নুসরাত জাহান শুচি
বেশ কিছুদিন ধরেই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। কী ভাবছেন? বিশেষ কোনো অর্জন বা খ্যাতির জন্য? নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছেন, কী সেই অর্জন? সেই অর্জন নির্যাতনের, নিপীড়নের, মানসিক অত্যাচারের ও আত্মহত্যার।
জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা নতুন ঘটনা নয়। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর তালিকায় জবির অবস্থান দ্বিতীয়। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ সেশনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অবন্তিকা ফেসবুকে পোস্ট করে তাঁর আত্মহত্যার জন্য দায়ী করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং তাঁরই সহপাঠীকে।
অবন্তিকা সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়। স্বভাবতই আমরা জানি, দুর্বল মানসিকতার লোকেরা আত্মহত্যা করে থাকে। কিন্তু একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে অবন্তিকাকে আমি যতটা জানি, তাঁকে সেই কাতারে ফেলা যায় না।
অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন অবন্তিকা। বিভাগে রেকর্ড নম্বর ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি গান, নাচ, আবৃত্তি, বিতর্ক, উপস্থাপনা—কোনো দিকেই পিছিয়ে ছিলেন না। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রিন কার্ড পেয়েছিলেন, কিন্তু পায়ের সমস্যা হওয়ায় সে-যাত্রায় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। তাঁর ইচ্ছা ছিল স্নাতক শেষ করে না হয় আরও একবার চেষ্টা করবেন বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্য হওয়ার। এমন একটা মেয়ে আর যাই হোক, আবেগের কারণে আত্মহত্যা করতে পারেন না।
এবার আসি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ে। কলেজ পেরিয়ে যখন পরিবার ছেড়ে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন, স্বভাবতই অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়—র্যাগিং, বুলিং, নতুন পরিবেশ, নতুন কারিকুলামে পড়াশোনা ইত্যাদি। ঠিক সেই মুহূর্তে জবি প্রশাসন যে ভূমিকা পালন করে, তার একটি ধারণা দেওয়া যাক:
১. যেহেতু আবাসিক হলবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়, মেসের নানান সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষার্থী। যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললে জবি প্রশাসন বলে, ‘এটা কি মিসকিনদের বিশ্ববিদ্যালয়?’
২. শিক্ষার্থীদের হল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের ওপর তাঁদের নির্ভর করতে হয়। গ্রীষ্মের গরমে বেলা সাড়ে ৩টায় গাদাগাদি করে দুই-তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হয় তাঁদের। সে কয়েক বছর আগের কথা—এক শিক্ষার্থী এভাবে ঝুলে বাসে আসতে গিয়ে মারাও গেছেন। তবে প্রশাসনের এতে তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
৩. যেহেতু একজন শিক্ষার্থীর স্নাতকের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে শিক্ষকের ওপর; তাই তাঁরা যদি বলেন সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হয়, নিরীহ শিক্ষার্থীরা তারও প্রতিবাদ করতে পারেন না। স্বভাবতই অতি অনুগত এক জাতি সৃষ্টি করছে বিশ্ববিদ্যালয়। যাদের হজমক্ষমতা অসাধারণ!
৪. যৌন হয়রানি প্রসঙ্গে লিখলে হয়তো আজকের পত্রিকার সব পাতা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু শুধু অভিযোগ নয়। এমনকি প্রশ্নপত্রের বিনিময়েও অনৈতিক সম্পর্কের শুরু হয় শিক্ষাঙ্গনে। আর কোনো কারণে যদি এসব বিষয় সামনে আসে, তাহলে সব দোষ নারী শিক্ষার্থীর। তাঁর চরিত্রের সমস্যা। স্যারের অতি অনুগত শিক্ষার্থীদের তখন স্লোগান দিতে দেখা যায় যে, ‘স্যার ফুলের মতো পবিত্র’।
৫. জবির যে প্রাতিষ্ঠানিক ভবন, তা-ও ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে আরও বছর কয়েক আগে। সেখানেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
প্রতিনিয়ত প্রক্টর অফিসে জমা হচ্ছে শত শত অভিযোগ। সমাধান হচ্ছে কয়টি? ফলাফল হতাশা। চূড়ান্ত ফলাফল আত্মহত্যা। এখন সময় জবি প্রশাসনের, তদন্ত কমিটির নামে শিক্ষার্থীদের হাতে মুলা ঝোলানোর, যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ ইংরেজি বিভাগের অঙ্কন বিশ্বাস। ২০২২ সালে মারা যান তিনি। হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেই তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
এখন প্রশ্ন, তাহলে জবি প্রশাসন করছে কী? তারা খোঁজ রাখে ক্যাম্পাসের কোনো ডাবগাছ থেকে শিক্ষার্থীরা ডাব পেড়ে খেয়ে ফেলছেন কি না। যদি এমন ঘটনা ঘটেই যায়, তাঁকে প্রক্টর অফিসে এনে বাবার কাছে কল দেওয়া হতো। শুনেছি, ক্যাম্পাসে ক্রিকেট খেললেও নাকি প্রশাসন ব্যাট-বল নিয়ে যেত কোনো এক সময়।
জবি প্রশাসন সব সময় তৎপর, যেন জবিতে কোনো অবস্থাতেই কোনো বিশেষ (পহেলা ফাগুন, শরৎ উৎসব, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ইত্যাদি) অনুষ্ঠান না হতে পারে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেও কাপড়ের প্যান্ডেল সাজিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার দৃষ্টান্ত কেবল জবিতেই আছে। তারা দেখেন, ভার্সিটির বাসে যেন ছেলেমেয়ে একসঙ্গে বসতে না পারেন। কিন্তু ছেলেমেয়ে একসঙ্গে ঝুলে ঝুলে বাসায় ফিরলে কোনো সমস্যা নেই!
এমন আরও বিশেষ কিছু কাজ প্রশাসন করে থাকে। আর সবচেয়ে দক্ষতার সঙ্গে যেটি করে, তা হলো শিক্ষার্থীদের হাতে ‘আশা’ নামের ‘মুলা’ ঝুলিয়ে দেয়। তার অন্যতম উদাহরণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ।
লেখক: সাংবাদিক
বেশ কিছুদিন ধরেই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। কী ভাবছেন? বিশেষ কোনো অর্জন বা খ্যাতির জন্য? নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছেন, কী সেই অর্জন? সেই অর্জন নির্যাতনের, নিপীড়নের, মানসিক অত্যাচারের ও আত্মহত্যার।
জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা নতুন ঘটনা নয়। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর তালিকায় জবির অবস্থান দ্বিতীয়। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ সেশনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অবন্তিকা ফেসবুকে পোস্ট করে তাঁর আত্মহত্যার জন্য দায়ী করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং তাঁরই সহপাঠীকে।
অবন্তিকা সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়। স্বভাবতই আমরা জানি, দুর্বল মানসিকতার লোকেরা আত্মহত্যা করে থাকে। কিন্তু একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে অবন্তিকাকে আমি যতটা জানি, তাঁকে সেই কাতারে ফেলা যায় না।
অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন অবন্তিকা। বিভাগে রেকর্ড নম্বর ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি গান, নাচ, আবৃত্তি, বিতর্ক, উপস্থাপনা—কোনো দিকেই পিছিয়ে ছিলেন না। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রিন কার্ড পেয়েছিলেন, কিন্তু পায়ের সমস্যা হওয়ায় সে-যাত্রায় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। তাঁর ইচ্ছা ছিল স্নাতক শেষ করে না হয় আরও একবার চেষ্টা করবেন বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্য হওয়ার। এমন একটা মেয়ে আর যাই হোক, আবেগের কারণে আত্মহত্যা করতে পারেন না।
এবার আসি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ে। কলেজ পেরিয়ে যখন পরিবার ছেড়ে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন, স্বভাবতই অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়—র্যাগিং, বুলিং, নতুন পরিবেশ, নতুন কারিকুলামে পড়াশোনা ইত্যাদি। ঠিক সেই মুহূর্তে জবি প্রশাসন যে ভূমিকা পালন করে, তার একটি ধারণা দেওয়া যাক:
১. যেহেতু আবাসিক হলবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়, মেসের নানান সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষার্থী। যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললে জবি প্রশাসন বলে, ‘এটা কি মিসকিনদের বিশ্ববিদ্যালয়?’
২. শিক্ষার্থীদের হল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের ওপর তাঁদের নির্ভর করতে হয়। গ্রীষ্মের গরমে বেলা সাড়ে ৩টায় গাদাগাদি করে দুই-তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হয় তাঁদের। সে কয়েক বছর আগের কথা—এক শিক্ষার্থী এভাবে ঝুলে বাসে আসতে গিয়ে মারাও গেছেন। তবে প্রশাসনের এতে তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
৩. যেহেতু একজন শিক্ষার্থীর স্নাতকের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে শিক্ষকের ওপর; তাই তাঁরা যদি বলেন সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হয়, নিরীহ শিক্ষার্থীরা তারও প্রতিবাদ করতে পারেন না। স্বভাবতই অতি অনুগত এক জাতি সৃষ্টি করছে বিশ্ববিদ্যালয়। যাদের হজমক্ষমতা অসাধারণ!
৪. যৌন হয়রানি প্রসঙ্গে লিখলে হয়তো আজকের পত্রিকার সব পাতা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু শুধু অভিযোগ নয়। এমনকি প্রশ্নপত্রের বিনিময়েও অনৈতিক সম্পর্কের শুরু হয় শিক্ষাঙ্গনে। আর কোনো কারণে যদি এসব বিষয় সামনে আসে, তাহলে সব দোষ নারী শিক্ষার্থীর। তাঁর চরিত্রের সমস্যা। স্যারের অতি অনুগত শিক্ষার্থীদের তখন স্লোগান দিতে দেখা যায় যে, ‘স্যার ফুলের মতো পবিত্র’।
৫. জবির যে প্রাতিষ্ঠানিক ভবন, তা-ও ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে আরও বছর কয়েক আগে। সেখানেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
প্রতিনিয়ত প্রক্টর অফিসে জমা হচ্ছে শত শত অভিযোগ। সমাধান হচ্ছে কয়টি? ফলাফল হতাশা। চূড়ান্ত ফলাফল আত্মহত্যা। এখন সময় জবি প্রশাসনের, তদন্ত কমিটির নামে শিক্ষার্থীদের হাতে মুলা ঝোলানোর, যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ ইংরেজি বিভাগের অঙ্কন বিশ্বাস। ২০২২ সালে মারা যান তিনি। হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেই তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
এখন প্রশ্ন, তাহলে জবি প্রশাসন করছে কী? তারা খোঁজ রাখে ক্যাম্পাসের কোনো ডাবগাছ থেকে শিক্ষার্থীরা ডাব পেড়ে খেয়ে ফেলছেন কি না। যদি এমন ঘটনা ঘটেই যায়, তাঁকে প্রক্টর অফিসে এনে বাবার কাছে কল দেওয়া হতো। শুনেছি, ক্যাম্পাসে ক্রিকেট খেললেও নাকি প্রশাসন ব্যাট-বল নিয়ে যেত কোনো এক সময়।
জবি প্রশাসন সব সময় তৎপর, যেন জবিতে কোনো অবস্থাতেই কোনো বিশেষ (পহেলা ফাগুন, শরৎ উৎসব, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ইত্যাদি) অনুষ্ঠান না হতে পারে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেও কাপড়ের প্যান্ডেল সাজিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার দৃষ্টান্ত কেবল জবিতেই আছে। তারা দেখেন, ভার্সিটির বাসে যেন ছেলেমেয়ে একসঙ্গে বসতে না পারেন। কিন্তু ছেলেমেয়ে একসঙ্গে ঝুলে ঝুলে বাসায় ফিরলে কোনো সমস্যা নেই!
এমন আরও বিশেষ কিছু কাজ প্রশাসন করে থাকে। আর সবচেয়ে দক্ষতার সঙ্গে যেটি করে, তা হলো শিক্ষার্থীদের হাতে ‘আশা’ নামের ‘মুলা’ ঝুলিয়ে দেয়। তার অন্যতম উদাহরণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ।
লেখক: সাংবাদিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে