পানির সংকটে ব্যাহত বোরো চাষ

মো. শামীমুল ইসলাম, আগৈলঝাড়া
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০২

দীর্ঘদিন ধরে দখল আর অবহেলায় আগৈলঝাড়ার খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এতে চলতি বোরো মৌসুমে সেচে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে অনাবাদি রয়েছে অনেক জমি। এদিকে চাষ হওয়া জমিতে পানির সংকটে মরে যাচ্ছে ধানের চারা। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে যাওয়া খালগুলো পুনর্খনন প্রকল্প গত দুই যুগেও বাস্তবায়িত হয়নি। জরুরিভাবে খালগুলো পুনর্খননের দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা।

অভ্যন্তরীণ খালগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানির তীব্র সংকটে চলতি বোরো মৌসুমে সেচের অভাবে চাষ করা জমিতেও আশা অনুযায়ী ফলন না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। যার কারণ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন, অবহেলা আর দখলকে দায়ী করেছেন তাঁরা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কার্যালয় থেকে দুই যুগ আগে খাল পুনর্খননের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এখন পর্যন্ত খালগুলো পুনর্খনন করা হয়নি।

এ ছাড়াও খালগুলোতে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ না থাকায় ভরা মৌসুমে পাওয়া যাচ্ছে না মাছ। বৃদ্ধি পাচ্ছে মশা-মাছিসহ ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ। খালগুলোতে পানির চাপ না থাকায় পানি সেচ দিতে পারছেন না ব্লক ম্যানেজারেরা।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম সরদার জানান, সেচের জন্য উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ২৭টি প্রকল্পের আওতায় ৮৬ কিলোমিটার খাল পুনর্খননের প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে অন্তত দুই যুগ আগে। কিন্তু কৃষকের জন্য পানি সেচের কোনো ব্যবস্থা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায় জানান, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন। উপজেলায় মোট আবাদি জমির মধ্যে ৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান ও ৩৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফসি) বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় আরও জানান, দাখিল করা প্রকল্পের মধ্যে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নে ২২ কিলোমিটার খাল, বাকাল ইউনিয়নে ১৭ কিলোমিটার, গৈলা ইউনিয়নে ২২ কিলোমিটার, রত্নপুর ইউনিয়নে ২৫ কিলোমিটার খালসহ মোট ২৭টি প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ৮৬ কিলোমিটার খনন জরুরি হয়ে পরেছে।

এসব খালের মধ্যে রয়েছে বাশাইল গ্রামের মতিউর রহমানের স মিল থেকে ছোট বাশাইল-গোয়াইল-ছোট ডুমুরিয়া পর্যন্ত, কোদালধোয়া থেকে বড়মগরা, কোদালধোয়া থেকে ফেনাবাড়ী, উত্তর শিহিপাশা হয়ে কুমারভাঙ্গা পর্যন্ত, নিমতলা থেকে টেমার হয়ে সেরাল হাই স্কুল, গৈলার আবুল হোসেন লাল্টুর বাড়ির ব্রিজ থেকে গুপ্তের হাট পর্যন্ত, রথখোলা থেকে ভদ্রপাড়া পর্যন্ত, রশিদ ফকিরের ব্রিজ থেকে রামের বাজার পর্যন্ত, মোহনকাঠী কলেজ থেকে থানেশ্বরকাঠী, বরিয়ালী ওয়াপদা থেকে মোল্লাপাড়া-ত্রিমুখী-বারপাইকা-দুশমী পর্যন্ত, ঐচারমাঠ থেকে কাঠিরা পর্যন্ত খাল।

স্থানীয় কৃষক আনোয়ার হোসেন, আবু সাইদ সরদার, তাহের সরদার ও জহিরুল হাওলাদার বলেন, খালে পানি না থাকায় জমিতে রোপণ করা ধানের চারাগুলো মরে যাচ্ছে। অতি দ্রুত খালগুলো খনন না করা হলে বড় অসুবিধায় পড়তে হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলের জমিগুলো চাষের জন্য খালের পানির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। আমরা ইতিমধ্যে উপজেলার খালগুলো খননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম জানান, নদী কিংবা খাল পুনর্খননের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে আনার কর্মকাণ্ড সারা দেশেই চলছে। উপজেলায় যেসব খাল বা নদী এখনো হুমকির মধ্যে আছে বা যেকোনো কারণে পানির প্রবাহ বাধার মুখে পড়ে আছে, সে সমস্ত বাধা দ্রুত অপসারণ করে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে ট্রেনে হামলা, কয়েকজন জখম, ট্রেন চলাচল বন্ধ

স্বামীও জানতেন না স্ত্রী ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রী নন

ঢাকার যানজট নিরসনে ৫ কোটির সিগন্যাল ব্যবস্থা, বাস্তবায়নে লাগবে ৬ মাস

১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন, আছেন যাঁরা

এস আলমের ঋণ জালিয়াতি: বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত