মযহারুল ইসলাম বাবলা
বলা হয়, সব ধর্মমতের বাঙালি জাতিসত্তার একমাত্র পার্বণটি বাংলা নববর্ষ। পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনকে অসাম্প্রদায়িক একমাত্র উৎসব হিসেবে গণ্য এবং প্রচার-প্রচারণাও করা হয়। বাস্তবিকই সব সম্প্রদায়ের বাঙালির পক্ষে একমাত্র বাংলা নববর্ষ পালন করা সম্ভব। অথচ বাংলা নববর্ষ পালনে ধর্মের সম্পৃক্ততাকে কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। অতীত আমলে তিথি-লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণে পয়লা বৈশাখ নির্ধারিত হতো। পরে খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ নির্ধারণ করা হয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে। এতে পঞ্জিকার সঙ্গে এক দিন আগ-পিছ প্রায় ঘটে। আবার একই ১৪ এপ্রিলেও পঞ্জিকার সঙ্গে মিলেও যায় চার বছর অতিক্রান্তে।
পশ্চিম বাংলায় বঙ্গাব্দের নববর্ষ তিথি-পঞ্জিকার অনুসরণে পালিত হয়। সে কারণে বাংলা নববর্ষ পালনের ক্ষেত্রে দুই বঙ্গে এক দিন আগ-পিছ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পয়লা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল উদ্যাপিত হলেও দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কিন্তু তিথি-লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণে একই দিনে নববর্ষ পালন করে না, ধর্মমতানুযায়ী। নববর্ষ পালনে ধর্মের এই যুক্ততা নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত। নববর্ষ পালনকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ধর্মযোগ এবং দিনক্ষণের বিতর্ক-বিভাজনের অবসান অবশ্যম্ভাবী মনে করি।
পাকিস্তানি আমলে বাঙালি মুসলমানরা কেবল ব্যবসাকেন্দ্রে হালখাতা নবায়ন করে দিনটি পালন করত। পারিবারিক এবং সামাজিক পরিমণ্ডলে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা নববর্ষ পালিত হতো না। তবে হিন্দু সম্প্রদায় পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে আড়ম্বর নববর্ষ পালন করত। দিনটি শুরু হতো ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে; যা আজও বলবৎ রয়েছে। হিন্দু নারীরা খুব সকালে স্নান শেষে গায়ে নতুন শাড়ি চড়িয়ে, শাঁখা-সিঁদুর লাগিয়ে হাতে আমের শাখা, ঘট ইত্যাদি পূজার উপকরণ নিয়ে অভুক্ত অবস্থায় ছুটতেন মন্দিরে। পূজা শেষে ঘরে ফিরে আহার করতেন। বাড়িতে বাড়িতে উন্নত রান্না হতো। অতিথি আপ্যায়নে দই-মিষ্টি, মৌসুমি ফলমূল পরিবেশন করতেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখে আসছি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নববর্ষকেন্দ্রিক পূজা-অর্চনা হয়ে আসছে লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণে, রাষ্ট্রঘোষিত নববর্ষের দিনে নয়।
কলকাতায় পয়লা বৈশাখ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমাদের দেশের মতো এত ব্যাপক আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতা সেখানে দেখিনি। বিশেষ বিশেষ মাঠে বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতে দেখেছি। আমাদের শহরগুলোতে বর্ণিল সাজে পথে-পথে মানুষের ব্যাপক ঢল দেখা গেলেও, কলকাতায় তেমনটি দেখিনি। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় ব্যবসাকেন্দ্রে, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করে। পরিণত বয়সীদের কেবল নতুন পোশাক পরে সকালে মন্দিরে ছুটতে দেখেছি। কলকাতায় বাঙালি মুসলমানরা কিন্তু বাংলা নববর্ষ পালন করে না। কেন করে না—এমন প্রশ্ন করেছিলাম বেশ কজনকে। তাদের প্রত্যেকের জবাব একই। তারা এদিনটিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পার্বণ হিসেবেই গণ্য করে।
বঙ্গাব্দের নববর্ষ উদ্যাপনে ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীতে ধর্মযোগ কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব এই পার্বণটিকে ধর্মনিরপেক্ষতায় ফিরিয়ে আনা অতি আবশ্যক। তাহলেই বাঙালি জাতিসত্তার একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব রূপে বাংলা নববর্ষ তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটিকে অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হবে। আমরা অতি আবেগে আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে দিনটিকে প্রচার করি, বিবেচনাও নিশ্চয়ই করি। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলা নববর্ষ প্রকৃতই ভূমি রাজস্ব বিভাগের শুভ নববর্ষ। বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন মোগল সম্রাট আকবর, খাজনা আদায়ের মোক্ষম সময় বিবেচনায়। মোগল আমলে ভূমির পূর্ণ অধিকার ছিল কৃষক-প্রজার, জমিদারদের নয়। জমিদার ছিল বটে, তবে তারা কেবলই খাজনা সংগ্রাহক। ভূমির মালিকানা জমিদারদের ছিল না। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তনে কৃষক-প্রজা ভূমির অধিকার হারায়। ভূমির অধিকারপ্রাপ্ত হয় ইংরেজ কর্তৃক চিরস্থায়ী বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমিদার শ্রেণি। এই জমিদার শ্রেণি খাজনা সংগ্রাহকের পাশাপাশি ভূমির মালিকানাস্বত্বও পেয়ে যায়। সামন্তবাদী নিপীড়নমূলক শোষণের গোড়াপত্তন ঘটে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে।
লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ সালের ১২ আগস্ট বার্ষিক ২৬ লাখ টাকা রাজকর পরিশোধের চুক্তিতে মোগল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন। লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৬ সালে খাজনা আদায়ের উদ্দেশ্যে পয়লা বৈশাখ ‘শুভ পুণ্যাহ’ উৎসবের সূচনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় চৈত্রসংক্রান্তির দিবসের মধ্যে কৃষক-প্রজাদের খাজনা পরিশোধ করতে হতো। খাজনা পরিশোধে ব্যর্থ কৃষক-প্রজাদের হালের বলদ, লাঙল, তৈজসপত্র পর্যন্ত বিক্রি করতে হতো। আর যারা খাজনা পরিশোধে নিরুপায়, তাদের ভাগ্যে জুটত জমিদারদের নির্মম শোষণ-নির্যাতন। কৃষক-প্রজা নিগ্রহে আদায় করা খাজনার বদৌলতে জমিদারেরা পয়লা বৈশাখে পালন করত লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত পুণ্যাহ উৎসব।
আমরা আমাদের ঐতিহ্যের স্মারকরূপে পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতায় পালন করে থাকি, সেটা ওই লর্ড ক্লাইভের প্রবর্তিত পয়লা বৈশাখের পুণ্যাহ উৎসবেরই ধারাবাহিক। পাকিস্তানি আমলে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে দিবসটি পালিত হলেও স্বাধীনতার পর ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে এখন মহা উৎসবে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোতে ‘বৈশাখী ধামাকা’, ‘বর্ণিল বৈশাখ’ বিভিন্ন আকর্ষণীয় চটকদার শব্দের সম্ভারে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রকাশ করে নববর্ষ আগমনে। ক্রেতা আকর্ষণে উৎপাদকেরা ঢালাও বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রকাশ করে, মুনাফার অভিপ্রায়ে। তাদের কিন্তু ক্রেতারা নিরাশ করে না। শহরের বিপণিবিতানে প্রচণ্ড ভিড় ও বেচা-বিক্রি সেটাই প্রমাণ করে। নববর্ষকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাদী তৎপরতা দৃশ্যমান। মুনাফার লিপ্সায় নববর্ষ উদ্যাপনকে পুঁজিবাদ বেছে নিতে বিলম্ব করেনি। উসকে দিচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে ভোগবাদিতার অভিমুখে।
বাংলা নববর্ষ সব ধর্মমতের বাঙালির উৎসব বলেই পণ্য, পোশাক, খাদ্য ইত্যাদি ভোগ-বিলাসের সামগ্রীর ব্যাপক বেচা-বিক্রির অপূর্ব সুযোগ হাতছাড়া করে কোন বোকা!
মানতেই হবে আমাদের সুবিধাভোগী শ্রেণি ব্যতীত দেশের মোট জনসমষ্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কিন্তু উৎসবে শামিল হতে পারে না, তাদের অর্থনৈতিক কারণে। যে উৎসব সব মানুষকে স্পর্শ করতে পারে না, সেই উৎসব জাতীয় উৎসব হিসেবে কি গণ্য করা যায়? যে উৎসব ধর্মমুক্ত নয়, সেই উৎসবকে অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব বলার যৌক্তিকতা আছে কি? জাতিগত উৎসবের আড়ালে জাতির মধ্যকার শ্রেণি-বৈষম্যকে কি উপেক্ষা করা যাবে? জাতির ঐক্য যদি না-ই থাকে, তাহলে জাতির উৎসব পালন সর্বজনীন হবে কোন উপায়ে?
মযহারুল ইসলাম বাবলা, নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
বলা হয়, সব ধর্মমতের বাঙালি জাতিসত্তার একমাত্র পার্বণটি বাংলা নববর্ষ। পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনকে অসাম্প্রদায়িক একমাত্র উৎসব হিসেবে গণ্য এবং প্রচার-প্রচারণাও করা হয়। বাস্তবিকই সব সম্প্রদায়ের বাঙালির পক্ষে একমাত্র বাংলা নববর্ষ পালন করা সম্ভব। অথচ বাংলা নববর্ষ পালনে ধর্মের সম্পৃক্ততাকে কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। অতীত আমলে তিথি-লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণে পয়লা বৈশাখ নির্ধারিত হতো। পরে খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ নির্ধারণ করা হয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে। এতে পঞ্জিকার সঙ্গে এক দিন আগ-পিছ প্রায় ঘটে। আবার একই ১৪ এপ্রিলেও পঞ্জিকার সঙ্গে মিলেও যায় চার বছর অতিক্রান্তে।
পশ্চিম বাংলায় বঙ্গাব্দের নববর্ষ তিথি-পঞ্জিকার অনুসরণে পালিত হয়। সে কারণে বাংলা নববর্ষ পালনের ক্ষেত্রে দুই বঙ্গে এক দিন আগ-পিছ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পয়লা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল উদ্যাপিত হলেও দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কিন্তু তিথি-লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণে একই দিনে নববর্ষ পালন করে না, ধর্মমতানুযায়ী। নববর্ষ পালনে ধর্মের এই যুক্ততা নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত। নববর্ষ পালনকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ধর্মযোগ এবং দিনক্ষণের বিতর্ক-বিভাজনের অবসান অবশ্যম্ভাবী মনে করি।
পাকিস্তানি আমলে বাঙালি মুসলমানরা কেবল ব্যবসাকেন্দ্রে হালখাতা নবায়ন করে দিনটি পালন করত। পারিবারিক এবং সামাজিক পরিমণ্ডলে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা নববর্ষ পালিত হতো না। তবে হিন্দু সম্প্রদায় পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে আড়ম্বর নববর্ষ পালন করত। দিনটি শুরু হতো ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে; যা আজও বলবৎ রয়েছে। হিন্দু নারীরা খুব সকালে স্নান শেষে গায়ে নতুন শাড়ি চড়িয়ে, শাঁখা-সিঁদুর লাগিয়ে হাতে আমের শাখা, ঘট ইত্যাদি পূজার উপকরণ নিয়ে অভুক্ত অবস্থায় ছুটতেন মন্দিরে। পূজা শেষে ঘরে ফিরে আহার করতেন। বাড়িতে বাড়িতে উন্নত রান্না হতো। অতিথি আপ্যায়নে দই-মিষ্টি, মৌসুমি ফলমূল পরিবেশন করতেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখে আসছি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নববর্ষকেন্দ্রিক পূজা-অর্চনা হয়ে আসছে লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণে, রাষ্ট্রঘোষিত নববর্ষের দিনে নয়।
কলকাতায় পয়লা বৈশাখ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমাদের দেশের মতো এত ব্যাপক আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতা সেখানে দেখিনি। বিশেষ বিশেষ মাঠে বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতে দেখেছি। আমাদের শহরগুলোতে বর্ণিল সাজে পথে-পথে মানুষের ব্যাপক ঢল দেখা গেলেও, কলকাতায় তেমনটি দেখিনি। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় ব্যবসাকেন্দ্রে, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করে। পরিণত বয়সীদের কেবল নতুন পোশাক পরে সকালে মন্দিরে ছুটতে দেখেছি। কলকাতায় বাঙালি মুসলমানরা কিন্তু বাংলা নববর্ষ পালন করে না। কেন করে না—এমন প্রশ্ন করেছিলাম বেশ কজনকে। তাদের প্রত্যেকের জবাব একই। তারা এদিনটিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পার্বণ হিসেবেই গণ্য করে।
বঙ্গাব্দের নববর্ষ উদ্যাপনে ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীতে ধর্মযোগ কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব এই পার্বণটিকে ধর্মনিরপেক্ষতায় ফিরিয়ে আনা অতি আবশ্যক। তাহলেই বাঙালি জাতিসত্তার একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব রূপে বাংলা নববর্ষ তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটিকে অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হবে। আমরা অতি আবেগে আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে দিনটিকে প্রচার করি, বিবেচনাও নিশ্চয়ই করি। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলা নববর্ষ প্রকৃতই ভূমি রাজস্ব বিভাগের শুভ নববর্ষ। বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন মোগল সম্রাট আকবর, খাজনা আদায়ের মোক্ষম সময় বিবেচনায়। মোগল আমলে ভূমির পূর্ণ অধিকার ছিল কৃষক-প্রজার, জমিদারদের নয়। জমিদার ছিল বটে, তবে তারা কেবলই খাজনা সংগ্রাহক। ভূমির মালিকানা জমিদারদের ছিল না। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তনে কৃষক-প্রজা ভূমির অধিকার হারায়। ভূমির অধিকারপ্রাপ্ত হয় ইংরেজ কর্তৃক চিরস্থায়ী বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমিদার শ্রেণি। এই জমিদার শ্রেণি খাজনা সংগ্রাহকের পাশাপাশি ভূমির মালিকানাস্বত্বও পেয়ে যায়। সামন্তবাদী নিপীড়নমূলক শোষণের গোড়াপত্তন ঘটে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে।
লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ সালের ১২ আগস্ট বার্ষিক ২৬ লাখ টাকা রাজকর পরিশোধের চুক্তিতে মোগল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন। লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৬ সালে খাজনা আদায়ের উদ্দেশ্যে পয়লা বৈশাখ ‘শুভ পুণ্যাহ’ উৎসবের সূচনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় চৈত্রসংক্রান্তির দিবসের মধ্যে কৃষক-প্রজাদের খাজনা পরিশোধ করতে হতো। খাজনা পরিশোধে ব্যর্থ কৃষক-প্রজাদের হালের বলদ, লাঙল, তৈজসপত্র পর্যন্ত বিক্রি করতে হতো। আর যারা খাজনা পরিশোধে নিরুপায়, তাদের ভাগ্যে জুটত জমিদারদের নির্মম শোষণ-নির্যাতন। কৃষক-প্রজা নিগ্রহে আদায় করা খাজনার বদৌলতে জমিদারেরা পয়লা বৈশাখে পালন করত লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত পুণ্যাহ উৎসব।
আমরা আমাদের ঐতিহ্যের স্মারকরূপে পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতায় পালন করে থাকি, সেটা ওই লর্ড ক্লাইভের প্রবর্তিত পয়লা বৈশাখের পুণ্যাহ উৎসবেরই ধারাবাহিক। পাকিস্তানি আমলে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে দিবসটি পালিত হলেও স্বাধীনতার পর ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে এখন মহা উৎসবে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোতে ‘বৈশাখী ধামাকা’, ‘বর্ণিল বৈশাখ’ বিভিন্ন আকর্ষণীয় চটকদার শব্দের সম্ভারে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রকাশ করে নববর্ষ আগমনে। ক্রেতা আকর্ষণে উৎপাদকেরা ঢালাও বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রকাশ করে, মুনাফার অভিপ্রায়ে। তাদের কিন্তু ক্রেতারা নিরাশ করে না। শহরের বিপণিবিতানে প্রচণ্ড ভিড় ও বেচা-বিক্রি সেটাই প্রমাণ করে। নববর্ষকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাদী তৎপরতা দৃশ্যমান। মুনাফার লিপ্সায় নববর্ষ উদ্যাপনকে পুঁজিবাদ বেছে নিতে বিলম্ব করেনি। উসকে দিচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে ভোগবাদিতার অভিমুখে।
বাংলা নববর্ষ সব ধর্মমতের বাঙালির উৎসব বলেই পণ্য, পোশাক, খাদ্য ইত্যাদি ভোগ-বিলাসের সামগ্রীর ব্যাপক বেচা-বিক্রির অপূর্ব সুযোগ হাতছাড়া করে কোন বোকা!
মানতেই হবে আমাদের সুবিধাভোগী শ্রেণি ব্যতীত দেশের মোট জনসমষ্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কিন্তু উৎসবে শামিল হতে পারে না, তাদের অর্থনৈতিক কারণে। যে উৎসব সব মানুষকে স্পর্শ করতে পারে না, সেই উৎসব জাতীয় উৎসব হিসেবে কি গণ্য করা যায়? যে উৎসব ধর্মমুক্ত নয়, সেই উৎসবকে অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব বলার যৌক্তিকতা আছে কি? জাতিগত উৎসবের আড়ালে জাতির মধ্যকার শ্রেণি-বৈষম্যকে কি উপেক্ষা করা যাবে? জাতির ঐক্য যদি না-ই থাকে, তাহলে জাতির উৎসব পালন সর্বজনীন হবে কোন উপায়ে?
মযহারুল ইসলাম বাবলা, নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে