বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জাতীয় পর্যায়ে জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা (পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণার পর্যায়ে চলে গেছে বলে মনে করছেন শীর্ষ এক বিশেষজ্ঞ।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রোগতত্ত্ববিদ ড. মুশতাক হোসেন গতকাল রোববার রাজধানীতে এক সেমিনারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে নিজের এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহা আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গতকাল মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ডেঙ্গুর এখন যে পরিস্থিতি, সেটি ইমার্জেন্সি জারির মতো কি না, তা ভেবে দেখা উচিত। আমরা এটি অ্যানালাইসিস করে দেখছি।’ যদিও একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ভিন্নমত দেন। তিনি বলেন, পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণার সময় এখনো আসেনি।
২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ জনের মৃত্যু
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪২৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৭৪১ এবং ঢাকার বাইরে ৬৮৩ জন। এই সময়ে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় চারজন এবং ঢাকার বাইরে দুজন।
গতকাল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ২০ হাজার ৮৭৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৪ হাজার ৯৫৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ১০৬ জনের। তবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি হয়েছে চলতি মাসের ১৬ দিনে। এই সময়ে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের।
ডেঙ্গুবিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনার
গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রোগতত্ত্ববিদ ড. মুশতাক হোসেন। সেখানে তিনি ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ অন্তত একবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজন ইতিমধ্যে এক বা একাধিকবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।
মুশতাক হোসেনের মতে, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন, তাপমাত্রার তারতম্য হ্রাস, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অপরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি কারণে সারা দেশে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ফলে ডেঙ্গু রোগটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ড. মুশতাক বলেন, এডিস মশা শুধু ডেঙ্গুর বাহকই নয়, এটি জিকা এবং ইয়েলো ফিভারের বাহক। সম্প্রতি ভারতে ইয়েলো ফিভারের রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাই এডিস মশা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দেশে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, দেশে ডেঙ্গু রোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা। তাই তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়, তাদের ডেথ রিভিউ হয় খুব ধীরে। এটা আরও দ্রুত করা উচিত। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কীটতাত্ত্বিক জরিপ এবং আন্তমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দেন এই রোগতত্ত্ববিদ।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
সেমিনারে ডেঙ্গু চিকিৎসা বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রখ্যাত বাতজ্বর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত। শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে অনেকেরই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এ ছাড়া ডেঙ্গুর একটি নতুন লক্ষণ দেখা দিয়েছে, ‘ডায়রিয়া’। আগে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে এই লক্ষণ ছিল না।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আতিকুল হক আরও বলেন, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম চার দিনের মধ্যে এনএস ১, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা করাতে হবে। তবে পঞ্চম দিনে পরীক্ষা করালে এনএস ১ পরীক্ষার দরকার নেই। ডেঙ্গু চিকিৎসায় রক্তচাপ গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রোগীর শারীরিক অবস্থা প্রকাশ পায়। এ ছাড়া রক্তের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে না নামলে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া ডেঙ্গু চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এতে রোগীদের পরবর্তীকালে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমি কলকাতায় দেখেছি, সেখানে সারা বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হয়। প্রতিদিনই সিটি করপোরেশনের লোকেরা শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন এবং রিপোর্ট করেন। সেই অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে আমি ঢাকার দুই মেয়রকে পরামর্শ দিয়েছি।’
মোস্তফা জালাল আরও বলেন, ‘ঢাকায় যেসব ওষুধ স্প্রে করা হয়, সেগুলো মশার গায়ে লাগলে কিছু সময় পড়ে থেকে আবার উড়ে যায়।’ এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থার কথা কেন বলছেন, জানতে চাইলে ড. মুশতাক হোসেন গতকাল রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, একটি দেশে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে, সেই রোগ কখন কোন অবস্থায় রয়েছে, তার একটি রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়। সেই বিবেচনায় বর্তমানে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ অবস্থায় রয়েছে বলা যায়। এটাকে বলা যায় জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা।
আর এক-চতুর্থাংশ লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ড. মোশতাক বলেন, ২০১৮-১৯ সালে এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। সেই গবেষণায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বর্তমানে এই হার আরও অনেক বেড়েছে।
সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ
গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো যাচ্ছে না মন্তব্য করে এ সময় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা এর ঊর্ধ্বগতিই দেখছি। ডেঙ্গুতে সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। ডেঙ্গুর ধরন বদলে যাচ্ছে, আমরা গবেষণা বাড়াতে বলেছি। কোন ধরনের ওষুধ কোন মাত্রায় মশা নিধনে কার্যকর, তা দেখতে বলেছি। নতুন কিছু থাকলে তা নিয়ে আসতে হবে।’
মন্ত্রণালয়ের পাঁচ পরামর্শ
সারা দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পাঁচটি সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে টেলিভিশন, রেডিওসহ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জনস্বার্থে সচেতনতামূলক সংবাদ নিয়মিত পরিবেশনের অনুরোধ করা হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সারা দেশে এডিস মশার বিস্তার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক কালে ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি সব সংবাদমাধ্যমে প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
ডেঙ্গুবিষয়ক পরামর্শের এক নম্বরে বলা হয়, জ্বরের শুরুতে অবশ্যই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাসার ভেতরে ও চারপাশে, নির্মাণাধীন ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ভবনের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। তৃতীয়ত, দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। চতুর্থত, ডেঙ্গু জ্বর কমে গেলে অবহেলা না করে অবশ্যই পরবর্তী জটিলতা এড়াতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। পঞ্চমত, এ বিষয়ে অবহেলা জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে।
মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জাতীয় পর্যায়ে জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা (পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণার পর্যায়ে চলে গেছে বলে মনে করছেন শীর্ষ এক বিশেষজ্ঞ।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রোগতত্ত্ববিদ ড. মুশতাক হোসেন গতকাল রোববার রাজধানীতে এক সেমিনারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে নিজের এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহা আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গতকাল মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ডেঙ্গুর এখন যে পরিস্থিতি, সেটি ইমার্জেন্সি জারির মতো কি না, তা ভেবে দেখা উচিত। আমরা এটি অ্যানালাইসিস করে দেখছি।’ যদিও একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ভিন্নমত দেন। তিনি বলেন, পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণার সময় এখনো আসেনি।
২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ জনের মৃত্যু
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪২৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৭৪১ এবং ঢাকার বাইরে ৬৮৩ জন। এই সময়ে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় চারজন এবং ঢাকার বাইরে দুজন।
গতকাল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ২০ হাজার ৮৭৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৪ হাজার ৯৫৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ১০৬ জনের। তবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি হয়েছে চলতি মাসের ১৬ দিনে। এই সময়ে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের।
ডেঙ্গুবিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনার
গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রোগতত্ত্ববিদ ড. মুশতাক হোসেন। সেখানে তিনি ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ অন্তত একবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজন ইতিমধ্যে এক বা একাধিকবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।
মুশতাক হোসেনের মতে, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন, তাপমাত্রার তারতম্য হ্রাস, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অপরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি কারণে সারা দেশে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ফলে ডেঙ্গু রোগটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ড. মুশতাক বলেন, এডিস মশা শুধু ডেঙ্গুর বাহকই নয়, এটি জিকা এবং ইয়েলো ফিভারের বাহক। সম্প্রতি ভারতে ইয়েলো ফিভারের রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাই এডিস মশা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দেশে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, দেশে ডেঙ্গু রোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা। তাই তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়, তাদের ডেথ রিভিউ হয় খুব ধীরে। এটা আরও দ্রুত করা উচিত। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কীটতাত্ত্বিক জরিপ এবং আন্তমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দেন এই রোগতত্ত্ববিদ।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
সেমিনারে ডেঙ্গু চিকিৎসা বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রখ্যাত বাতজ্বর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত। শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে অনেকেরই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এ ছাড়া ডেঙ্গুর একটি নতুন লক্ষণ দেখা দিয়েছে, ‘ডায়রিয়া’। আগে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে এই লক্ষণ ছিল না।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আতিকুল হক আরও বলেন, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম চার দিনের মধ্যে এনএস ১, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা করাতে হবে। তবে পঞ্চম দিনে পরীক্ষা করালে এনএস ১ পরীক্ষার দরকার নেই। ডেঙ্গু চিকিৎসায় রক্তচাপ গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রোগীর শারীরিক অবস্থা প্রকাশ পায়। এ ছাড়া রক্তের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে না নামলে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া ডেঙ্গু চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এতে রোগীদের পরবর্তীকালে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমি কলকাতায় দেখেছি, সেখানে সারা বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হয়। প্রতিদিনই সিটি করপোরেশনের লোকেরা শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন এবং রিপোর্ট করেন। সেই অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে আমি ঢাকার দুই মেয়রকে পরামর্শ দিয়েছি।’
মোস্তফা জালাল আরও বলেন, ‘ঢাকায় যেসব ওষুধ স্প্রে করা হয়, সেগুলো মশার গায়ে লাগলে কিছু সময় পড়ে থেকে আবার উড়ে যায়।’ এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থার কথা কেন বলছেন, জানতে চাইলে ড. মুশতাক হোসেন গতকাল রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, একটি দেশে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে, সেই রোগ কখন কোন অবস্থায় রয়েছে, তার একটি রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়। সেই বিবেচনায় বর্তমানে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ অবস্থায় রয়েছে বলা যায়। এটাকে বলা যায় জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা।
আর এক-চতুর্থাংশ লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ড. মোশতাক বলেন, ২০১৮-১৯ সালে এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। সেই গবেষণায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বর্তমানে এই হার আরও অনেক বেড়েছে।
সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ
গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো যাচ্ছে না মন্তব্য করে এ সময় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা এর ঊর্ধ্বগতিই দেখছি। ডেঙ্গুতে সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। ডেঙ্গুর ধরন বদলে যাচ্ছে, আমরা গবেষণা বাড়াতে বলেছি। কোন ধরনের ওষুধ কোন মাত্রায় মশা নিধনে কার্যকর, তা দেখতে বলেছি। নতুন কিছু থাকলে তা নিয়ে আসতে হবে।’
মন্ত্রণালয়ের পাঁচ পরামর্শ
সারা দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পাঁচটি সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে টেলিভিশন, রেডিওসহ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জনস্বার্থে সচেতনতামূলক সংবাদ নিয়মিত পরিবেশনের অনুরোধ করা হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সারা দেশে এডিস মশার বিস্তার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক কালে ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি সব সংবাদমাধ্যমে প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
ডেঙ্গুবিষয়ক পরামর্শের এক নম্বরে বলা হয়, জ্বরের শুরুতে অবশ্যই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাসার ভেতরে ও চারপাশে, নির্মাণাধীন ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ভবনের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। তৃতীয়ত, দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। চতুর্থত, ডেঙ্গু জ্বর কমে গেলে অবহেলা না করে অবশ্যই পরবর্তী জটিলতা এড়াতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। পঞ্চমত, এ বিষয়ে অবহেলা জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে