রাশেদ নিজাম ও সোহান শেখ, বাগেরহাট থেকে
তিন মেয়ে শাবানার। বছর দুয়েক আগে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। মেজ মেয়ে সুরাইয়া (১৩) মাদ্রাসাছাত্রী। ছোট সুমাইয়া (১০) পড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জাল বুনে দিনে আয় ৪০-৫০ টাকা। সঙ্গে ইউনিয়নের রাস্তায় ইট বিছানোর কাজের মজুরি দিয়েই কোনোমতে চলছে তাঁদের জীবন।
এই তিন মা-মেয়ের বাস বগা গ্রামের এক ভাঙা ঘরে। গ্রামটি বাগেরহাট সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে কচুয়া উপজেলার ধোবাখালী ইউনিয়নে। শাবানার স্বামী মনির মাঝি সাগরে হারিয়ে গেছেন ২০১৫ সালে। সংসার চলে কীভাবে–এ প্রশ্নে মুখে উত্তর না দিয়ে চোখের পানিতেই বুঝিয়ে দিলেন সব।
২০১৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ঝড়ে সুন্দরবনের পশুর নদের চালনার খড়িতে ডুবে যায় মাছ ধরার বেশ কয়েকটি ট্রলার। মারা যান অর্ধশত জেলে। সে রাতে মনিরসহ নিখোঁজ বাগেরহাটের ২৯ জনের ১৯ জনেরই বাড়ি এই বগা গ্রামে। তবে গ্রামে এর জন্য কিছু থেমে নেই। সব চলছে। শুধু বাবার স্নেহ-ভালোবাসা বঞ্চিত হয়ে আছে প্রায় ৪০টি শিশু। তাদের অন্তত ১৫ জনের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছর। তারা যখন বাবার কাছে আবদার করতে শিখেছিল, বাবা মাছ ধরে ফেরার সময় হাতে কিছু নিয়ে এলে খুশি হতে শিখেছিল, তখনই তিনি হারিয়ে গেলেন।
বগা গ্রামের হারিয়ে যাওয়া এই মৎস্যজীবীরা হলেন মিজান বেপারী, রেজাউল বেপারী, রুস্তম বাবনা, তালেব আলী হাওলাদার, আলীয়ার হাওলাদার, মজিদ মল্লিক, কালাম মল্লিক, জাহাঙ্গীর বেপারী, হাসান মল্লিক, আল আমিন আমানী, আতিয়ার বেপারী, মাসুম শেখ, গণি বেপারী, নেয়ামুল আমানী, তৈয়ব আলী বাওয়ালী, আইয়ুব আলী বাবনা, হান্নান আমানী, হাফিজুল বাবনা ও মনির হোসেন। তাঁদের মরদেহ না পাওয়ায় ক্ষতিপূরণও পায়নি তাঁদের পরিবার।
একই উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের চারজন, গোপালপুরের তিনজন, বাধালের দুজন এবং গজালিয়া ইউনিয়নের একজনের মরদেহ পাওয়া যায়নি। এই ২৯ জনের পরিবারের জন্য প্রশাসনের কোনো স্তর থেকেই সহায়তা আসেনি।
১১ বছরের আবু তালেবের বাবা নিখোঁজ তৈয়ব আলী বাওয়ালী। বগা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এই ছাত্রের কাছে বাবার স্মৃতি বলতে তৈয়বের একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি। সর্বশেষ বাবাকে দেখার কথা তার মনে নেই। তবে সে এখন জানে, বাবা আর আসবেন না। তালেবের মা নুরুন নাহার এলাকায় বিভিন্ন মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালান। তালেবের তিন বোন আছে।
পাশের বাড়ি আরেক নিখোঁজ তালেব আলী হাওলাদারের। তাঁর স্ত্রী মরিয়ম একমনে জাল বুনছেন। প্রতিদিন এ কাজের পাশাপাশি অবস্থাপন্ন মানুষের বাড়ির ফুটফরমাশের আয়েই জীবন চলে তাঁর। গ্রামের দোকানে কারও সঙ্গে সন্তান দেখলেই দৌড়ে ঘরে চলে আসে ১২ বছরের ছেলে সালমান। মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদে।
এই পরিবারগুলো উপজেলা প্রশাসন, জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে দৌড়াদৌড়ি করলেও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান একই ঘটনায় চাচা, ভাইসহ চারজনকে হারানো ইব্রাহীম আমানী। মৃত্যুসদন ছাড়া ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম নেই বলে অপেক্ষা করেছেন সাত বছর। পরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে লিখিত এনে গত বছরের মাঝামাঝি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সেই সদনও জমা দিয়েছেন কচুয়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ে। কিন্তু তারও কোনো খোঁজ নেই।
ইব্রাহীম বলেন, ‘যাঁদের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল তাঁদের পরিবার সব মিলিয়ে ৮০ হাজার টাকার সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু আমাদের এই ১৯ জনের পরিবার এখনো কিছু পায়নি। হঠাৎ করে উপজেলা কার্যালয় থেকে মারা যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে—এমন নিয়মের কথা বলছে।’
কচুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বগা গ্রাম থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিহত জেলেদের ক্ষতিপূরণের জন্য কিছু আবেদন পেয়েছি। কিন্তু এসব জেলে নতুন নীতিমালার আওতায় নেই। তাই এঁদের আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়নি। কেন নীতিমালার বাইরে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নীতিমালা হওয়ার আগেই এসব জেলে মারা গেছেন।
২০১৯ সালের নিহত জেলে পরিবার বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের আর্থিক সহায়তা প্রদান নীতিমালার ৬.৫ ধারায় বলা হয়েছে, নিহত/নিখোঁজ জেলে পরিবারের পক্ষ থেকে বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেকে তিন মাসের মধ্যে স্থানীয় উপজেলা মৎস্য অফিসে আবেদন করতে হবে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, ‘মৃত্যুসনদ না থাকায় তাঁরা শুরুতে আবেদন করতে পারেননি। বিষয়টি আমাদের জানা। তবে জেলেদের পরিবারের আবেদনগুলো এখনো আমার হাতে আসেনি। খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিন মেয়ে শাবানার। বছর দুয়েক আগে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। মেজ মেয়ে সুরাইয়া (১৩) মাদ্রাসাছাত্রী। ছোট সুমাইয়া (১০) পড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জাল বুনে দিনে আয় ৪০-৫০ টাকা। সঙ্গে ইউনিয়নের রাস্তায় ইট বিছানোর কাজের মজুরি দিয়েই কোনোমতে চলছে তাঁদের জীবন।
এই তিন মা-মেয়ের বাস বগা গ্রামের এক ভাঙা ঘরে। গ্রামটি বাগেরহাট সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে কচুয়া উপজেলার ধোবাখালী ইউনিয়নে। শাবানার স্বামী মনির মাঝি সাগরে হারিয়ে গেছেন ২০১৫ সালে। সংসার চলে কীভাবে–এ প্রশ্নে মুখে উত্তর না দিয়ে চোখের পানিতেই বুঝিয়ে দিলেন সব।
২০১৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ঝড়ে সুন্দরবনের পশুর নদের চালনার খড়িতে ডুবে যায় মাছ ধরার বেশ কয়েকটি ট্রলার। মারা যান অর্ধশত জেলে। সে রাতে মনিরসহ নিখোঁজ বাগেরহাটের ২৯ জনের ১৯ জনেরই বাড়ি এই বগা গ্রামে। তবে গ্রামে এর জন্য কিছু থেমে নেই। সব চলছে। শুধু বাবার স্নেহ-ভালোবাসা বঞ্চিত হয়ে আছে প্রায় ৪০টি শিশু। তাদের অন্তত ১৫ জনের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছর। তারা যখন বাবার কাছে আবদার করতে শিখেছিল, বাবা মাছ ধরে ফেরার সময় হাতে কিছু নিয়ে এলে খুশি হতে শিখেছিল, তখনই তিনি হারিয়ে গেলেন।
বগা গ্রামের হারিয়ে যাওয়া এই মৎস্যজীবীরা হলেন মিজান বেপারী, রেজাউল বেপারী, রুস্তম বাবনা, তালেব আলী হাওলাদার, আলীয়ার হাওলাদার, মজিদ মল্লিক, কালাম মল্লিক, জাহাঙ্গীর বেপারী, হাসান মল্লিক, আল আমিন আমানী, আতিয়ার বেপারী, মাসুম শেখ, গণি বেপারী, নেয়ামুল আমানী, তৈয়ব আলী বাওয়ালী, আইয়ুব আলী বাবনা, হান্নান আমানী, হাফিজুল বাবনা ও মনির হোসেন। তাঁদের মরদেহ না পাওয়ায় ক্ষতিপূরণও পায়নি তাঁদের পরিবার।
একই উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের চারজন, গোপালপুরের তিনজন, বাধালের দুজন এবং গজালিয়া ইউনিয়নের একজনের মরদেহ পাওয়া যায়নি। এই ২৯ জনের পরিবারের জন্য প্রশাসনের কোনো স্তর থেকেই সহায়তা আসেনি।
১১ বছরের আবু তালেবের বাবা নিখোঁজ তৈয়ব আলী বাওয়ালী। বগা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এই ছাত্রের কাছে বাবার স্মৃতি বলতে তৈয়বের একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি। সর্বশেষ বাবাকে দেখার কথা তার মনে নেই। তবে সে এখন জানে, বাবা আর আসবেন না। তালেবের মা নুরুন নাহার এলাকায় বিভিন্ন মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালান। তালেবের তিন বোন আছে।
পাশের বাড়ি আরেক নিখোঁজ তালেব আলী হাওলাদারের। তাঁর স্ত্রী মরিয়ম একমনে জাল বুনছেন। প্রতিদিন এ কাজের পাশাপাশি অবস্থাপন্ন মানুষের বাড়ির ফুটফরমাশের আয়েই জীবন চলে তাঁর। গ্রামের দোকানে কারও সঙ্গে সন্তান দেখলেই দৌড়ে ঘরে চলে আসে ১২ বছরের ছেলে সালমান। মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদে।
এই পরিবারগুলো উপজেলা প্রশাসন, জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে দৌড়াদৌড়ি করলেও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান একই ঘটনায় চাচা, ভাইসহ চারজনকে হারানো ইব্রাহীম আমানী। মৃত্যুসদন ছাড়া ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম নেই বলে অপেক্ষা করেছেন সাত বছর। পরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে লিখিত এনে গত বছরের মাঝামাঝি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সেই সদনও জমা দিয়েছেন কচুয়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ে। কিন্তু তারও কোনো খোঁজ নেই।
ইব্রাহীম বলেন, ‘যাঁদের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল তাঁদের পরিবার সব মিলিয়ে ৮০ হাজার টাকার সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু আমাদের এই ১৯ জনের পরিবার এখনো কিছু পায়নি। হঠাৎ করে উপজেলা কার্যালয় থেকে মারা যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে—এমন নিয়মের কথা বলছে।’
কচুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বগা গ্রাম থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিহত জেলেদের ক্ষতিপূরণের জন্য কিছু আবেদন পেয়েছি। কিন্তু এসব জেলে নতুন নীতিমালার আওতায় নেই। তাই এঁদের আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়নি। কেন নীতিমালার বাইরে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নীতিমালা হওয়ার আগেই এসব জেলে মারা গেছেন।
২০১৯ সালের নিহত জেলে পরিবার বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের আর্থিক সহায়তা প্রদান নীতিমালার ৬.৫ ধারায় বলা হয়েছে, নিহত/নিখোঁজ জেলে পরিবারের পক্ষ থেকে বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেকে তিন মাসের মধ্যে স্থানীয় উপজেলা মৎস্য অফিসে আবেদন করতে হবে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, ‘মৃত্যুসনদ না থাকায় তাঁরা শুরুতে আবেদন করতে পারেননি। বিষয়টি আমাদের জানা। তবে জেলেদের পরিবারের আবেদনগুলো এখনো আমার হাতে আসেনি। খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে