশল আইপিআরএস। সেখানেও মাছের শুদ্ধতা ও স্বাদ অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়াসটিই সবচেয়ে বড়। একইভাবে মুরগির মাংস উৎপাদনে শুদ্ধতার অনুশীলন চলছে। গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে শতভাগ উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা অনুসরণের এক নজির গড়েছেন প্রকৌশলী মকবুল। পাশাপাশি তাঁর দুধ, ঘি ও সরিষার তেল উৎপাদনের এই শুদ্ধতার চিত্রও দেখলাম। এই অনুশীলনগুলো এখন বাড়বে। এটিই সময়ের চাহিদা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
একটা সময় তর্ক ছিল—‘খাঁটি গরুর দুধ’ নাকি ‘গরুর খাঁটি দুধ’। সেই আশির দশকে টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে গিয়ে শিখেছি এবং শিখিয়েছি যে গরুটা তো খাঁটিই, দুধে পানি মেশানোর জন্য বলা হতো ‘দুধটা খাঁটি না’। অর্থাৎ দুধের খাঁটিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু সময়ের স্রোতে এখন ‘গরু’টা খাঁটি কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে।
শুধু তা-ই নয়, ‘খাঁটি’ শব্দটিই যেন এখন বহু দূরে অবস্থান করছে। কোন পণ্যটি খাঁটি আর কোনটি নয়, সেটা খুঁজে পেতে বিশ্বাসের ওপর ভর করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। খাঁটির প্রশ্নে সারা দেশের মানুষেরই বিশ্বাস প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। কারণ, এখন খাঁটি যত দ্রুত হাঁটে, ভেজাল হাঁটে তার চেয়ে দ্রুত।
যাহোক, এই ঢাকা শহরে মানুষের ঘরে খাঁটি দুধ পৌঁছে দিতে বহুসংখ্যক দুগ্ধখামার গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে খামারপল্লি। এমনকি তিনতলা ফ্ল্যাট বাড়িতেও গরুর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। ভোক্তা বা ক্রেতাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দুধ দোহন করা হয়। ভোক্তা চোখ-কান খোলা রেখে খাঁটি দুধ খরিদ করেন। সেখানেও থেকে যায় দু-এক কথা। ওই সব গাভির খাদ্যের উপকরণ ও মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। খাদ্যের ভেজাল-খাঁটির ওপরও নির্ভর করে দুধের শুদ্ধতা।
এই ভেজালের ভিড় ঠেলে কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ‘খাঁটি পণ্য’ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। এমন একজনের সন্ধান পেয়েছিলাম বছর তিনেক আগে। তাঁর নাম মকবুল হোসেন। ছিলেন প্রকৌশলী। নামকরা প্রতিষ্ঠানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পেতেন লাখ টাকা বেতন। স্ত্রী শিক্ষক। বেশ সচ্ছলতায় দিন কাটছিল তাঁদের। একদিন শিশুসন্তানের জন্য কেনা দুধের মধ্যে পেলেন চিংড়ি!
টনক নড়ল মকবুলের। সন্তানের পাতে যদি নিরাপদ খাদ্য তুলে দিতে না-ই পারলেন, তবে সচ্ছলতা কিসের? চারটি গাভি কিনে নিজেই খামার গড়তে শুরু করলেন। চাকরি ছেড়ে নিজের জন্য তো বটেই, যতটা পারেন অন্য মানুষকেও খাঁটি পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করলেন।
মকবুল হোসেনের খামারের অভিজ্ঞতা ১১ বছরের। এই ১১ বছরে তিনি আয়োজন করেছেন দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল-ভেড়া পালন, সরিষার খাঁটি তেল-ঘি উৎপাদনসহ নানা রকম উৎপাদনমুখী কৃষি কার্যক্রম। চারটি গাভি থেকে এখন তাঁর খামারে শতাধিক গাভি। না, চারটি গাভির পর তিনি আর গাভি কেনেননি। সেই চারটি থেকেই বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে গাভির সংখ্যা বেড়েছে।
প্রতিদিন দুধ পাওয়া যায় হাজার লিটারের বেশি। সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুধ প্যাকেটজাত করে পৌঁছে দেন তালিকাভুক্ত ক্রেতাদের ঘরে ঘরে। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয়টি হলো, দুধের এই বাজার তিনি নিজে গড়ে তুলেছেন, যাকে বলা যেতে পারে কমিউনিটি মার্কেটিং।
আজকের দিনে এই উদ্যোগ অনেকে গ্রহণ করছে। সম্প্রতি হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে একটি প্রতিবেদনে প্রচার করেছিলাম গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত একটি পোলট্রি খামার নিয়ে। খামারটি গড়ে তুলেছেন কম্পিউটার প্রকৌশলী ইমরুল হাসান। তিনিও শতভাগ শুদ্ধতার শর্ত মাথায় রেখেই তাঁর বাণিজ্যিক উদ্যোগকে এগিয়ে নিচ্ছেন। ভোক্তার চাহিদা নিরূপণ করে বাজারটি তিনি নিজেই গড়েছেন। তাঁর উদ্যোগটিও ভোক্তার ঘরে অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত মুরগির মাংস পৌঁছে দেওয়ার।
যাহোক, প্রকৌশলী মকবুল নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে রপ্ত করেছেন অনেক কিছু। খাঁটি দুধ উৎপাদনের পূর্বশর্তই হচ্ছে গাভিকে পুষ্টিকর ও ভেজালমুক্ত খাদ্য খাওয়ানো। এ ক্ষেত্রে অন্যতম পুষ্টিকর উপাদান হলো মানসম্মত সরিষার খৈল। গাভির জন্য সরিষার খৈল সংগ্রহ করতে মকবুল হোসেন স্থাপন করেন তেল উৎপাদনের ঘানি। সেখানে তিনি উৎপাদন করছেন সরিষার তেল। যদিও তা বৈদ্যুতিক শক্তিতে চলে।
কিন্তু উৎপাদন প্রক্রিয়াটি ঐতিহ্যবাহী ও সনাতন। তিনি বলছিলেন, এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তেল তুলনামূলক অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। এতে এক কাজে দুই কাজ হচ্ছে। একদিকে খামারে গাভির খাদ্যচাহিদা পূরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সরিষার খৈল, অন্যদিকে ভোক্তার চাহিদা পূরণের জন্য আসছে সরিষার তেল। মকবুল জানালেন, তাঁর ওখানে দৈনিক প্রায় ৫০০ লিটার তেল উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদনের শতভাগ পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট ভোক্তার কাছে।
এরই মধ্যে এই শহরের অনেকে জেনে গেছেন, মকবুলের এই খাঁটি পণ্যের খামারের খবর। বিশেষ করে গুলশান, বসুন্ধরা, বারিধারা এলাকায় বড় একটা নেটওয়ার্ক রয়েছে তাঁর। তিনি যেমন ঘরে ঘরে খাঁটি পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন, তেমনি অনেকে নিয়মিত এখানে এসে এসব পণ্য সংগ্রহ করেন।
উদ্যোক্তা মকবুল মনে করেন, নির্ভেজাল পণ্যের বিষয়টি তাঁর নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত। খামারের প্রতিটি অংশে নিজেকে যুক্ত রাখেন তিনি। প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিতে একধরনের আবর্তন প্রচলিত রয়েছে। এখানে সেই অনুশীলনই যেন করেছেন মকবুল। খামারের গাভির পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য তিনি খৈলের উৎস হিসেবে তেলের ঘানি গড়ে তুলেছেন। অন্যদিকে দুধ থেকে তিনি ঘি তৈরি করছেন।
এই জায়গাগুলোতে তিনি যেমন ভ্যালু অ্যাড করেছেন, একইভাবে পণ্যকে ভেজালমুক্ত করার ক্ষেত্রেও রয়েছে একটি দূরদর্শী প্রয়াস।
এখানেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না মকবুল। গরু-ছাগল-ভেড়ার বিষ্ঠা থেকে তৈরি করছেন বায়োগ্যাস। বায়োগ্যাসেই মিটছে তার খামারের বিদ্যুতের চাহিদা। বলছিলেন, রাজধানীতে ছাদকৃষির সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে ছাদকৃষি গড়ছেন। এখানেও তিনি একটা ব্যবসার খোঁজ পেয়েছেন। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া অবশিষ্ট স্লারি তিনি রূপান্তর করবেন জৈব সারে। ছাদকৃষকদের কাছে তিনি সেই জৈব সার বিক্রি করবেন। এ ব্যাপারে চীন থেকে তিনি যন্ত্রপাতি আনার ব্যবস্থাও করেছেন।
আশার কথা হচ্ছে, নিরাপদ খাদ্যের কথা ভাবছেন অনেক তরুণ। তাঁরা বিষ বা রাসায়নিক প্রয়োগ না করে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে উদ্যোগী হচ্ছেন। সম্প্রতি ঢাকার মিরপুরের উদ্যোক্তা পারভীন আক্তারের ঘরের ভেতরে সবজি উৎপাদনের একটি প্রকল্প দেখার সুযোগ হয়েছিল। একটি পরিত্যক্ত বাড়ি ভাড়া নিয়ে চার তরুণ উদ্যোক্তা সেখানে গড়ে তুলেছেন ভার্টিক্যাল ফার্ম। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফার্ম ইমাজিনেশন’।
ঘরের ভেতরে হাইড্রোপনিক সিস্টেমে ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ে উৎপাদন হচ্ছে লেটুস, বক চয়, বেসিল, সেলারি, ক্যাপসিকাম, চেরি টমেটোসহ বেশ কয়েক রকমের সালাদ ও সবজি ফসল। এই আয়োজন উন্নত বিশ্বের সর্বাধুনিক কৃষি আয়োজনগুলোর মতোই। পরিমিত আলো ও তাপের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষায়িত এলইডি আলো। শতভাগ ‘গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস’ অনুসরণ করছেন অনেকে। ফলে ফসলের বিশুদ্ধতা নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকছে না। উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি উৎসাহব্যঞ্জক।
আধুনিক ও প্রযুক্তির কৃষিতে দারুণ আগ্রহী আমাদের তরুণেরা। শার্ট, প্যান্ট, জুতা পরেই দিব্যি কাজ করা যাচ্ছে সেখানে। তাঁদের হাত ধরে বাণিজ্যিক কৃষি বাড়ছে। বাণিজ্যিক কৃষিতে উদ্যোক্তা খামারির অভিজ্ঞতা, সচেতনতা যেমন বাড়ছে, একইভাবে প্রতিদিন বাড়ছে ভোক্তা সচেতনতা। খাঁটি পণ্যের জন্য ভোক্তারা এখন মরিয়া। এই সময়ে বিশ্বব্যাপীই খাদ্যপণ্যের উৎপাদনব্যবস্থার ভেতরে শুদ্ধতার অনুশীলনটি বাড়ছে।
মাছ চাষের ক্ষেত্রে বদ্ধ পানির চেয়ে চলমান ও স্রোতস্বিনী পানিতে মানসম্পন্ন খাদ্য উপকরণ দিয়ে মাছ চাষের জন্য পৃথিবীতে এসেছে নতুন চাষ কৌশল আইপিআরএস। সেখানেও মাছের শুদ্ধতা ও স্বাদ অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়াসটিই সবচেয়ে বড়। একইভাবে মুরগির মাংস উৎপাদনে শুদ্ধতার অনুশীলন চলছে। গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে শতভাগ উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা অনুসরণের এক নজির গড়েছেন প্রকৌশলী মকবুল। পাশাপাশি তাঁর দুধ, ঘি ও সরিষার তেল উৎপাদনের এই শুদ্ধতার চিত্রও দেখলাম। এই অনুশীলনগুলো এখন বাড়বে। এটিই সময়ের চাহিদা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে