ফরিদ খান মিন্টু, শরণখোলা (বাগেরহাট)
স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মম স্মৃতি ভুলতে পারেননি গণহত্যার শিকার শরণখোলার লাকুড়তলা গ্রামের হিন্দুপাড়ার বাসিন্দারা। আজও তাঁদের কান্না থামেনি। ওই গ্রামের বিরলা রানী (৮৫), শোভা রানী (৭০) ও উষা রানী (৭৫) সেদিনের বিভীষিকার কথা মনে করে এখনো আঁতকে ওঠেন। এখনো চলছে তাঁদের জীবনযুদ্ধ।
সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে তাঁরা বলেন, তখন আষাঢ় মাস (মে মাসের শেষের দিকে)। রাজাকার বাহিনী তাঁদের হিন্দু গ্রামে ঢুকে প্রথমে সব বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখায় আতঙ্কে তাঁরা বাড়িঘর ছেড়ে ঝোপঝাড়ে লুকান। এ সময় রাজাকারেরা হুইসেল বাজিয়ে লুটপাট চালান। তাঁদের খুঁজতে থাকেন। যে সব পুরুষকে তারা খুঁজে পায় তাঁরা কেউ বেঁচে নাই।
সেদিন তাঁদের গ্রামের মহানন্দ সমদ্দার, মনিন্দ্র সাধক, বিমল সাধক, অটল কুলু, মনোরঞ্জন কুলু, গোপাল চন্দ্র হাওলাদার, ক্ষিরোধ বিহারী কুলু, অনন্ত হাওলাদারসহ আরও অনেককে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
বিরলা রানী বলেন, পুরুষদের খুঁজতে গিয়ে রাজাকারেরা তাঁকে ধরে ফেলেন। রাইফেল দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। অশ্লীল গালিগালাজের পর তাঁর সিঁথি থেকে সিঁদুর মুছে দেন।
উষা রানী সেদিনের তাণ্ডবের কথা মনে করে বলেন, কোনো মানুষের জীবনে যেন এমন দিন না আসে। সে দিনের কথা মনে পড়লেও গা শিহরে ওঠে।
শোভা রানী বলেন, ‘সেদিন রাজাকারেরা আমার বাবা মহানন্দ সমদ্দার আর আমার স্বামী মনিন্দ্র সাধককে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ লাকুড়তলার খালে ভাসিয়ে দেয়। একই দিনে আমি আর আমার মা মানকুমারীর সিঁথির সিঁদুর মুছে যায়। একই দিনে বিধবা হয়ে যাই মা ও মেয়ে।’
কথা বলতে গিয়ে বারবার বিবর্ণ কাপড়ের আঁচলে চোখ মোছেন শোভা রানী। বলতে থাকেন তাঁর জীবনের ৫০ বছরের কষ্টগাথা। তিনি বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে আমার কোলের দু-বছরের মেয়ে সুরা বালাকে নিয়ে পালিয়ে প্রথমে তাফালবাড়ী, পরের দিন সুন্দরবনে বগী ক্যাম্পে পৌঁছাই। সেখানে তিন দিন থাকার পরে অনেকের সঙ্গে নৌকায় করে ভারতের উদ্দেশে পাড়ি জমাই। নৌকায় প্রায় এক মাস আমাদের ভাসতে হয় জলে আর জঙ্গলে। কত সময় যে না খেয়ে থাকতে হয়েছে তা মনেও করতে পারছি না। কষ্টে বুক ভেসে যায়।’
বাড়িতে রাজাকারেরা লুটপাট করে টাকা-পয়সা সোনা-দানা নিয়ে যাওয়ায় প্রায় খালি হাতে নৌকায় উঠতে হয় শোভা রানী। খাবারের অভাবে দুই বছরের শিশু সুরা বালার সে কষ্ট আজও ভুলতে পারেন না তিনি।
শোভা রানী আরও বলেন, তাঁর বাবাকে হত্যা করায় তাঁর মা মানকুমারী তাঁদের পাঁচ ভাই-বোনকে যেমন অভাব অনটনে বড় করেছেন। ঠিক তেমনি তাঁর মেয়ে সুরা বালাকে পিতৃস্নেহ ছাড়াই অভাব অনটনের মধ্যে বড় করেছেন। এখন তাঁর বয়স ৫২ বছর। ৫০ বছরে ঠিক তাঁরই মতো বাবা হারানোর শোক নিয়ে বেড়ে উঠেছে।
বয়সের ভারে রোগাক্রান্ত শোভা রানী বলেন, বাবা মারা যাওয়ায় অভাবের কারণে দুই ভাই দ্বীজেন আর বিজেন অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন। অন্য দুই ভাই পিযুষ আর ষড়ানন সমদ্দার অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।
সুরবালার স্বামী শান্তি রঞ্জন বলেন, অভাব অনটনের সংসারে তাঁদের চার সন্তানের মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে পলাশ দিনমজুর।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এসব পরিবারের কেউ খবর নেয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। বিরলা, শোভা ও উষা রানীদের ক্ষোভ একই। দেশের জন্য সর্বস্ব হারিয়ে তাঁরা আজ অসহায়। বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ ও আপনজন হারিয়েও তাঁদের গ্রামের কারও ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। এখনো তাঁরা যুদ্ধ করছেন জীবনের সঙ্গে।
শরণখোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন ইয়াং অফিসার হেমায়েত উদ্দিন বাদশা বলেন, গণহত্যার শিকার কেউ কেউ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়ে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। গণহত্যার শিকার সকল পরিবারকে এ সুবিধা দেওয়া উচিত।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এম এ খালেক খান বলেন, গণহত্যায় যাঁরা আপনজন হারিয়েছেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। তাঁদের জন্য ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে বিবেচনা করা যেতে পারে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মম স্মৃতি ভুলতে পারেননি গণহত্যার শিকার শরণখোলার লাকুড়তলা গ্রামের হিন্দুপাড়ার বাসিন্দারা। আজও তাঁদের কান্না থামেনি। ওই গ্রামের বিরলা রানী (৮৫), শোভা রানী (৭০) ও উষা রানী (৭৫) সেদিনের বিভীষিকার কথা মনে করে এখনো আঁতকে ওঠেন। এখনো চলছে তাঁদের জীবনযুদ্ধ।
সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে তাঁরা বলেন, তখন আষাঢ় মাস (মে মাসের শেষের দিকে)। রাজাকার বাহিনী তাঁদের হিন্দু গ্রামে ঢুকে প্রথমে সব বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখায় আতঙ্কে তাঁরা বাড়িঘর ছেড়ে ঝোপঝাড়ে লুকান। এ সময় রাজাকারেরা হুইসেল বাজিয়ে লুটপাট চালান। তাঁদের খুঁজতে থাকেন। যে সব পুরুষকে তারা খুঁজে পায় তাঁরা কেউ বেঁচে নাই।
সেদিন তাঁদের গ্রামের মহানন্দ সমদ্দার, মনিন্দ্র সাধক, বিমল সাধক, অটল কুলু, মনোরঞ্জন কুলু, গোপাল চন্দ্র হাওলাদার, ক্ষিরোধ বিহারী কুলু, অনন্ত হাওলাদারসহ আরও অনেককে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
বিরলা রানী বলেন, পুরুষদের খুঁজতে গিয়ে রাজাকারেরা তাঁকে ধরে ফেলেন। রাইফেল দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। অশ্লীল গালিগালাজের পর তাঁর সিঁথি থেকে সিঁদুর মুছে দেন।
উষা রানী সেদিনের তাণ্ডবের কথা মনে করে বলেন, কোনো মানুষের জীবনে যেন এমন দিন না আসে। সে দিনের কথা মনে পড়লেও গা শিহরে ওঠে।
শোভা রানী বলেন, ‘সেদিন রাজাকারেরা আমার বাবা মহানন্দ সমদ্দার আর আমার স্বামী মনিন্দ্র সাধককে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ লাকুড়তলার খালে ভাসিয়ে দেয়। একই দিনে আমি আর আমার মা মানকুমারীর সিঁথির সিঁদুর মুছে যায়। একই দিনে বিধবা হয়ে যাই মা ও মেয়ে।’
কথা বলতে গিয়ে বারবার বিবর্ণ কাপড়ের আঁচলে চোখ মোছেন শোভা রানী। বলতে থাকেন তাঁর জীবনের ৫০ বছরের কষ্টগাথা। তিনি বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে আমার কোলের দু-বছরের মেয়ে সুরা বালাকে নিয়ে পালিয়ে প্রথমে তাফালবাড়ী, পরের দিন সুন্দরবনে বগী ক্যাম্পে পৌঁছাই। সেখানে তিন দিন থাকার পরে অনেকের সঙ্গে নৌকায় করে ভারতের উদ্দেশে পাড়ি জমাই। নৌকায় প্রায় এক মাস আমাদের ভাসতে হয় জলে আর জঙ্গলে। কত সময় যে না খেয়ে থাকতে হয়েছে তা মনেও করতে পারছি না। কষ্টে বুক ভেসে যায়।’
বাড়িতে রাজাকারেরা লুটপাট করে টাকা-পয়সা সোনা-দানা নিয়ে যাওয়ায় প্রায় খালি হাতে নৌকায় উঠতে হয় শোভা রানী। খাবারের অভাবে দুই বছরের শিশু সুরা বালার সে কষ্ট আজও ভুলতে পারেন না তিনি।
শোভা রানী আরও বলেন, তাঁর বাবাকে হত্যা করায় তাঁর মা মানকুমারী তাঁদের পাঁচ ভাই-বোনকে যেমন অভাব অনটনে বড় করেছেন। ঠিক তেমনি তাঁর মেয়ে সুরা বালাকে পিতৃস্নেহ ছাড়াই অভাব অনটনের মধ্যে বড় করেছেন। এখন তাঁর বয়স ৫২ বছর। ৫০ বছরে ঠিক তাঁরই মতো বাবা হারানোর শোক নিয়ে বেড়ে উঠেছে।
বয়সের ভারে রোগাক্রান্ত শোভা রানী বলেন, বাবা মারা যাওয়ায় অভাবের কারণে দুই ভাই দ্বীজেন আর বিজেন অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন। অন্য দুই ভাই পিযুষ আর ষড়ানন সমদ্দার অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।
সুরবালার স্বামী শান্তি রঞ্জন বলেন, অভাব অনটনের সংসারে তাঁদের চার সন্তানের মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে পলাশ দিনমজুর।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এসব পরিবারের কেউ খবর নেয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। বিরলা, শোভা ও উষা রানীদের ক্ষোভ একই। দেশের জন্য সর্বস্ব হারিয়ে তাঁরা আজ অসহায়। বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ ও আপনজন হারিয়েও তাঁদের গ্রামের কারও ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। এখনো তাঁরা যুদ্ধ করছেন জীবনের সঙ্গে।
শরণখোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন ইয়াং অফিসার হেমায়েত উদ্দিন বাদশা বলেন, গণহত্যার শিকার কেউ কেউ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়ে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। গণহত্যার শিকার সকল পরিবারকে এ সুবিধা দেওয়া উচিত।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এম এ খালেক খান বলেন, গণহত্যায় যাঁরা আপনজন হারিয়েছেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। তাঁদের জন্য ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে বিবেচনা করা যেতে পারে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে