ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র শিক্ষক ও গবেষক
পার্থেনিয়াম এক ধরনের আগাছা। এর উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুট। এর আয়ুষ্কাল তিন থেকে চার মাস। এর পাতা চিকন। সবুজ রঙের। ফুল ছোট ছোট সাদা রঙের। এর অসংখ্য শাখা থাকে। ত্রিভুজের মতো ছড়ানো। এটি ১-১.৫ মিটার লম্বা হয়। গাছটি তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। এই ফুল গোলাকার ও পিচ্ছিল। এটি অ্যাস্টারিসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একধরনের বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। দেখতে হাইব্রিড ধানগাছের মতো। এর পাতা গাজরের পাতার মতো। অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন কংগ্রেস ঘাস, গাজর ঘাস, চেতক চাঁদনী প্রভৃতি।
এটি মূলত উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, মেক্সিকো ও ক্যারাবিয়ান অঞ্চলে দেখা যায়। এটি এখন ২০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে এটি নাকফুল নামেও পরিচিত। এটি আলো ও তাপের প্রতি অসংবেদনশীল। তবে খরা সহনশীল।
সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশের ৩৫টি জেলায় এর বিস্তার ঘটেছে বলে সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় উঠে এসেছে। এটি বেগুন, টমেটো, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ন কমিয়ে দেয়। ধান, ছোলা, সরিষা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের অঙ্কুরোদগমে ও বৃদ্ধিতে বাধা দিচ্ছে। এটি খাদ্যনিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত সভায় জানানো হয়, মানুষ বা গবাদিপশু পার্থেনিয়াম দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর সংস্পর্শে চুলকানির সৃষ্টি হয়। ফলে শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমাসহ নানা রোগ দেখা দেয়।
গবাদিপশুর শরীরে লাগলে ফুলে যায়। এর ফলে তীব্র জ্বর হয়। বদহজমসহ নানা রকমের রোগ হয়। গবাদিপশু এই গাছ খেয়ে ফেললে জ্বর পর্যন্তও হতে পারে। মানুষের ত্বক লালচে হয় এবং ফুলে যায়। ত্বক ক্যানসারও হতে পারে। এর ফলে ঘন ঘন জ্বর, মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। একটি তথ্যমতে, ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় ১২ জন মারা গেছে।
আমের বাগান, আখ, কলা, হলুদখেতে এর আক্রমণ বেশি। করলা ও শিমখেতেও এদের আক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি ফসলের পরাগায়ন হ্রাস করে এরা। এটি ফলন কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া উদ্ভিদের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণে বাধাগ্রস্ত করে।
এই গাছ থেকে চার ধরনের টক্সিন বের হয়। এগুলো হলো পারথেনিন, হিস্টামিন, হাইমেনিন ও অবরোসিন। এই টক্সিন নানা রকমের অ্যাজমা, অ্যালার্জি, ডার্মাইটিস, ব্রঙ্কাইটিসের জন্য দায়ী।
এই আগাছার প্রথম অস্তিত্ব দেখা যায় ২০০৮ সালে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ অ্যাডকিনস যশোর অঞ্চলে প্রথম এটি দেখতে পান। একটি পার্থেনিয়াম থেকে ৬০ হাজার গাছ হয়। এ বীজ বাতাসের সাহায্যে ছড়ায়—১০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়াতে পারে। যশোর ও রাজশাহী এলাকায় এর উপস্থিতি বেশি।
এটি ফসলের খেত বা রাস্তার দুই ধারে জন্মাতে পারে। এটি সহজেই প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। এই গাছ মূলত এসেছে মেক্সিকো থেকে। এখন পুরো উপমহাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, চীন, পাকিস্তান, নেপাল ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এই আগাছাটিকে বিষাক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কৃষিবিদদের মতে গাছটিকে এখন দেখলেই পুড়িয়ে ফেলা উচিত। এই ক্ষেত্রে এটি কাটতে গেলে শরীরে লেগে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এখান থেকে বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই কাটার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
হাতে গ্লাভস ও চোখে চশমা পরে নিতে হবে। মোটা কাপড়ের বা জিনসের প্যান্ট পরা থাকতে হবে। বুটজুতা পরতে হবে। এরপর গাছ কেটে গভীর গর্ত করে তা পুঁতে ফেলতে হবে। আগাছানাশক ব্যবহার করেও এটিকে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে ডায়ইউরোন, টারবাসিল, ব্রোমাসিলজাতীয় আগাছানাশক ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি হেক্টরে ছিটিয়ে দিতে হবে। জৈবিকভাবেও এদের দমন করা যায়। পাতাখেকো পোকার মাধ্যমে এদের দমন করা সম্ভব।
পার্থেনিয়াম গাছটিকে প্রথমে আমাদের চিনতে হবে। গাছ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং এর নিধনে কীভাবে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি, তা পোস্টার, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে জানাতে হবে।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
পার্থেনিয়াম এক ধরনের আগাছা। এর উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুট। এর আয়ুষ্কাল তিন থেকে চার মাস। এর পাতা চিকন। সবুজ রঙের। ফুল ছোট ছোট সাদা রঙের। এর অসংখ্য শাখা থাকে। ত্রিভুজের মতো ছড়ানো। এটি ১-১.৫ মিটার লম্বা হয়। গাছটি তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। এই ফুল গোলাকার ও পিচ্ছিল। এটি অ্যাস্টারিসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একধরনের বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। দেখতে হাইব্রিড ধানগাছের মতো। এর পাতা গাজরের পাতার মতো। অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন কংগ্রেস ঘাস, গাজর ঘাস, চেতক চাঁদনী প্রভৃতি।
এটি মূলত উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, মেক্সিকো ও ক্যারাবিয়ান অঞ্চলে দেখা যায়। এটি এখন ২০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে এটি নাকফুল নামেও পরিচিত। এটি আলো ও তাপের প্রতি অসংবেদনশীল। তবে খরা সহনশীল।
সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশের ৩৫টি জেলায় এর বিস্তার ঘটেছে বলে সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় উঠে এসেছে। এটি বেগুন, টমেটো, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ন কমিয়ে দেয়। ধান, ছোলা, সরিষা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের অঙ্কুরোদগমে ও বৃদ্ধিতে বাধা দিচ্ছে। এটি খাদ্যনিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত সভায় জানানো হয়, মানুষ বা গবাদিপশু পার্থেনিয়াম দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর সংস্পর্শে চুলকানির সৃষ্টি হয়। ফলে শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমাসহ নানা রোগ দেখা দেয়।
গবাদিপশুর শরীরে লাগলে ফুলে যায়। এর ফলে তীব্র জ্বর হয়। বদহজমসহ নানা রকমের রোগ হয়। গবাদিপশু এই গাছ খেয়ে ফেললে জ্বর পর্যন্তও হতে পারে। মানুষের ত্বক লালচে হয় এবং ফুলে যায়। ত্বক ক্যানসারও হতে পারে। এর ফলে ঘন ঘন জ্বর, মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। একটি তথ্যমতে, ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় ১২ জন মারা গেছে।
আমের বাগান, আখ, কলা, হলুদখেতে এর আক্রমণ বেশি। করলা ও শিমখেতেও এদের আক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি ফসলের পরাগায়ন হ্রাস করে এরা। এটি ফলন কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া উদ্ভিদের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণে বাধাগ্রস্ত করে।
এই গাছ থেকে চার ধরনের টক্সিন বের হয়। এগুলো হলো পারথেনিন, হিস্টামিন, হাইমেনিন ও অবরোসিন। এই টক্সিন নানা রকমের অ্যাজমা, অ্যালার্জি, ডার্মাইটিস, ব্রঙ্কাইটিসের জন্য দায়ী।
এই আগাছার প্রথম অস্তিত্ব দেখা যায় ২০০৮ সালে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ অ্যাডকিনস যশোর অঞ্চলে প্রথম এটি দেখতে পান। একটি পার্থেনিয়াম থেকে ৬০ হাজার গাছ হয়। এ বীজ বাতাসের সাহায্যে ছড়ায়—১০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়াতে পারে। যশোর ও রাজশাহী এলাকায় এর উপস্থিতি বেশি।
এটি ফসলের খেত বা রাস্তার দুই ধারে জন্মাতে পারে। এটি সহজেই প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। এই গাছ মূলত এসেছে মেক্সিকো থেকে। এখন পুরো উপমহাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, চীন, পাকিস্তান, নেপাল ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এই আগাছাটিকে বিষাক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কৃষিবিদদের মতে গাছটিকে এখন দেখলেই পুড়িয়ে ফেলা উচিত। এই ক্ষেত্রে এটি কাটতে গেলে শরীরে লেগে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এখান থেকে বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই কাটার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
হাতে গ্লাভস ও চোখে চশমা পরে নিতে হবে। মোটা কাপড়ের বা জিনসের প্যান্ট পরা থাকতে হবে। বুটজুতা পরতে হবে। এরপর গাছ কেটে গভীর গর্ত করে তা পুঁতে ফেলতে হবে। আগাছানাশক ব্যবহার করেও এটিকে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে ডায়ইউরোন, টারবাসিল, ব্রোমাসিলজাতীয় আগাছানাশক ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি হেক্টরে ছিটিয়ে দিতে হবে। জৈবিকভাবেও এদের দমন করা যায়। পাতাখেকো পোকার মাধ্যমে এদের দমন করা সম্ভব।
পার্থেনিয়াম গাছটিকে প্রথমে আমাদের চিনতে হবে। গাছ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং এর নিধনে কীভাবে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি, তা পোস্টার, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে জানাতে হবে।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে