রাহুল শর্মা, ঢাকা
দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশে চালু হলো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস। তবে শুরুর বছরেই একটি শাখা ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে উঠেছে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, আরও ৮-১০টি নামসর্বস্ব ও ভুঁইফোড় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস খোলার জোর তদবির চলছে।
এই শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদনের বিরোধিতা করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকেরা। তাঁরা বলছেন, সব নিয়ম মানছেন, কিন্তু শাখা ক্যাম্পাস মানছেন না। এতে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, সনদ-বাণিজ্য বাড়বে। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, দেশে এমন শাখা ক্যাম্পাস প্রয়োজন নেই। নামসর্বস্ব ও ভুঁইফোড় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসে শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত ও বিশৃঙ্খল হবে।
বর্তমানে দেশে ৫৩টি সরকারি, ১১২টি বেসরকারি এবং ৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সনদ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করেছে ইউজিসি। এই অবস্থায় অনুমোদন পেয়েছে দুটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস। দুটির ক্যাম্পাসই ঢাকায়। এর একটি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মোনাস কলেজ। এটি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। অন্যটি মালয়েশিয়াভিত্তিক ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি। এটি ২৪টি কোর্স পরিচালনা শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে ২১টি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এবং ৩টি পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মতে, দেশে বর্তমানে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের কোনো প্রয়োজন নেই। শাখা ক্যাম্পাস নতুন সমস্যার সৃষ্টি করবে, শিক্ষাব্যবস্থা আরও বিশৃঙ্খল হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, দেশে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদন পায় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর। ক্যাম্পাসটি রাজধানীর বনানীতে। চলতি বছরের ১ মার্চ একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রো-চ্যান্সেলর টুংকু জাইন আল-আবিদিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত হাজনা মো. হাশিম।
জানা যায়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনায় রয়েছে ইনসাইট ইনস্টিটিউট অব লার্নিং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান।
শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষানীতি, ২০১০-এ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চালুর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। কায়েমি স্বার্থের কারণে মানহীন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চালুর অনুমোদন দিলে তা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। কারণ, মানসম্পন্ন শিক্ষা না পেলে তাঁরা কর্মক্ষেত্রে ভয়ানক সমস্যায় পড়বেন। ইউজিসিরও উচিত এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ, প্রোগ্রাম অনুমোদন, ক্যাম্পাসের অনুমোদন, স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনসহ সব বিষয়ে ইউজিসির নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারগুলো এসব মানছে না।
গোড়াতেই অভিযোগ
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে প্রথম বছরেই ইউজিসির ভর্তির নিয়ম না মানার অভিযোগ উঠেছে। ইউজিসি সূত্র বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) এবং একাডেমিক অনুমোদন নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করতে হয়। কিন্তু ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাস এই অনুমোদন নেয়নি। ক্যাম্পাস স্থাপন করেই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে। ভর্তিতে নিয়ম না মানায় ক্যাম্পাসটিকে ৩ মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সই করা নোটিশে বলা হয়, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪-এর বিধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ ক্যাম্পাসটি লঙ্ঘন করেছে বলে কমিশনের নজরে এসেছে। তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, একাডেমিক অনুমোদন ছাড়া তারা (ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাস) শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করেছে, যা অবৈধ। আইন অনুসারে ইউজিসির একাডেমিক অনুমোদন ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। ৯ মে নোটিশের সাত পাতার জবাবে মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের সই রয়েছে। ইউজিসি যেসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, সেসবের বেশ কয়েকটির সন্তোষজনক জবাব তারা দেয়নি। ইউজিসির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কমিশন বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে। শিগগির পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের শাখা পরিচালক মো. আরিফুল বারী মজুমদার ৬ জুন মোবাইল ফোন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর শর্ত আমাদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বিধি, ২০১৪ অনুযায়ী ক্যাম্পাস পরিচালনা করছি। ইউজিসির নোটিশের লিখিত জবাব আমরা দিয়েছি।’
অনুমোদনে নিয়মের ব্যত্যয়
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস খুলতে হলে প্রথমে ইউজিসিতে আবেদন করতে হয়। ইউজিসি সুপারিশ করার পর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রে প্রথমে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়ে ইউজিসিতে চিঠি দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু-তিনজন কর্মকর্তা। তাঁরা বলেন, একই অবস্থা মোনাস কলেজের বেলায়ও। এটির অনুমোদনেও একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন।
একই ভবনে ক্যাম্পাস, দোকান
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাস বনানীর একটি বহুতল ভবনে। ৭ জুন ওই ভবনে গেলে প্রথমে চোখে পড়ে টিউলিপ ক্যাফে নামের একটি খাবারের দোকান। এর ওপরে একটি পোশাকের দোকান। আরও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ভবনটিতে। এই প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখে ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ক্যাম্পাসের এক কর্মকর্তা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে বিশ্বের যেকোনো দেশে চাকরি পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় মানের দিক থেকে এটির ধারেকাছেও নেই। ভবনে থাকা দোকান-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যতটুকু জায়গা দরকার, ততটুকু ব্যবহার করছি। বাকি জায়গা অন্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে।’
কোম্পানি আইনে অনুমোদন
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘ট্রাস্ট আইন, ১৮৮২’-এর অধীনে অলাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়। ওই আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। এদিকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস কিংবা স্টাডি সেন্টার ‘কোম্পানি আইন, ১৯৯৪’-এর অধীনে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার, ২০১৪ বিধি ৭(ঝ) অনুযায়ী, উদ্বৃত্ত অর্থসম্পদ উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বিভাজিত হবে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, বিষয়টি অবশ্যই সাংঘর্ষিক। মূল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু বিধি ও প্রবিধানমালা যুক্ত করা যাবে না।
একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন। অথচ আর্থিক সুবিধা ও লভ্যাংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের উদ্যোক্তারা লভ্যাংশ নিতে পারবেন। এই লভ্যাংশের বেশির ভাগ অর্থ বিদেশে পাচার হতে পারে। শাখা ক্যাম্পাসের আড়ালে মানব পাচারের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বৈষম্যমূলক বিধির আওতায় নামসর্বস্ব ও ভুঁইফোড় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এতে একদিকে অর্থ পাচার বাড়বে, অন্যদিকে সনদ-বাণিজ্য হবে। এর ভুক্তভোগী হবে শিক্ষার্থীরা, সর্বোপরি পুরো জাতি।
সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন অমান্য করলে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশে চালু হলো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস। তবে শুরুর বছরেই একটি শাখা ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে উঠেছে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, আরও ৮-১০টি নামসর্বস্ব ও ভুঁইফোড় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস খোলার জোর তদবির চলছে।
এই শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদনের বিরোধিতা করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকেরা। তাঁরা বলছেন, সব নিয়ম মানছেন, কিন্তু শাখা ক্যাম্পাস মানছেন না। এতে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, সনদ-বাণিজ্য বাড়বে। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, দেশে এমন শাখা ক্যাম্পাস প্রয়োজন নেই। নামসর্বস্ব ও ভুঁইফোড় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসে শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত ও বিশৃঙ্খল হবে।
বর্তমানে দেশে ৫৩টি সরকারি, ১১২টি বেসরকারি এবং ৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সনদ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করেছে ইউজিসি। এই অবস্থায় অনুমোদন পেয়েছে দুটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস। দুটির ক্যাম্পাসই ঢাকায়। এর একটি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মোনাস কলেজ। এটি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। অন্যটি মালয়েশিয়াভিত্তিক ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি। এটি ২৪টি কোর্স পরিচালনা শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে ২১টি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এবং ৩টি পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মতে, দেশে বর্তমানে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের কোনো প্রয়োজন নেই। শাখা ক্যাম্পাস নতুন সমস্যার সৃষ্টি করবে, শিক্ষাব্যবস্থা আরও বিশৃঙ্খল হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, দেশে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদন পায় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর। ক্যাম্পাসটি রাজধানীর বনানীতে। চলতি বছরের ১ মার্চ একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রো-চ্যান্সেলর টুংকু জাইন আল-আবিদিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত হাজনা মো. হাশিম।
জানা যায়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনায় রয়েছে ইনসাইট ইনস্টিটিউট অব লার্নিং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান।
শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষানীতি, ২০১০-এ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চালুর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। কায়েমি স্বার্থের কারণে মানহীন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চালুর অনুমোদন দিলে তা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। কারণ, মানসম্পন্ন শিক্ষা না পেলে তাঁরা কর্মক্ষেত্রে ভয়ানক সমস্যায় পড়বেন। ইউজিসিরও উচিত এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ, প্রোগ্রাম অনুমোদন, ক্যাম্পাসের অনুমোদন, স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনসহ সব বিষয়ে ইউজিসির নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারগুলো এসব মানছে না।
গোড়াতেই অভিযোগ
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে প্রথম বছরেই ইউজিসির ভর্তির নিয়ম না মানার অভিযোগ উঠেছে। ইউজিসি সূত্র বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) এবং একাডেমিক অনুমোদন নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করতে হয়। কিন্তু ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাস এই অনুমোদন নেয়নি। ক্যাম্পাস স্থাপন করেই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে। ভর্তিতে নিয়ম না মানায় ক্যাম্পাসটিকে ৩ মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সই করা নোটিশে বলা হয়, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪-এর বিধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ ক্যাম্পাসটি লঙ্ঘন করেছে বলে কমিশনের নজরে এসেছে। তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, একাডেমিক অনুমোদন ছাড়া তারা (ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাস) শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করেছে, যা অবৈধ। আইন অনুসারে ইউজিসির একাডেমিক অনুমোদন ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। ৯ মে নোটিশের সাত পাতার জবাবে মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের সই রয়েছে। ইউজিসি যেসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, সেসবের বেশ কয়েকটির সন্তোষজনক জবাব তারা দেয়নি। ইউজিসির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কমিশন বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে। শিগগির পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের শাখা পরিচালক মো. আরিফুল বারী মজুমদার ৬ জুন মোবাইল ফোন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর শর্ত আমাদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বিধি, ২০১৪ অনুযায়ী ক্যাম্পাস পরিচালনা করছি। ইউজিসির নোটিশের লিখিত জবাব আমরা দিয়েছি।’
অনুমোদনে নিয়মের ব্যত্যয়
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস খুলতে হলে প্রথমে ইউজিসিতে আবেদন করতে হয়। ইউজিসি সুপারিশ করার পর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রে প্রথমে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়ে ইউজিসিতে চিঠি দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু-তিনজন কর্মকর্তা। তাঁরা বলেন, একই অবস্থা মোনাস কলেজের বেলায়ও। এটির অনুমোদনেও একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন।
একই ভবনে ক্যাম্পাস, দোকান
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাস বনানীর একটি বহুতল ভবনে। ৭ জুন ওই ভবনে গেলে প্রথমে চোখে পড়ে টিউলিপ ক্যাফে নামের একটি খাবারের দোকান। এর ওপরে একটি পোশাকের দোকান। আরও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ভবনটিতে। এই প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখে ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ক্যাম্পাসের এক কর্মকর্তা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে বিশ্বের যেকোনো দেশে চাকরি পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় মানের দিক থেকে এটির ধারেকাছেও নেই। ভবনে থাকা দোকান-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যতটুকু জায়গা দরকার, ততটুকু ব্যবহার করছি। বাকি জায়গা অন্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে।’
কোম্পানি আইনে অনুমোদন
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘ট্রাস্ট আইন, ১৮৮২’-এর অধীনে অলাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়। ওই আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। এদিকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস কিংবা স্টাডি সেন্টার ‘কোম্পানি আইন, ১৯৯৪’-এর অধীনে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার, ২০১৪ বিধি ৭(ঝ) অনুযায়ী, উদ্বৃত্ত অর্থসম্পদ উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বিভাজিত হবে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, বিষয়টি অবশ্যই সাংঘর্ষিক। মূল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু বিধি ও প্রবিধানমালা যুক্ত করা যাবে না।
একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন। অথচ আর্থিক সুবিধা ও লভ্যাংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের উদ্যোক্তারা লভ্যাংশ নিতে পারবেন। এই লভ্যাংশের বেশির ভাগ অর্থ বিদেশে পাচার হতে পারে। শাখা ক্যাম্পাসের আড়ালে মানব পাচারের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বৈষম্যমূলক বিধির আওতায় নামসর্বস্ব ও ভুঁইফোড় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এতে একদিকে অর্থ পাচার বাড়বে, অন্যদিকে সনদ-বাণিজ্য হবে। এর ভুক্তভোগী হবে শিক্ষার্থীরা, সর্বোপরি পুরো জাতি।
সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন অমান্য করলে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে