মীর রাকিব হাসান
সেই অশ্বত্থগাছটিই পরে মুখে মুখে বটগাছ হয়ে গেছে
—সৈয়দ হাসান ইমাম
আমাদের শৈশবে এটা ব্যবসায়িকদের অনুষ্ঠান ছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো না, হালখাতা হতো। সারা বছরের বাকি কিংবা খরচপাতি হালখাতার দিনে শোধ করতে হতো। লাল একটা খাতা ছিল, সেখানে সব লেখা থাকত। সেদিন স্কুল খোলা থাকত। আমরা স্কুল থেকে হয়তো সেসব দোকান ঘুরে আসতাম। নতুন কাপড় পরতাম নতুন বছরে। গ্রামের দিকে মেলা তখনো হতো। সেটা একেবারেই গ্রামকেন্দ্রিক।
নাগরিক জীবনে এটা প্রথম আমরাই নিয়ে এলাম। ছায়ানট থেকে আরম্ভ হলো। ধীরে ধীরে সেটা আজকের রূপ নিয়েছে। আমাদের দেখাদেখি কলকাতায়ও এই মেলা হচ্ছে। এত বড় আয়োজন ওখানে হয় না, তারপরও হয়। পয়লা বৈশাখের যে মিছিলটা, সেটা আর্ট কলেজের সহায়তায় আমরা কয়েকজন সূচনা করেছিলাম। আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, কামাল পাশা, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, আমিসহ কয়েকজন। আর্ট কলেজ থেকে মুখোশ পরে বের হতাম। এই মুখোশ যখন আমরা ঠিক করি, তখন ভাবলাম এগুলো অকশন করলে তো কিছু টাকা পাওয়া যায়। অকশনে আমি ৫০০ টাকা দিয়ে একটা ঘোড়ার মুখ কিনলাম।
এখন আর ভোরবেলায় মিছিলে যোগ দিতে পারি না। ইচ্ছে করে কিন্তু শারীরিক সক্ষমতা নেই। ওখানে এখনো গিয়ে কবিতা পড়ি। কিন্তু ভোরবেলার মিছিলে যেতে পারি না। ড. নওয়াজেশ আহমেদের পরামর্শে অশ্বত্থগাছের নিচে আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম প্রথম। সেই অশ্বত্থগাছটিই পরে মুখে মুখে বটগাছ হয়ে গেছে।
আমাদের ছাত্রজীবনে পয়লা বৈশাখ এত আড়ম্বরভাবে পালন হতো না
—
আমাদের ছাত্রজীবনে পয়লা বৈশাখ এত আড়ম্বরভাবে পালন হতো না। তবে নতুন বছর যে শুরু হচ্ছে, এই ব্যাপারটা ছিল তখনো। নতুন জামাকাপড় পরতাম। কিন্তু নতুন জামাকাপড় যে দরকারই হবে, এমনটা ছিল না। বাড়িতে ভালো রান্না হতো। মিষ্টি-পায়েস রান্না হতো। সেগুলো খাওয়াদাওয়া হতো। দিনটা ভালোভাবে কাটানোর চেষ্টা করতাম। এমন একটা বিশ্বাস ছিল যে বছরের প্রথম দিনটা ভালো গেলে সারা বছর ভালো যাবে। এখন যেমন এটা বিরাট আনন্দ, ঘুরতে যাওয়া, ধুমধাম, নতুন কাপড় পরা, লাল-সবুজ—আমাদের শৈশবে এত সব ছিল না। আমরা স্কুল-কলেজে এটা আলাদা করে কখনো পাইনি। তবে মেলা হতো তখনো। মাটির জিনিসপত্র পাওয়া যেত। আমরা যেতাম আমাদের অভিভাবকদের সঙ্গে। পাকিস্তান আমলে বৈশাখটা ওভাবে পালন করা সম্ভব হতো না। মানে স্কুল-কলেজ বন্ধ দেওয়া হতো না।
আমি যে এলাকায় এখন থাকি, সেখানে আফসানা মিমির ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ নামের একটা স্কুল আছে। কয়েক বছর ধরে ওই স্কুলটাতে যাই। বাচ্চারা রঙিন পাখি, খেলনা নিয়ে একসঙ্গে বের হয়। ওদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দিই। এবারও ওরা দাওয়াত দিয়েছে। যাব ভাবছি। তবে এই দিনটাতে আমার মেয়েদের খুব মিস করি। ওরা দেশের বাইরে থাকে।
সবাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করি, গল্পগুজব করি
—সাবিনা ইয়াসমীন
আমার পয়লা বৈশাখের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো না। কারণ ওই বয়সটায় আমি পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের জন্য বাইরে ছোটাছুটি করতে পারিনি। যে বয়সে আমার উৎসব-পার্বণ নিয়ে মেতে থাকার কথা, সেই বয়সেই আমি গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সেই ব্যস্ততা আজও শেষ হয়নি। আমাদের উৎসব মানে যেন উদ্যাপন নয়, কেবলই গান গাওয়া। এখন তাও কিছুটা সময় পাই। সাধারণত পয়লা বৈশাখে বন্ধুরা আমার বাসায় আসে। সবাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করি, গল্পগুজব করি। দিনটা নতুনভাবে, সুন্দরভাবে কাটানোর চেষ্টা করি।
আমরা ছেলেরা মাটির ঘোড়া, টিনের পিস্তল, চরকি কিনতাম
—চঞ্চল চৌধুরী
আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। আমাদের গ্রামে বৈশাখে হালখাতা হতো। বাড়ির পাশে যে বাজার ছিল, সেখানে। আমরা বাজারে বিভিন্ন দোকানে যেতাম। হালখাতার দিন বিভিন্ন দোকান থেকে জিলাপি, মিষ্টি, শিঙাড়া খেতে দিত। এটা এখন খুব মিস করি। আর ছিল চৈত্রসংক্রান্তির মেলা। ওই মেলায়ও যাওয়া হতো। আমরা ছেলেরা মাটির ঘোড়া, টিনের পিস্তল, চরকি কিনতাম। আমাদের এলাকায় বলত ফেনী, বাতাসা-চিনির সাজ, গুড়ের সাজ—এমন বিভিন্ন ধরনের খাবার ছিল। খুব ভালো লাগত এসব খাবার। এখন তো বৈশাখের দিন ঢাকাতেই থাকি। বেশ কয়েক বছর ধরে টেলিহোমের আয়োজনে যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়, সেখানে আমরা শিল্পীরা জড়ো হই। একটা মিলনমেলা হয় সেখানে।
আমি যেহেতু চারুকলার ছাত্র, তাই চারকলায় বর্ষবরণের যে প্রস্তুতি হয়, সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করি। একটা সময় তো শোভাযাত্রার আয়োজনের সঙ্গে থাকতাম রাতদিন। এখন ঢাকা শহরে এত জ্যাম যে ভোরবেলা উঠে পরিবার নিয়ে শোভাযাত্রায় যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একটু বেলা হলে যাই। এবারও যাব ছেলেকে নিয়ে। আমার ছেলের জেনারেশনের তো বৈশাখ নিয়ে অত আগ্রহ নেই। সত্যি কথা বলতে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কতটুকু বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করবে, সেটা প্রশ্নের ব্যাপার। এসব নিয়ে আমাদের যে আবেগ ছিল, এখনকার দিনে সেটা নেই বললেই চলে।
সেই অশ্বত্থগাছটিই পরে মুখে মুখে বটগাছ হয়ে গেছে
—সৈয়দ হাসান ইমাম
আমাদের শৈশবে এটা ব্যবসায়িকদের অনুষ্ঠান ছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো না, হালখাতা হতো। সারা বছরের বাকি কিংবা খরচপাতি হালখাতার দিনে শোধ করতে হতো। লাল একটা খাতা ছিল, সেখানে সব লেখা থাকত। সেদিন স্কুল খোলা থাকত। আমরা স্কুল থেকে হয়তো সেসব দোকান ঘুরে আসতাম। নতুন কাপড় পরতাম নতুন বছরে। গ্রামের দিকে মেলা তখনো হতো। সেটা একেবারেই গ্রামকেন্দ্রিক।
নাগরিক জীবনে এটা প্রথম আমরাই নিয়ে এলাম। ছায়ানট থেকে আরম্ভ হলো। ধীরে ধীরে সেটা আজকের রূপ নিয়েছে। আমাদের দেখাদেখি কলকাতায়ও এই মেলা হচ্ছে। এত বড় আয়োজন ওখানে হয় না, তারপরও হয়। পয়লা বৈশাখের যে মিছিলটা, সেটা আর্ট কলেজের সহায়তায় আমরা কয়েকজন সূচনা করেছিলাম। আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, কামাল পাশা, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, আমিসহ কয়েকজন। আর্ট কলেজ থেকে মুখোশ পরে বের হতাম। এই মুখোশ যখন আমরা ঠিক করি, তখন ভাবলাম এগুলো অকশন করলে তো কিছু টাকা পাওয়া যায়। অকশনে আমি ৫০০ টাকা দিয়ে একটা ঘোড়ার মুখ কিনলাম।
এখন আর ভোরবেলায় মিছিলে যোগ দিতে পারি না। ইচ্ছে করে কিন্তু শারীরিক সক্ষমতা নেই। ওখানে এখনো গিয়ে কবিতা পড়ি। কিন্তু ভোরবেলার মিছিলে যেতে পারি না। ড. নওয়াজেশ আহমেদের পরামর্শে অশ্বত্থগাছের নিচে আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম প্রথম। সেই অশ্বত্থগাছটিই পরে মুখে মুখে বটগাছ হয়ে গেছে।
আমাদের ছাত্রজীবনে পয়লা বৈশাখ এত আড়ম্বরভাবে পালন হতো না
—
আমাদের ছাত্রজীবনে পয়লা বৈশাখ এত আড়ম্বরভাবে পালন হতো না। তবে নতুন বছর যে শুরু হচ্ছে, এই ব্যাপারটা ছিল তখনো। নতুন জামাকাপড় পরতাম। কিন্তু নতুন জামাকাপড় যে দরকারই হবে, এমনটা ছিল না। বাড়িতে ভালো রান্না হতো। মিষ্টি-পায়েস রান্না হতো। সেগুলো খাওয়াদাওয়া হতো। দিনটা ভালোভাবে কাটানোর চেষ্টা করতাম। এমন একটা বিশ্বাস ছিল যে বছরের প্রথম দিনটা ভালো গেলে সারা বছর ভালো যাবে। এখন যেমন এটা বিরাট আনন্দ, ঘুরতে যাওয়া, ধুমধাম, নতুন কাপড় পরা, লাল-সবুজ—আমাদের শৈশবে এত সব ছিল না। আমরা স্কুল-কলেজে এটা আলাদা করে কখনো পাইনি। তবে মেলা হতো তখনো। মাটির জিনিসপত্র পাওয়া যেত। আমরা যেতাম আমাদের অভিভাবকদের সঙ্গে। পাকিস্তান আমলে বৈশাখটা ওভাবে পালন করা সম্ভব হতো না। মানে স্কুল-কলেজ বন্ধ দেওয়া হতো না।
আমি যে এলাকায় এখন থাকি, সেখানে আফসানা মিমির ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ নামের একটা স্কুল আছে। কয়েক বছর ধরে ওই স্কুলটাতে যাই। বাচ্চারা রঙিন পাখি, খেলনা নিয়ে একসঙ্গে বের হয়। ওদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দিই। এবারও ওরা দাওয়াত দিয়েছে। যাব ভাবছি। তবে এই দিনটাতে আমার মেয়েদের খুব মিস করি। ওরা দেশের বাইরে থাকে।
সবাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করি, গল্পগুজব করি
—সাবিনা ইয়াসমীন
আমার পয়লা বৈশাখের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো না। কারণ ওই বয়সটায় আমি পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের জন্য বাইরে ছোটাছুটি করতে পারিনি। যে বয়সে আমার উৎসব-পার্বণ নিয়ে মেতে থাকার কথা, সেই বয়সেই আমি গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সেই ব্যস্ততা আজও শেষ হয়নি। আমাদের উৎসব মানে যেন উদ্যাপন নয়, কেবলই গান গাওয়া। এখন তাও কিছুটা সময় পাই। সাধারণত পয়লা বৈশাখে বন্ধুরা আমার বাসায় আসে। সবাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করি, গল্পগুজব করি। দিনটা নতুনভাবে, সুন্দরভাবে কাটানোর চেষ্টা করি।
আমরা ছেলেরা মাটির ঘোড়া, টিনের পিস্তল, চরকি কিনতাম
—চঞ্চল চৌধুরী
আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। আমাদের গ্রামে বৈশাখে হালখাতা হতো। বাড়ির পাশে যে বাজার ছিল, সেখানে। আমরা বাজারে বিভিন্ন দোকানে যেতাম। হালখাতার দিন বিভিন্ন দোকান থেকে জিলাপি, মিষ্টি, শিঙাড়া খেতে দিত। এটা এখন খুব মিস করি। আর ছিল চৈত্রসংক্রান্তির মেলা। ওই মেলায়ও যাওয়া হতো। আমরা ছেলেরা মাটির ঘোড়া, টিনের পিস্তল, চরকি কিনতাম। আমাদের এলাকায় বলত ফেনী, বাতাসা-চিনির সাজ, গুড়ের সাজ—এমন বিভিন্ন ধরনের খাবার ছিল। খুব ভালো লাগত এসব খাবার। এখন তো বৈশাখের দিন ঢাকাতেই থাকি। বেশ কয়েক বছর ধরে টেলিহোমের আয়োজনে যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়, সেখানে আমরা শিল্পীরা জড়ো হই। একটা মিলনমেলা হয় সেখানে।
আমি যেহেতু চারুকলার ছাত্র, তাই চারকলায় বর্ষবরণের যে প্রস্তুতি হয়, সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করি। একটা সময় তো শোভাযাত্রার আয়োজনের সঙ্গে থাকতাম রাতদিন। এখন ঢাকা শহরে এত জ্যাম যে ভোরবেলা উঠে পরিবার নিয়ে শোভাযাত্রায় যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একটু বেলা হলে যাই। এবারও যাব ছেলেকে নিয়ে। আমার ছেলের জেনারেশনের তো বৈশাখ নিয়ে অত আগ্রহ নেই। সত্যি কথা বলতে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কতটুকু বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করবে, সেটা প্রশ্নের ব্যাপার। এসব নিয়ে আমাদের যে আবেগ ছিল, এখনকার দিনে সেটা নেই বললেই চলে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে