রাশেদ নিজাম, ঢাকা
রাশিয়া, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হয় অনলাইন জুয়া। কিন্তু দেশ থেকে হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়ে যাচ্ছে অনলাইন জুয়াড়িদের মাধ্যমে।
শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশ থেকে বছরে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হওয়ার তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের তদন্তে পাওয়া তথ্যমতে, ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে জনপ্রিয় অনলাইন জুয়ার সাইট আছে শতাধিক। সে হিসাবে বছরে এই জুয়ার বাজার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সিআইডি সূত্রে জানা যায়, অনলাইন জুয়াড়িরা বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেন করে থাকে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফিলিপাইন থেকে পোশাক পণ্যের আদেশ দেওয়া, রাশিয়া থেকে ক্যামেরা কেনাসহ নানা ভুয়া ভাউচার বানিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করা হয়। যেমন কেউ একজন দেশের কোনো কারখানায় কিছু পণ্যের ফরমায়েশ দিলেন। এরপর তিনি এখানে থাকা এজেন্টদের বললেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা হওয়া টাকাগুলো কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিতে। সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভুয়া পোশাকের ফরমাশ বা ক্যামেরা কেনার পেমেন্ট হিসাবে।
সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা, কক্সবাজার, জামালপুরসহ কয়েকটি এলাকা থেকে বেশি হিট হয় এসব সাইটে। সম্প্রতি জুয়ার ৩৩১টি সাইট দেশের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক থেকে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বন্ধ করা হয় ১৭৬টি সাইট। তারপরও ভিপিএনসহ নানা মাধ্যমে জুয়াড়িরা ঢুকছে এসব সাইটে।
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মিত্র আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বন্ধ করতে একসঙ্গে কাজ করছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ও বিটিআরসি। আমরা এখন পর্যন্ত যতগুলো অ্যাপ ও ওয়েবসাইট শনাক্ত করতে পেরেছি, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন আরও অ্যাপ ও ওয়েবসাইট পেলে সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিমের বিশেষ সুপার রেজাউল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আধুনিক সব পদ্ধতি ব্যবহার করে এসব সাইট ব্যবহারকারীরা। সবকিছু অনলাইনে হওয়ায় তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আমরা নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে মোস্টবেট, বেট উইনার, ১ এক্স বেট, বেটবাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকটি চক্রকে গ্রেপ্তার করার পর নানা তথ্য জানতে পারি। দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হওয়ায় মূল হোতাদের ধরতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে তাদের দেশীয় এজেন্টদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এসব সাইটের মাধ্যমে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হওয়ার তথ্য রয়েছে।’
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের মতে, জুয়া বন্ধ করতে দেশে যে আইন আছে সেটি অনেক পুরোনো এবং তাতে সাজা খুবই অপ্রতুল। তাই অনলাইন জুয়া বন্ধ করতে যুগোপযোগী আইন করা দরকার।
এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘সাইট বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক সমাধান হতে পারে। যারা চালাচ্ছে তাদের ধরার জন্য ইউরোপোল, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের আবেদন করা সম্ভব। কারণ, অন্য দেশে না হলেও আমাদের দেশে যেহেতু জুয়া নিষিদ্ধ, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তারা বিচারের আওতায় আসতে বাধ্য। কিন্তু সরকারি যে দপ্তরগুলো সর্বেসর্বা হয়ে বসে আছে তাদের ডার্ক ওয়েব কিংবা ওপেন সোর্স টুলস নিয়ে কোনো সফটওয়্যার নেই। টাকা খরচ করলে, কোন দেশ থেকে কারা এসব সাইট চালাচ্ছে, তা জানা সম্ভব।’
দেশে জনপ্রিয় সাইট
মোস্টবেট, বেট উইনার, বেট ৩৬৫,১ এক্স বেট, বেটবাজ ৩৬৫, ২২ বেট, মেলবেট, বেটওয়ে, ক্যাসিনো, ক্রিকেক্স, লাইন বেট, মেগা পাড়ি—এ ১২টি সাইটে বাংলাদেশ থেকে বেশি অর্থ লেনদেন করছে ব্যবহারকারীরা। এর মধ্যে প্রথম পাঁচটিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ লেনদেন হয়। সিআইডি সম্প্রতি পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে এক প্রতিবেদনে জানায়, সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২৬০ কোটি টাকা বছরে লেনদেন হয় ১ এক্স বেটের মাধ্যমে। এ ছাড়া বেট ৩৬৫-এ ২৪৫ কোটি, মোস্টবেটে ২৩০ কোটি, বেট উইনারে ১৪০ কোটি এবং বেটবাজে ১৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
লেনদেন বিকাশ-নগদে
সিআইডি ও ডিবির সাইবার ও অনলাইন টিমের কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে জুয়া খেলতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাসিক চুক্তিতে বিকাশ, নগদ, উপায়-এর এজেন্ট নম্বর ভাড়া নিয়ে দেশি এজেন্টরা লেনদেন করে। সুপার এজেন্টদের কাছে সব কোম্পানিরই সিম থাকে। যদি দেশের এমএসএফ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নজরদারি ঠিক রাখত, তাহলে অনলাইন জুয়া মোকাবিলা করা সহজ হতো।
বিটিআরসি জানায়, অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী অনলাইন গেমের চিপস কিনতে প্রয়োজন পড়ে নগদ অর্থ, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড। এসব কার্ড সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছে অনলাইন জুয়ার দিকে। কয়েকটি অপরাধী চক্র এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে। এ ছাড়া অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ায় অংশ নিয়ে থাকে। বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেন করে থাকে জুয়াড়িরা।
বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব অ্যাকাউন্টের লেনদেন সন্দেহজনক মনে হয়, আমরা তার প্রতিবেদন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) সরবরাহ করি। অনলাইন জুয়া, হুন্ডি, অর্থ পাচার, জঙ্গি অর্থায়নসংশ্লিষ্ট সব অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে নিয়মিত তদারকি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিকাশের যথাযথ প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী নিয়োজিত আছে। পাশাপাশি অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমরা রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেকোনো তদন্তে প্রয়োজনীয় সব সহায়তাও দিয়ে থাকি।’
নগদের হেড অব কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল জানান, নগদের মাধ্যমে হওয়া প্রতিটি লেনদেন দেশের আইনকানুন অনুসারে পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, ‘কোনো অপরাধমূলক লেনদেন যাতে না হয় তার জন্যও নগদ সর্বদা সচেষ্ট। পুরো প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে নগদ সব সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় এবং তাদের নির্দেশনা মেনে একসঙ্গে কাজ করছে।’
যুগোপযোগী আইন দরকার
জানা গেছে, ডিবি ও সিআইডির সাইবার টিম এ পর্যন্ত বিভিন্ন সাইটের অন্তত ৯০ জন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কিন্তু অপরাধীদের শাস্তি দিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়।
এ বিষয়ে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে পুঁজি করে অনেক সুযোগ নিচ্ছে জুয়াড়িরা। বন্ধ করা সাইট ভিপিএন ব্যবহারে চালানো হচ্ছে। ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তেমন সুরাহা পাইনি। অনলাইন জুয়া বন্ধ করার জন্য নতুন আইন প্রয়োজন। কারণ, জুয়ার আয়ের টাকা তো দেশে থাকছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো ধারায় যদি অনলাইন জুয়া যোগ করা যায়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, অনলাইন ক্যাসিনো ব্যাপক হারে চলছে। এগুলো সমাজ-জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জুয়া বন্ধ করতে ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭’ রয়েছে। এটা অনেক পুরোনো এবং সেখানে সাজা খুবই অপ্রতুল। আর সেখানে ক্যাসিনো সম্পর্কে কোনো কিছু বলা হয়নি। তাই অনলাইন জুয়া বন্ধে যুগোপযোগী আইন করা দরকার।
রাশিয়া, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হয় অনলাইন জুয়া। কিন্তু দেশ থেকে হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়ে যাচ্ছে অনলাইন জুয়াড়িদের মাধ্যমে।
শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশ থেকে বছরে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হওয়ার তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের তদন্তে পাওয়া তথ্যমতে, ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে জনপ্রিয় অনলাইন জুয়ার সাইট আছে শতাধিক। সে হিসাবে বছরে এই জুয়ার বাজার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সিআইডি সূত্রে জানা যায়, অনলাইন জুয়াড়িরা বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেন করে থাকে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফিলিপাইন থেকে পোশাক পণ্যের আদেশ দেওয়া, রাশিয়া থেকে ক্যামেরা কেনাসহ নানা ভুয়া ভাউচার বানিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করা হয়। যেমন কেউ একজন দেশের কোনো কারখানায় কিছু পণ্যের ফরমায়েশ দিলেন। এরপর তিনি এখানে থাকা এজেন্টদের বললেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা হওয়া টাকাগুলো কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিতে। সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভুয়া পোশাকের ফরমাশ বা ক্যামেরা কেনার পেমেন্ট হিসাবে।
সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা, কক্সবাজার, জামালপুরসহ কয়েকটি এলাকা থেকে বেশি হিট হয় এসব সাইটে। সম্প্রতি জুয়ার ৩৩১টি সাইট দেশের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক থেকে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বন্ধ করা হয় ১৭৬টি সাইট। তারপরও ভিপিএনসহ নানা মাধ্যমে জুয়াড়িরা ঢুকছে এসব সাইটে।
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মিত্র আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বন্ধ করতে একসঙ্গে কাজ করছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ও বিটিআরসি। আমরা এখন পর্যন্ত যতগুলো অ্যাপ ও ওয়েবসাইট শনাক্ত করতে পেরেছি, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন আরও অ্যাপ ও ওয়েবসাইট পেলে সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিমের বিশেষ সুপার রেজাউল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আধুনিক সব পদ্ধতি ব্যবহার করে এসব সাইট ব্যবহারকারীরা। সবকিছু অনলাইনে হওয়ায় তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আমরা নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে মোস্টবেট, বেট উইনার, ১ এক্স বেট, বেটবাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকটি চক্রকে গ্রেপ্তার করার পর নানা তথ্য জানতে পারি। দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হওয়ায় মূল হোতাদের ধরতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে তাদের দেশীয় এজেন্টদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এসব সাইটের মাধ্যমে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হওয়ার তথ্য রয়েছে।’
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের মতে, জুয়া বন্ধ করতে দেশে যে আইন আছে সেটি অনেক পুরোনো এবং তাতে সাজা খুবই অপ্রতুল। তাই অনলাইন জুয়া বন্ধ করতে যুগোপযোগী আইন করা দরকার।
এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘সাইট বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক সমাধান হতে পারে। যারা চালাচ্ছে তাদের ধরার জন্য ইউরোপোল, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের আবেদন করা সম্ভব। কারণ, অন্য দেশে না হলেও আমাদের দেশে যেহেতু জুয়া নিষিদ্ধ, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তারা বিচারের আওতায় আসতে বাধ্য। কিন্তু সরকারি যে দপ্তরগুলো সর্বেসর্বা হয়ে বসে আছে তাদের ডার্ক ওয়েব কিংবা ওপেন সোর্স টুলস নিয়ে কোনো সফটওয়্যার নেই। টাকা খরচ করলে, কোন দেশ থেকে কারা এসব সাইট চালাচ্ছে, তা জানা সম্ভব।’
দেশে জনপ্রিয় সাইট
মোস্টবেট, বেট উইনার, বেট ৩৬৫,১ এক্স বেট, বেটবাজ ৩৬৫, ২২ বেট, মেলবেট, বেটওয়ে, ক্যাসিনো, ক্রিকেক্স, লাইন বেট, মেগা পাড়ি—এ ১২টি সাইটে বাংলাদেশ থেকে বেশি অর্থ লেনদেন করছে ব্যবহারকারীরা। এর মধ্যে প্রথম পাঁচটিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ লেনদেন হয়। সিআইডি সম্প্রতি পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে এক প্রতিবেদনে জানায়, সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২৬০ কোটি টাকা বছরে লেনদেন হয় ১ এক্স বেটের মাধ্যমে। এ ছাড়া বেট ৩৬৫-এ ২৪৫ কোটি, মোস্টবেটে ২৩০ কোটি, বেট উইনারে ১৪০ কোটি এবং বেটবাজে ১৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
লেনদেন বিকাশ-নগদে
সিআইডি ও ডিবির সাইবার ও অনলাইন টিমের কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে জুয়া খেলতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাসিক চুক্তিতে বিকাশ, নগদ, উপায়-এর এজেন্ট নম্বর ভাড়া নিয়ে দেশি এজেন্টরা লেনদেন করে। সুপার এজেন্টদের কাছে সব কোম্পানিরই সিম থাকে। যদি দেশের এমএসএফ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নজরদারি ঠিক রাখত, তাহলে অনলাইন জুয়া মোকাবিলা করা সহজ হতো।
বিটিআরসি জানায়, অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী অনলাইন গেমের চিপস কিনতে প্রয়োজন পড়ে নগদ অর্থ, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড। এসব কার্ড সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছে অনলাইন জুয়ার দিকে। কয়েকটি অপরাধী চক্র এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে। এ ছাড়া অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ায় অংশ নিয়ে থাকে। বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেন করে থাকে জুয়াড়িরা।
বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব অ্যাকাউন্টের লেনদেন সন্দেহজনক মনে হয়, আমরা তার প্রতিবেদন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) সরবরাহ করি। অনলাইন জুয়া, হুন্ডি, অর্থ পাচার, জঙ্গি অর্থায়নসংশ্লিষ্ট সব অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে নিয়মিত তদারকি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিকাশের যথাযথ প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী নিয়োজিত আছে। পাশাপাশি অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমরা রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেকোনো তদন্তে প্রয়োজনীয় সব সহায়তাও দিয়ে থাকি।’
নগদের হেড অব কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল জানান, নগদের মাধ্যমে হওয়া প্রতিটি লেনদেন দেশের আইনকানুন অনুসারে পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, ‘কোনো অপরাধমূলক লেনদেন যাতে না হয় তার জন্যও নগদ সর্বদা সচেষ্ট। পুরো প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে নগদ সব সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় এবং তাদের নির্দেশনা মেনে একসঙ্গে কাজ করছে।’
যুগোপযোগী আইন দরকার
জানা গেছে, ডিবি ও সিআইডির সাইবার টিম এ পর্যন্ত বিভিন্ন সাইটের অন্তত ৯০ জন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কিন্তু অপরাধীদের শাস্তি দিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়।
এ বিষয়ে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে পুঁজি করে অনেক সুযোগ নিচ্ছে জুয়াড়িরা। বন্ধ করা সাইট ভিপিএন ব্যবহারে চালানো হচ্ছে। ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তেমন সুরাহা পাইনি। অনলাইন জুয়া বন্ধ করার জন্য নতুন আইন প্রয়োজন। কারণ, জুয়ার আয়ের টাকা তো দেশে থাকছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো ধারায় যদি অনলাইন জুয়া যোগ করা যায়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, অনলাইন ক্যাসিনো ব্যাপক হারে চলছে। এগুলো সমাজ-জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জুয়া বন্ধ করতে ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭’ রয়েছে। এটা অনেক পুরোনো এবং সেখানে সাজা খুবই অপ্রতুল। আর সেখানে ক্যাসিনো সম্পর্কে কোনো কিছু বলা হয়নি। তাই অনলাইন জুয়া বন্ধে যুগোপযোগী আইন করা দরকার।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে