অমিতাভ রেজা, চলচ্চিত্র পরিচালক
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মঞ্চ, সিনেমা হল, রেডিও কিংবা টেলিভিশন—বিনোদনের নানা মাধ্যম বিভিন্ন সময় দাপট দেখিয়েছে। গত কয়েক বছর যেমন দেখাচ্ছে ওটিটি ও সিনেপ্লেক্স।
আশির দশকে মধ্যবিত্তের বড় আগ্রহের জায়গা ছিল টেলিভিশন। ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার একধরনের বিকাশ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তখন। টেলিভিশনের মতো এত বড় একটা মাধ্যম আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কীভাবে নতুন দর্শক তৈরি করবে, কীভাবে দর্শককে বিনোদিত করে ধরে রাখবে, সেসব ব্যাপারে বিস্তারিত আলাপ কিংবা গবেষণার প্রয়োজন। টেলিভিশনকে নিজস্ব ভাষায় এগিয়ে যেতে হবে। এখন সবাই ওটিটিতে ঝুঁকছে বলে কেবল সেই মাধ্যমে হাঁটলেও হবে না। টেলিভিশনের নিজস্ব স্ট্র্যাটেজি বা নিজস্ব স্টাইল তৈরি করতে হবে। দীর্ঘ ধারাবাহিক, গেম শো, ইনফরমেশন টক শো বা নিউজ—এমন অনেক কিছু দিয়েই টেলিভিশন বেঁচে থাকতে পারে।
অন্যদিকে রেডিও সব সময়ই আমাদের দেশে ছিল। প্রাইভেট রেডিও চ্যানেলগুলো এখনো বিভিন্নভাবে কাজ করছে। কিন্তু বড় একটা সমস্যা হয়েছে সিনেমা হলের অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে।
সিনেমা হল সাধারণত একধরনের ভার্টিক্যাল ইন্টিগ্রেশনের মধ্য দিয়ে চলে। প্রোডাকশন, ডিস্ট্রিবিউশন ও এক্সিবিশন—এই তিনটি কাজ বা প্রক্রিয়া সমন্বিতভাবে সিনেমা হলকে দাঁড় করায়। সিনেমা হল আলাদাভাবে কখনোই দাঁড়াতে পারে না। আমাদের দেশে যখন স্টুডিও সিস্টেম পড়ে গেল, তখন আমাদের সিনেমার বিকাশও একরকম স্থবির হয়ে পড়ল। এটার মূল কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে কখনোই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। তাই সিনেমার যে একধরনের বিকাশ দরকার ছিল, তা আমরা পাইনি।
সিনেমা একটি কম্পোজিট আর্ট, একটা টিমওয়ার্ক। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা ডিভিশন অব লেবার বলতে পারি। অসংখ্য মানুষ বিভিন্নভাবে এখানে কাজ করে। সিনেমা কখনোই একা তৈরি হতে পারে না। গীতিকার, সুরকার, সিনেমাটোগ্রাফার, নির্মাতা—সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসে স্টুডিও সিস্টেম। এটা পরীক্ষিত ও সফল ব্যবস্থা। সর্বশেষ সম্ভবত জাজ মাল্টিমিডিয়া স্টুডিও সিস্টেম চালু করেছিল। ইন্ডাস্ট্রির জন্য স্টুডিও সিস্টেম খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু আমাদের এখানে স্টুডিও সিস্টেম এখন আর কাজ করছে না। এখন মূলত স্বাধীন চলচ্চিত্রের জয়জয়কার।
ওটিটির কল্যাণে স্বাধীন চলচ্চিত্র খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অনেক ধরনের গল্প বলা সম্ভব হচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনে ওটিটির সম্ভাবনা অবশ্যই তৈরি হয়েছে। আমি দুটোকেই ধরে রাখতে চাইব। তবে বড় কিছুর জন্য স্টুডিও সিস্টেমটা দরকার। সিনেমা হলে সিনেমা দেখার চর্চা আরও বহুদিন থাকবে মানুষের।
একটা দেশের বিনোদন সেই দেশের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-আচরণ ও তাদের নিজস্ব নৈতিকতায় তৈরি হয়। সারা পৃথিবীতে মানুষ যেভাবে বিনোদিত হবে, আমরাও সেভাবে বিনোদন দিতে চাইব, ব্যাপারটা তা নয়। আমাদের দেশের মানুষের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতির যে চর্চা আছে, তা থেকেই আমরা বিনোদিত হতে পারি। আমাদের দেশে অসংখ্য কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী কোটি কোটি দর্শক আছে। এই দর্শকদের এক জায়গা থেকে বিনোদিত করার সুযোগ আগে ছিল না। এখন ওটিটির যুগ এসেছে। বিদেশে সিনেমা মুক্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এসব প্ল্যাটফর্মে আমরা যত বেশি নিজস্ব গল্প বলতে পারব, তত বেশি আন্তর্জাতিক হয়ে উঠব।
আমাদের চিত্রনাট্য ও গল্প বলায় সমস্যা আছে। এ জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেও কিছুটা দায়ী করব। আমরা সাংঘর্ষিক শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে একটা অদ্ভুত জাতি তৈরির চেষ্টা করছি। যেই জাতি আসলে ভুলে যাচ্ছে তার দেশ, তার মাটির গল্প। শহরের মধ্যেই অনেক স্কুল-কলেজ আছে, যেখানে বিদেশি ভাষায় পড়াশোনা হচ্ছে, বাংলাদেশের গল্পের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই। কিন্তু তারাই আবার কাজ করতে আসছে বিনোদন মাধ্যমে। অন্যদিকে মফস্বল বা আমাদের অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থা এতই দুর্বল যে সেখান থেকে সাহিত্যের চর্চা, দর্শনের চর্চা, রাজনীতির চর্চা—কোনোটাই আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে তৈরি করতে পারছি না। সেই জায়গা থেকে চিত্রনাট্য বা গল্প লিখতে গেলে তাই একধরনের পশ্চাৎপদতা থাকবেই। তারপরও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। নতুন ছেলেমেয়েরা এই মাধ্যমে আসছে এবং আসার প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যে তারা গল্প বলার চেষ্টা করছে, সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
সিনেমায় ‘সৎ’ গল্প বলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিবার, সমাজ ও বাংলাদেশের মানুষের গল্প বলতে হবে। তা না হলে দর্শক হলে আসবে না। দর্শকের চাহিদার মূল্য না দিয়ে দর্শক কেমন গল্প পছন্দ করে, কী দেখতে চায়, তা যাচাই-বাছাই না করে অন্ধের মতো সিনেমা নির্মাণ করলে হবে না। আমাদের দেশের সিনেমার দর্শক উন্মুখ হয়ে থাকে হলে বসে ভালো একটি সিনেমা দেখার জন্য। কিন্তু তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা কি পূরণ করতে পারছি? আমরা আমাদের মতো গল্প বলার চেষ্টা করছি এবং জোর করে দর্শককে হলে আনার চেষ্টা করছি। একটা সময় আমাদের পরিবারের আনন্দময় সময় কাটত দল বেঁধে হলে বসে সিনেমা দেখে।
পুরোনো সেই সংস্কৃতি এখনো আছে। কিন্তু একদিকে যেমন আমরা প্রত্যাশিত গল্পের ও নির্মাণের সিনেমা দিতে পারছি না, অন্যদিকে সিনেমা হলের পরিবেশও সুন্দর, সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে পারছি না। বাংলাদেশের মতো এত সিনেমাপাগল ও ভালো দর্শক পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কি না, আমার জানা নেই। হলের অব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাটে অসহনীয় যানজট উপেক্ষা করে দর্শকেরা হলে বসে সিনেমা দেখছে।
সিনেমা শুধু ব্যবসা করার জন্য লগ্নি না করে প্রযোজনা করতে হবে। আমাদের এখানে একজন প্রযোজক কিংবা পরিচালক সবকিছু করেন, এটা ঠিক নয়। সার্বিক ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠান করবে। একজন প্রযোজকের নেতৃত্বে পুরো দল কাজ করবে, এটাই নিয়ম।
এবার আসি সিনেমার বাজার ও বাজেট প্রসঙ্গে। বাংলা সিনেমার বাজেট-সংকট; কারণ, সিনেমা বিক্রি করার মতো বাজার তৈরি হয়নি। এটা তো একটা পণ্য। এই পণ্য যখন চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি হবে, তখনই বাজেট তৈরি হবে। একটি পণ্যের বাজার থাকে, ভোক্তা থাকে, চাহিদা থাকে। সেই চাহিদার ভিত্তিতে পণ্য বাজারে ছাড়লে গ্রাহক সেটা গ্রহণ করে। ফলে মুনাফা আসতে থাকে।
মুনাফা আসতে থাকলে সেখানে লগ্নি করতে কারও অসুবিধা থাকার কথা নয়। যখন আমার গ্রাহক নেই, বাজার নেই, মুনাফা নেই—সেখানে কেন একজন বিনিয়োগ করবেন?
আমাদের সিনেমার বাজার প্রাতিষ্ঠানিক নয়। সিনেমা হল, কমপ্লেক্স—এগুলো স্ট্রাকচারাল নয়। এখানে অনেক রকমের দুর্নীতি আছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো রকমের পেশাদারত্ব তৈরি হয়নি।
তাই বাজেট কমতে থাকে। বাংলাদেশের সব মানুষের মধ্যে দুই কোটিও যদি সিনেমা দেখে, দুই কোটি মানুষ দুই টাকা করে যদি দেয়, তাহলে আসে চার কোটি টাকা। আমাদের বাজার হচ্ছে এক কোটি টাকার। আমার মনে হয়, এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলে বাংলাদেশে কমপক্ষে বিশ কোটি টাকার বাজার আছে।
সেই বাজারকে লক্ষ্য করেই নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের। এগিয়ে যেতে হবে পরিকল্পনামতো। নতুন প্রজন্মকে দিতে হবে সঠিক নেতৃত্ব। তবেই খুলে যাবে আমাদের সিনেমার সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মঞ্চ, সিনেমা হল, রেডিও কিংবা টেলিভিশন—বিনোদনের নানা মাধ্যম বিভিন্ন সময় দাপট দেখিয়েছে। গত কয়েক বছর যেমন দেখাচ্ছে ওটিটি ও সিনেপ্লেক্স।
আশির দশকে মধ্যবিত্তের বড় আগ্রহের জায়গা ছিল টেলিভিশন। ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার একধরনের বিকাশ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তখন। টেলিভিশনের মতো এত বড় একটা মাধ্যম আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কীভাবে নতুন দর্শক তৈরি করবে, কীভাবে দর্শককে বিনোদিত করে ধরে রাখবে, সেসব ব্যাপারে বিস্তারিত আলাপ কিংবা গবেষণার প্রয়োজন। টেলিভিশনকে নিজস্ব ভাষায় এগিয়ে যেতে হবে। এখন সবাই ওটিটিতে ঝুঁকছে বলে কেবল সেই মাধ্যমে হাঁটলেও হবে না। টেলিভিশনের নিজস্ব স্ট্র্যাটেজি বা নিজস্ব স্টাইল তৈরি করতে হবে। দীর্ঘ ধারাবাহিক, গেম শো, ইনফরমেশন টক শো বা নিউজ—এমন অনেক কিছু দিয়েই টেলিভিশন বেঁচে থাকতে পারে।
অন্যদিকে রেডিও সব সময়ই আমাদের দেশে ছিল। প্রাইভেট রেডিও চ্যানেলগুলো এখনো বিভিন্নভাবে কাজ করছে। কিন্তু বড় একটা সমস্যা হয়েছে সিনেমা হলের অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে।
সিনেমা হল সাধারণত একধরনের ভার্টিক্যাল ইন্টিগ্রেশনের মধ্য দিয়ে চলে। প্রোডাকশন, ডিস্ট্রিবিউশন ও এক্সিবিশন—এই তিনটি কাজ বা প্রক্রিয়া সমন্বিতভাবে সিনেমা হলকে দাঁড় করায়। সিনেমা হল আলাদাভাবে কখনোই দাঁড়াতে পারে না। আমাদের দেশে যখন স্টুডিও সিস্টেম পড়ে গেল, তখন আমাদের সিনেমার বিকাশও একরকম স্থবির হয়ে পড়ল। এটার মূল কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে কখনোই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। তাই সিনেমার যে একধরনের বিকাশ দরকার ছিল, তা আমরা পাইনি।
সিনেমা একটি কম্পোজিট আর্ট, একটা টিমওয়ার্ক। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা ডিভিশন অব লেবার বলতে পারি। অসংখ্য মানুষ বিভিন্নভাবে এখানে কাজ করে। সিনেমা কখনোই একা তৈরি হতে পারে না। গীতিকার, সুরকার, সিনেমাটোগ্রাফার, নির্মাতা—সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসে স্টুডিও সিস্টেম। এটা পরীক্ষিত ও সফল ব্যবস্থা। সর্বশেষ সম্ভবত জাজ মাল্টিমিডিয়া স্টুডিও সিস্টেম চালু করেছিল। ইন্ডাস্ট্রির জন্য স্টুডিও সিস্টেম খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু আমাদের এখানে স্টুডিও সিস্টেম এখন আর কাজ করছে না। এখন মূলত স্বাধীন চলচ্চিত্রের জয়জয়কার।
ওটিটির কল্যাণে স্বাধীন চলচ্চিত্র খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অনেক ধরনের গল্প বলা সম্ভব হচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনে ওটিটির সম্ভাবনা অবশ্যই তৈরি হয়েছে। আমি দুটোকেই ধরে রাখতে চাইব। তবে বড় কিছুর জন্য স্টুডিও সিস্টেমটা দরকার। সিনেমা হলে সিনেমা দেখার চর্চা আরও বহুদিন থাকবে মানুষের।
একটা দেশের বিনোদন সেই দেশের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-আচরণ ও তাদের নিজস্ব নৈতিকতায় তৈরি হয়। সারা পৃথিবীতে মানুষ যেভাবে বিনোদিত হবে, আমরাও সেভাবে বিনোদন দিতে চাইব, ব্যাপারটা তা নয়। আমাদের দেশের মানুষের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতির যে চর্চা আছে, তা থেকেই আমরা বিনোদিত হতে পারি। আমাদের দেশে অসংখ্য কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী কোটি কোটি দর্শক আছে। এই দর্শকদের এক জায়গা থেকে বিনোদিত করার সুযোগ আগে ছিল না। এখন ওটিটির যুগ এসেছে। বিদেশে সিনেমা মুক্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এসব প্ল্যাটফর্মে আমরা যত বেশি নিজস্ব গল্প বলতে পারব, তত বেশি আন্তর্জাতিক হয়ে উঠব।
আমাদের চিত্রনাট্য ও গল্প বলায় সমস্যা আছে। এ জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেও কিছুটা দায়ী করব। আমরা সাংঘর্ষিক শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে একটা অদ্ভুত জাতি তৈরির চেষ্টা করছি। যেই জাতি আসলে ভুলে যাচ্ছে তার দেশ, তার মাটির গল্প। শহরের মধ্যেই অনেক স্কুল-কলেজ আছে, যেখানে বিদেশি ভাষায় পড়াশোনা হচ্ছে, বাংলাদেশের গল্পের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই। কিন্তু তারাই আবার কাজ করতে আসছে বিনোদন মাধ্যমে। অন্যদিকে মফস্বল বা আমাদের অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থা এতই দুর্বল যে সেখান থেকে সাহিত্যের চর্চা, দর্শনের চর্চা, রাজনীতির চর্চা—কোনোটাই আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে তৈরি করতে পারছি না। সেই জায়গা থেকে চিত্রনাট্য বা গল্প লিখতে গেলে তাই একধরনের পশ্চাৎপদতা থাকবেই। তারপরও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। নতুন ছেলেমেয়েরা এই মাধ্যমে আসছে এবং আসার প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যে তারা গল্প বলার চেষ্টা করছে, সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
সিনেমায় ‘সৎ’ গল্প বলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিবার, সমাজ ও বাংলাদেশের মানুষের গল্প বলতে হবে। তা না হলে দর্শক হলে আসবে না। দর্শকের চাহিদার মূল্য না দিয়ে দর্শক কেমন গল্প পছন্দ করে, কী দেখতে চায়, তা যাচাই-বাছাই না করে অন্ধের মতো সিনেমা নির্মাণ করলে হবে না। আমাদের দেশের সিনেমার দর্শক উন্মুখ হয়ে থাকে হলে বসে ভালো একটি সিনেমা দেখার জন্য। কিন্তু তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা কি পূরণ করতে পারছি? আমরা আমাদের মতো গল্প বলার চেষ্টা করছি এবং জোর করে দর্শককে হলে আনার চেষ্টা করছি। একটা সময় আমাদের পরিবারের আনন্দময় সময় কাটত দল বেঁধে হলে বসে সিনেমা দেখে।
পুরোনো সেই সংস্কৃতি এখনো আছে। কিন্তু একদিকে যেমন আমরা প্রত্যাশিত গল্পের ও নির্মাণের সিনেমা দিতে পারছি না, অন্যদিকে সিনেমা হলের পরিবেশও সুন্দর, সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে পারছি না। বাংলাদেশের মতো এত সিনেমাপাগল ও ভালো দর্শক পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কি না, আমার জানা নেই। হলের অব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাটে অসহনীয় যানজট উপেক্ষা করে দর্শকেরা হলে বসে সিনেমা দেখছে।
সিনেমা শুধু ব্যবসা করার জন্য লগ্নি না করে প্রযোজনা করতে হবে। আমাদের এখানে একজন প্রযোজক কিংবা পরিচালক সবকিছু করেন, এটা ঠিক নয়। সার্বিক ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠান করবে। একজন প্রযোজকের নেতৃত্বে পুরো দল কাজ করবে, এটাই নিয়ম।
এবার আসি সিনেমার বাজার ও বাজেট প্রসঙ্গে। বাংলা সিনেমার বাজেট-সংকট; কারণ, সিনেমা বিক্রি করার মতো বাজার তৈরি হয়নি। এটা তো একটা পণ্য। এই পণ্য যখন চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি হবে, তখনই বাজেট তৈরি হবে। একটি পণ্যের বাজার থাকে, ভোক্তা থাকে, চাহিদা থাকে। সেই চাহিদার ভিত্তিতে পণ্য বাজারে ছাড়লে গ্রাহক সেটা গ্রহণ করে। ফলে মুনাফা আসতে থাকে।
মুনাফা আসতে থাকলে সেখানে লগ্নি করতে কারও অসুবিধা থাকার কথা নয়। যখন আমার গ্রাহক নেই, বাজার নেই, মুনাফা নেই—সেখানে কেন একজন বিনিয়োগ করবেন?
আমাদের সিনেমার বাজার প্রাতিষ্ঠানিক নয়। সিনেমা হল, কমপ্লেক্স—এগুলো স্ট্রাকচারাল নয়। এখানে অনেক রকমের দুর্নীতি আছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো রকমের পেশাদারত্ব তৈরি হয়নি।
তাই বাজেট কমতে থাকে। বাংলাদেশের সব মানুষের মধ্যে দুই কোটিও যদি সিনেমা দেখে, দুই কোটি মানুষ দুই টাকা করে যদি দেয়, তাহলে আসে চার কোটি টাকা। আমাদের বাজার হচ্ছে এক কোটি টাকার। আমার মনে হয়, এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলে বাংলাদেশে কমপক্ষে বিশ কোটি টাকার বাজার আছে।
সেই বাজারকে লক্ষ্য করেই নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের। এগিয়ে যেতে হবে পরিকল্পনামতো। নতুন প্রজন্মকে দিতে হবে সঠিক নেতৃত্ব। তবেই খুলে যাবে আমাদের সিনেমার সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে