সিদ্ধার্থ ভাটিয়া
রামমন্দির ট্রাস্ট ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রবীণ নেতা এল কে আদভানি ও মুরলি মনোহর যোশীকে আগামী ২২ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠেয় ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দিরের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না আসার জন্য ‘অনুরোধ’ করেছে। রামমন্দির ট্রাস্টের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা পরিবারের ‘প্রবীণ’ সদস্য এবং তাঁদের বয়স ও স্বাস্থ্যের কারণে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এল কে আদভানির বয়স ৯৬ বছর এবং যোশী আগামী মাসে ৯০ বছরে পা রাখবেন।
বিজেপির প্রবীণ দুই নেতার স্বাস্থ্যের জন্য এই গভীর উদ্বেগ দৃশ্যত বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে (ভিএইচপি) জানানো হয়নি। যে কারণে তারা উভয় নেতাকে মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তাই এখন সিদ্ধান্ত এই দুই প্রবীণ নেতার হাতে। তাঁরা কী করেন, সেটাই দেখার।
রামমন্দির ট্রাস্টের এই সিদ্ধান্ত দুই নেতার জন্য খুবই বেদনাদায়ক, বিশেষ করে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের স্থপতি আদভানির জন্য, যাঁর ১৯৯০ সালের রথযাত্রা আগামী মাসে মন্দিরের উদ্বোধনের পথকে প্রশস্ত করেছে। আদভানি তাঁর টয়োটা গাড়িকে রথে রূপান্তরিত করেন। তারপর সেই রথে চড়ে দেশজুড়ে প্রচার চালান। এর উদ্দেশ্য ছিল অযোধ্যায় ৪০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বাবরি মসজিদের জায়গায় একটি রামমন্দির নির্মাণ। এই রথযাত্রার জেরে ঘটে ধ্বংস ও মৃত্যু এবং এর শিকার হয় প্রধানত মুসলমানেরা।
১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। সে সময় মুরলি মনোহর যোশী আনন্দে বিজেপি নেত্রী উমা ভারতীকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরও সহিংসতা শুরু হয়, যা মুম্বাইয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
বাবরি মসজিদ ভাঙার রাজনৈতিক লাভ অচিরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৯৫ সালে প্রথম শিবসেনা-বিজেপি সরকার গঠিত হয় মহারাষ্ট্রে। এরপর ১৯৯৬ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বে দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। ১০ বছর পরে ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁরই শাসনামলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের দায়িত্ব সেই সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে দেন, যাঁরা রাজনৈতিকভাবে মসজিদ ধ্বংসকারীদের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে আইনগতভাবে ভাঙচুরকারীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। এখন সেই মন্দির উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত।
এটা স্পষ্ট, নরেন্দ্র মোদির উত্থানের পাশাপাশি মন্দির নির্মাণের জন্যও আদভানিকে কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে। তাই উদ্বোধনে তাঁকে না ডাকাটা নিশ্চিতভাবেই বেদনাদায়ক।
শুধু তা-ই নয়, আদভানি সেই সময়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদিকে সমর্থন করেছিলেন, যখন বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে অপসারণ করতে চেয়েছিল। ২০০২ সালে মোদির নেতৃত্বে গুজরাটে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। আর মোদি যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি আদভানির ঋণ বেমালুম ভুলে গেলেন। উল্টো আদভানি এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের প্রবীণদের জন্য
নামকাওয়াস্তে তৈরি দলের ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দলের এ শাখাটি দলকে চলার দিকনির্দেশনা দেবে বলে কথা ছিল। তবে পরামর্শ দিয়েছে এমন কথা কেউ কখনো শোনেনি। তাঁদের এই বনবাসে পাঠিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো, তাঁরা জনজীবন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। আদভানি বা যোশী কে, তা এখনকার একটি প্রজন্মের কোনো ধারণা নেই। তাঁদের জন্য মোদি সবার ওপরে এবং তিনি যা খুশি তা-ই করতে পারেন।
কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বের দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের প্রতি এমন ব্যবহার (একটা সমাজে যে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করার কথা) দেখে মনে প্রশ্ন জাগে: যখন আদভানি ও যোশীকে এত অসম্মান করা হচ্ছে, তখন আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? আমাদের কি খারাপ লাগা উচিত? তাঁদের কি সেখানে ডাকা উচিত ছিল, তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের ফল দেখার জন্য? নাকি তাঁদের বয়স এবং স্বাস্থ্যের প্রতি এই উদ্বেগ আন্তরিক?
অনেক সাংবাদিক ও অন্য ব্যক্তিরা আদভানির সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা বলেন, তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও শিষ্টাচার মেনে চলা মানুষ। আসলে সেই সময়কার অনেক বিজেপি নেতার সম্পর্কেই এমন বলা হয়ে থাকে। তবু তাঁদের বর্তমান দুর্দশার প্রতি কোনো সহানুভূতি বা ন্যায্য ক্ষোভ প্রকাশ খুবই কঠোর।
যাঁরা সেই সময়ের কাছাকাছি ছিলেন, তাঁরা স্মরণ করবেন যে ভারত রথযাত্রা এবং এর পরে যা ঘটেছিল, তা কীভাবে আমাদের সমাজের সবচেয়ে কুৎসিত দিকগুলোকে উন্মোচিত করেছিল; কীভাবে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি ভয়ংকরভাবে ভেঙে পড়েছিল।
এটি ছিল উগ্র সাম্প্রদায়িকতার উত্থানের শুরু, যা কেবল রাস্তার সহিংসতাতেই প্রকাশ পায়নি; বরং শহুরে শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যেও দেখা দিয়েছিল, যারা হঠাৎ করে নিজেদের হিন্দু শিকড় আবিষ্কার করেছে। ড্রয়িংরুমে বসে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলতে শুরু করেছিলেন, কেন হিন্দুদের তাদের ‘দেশে’ নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাব খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল।
বর্তমানে পরিবারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে যে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা দেখা যায়, এর শুরুটা সেখানেই হয়েছিল। আদভানির বিদ্বেষমূলক রথযাত্রার ২৫ বছর পর বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল এবং আমরা সবাই দেখেছি তার পর থেকে কী ঘটেছে।
‘এই মুহূর্তে, আমরা কী হয়েছি এবং কোথায় যাচ্ছি, তা দেখে আমরা হয়তো ভাবতে পারি, সেই দিনগুলো ছিল আরও সহজ, কম ক্ষতিকর। কিন্তু তা ঠিক ছিল না। রথযাত্রাও ছিল ধর্ম ব্যবহার করে ক্ষমতা দখলের পন্থা। কিন্তু এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্তই সফল হয়েছিল।’
বাজপেয়ির সরকার এমন এক জোটের অংশ ছিল, যেখানে অংশীদারেরা বিজেপির আরও জঘন্য কার্যক্রমের গতিরোধক হিসেবে কাজ করেছিল (যদিও তখনো শিক্ষা, ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ ছিল)। প্রতিষ্ঠানগুলো দৃঢ়ভাবে টিকে ছিল—মিডিয়া এত ভিতু ছিল না। বিচার বিভাগ স্বাধীন ছিল ও সংসদ প্রশ্ন করত এবং ভারতীয় জনগণ, ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’য়ের দাবিগুলো মেনে না নিয়ে ২০০৪ সালে বাজপেয়ি ও তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
আজ আমাদের কাছে শ্বাস ফেলার কোনো অবকাশ নেই। কোনো চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নেই। বেশির ভাগ মিডিয়া ক্ষমতার সামনে নত, বিচার বিভাগ নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে, বিরোধী দলগুলো তাদের কাজ একসঙ্গে করতে পারে না বলে মনে হয়। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, ভারতীয় জনগণ পুরোপুরি ভক্তি আবেশে, সরকার ও নরেন্দ্র মোদিকে সবকিছুতে সমর্থন করছে, এমনকি যখন তাদের নিজের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসবই সেই রথযাত্রার ফল।
তাই এমন একজন ‘প্রবীণ ব্যক্তি’, আজকের ভারতের পথপ্রদর্শক, যখন তাঁর উত্তরাধিকারীদের দ্বারা অপমানিত হন, তখন তাঁর জন্য খারাপ লাগাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এটা আসলে তাঁর প্রাপ্য, তাঁর কর্মফল।
সিদ্ধার্থ ভাটিয়া, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, দ্য ওয়্যার
(দ্য ওয়্যারে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
রামমন্দির ট্রাস্ট ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রবীণ নেতা এল কে আদভানি ও মুরলি মনোহর যোশীকে আগামী ২২ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠেয় ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দিরের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না আসার জন্য ‘অনুরোধ’ করেছে। রামমন্দির ট্রাস্টের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা পরিবারের ‘প্রবীণ’ সদস্য এবং তাঁদের বয়স ও স্বাস্থ্যের কারণে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এল কে আদভানির বয়স ৯৬ বছর এবং যোশী আগামী মাসে ৯০ বছরে পা রাখবেন।
বিজেপির প্রবীণ দুই নেতার স্বাস্থ্যের জন্য এই গভীর উদ্বেগ দৃশ্যত বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে (ভিএইচপি) জানানো হয়নি। যে কারণে তারা উভয় নেতাকে মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তাই এখন সিদ্ধান্ত এই দুই প্রবীণ নেতার হাতে। তাঁরা কী করেন, সেটাই দেখার।
রামমন্দির ট্রাস্টের এই সিদ্ধান্ত দুই নেতার জন্য খুবই বেদনাদায়ক, বিশেষ করে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের স্থপতি আদভানির জন্য, যাঁর ১৯৯০ সালের রথযাত্রা আগামী মাসে মন্দিরের উদ্বোধনের পথকে প্রশস্ত করেছে। আদভানি তাঁর টয়োটা গাড়িকে রথে রূপান্তরিত করেন। তারপর সেই রথে চড়ে দেশজুড়ে প্রচার চালান। এর উদ্দেশ্য ছিল অযোধ্যায় ৪০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বাবরি মসজিদের জায়গায় একটি রামমন্দির নির্মাণ। এই রথযাত্রার জেরে ঘটে ধ্বংস ও মৃত্যু এবং এর শিকার হয় প্রধানত মুসলমানেরা।
১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। সে সময় মুরলি মনোহর যোশী আনন্দে বিজেপি নেত্রী উমা ভারতীকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরও সহিংসতা শুরু হয়, যা মুম্বাইয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
বাবরি মসজিদ ভাঙার রাজনৈতিক লাভ অচিরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৯৫ সালে প্রথম শিবসেনা-বিজেপি সরকার গঠিত হয় মহারাষ্ট্রে। এরপর ১৯৯৬ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বে দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। ১০ বছর পরে ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁরই শাসনামলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের দায়িত্ব সেই সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে দেন, যাঁরা রাজনৈতিকভাবে মসজিদ ধ্বংসকারীদের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে আইনগতভাবে ভাঙচুরকারীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। এখন সেই মন্দির উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত।
এটা স্পষ্ট, নরেন্দ্র মোদির উত্থানের পাশাপাশি মন্দির নির্মাণের জন্যও আদভানিকে কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে। তাই উদ্বোধনে তাঁকে না ডাকাটা নিশ্চিতভাবেই বেদনাদায়ক।
শুধু তা-ই নয়, আদভানি সেই সময়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদিকে সমর্থন করেছিলেন, যখন বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে অপসারণ করতে চেয়েছিল। ২০০২ সালে মোদির নেতৃত্বে গুজরাটে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। আর মোদি যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি আদভানির ঋণ বেমালুম ভুলে গেলেন। উল্টো আদভানি এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের প্রবীণদের জন্য
নামকাওয়াস্তে তৈরি দলের ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দলের এ শাখাটি দলকে চলার দিকনির্দেশনা দেবে বলে কথা ছিল। তবে পরামর্শ দিয়েছে এমন কথা কেউ কখনো শোনেনি। তাঁদের এই বনবাসে পাঠিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো, তাঁরা জনজীবন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। আদভানি বা যোশী কে, তা এখনকার একটি প্রজন্মের কোনো ধারণা নেই। তাঁদের জন্য মোদি সবার ওপরে এবং তিনি যা খুশি তা-ই করতে পারেন।
কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বের দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের প্রতি এমন ব্যবহার (একটা সমাজে যে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করার কথা) দেখে মনে প্রশ্ন জাগে: যখন আদভানি ও যোশীকে এত অসম্মান করা হচ্ছে, তখন আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? আমাদের কি খারাপ লাগা উচিত? তাঁদের কি সেখানে ডাকা উচিত ছিল, তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের ফল দেখার জন্য? নাকি তাঁদের বয়স এবং স্বাস্থ্যের প্রতি এই উদ্বেগ আন্তরিক?
অনেক সাংবাদিক ও অন্য ব্যক্তিরা আদভানির সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা বলেন, তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও শিষ্টাচার মেনে চলা মানুষ। আসলে সেই সময়কার অনেক বিজেপি নেতার সম্পর্কেই এমন বলা হয়ে থাকে। তবু তাঁদের বর্তমান দুর্দশার প্রতি কোনো সহানুভূতি বা ন্যায্য ক্ষোভ প্রকাশ খুবই কঠোর।
যাঁরা সেই সময়ের কাছাকাছি ছিলেন, তাঁরা স্মরণ করবেন যে ভারত রথযাত্রা এবং এর পরে যা ঘটেছিল, তা কীভাবে আমাদের সমাজের সবচেয়ে কুৎসিত দিকগুলোকে উন্মোচিত করেছিল; কীভাবে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি ভয়ংকরভাবে ভেঙে পড়েছিল।
এটি ছিল উগ্র সাম্প্রদায়িকতার উত্থানের শুরু, যা কেবল রাস্তার সহিংসতাতেই প্রকাশ পায়নি; বরং শহুরে শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যেও দেখা দিয়েছিল, যারা হঠাৎ করে নিজেদের হিন্দু শিকড় আবিষ্কার করেছে। ড্রয়িংরুমে বসে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলতে শুরু করেছিলেন, কেন হিন্দুদের তাদের ‘দেশে’ নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাব খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল।
বর্তমানে পরিবারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে যে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা দেখা যায়, এর শুরুটা সেখানেই হয়েছিল। আদভানির বিদ্বেষমূলক রথযাত্রার ২৫ বছর পর বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল এবং আমরা সবাই দেখেছি তার পর থেকে কী ঘটেছে।
‘এই মুহূর্তে, আমরা কী হয়েছি এবং কোথায় যাচ্ছি, তা দেখে আমরা হয়তো ভাবতে পারি, সেই দিনগুলো ছিল আরও সহজ, কম ক্ষতিকর। কিন্তু তা ঠিক ছিল না। রথযাত্রাও ছিল ধর্ম ব্যবহার করে ক্ষমতা দখলের পন্থা। কিন্তু এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্তই সফল হয়েছিল।’
বাজপেয়ির সরকার এমন এক জোটের অংশ ছিল, যেখানে অংশীদারেরা বিজেপির আরও জঘন্য কার্যক্রমের গতিরোধক হিসেবে কাজ করেছিল (যদিও তখনো শিক্ষা, ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ ছিল)। প্রতিষ্ঠানগুলো দৃঢ়ভাবে টিকে ছিল—মিডিয়া এত ভিতু ছিল না। বিচার বিভাগ স্বাধীন ছিল ও সংসদ প্রশ্ন করত এবং ভারতীয় জনগণ, ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’য়ের দাবিগুলো মেনে না নিয়ে ২০০৪ সালে বাজপেয়ি ও তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
আজ আমাদের কাছে শ্বাস ফেলার কোনো অবকাশ নেই। কোনো চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নেই। বেশির ভাগ মিডিয়া ক্ষমতার সামনে নত, বিচার বিভাগ নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে, বিরোধী দলগুলো তাদের কাজ একসঙ্গে করতে পারে না বলে মনে হয়। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, ভারতীয় জনগণ পুরোপুরি ভক্তি আবেশে, সরকার ও নরেন্দ্র মোদিকে সবকিছুতে সমর্থন করছে, এমনকি যখন তাদের নিজের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসবই সেই রথযাত্রার ফল।
তাই এমন একজন ‘প্রবীণ ব্যক্তি’, আজকের ভারতের পথপ্রদর্শক, যখন তাঁর উত্তরাধিকারীদের দ্বারা অপমানিত হন, তখন তাঁর জন্য খারাপ লাগাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এটা আসলে তাঁর প্রাপ্য, তাঁর কর্মফল।
সিদ্ধার্থ ভাটিয়া, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, দ্য ওয়্যার
(দ্য ওয়্যারে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে