অজয় দাশগুপ্ত
যে যা-ই বলুক আর যত উন্নয়নই হোক না কেন, বাংলাদেশ যেহেতু একটি জনবহুল দেশ, মানুষ দেশের বাইরে আসবে, আসতে চাইবে—এটাই স্বাভাবিক। এখানে এ কথাটাও মাথায় রাখা দরকার, বাংলাদেশের উন্নয়ন সূচকের বড় মাপকাঠি প্রবাসীদের আয়। এই আয় বা রেমিট্যান্সের কারণেই আজ অর্থনীতি মুখ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। এরপরও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভুগছেন। তাঁদের পাসপোর্ট নবায়ন থেকে শুরু করে নতুন করে পাওয়া, ভিসা—সব বিষয়েই জটিলতা আছে। ঢালাওভাবে এর জন্য প্রবাসে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে কাজ করা মানুষজনকে দোষী করা অন্যায়।
সম্প্রতি আমি আমার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ক্যানবেরায় গিয়েছিলাম। যাঁরা আমাকে সাহায্য করেছিলেন, তাঁদের আন্তরিকতা ছিল চমৎকার। তাঁরা যথাযথ কাজকর্ম শেষে ফরমটি পুরোনো পাসপোর্টসহ দেশে পাঠানোর পরপরই শুরু হয়ে যায় আসল নাটক। সেই নাটকের দৃশ্যপট সবার জানা। প্রথমত, যে ধাক্কা সেটা হচ্ছে, আপনি যে অফিসেই যাবেন, এক কথা, ‘আমি জানি না, উনি জানেন।’ আর এই ‘উনি’টাকে খুঁজে পেতে পেতে আপনার মাস পার। এরপর শুরু হয় কী লাগবে, কেন লাগবের প্রশ্নোত্তর।
সব মিলিয়ে আপনি মোটামুটি মেয়ে বিয়ে দেওয়ার মতো একটা পরিস্থিতি পার করে তারপর পাসপোর্ট পাবেন। যদিও আমি এখনো পাইনি। বাংলাদেশের নাগরিকদের সমান অধিকার সংবিধানসম্মত। সবার এক অধিকার—এটাই খাতা-কলমে লেখা আছে। এখন কোনটা যে সমান অধিকার আর কতটা, সেটা সবাই জানেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যে প্রবাসী লোকটি কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠিয়ে সরকার ও সমাজকে লাভবান করেন, তাঁর প্রয়োজনে এরা কি পাশে দাঁড়ায়? দাঁড়ালে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের এই দুর্ভোগ কেন? দুর্ভোগ কী কী? তাঁরা টাকা জমিয়ে দেশে জমিজমা কিনতে চান, কিন্তু তাঁদের আইডি কার্ড নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা বা পরিচালনা করা যায় না। অথচ সবাই ভুলে যান এই মানুষগুলো যখন দেশ ছেড়ে এসেছেন, তখন হয়তো এই পরিচয়পত্রই চালু হয়নি। চালু হওয়ার পর আপনি লাল ফিতা দিয়ে বেঁধে রাখা সিস্টেমে তাঁদের হয়রানি করছেন। দেশে না থাকলে কী হবে, তাঁরা দেশের প্রতিটি খবর নখদর্পণে রাখেন। তাঁরা আপনাদের ভোটারদের প্রভাবিত করেন। তাঁরা জনমত তৈরিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। আপনি হয়তো বলবেন, ‘কে এসব কেয়ার করে?’ ভোটের দরকার যেখানে জিরো, সেখানে হিরো আলমের জয়জয়কার।
আর ভোট ও ফলাফল যে কী চিজ, সে তো সবাই জানেন। মানুষের দরকার ফুরিয়ে গেছে বা কমে গেছে বলেই কি কেউ গা করেন না?
মূল কথা হলো, প্রধানমন্ত্রী সব সময় প্রবাসীদের দেখভাল করার কথা বলেন। উপদেশও দেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ের লোকজন তা মানে না। মুখে তারা যতই বলুক যে টাকাপয়সা লাগে না বা সেসব দিয়ে কাজ হয় না, কথাগুলো ভিত্তিহীন। ঠিকই হয়। এমনকি সব ধরনের কাগজপত্র থাকার পরও পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড নিতে দরকার হয়। নেতা, পাতি নেতা, ক্যাডার থাকলে ঠিক আছে। না থাকলে এখন আর ঘুষ লাগে না, তবে লাগে ‘স্পিড মানি’। এই স্পিড মানি প্রসেস ত্বরান্বিত করতে নাকি সাহায্য করে।
সে যা-ই হোক, যেটা বলার কথা—বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ যে রেমিট্যান্স, তার জোগানদাতাদের যেন হয়রানি করা না হয়। একটা কথা মনে রাখা দরকার, আমরা যাঁরা দ্বৈত নাগরিকত্বের দেশে বসবাস করি, আমাদের সমস্যা কম। আমরা সবুর করলেও তেমন কোনো লোকসান নেই। কিন্তু যাঁরা বাংলাদেশি পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশে দীর্ঘ সময় বসবাস করেন এবং তার ওপর ভিত্তি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁদের কথা আলাদা। তাঁদের পাসপোর্টের মেয়াদ থাকা, পাসপোর্ট সচল থাকা অত্যন্ত জরুরি। তাঁদের আইডি কার্ডও জরুরি। সহজ কথায়, তাঁরা যে আমাদের দেশের মানুষ, সেটার লিগ্যাল পরিচয়পত্র চাই। তাহলে এটা কার দায়িত্ব? সরকার বা রাষ্ট্র ব্যতীত কে পারবে সব ঠিক করে দিতে?
জীবনের সর্বস্তরে যে অনিয়ম আর দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রতা, সেটা এই বেলায়ও ছাড় দেবে কোন সুখে? বাংলাদেশের অগ্রগতি যেমন সত্য, তেমনি এসবও অসত্য কিছু না। আমরা মুখে যতই বলি জাতি হিসেবে এখনো কলোনিয়াল মনোভাবের বাইরে যেতে পারিনি, সে কারণে দৌরাত্ম্য আর দাপটের শেষ নেই। আজকের বাংলাদেশে যে নতুন প্রজন্ম তারা কীভাবে বিষয়টা দেখছে? তারা সেই প্রজন্ম, যাদের হাতের মুঠোয় বিশ্বজগৎ। দুনিয়ার উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে তারা যে চিত্র দেখছে বা দেখবে, তা কি খুব শোভন কিছু? এদের কথাই শুরুতে বলছিলাম যে এরা দেশের বাইরে আসবে, আসতে থাকবে। দেশের পাট চুকিয়ে বাইরে পড়াশোনা করবে, চাকরি করবে, ব্যবসা করবে কিন্তু পা বা শিকড় থাকবে বাংলাদেশে। এই সেদিন বিনয়ী এক যুবক কথায় কথায় বলছিলেন তাঁর দুর্ভোগের কথা। স্বামী-স্ত্রী দেশের বাইরে উন্নত জীবন আর দেশে ফেরার আশায় প্রচুর পরিশ্রম করেন। তাঁদের চোখে স্বপ্ন অর্জিত বিদ্যা আর অর্থ নিয়ে একদিন দেশে ফিরে যাবেন তাঁরা। আজকাল এমন স্বপ্ন তো মিথ্যা কিছু না। এমন অসংখ্য তরুণ-তরুণী দেশে ফিরে গেছেন। কাজ করছেন সমাজের উন্নয়নে। তাঁদের শ্রম ও মেধার ফসলে ভরে উঠছে বাংলাদেশ।
আর একটা বিষয় হলো ঘর ও বাইরের দূরত্ব ঘুচে যাওয়া। এখন ঘর থেকে আঙিনা বিদেশ। অথচ ওই তরুণ দুঃখ করছিলেন তাঁর পাসপোর্টটি হাতে পেলেও স্ত্রীর পাসপোর্টটি আসেনি। একই সমস্যা—কেউ সঠিক কিছু বলে না। এ বলে ও জানে, ও বলে সে জানে। এই ‘ও’, ‘সে’ আর ‘কে’ মিলে এক গোলকধাঁধা! ধাঁধাটা এমন যে আপনি মেলাতে পারবেন না। ডিএমপি বলে পুলিশ জানে, পুলিশ বলে কর্তারা জানে, কর্তারা বলে বিদেশি মিশনে খোঁজ নেন আর মিশনগুলো বলে দেশে খোঁজ করেন জনাব। এমন এক সিস্টেম, আপনি অভিযোগ করলেও টিকবে না। কোন অভিযোগটা টেকে বলেন তো? শেষ পর্যন্ত যাঁর কাজটা হয় তিনি ভাবেন, যাক বাবা বছর পাঁচেকের জন্য বাঁচা গেল! এই হচ্ছে সারমর্ম।
এভাবে কি আসলেই আমরা উন্নত দেশ বা সমাজে পৌঁছাতে পারব? এটা মানি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। কৃষি-শিল্পসহ নানা খাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তনে বদলে গেছে দৃশ্যপট। কিন্তু আসল যে সমাজ আর নিয়ম তার বেলায় কি কোনো পরিবর্তন দেখছি আমরা? বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের দেশপ্রেম ও ভালোবাসা সরকার বা দেশের কর্তারা টের পায় কি না, জানা নেই। কিন্তু দেশ জানে, মানুষ বোঝে। তাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস নিয়ে সময়ক্ষেপণ কি উচিত? তা কোনো শুভ ফল বয়ে আনবে? চাইলেই এসব সমস্যার সমাধান করা যায়। শুনেছি, বেশ কিছু দেশের দূতাবাসে এখন সবকিছু প্রসেসে করা হচ্ছে। এর আওতায় যদি জনবহুল বাংলাদেশি-অধ্যুষিত দেশগুলোকে আনা যায় তাহলে সমস্যার ভার কমবে। সহজ হবে প্রক্রিয়া ও সমাধান। এটা সবাই জানেন ডলারে, পাউন্ডে, দিনারে বা বিদেশি মুদ্রায় ভালো অঙ্কের টাকা খরচ করেই এই সবকিছুর আবেদন করতে হয়। ফলে সার্ভিসও জরুরি বৈকি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের এক বড় স্তম্ভ প্রবাসী জনগোষ্ঠী। তাঁদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ও আছে। বছর বছর শুধু বাইরে শ্রমিক পাঠানোই তাদের কাজ? তারা কি এসব বিষয় নিয়ে ভাবে আদৌ? সব মিলিয়ে হাজারো প্রশ্নের জট আর সমস্যা। তারপরও আমরা আশাবাদী। শেখ হাসিনার সরকার অনেক পরিবর্তন সাধন করে দেখিয়ে দিয়েছে। সেদিন নতুন পাসপোর্টে দেখলাম লেখা আছে, এই পাসপোর্ট দুনিয়ার সব দেশে যাওয়ার জন্য উন্মুক্ত। স্যালুট জানাই। একসময় কারণে-অকারণে পাঁচ-ছয়টি দেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকার দিন ফুরিয়েছে। এ জন্য অভিনন্দন। এখন আমাদের প্রত্যাশা—জট আর পেঁচকি খুলে পাসপোর্ট নবায়নসহ অন্যান্য কাজে গতি আসবে। শান্তি পাবে দেশের বাইরের বিশাল জনশক্তি।
যে যা-ই বলুক আর যত উন্নয়নই হোক না কেন, বাংলাদেশ যেহেতু একটি জনবহুল দেশ, মানুষ দেশের বাইরে আসবে, আসতে চাইবে—এটাই স্বাভাবিক। এখানে এ কথাটাও মাথায় রাখা দরকার, বাংলাদেশের উন্নয়ন সূচকের বড় মাপকাঠি প্রবাসীদের আয়। এই আয় বা রেমিট্যান্সের কারণেই আজ অর্থনীতি মুখ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। এরপরও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভুগছেন। তাঁদের পাসপোর্ট নবায়ন থেকে শুরু করে নতুন করে পাওয়া, ভিসা—সব বিষয়েই জটিলতা আছে। ঢালাওভাবে এর জন্য প্রবাসে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে কাজ করা মানুষজনকে দোষী করা অন্যায়।
সম্প্রতি আমি আমার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ক্যানবেরায় গিয়েছিলাম। যাঁরা আমাকে সাহায্য করেছিলেন, তাঁদের আন্তরিকতা ছিল চমৎকার। তাঁরা যথাযথ কাজকর্ম শেষে ফরমটি পুরোনো পাসপোর্টসহ দেশে পাঠানোর পরপরই শুরু হয়ে যায় আসল নাটক। সেই নাটকের দৃশ্যপট সবার জানা। প্রথমত, যে ধাক্কা সেটা হচ্ছে, আপনি যে অফিসেই যাবেন, এক কথা, ‘আমি জানি না, উনি জানেন।’ আর এই ‘উনি’টাকে খুঁজে পেতে পেতে আপনার মাস পার। এরপর শুরু হয় কী লাগবে, কেন লাগবের প্রশ্নোত্তর।
সব মিলিয়ে আপনি মোটামুটি মেয়ে বিয়ে দেওয়ার মতো একটা পরিস্থিতি পার করে তারপর পাসপোর্ট পাবেন। যদিও আমি এখনো পাইনি। বাংলাদেশের নাগরিকদের সমান অধিকার সংবিধানসম্মত। সবার এক অধিকার—এটাই খাতা-কলমে লেখা আছে। এখন কোনটা যে সমান অধিকার আর কতটা, সেটা সবাই জানেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যে প্রবাসী লোকটি কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠিয়ে সরকার ও সমাজকে লাভবান করেন, তাঁর প্রয়োজনে এরা কি পাশে দাঁড়ায়? দাঁড়ালে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের এই দুর্ভোগ কেন? দুর্ভোগ কী কী? তাঁরা টাকা জমিয়ে দেশে জমিজমা কিনতে চান, কিন্তু তাঁদের আইডি কার্ড নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা বা পরিচালনা করা যায় না। অথচ সবাই ভুলে যান এই মানুষগুলো যখন দেশ ছেড়ে এসেছেন, তখন হয়তো এই পরিচয়পত্রই চালু হয়নি। চালু হওয়ার পর আপনি লাল ফিতা দিয়ে বেঁধে রাখা সিস্টেমে তাঁদের হয়রানি করছেন। দেশে না থাকলে কী হবে, তাঁরা দেশের প্রতিটি খবর নখদর্পণে রাখেন। তাঁরা আপনাদের ভোটারদের প্রভাবিত করেন। তাঁরা জনমত তৈরিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। আপনি হয়তো বলবেন, ‘কে এসব কেয়ার করে?’ ভোটের দরকার যেখানে জিরো, সেখানে হিরো আলমের জয়জয়কার।
আর ভোট ও ফলাফল যে কী চিজ, সে তো সবাই জানেন। মানুষের দরকার ফুরিয়ে গেছে বা কমে গেছে বলেই কি কেউ গা করেন না?
মূল কথা হলো, প্রধানমন্ত্রী সব সময় প্রবাসীদের দেখভাল করার কথা বলেন। উপদেশও দেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ের লোকজন তা মানে না। মুখে তারা যতই বলুক যে টাকাপয়সা লাগে না বা সেসব দিয়ে কাজ হয় না, কথাগুলো ভিত্তিহীন। ঠিকই হয়। এমনকি সব ধরনের কাগজপত্র থাকার পরও পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড নিতে দরকার হয়। নেতা, পাতি নেতা, ক্যাডার থাকলে ঠিক আছে। না থাকলে এখন আর ঘুষ লাগে না, তবে লাগে ‘স্পিড মানি’। এই স্পিড মানি প্রসেস ত্বরান্বিত করতে নাকি সাহায্য করে।
সে যা-ই হোক, যেটা বলার কথা—বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ যে রেমিট্যান্স, তার জোগানদাতাদের যেন হয়রানি করা না হয়। একটা কথা মনে রাখা দরকার, আমরা যাঁরা দ্বৈত নাগরিকত্বের দেশে বসবাস করি, আমাদের সমস্যা কম। আমরা সবুর করলেও তেমন কোনো লোকসান নেই। কিন্তু যাঁরা বাংলাদেশি পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশে দীর্ঘ সময় বসবাস করেন এবং তার ওপর ভিত্তি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁদের কথা আলাদা। তাঁদের পাসপোর্টের মেয়াদ থাকা, পাসপোর্ট সচল থাকা অত্যন্ত জরুরি। তাঁদের আইডি কার্ডও জরুরি। সহজ কথায়, তাঁরা যে আমাদের দেশের মানুষ, সেটার লিগ্যাল পরিচয়পত্র চাই। তাহলে এটা কার দায়িত্ব? সরকার বা রাষ্ট্র ব্যতীত কে পারবে সব ঠিক করে দিতে?
জীবনের সর্বস্তরে যে অনিয়ম আর দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রতা, সেটা এই বেলায়ও ছাড় দেবে কোন সুখে? বাংলাদেশের অগ্রগতি যেমন সত্য, তেমনি এসবও অসত্য কিছু না। আমরা মুখে যতই বলি জাতি হিসেবে এখনো কলোনিয়াল মনোভাবের বাইরে যেতে পারিনি, সে কারণে দৌরাত্ম্য আর দাপটের শেষ নেই। আজকের বাংলাদেশে যে নতুন প্রজন্ম তারা কীভাবে বিষয়টা দেখছে? তারা সেই প্রজন্ম, যাদের হাতের মুঠোয় বিশ্বজগৎ। দুনিয়ার উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে তারা যে চিত্র দেখছে বা দেখবে, তা কি খুব শোভন কিছু? এদের কথাই শুরুতে বলছিলাম যে এরা দেশের বাইরে আসবে, আসতে থাকবে। দেশের পাট চুকিয়ে বাইরে পড়াশোনা করবে, চাকরি করবে, ব্যবসা করবে কিন্তু পা বা শিকড় থাকবে বাংলাদেশে। এই সেদিন বিনয়ী এক যুবক কথায় কথায় বলছিলেন তাঁর দুর্ভোগের কথা। স্বামী-স্ত্রী দেশের বাইরে উন্নত জীবন আর দেশে ফেরার আশায় প্রচুর পরিশ্রম করেন। তাঁদের চোখে স্বপ্ন অর্জিত বিদ্যা আর অর্থ নিয়ে একদিন দেশে ফিরে যাবেন তাঁরা। আজকাল এমন স্বপ্ন তো মিথ্যা কিছু না। এমন অসংখ্য তরুণ-তরুণী দেশে ফিরে গেছেন। কাজ করছেন সমাজের উন্নয়নে। তাঁদের শ্রম ও মেধার ফসলে ভরে উঠছে বাংলাদেশ।
আর একটা বিষয় হলো ঘর ও বাইরের দূরত্ব ঘুচে যাওয়া। এখন ঘর থেকে আঙিনা বিদেশ। অথচ ওই তরুণ দুঃখ করছিলেন তাঁর পাসপোর্টটি হাতে পেলেও স্ত্রীর পাসপোর্টটি আসেনি। একই সমস্যা—কেউ সঠিক কিছু বলে না। এ বলে ও জানে, ও বলে সে জানে। এই ‘ও’, ‘সে’ আর ‘কে’ মিলে এক গোলকধাঁধা! ধাঁধাটা এমন যে আপনি মেলাতে পারবেন না। ডিএমপি বলে পুলিশ জানে, পুলিশ বলে কর্তারা জানে, কর্তারা বলে বিদেশি মিশনে খোঁজ নেন আর মিশনগুলো বলে দেশে খোঁজ করেন জনাব। এমন এক সিস্টেম, আপনি অভিযোগ করলেও টিকবে না। কোন অভিযোগটা টেকে বলেন তো? শেষ পর্যন্ত যাঁর কাজটা হয় তিনি ভাবেন, যাক বাবা বছর পাঁচেকের জন্য বাঁচা গেল! এই হচ্ছে সারমর্ম।
এভাবে কি আসলেই আমরা উন্নত দেশ বা সমাজে পৌঁছাতে পারব? এটা মানি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। কৃষি-শিল্পসহ নানা খাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তনে বদলে গেছে দৃশ্যপট। কিন্তু আসল যে সমাজ আর নিয়ম তার বেলায় কি কোনো পরিবর্তন দেখছি আমরা? বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের দেশপ্রেম ও ভালোবাসা সরকার বা দেশের কর্তারা টের পায় কি না, জানা নেই। কিন্তু দেশ জানে, মানুষ বোঝে। তাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস নিয়ে সময়ক্ষেপণ কি উচিত? তা কোনো শুভ ফল বয়ে আনবে? চাইলেই এসব সমস্যার সমাধান করা যায়। শুনেছি, বেশ কিছু দেশের দূতাবাসে এখন সবকিছু প্রসেসে করা হচ্ছে। এর আওতায় যদি জনবহুল বাংলাদেশি-অধ্যুষিত দেশগুলোকে আনা যায় তাহলে সমস্যার ভার কমবে। সহজ হবে প্রক্রিয়া ও সমাধান। এটা সবাই জানেন ডলারে, পাউন্ডে, দিনারে বা বিদেশি মুদ্রায় ভালো অঙ্কের টাকা খরচ করেই এই সবকিছুর আবেদন করতে হয়। ফলে সার্ভিসও জরুরি বৈকি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের এক বড় স্তম্ভ প্রবাসী জনগোষ্ঠী। তাঁদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ও আছে। বছর বছর শুধু বাইরে শ্রমিক পাঠানোই তাদের কাজ? তারা কি এসব বিষয় নিয়ে ভাবে আদৌ? সব মিলিয়ে হাজারো প্রশ্নের জট আর সমস্যা। তারপরও আমরা আশাবাদী। শেখ হাসিনার সরকার অনেক পরিবর্তন সাধন করে দেখিয়ে দিয়েছে। সেদিন নতুন পাসপোর্টে দেখলাম লেখা আছে, এই পাসপোর্ট দুনিয়ার সব দেশে যাওয়ার জন্য উন্মুক্ত। স্যালুট জানাই। একসময় কারণে-অকারণে পাঁচ-ছয়টি দেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকার দিন ফুরিয়েছে। এ জন্য অভিনন্দন। এখন আমাদের প্রত্যাশা—জট আর পেঁচকি খুলে পাসপোর্ট নবায়নসহ অন্যান্য কাজে গতি আসবে। শান্তি পাবে দেশের বাইরের বিশাল জনশক্তি।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে