চিররঞ্জন সরকার
প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। এর মধ্যে বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ১১৪ টাকা, অকটেন লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা, পেট্রল লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। ৫ আগস্ট রাত থেকে নতুন এই মূল্য কার্যকর করা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তেলের পাম্পগুলোতে তেল কেনার জন্য হুড়োহুড়ি-মারামারি শুরু হয়ে যায়। আগের কেনা দামে পরের দিন বিক্রি করলে বেশি লাভ পাওয়া যাবে—এই আশায় অনেকে পাম্প বন্ধ করে দেন। অনেকে আবার ২০০ টাকা লিটারে জ্বালানি তেল বিক্রি করেন। ওদিকে দেশের কোনো কোনো এলাকার পরিবহনমালিকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন চালানো বন্ধের ঘোষণা দেন। ফলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তেলের দাম বাড়ানো হলে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়াটা অবশ্য পরিবহন ব্যবসায়ীদের পুরোনো নীতি। তাঁরা কোনো রকম পূর্বঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘটে যান। এরপর দর-কষাকষি করে তাঁদের লাভ ঠিক রেখে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কে ভাড়া বাড়িয়ে আবার পরিবহন চালানো শুরু করেন। এর আগে তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন ভাড়া বেড়েছিল প্রায় ২৭ শতাংশ। এবার তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। কাজেই ভাড়া কী পরিমাণ বাড়বে, তা সহজেই অনুমেয়।
জ্বালানি তেলের দাম যে বাড়বে, তা কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এতটা বাড়বে, তা কল্পনা করা যায়নি। দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশ নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ভারত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ১০৬.০৩ রুপি নির্ধারণ করেছে, যা এখনো বিদ্যমান আছে। এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪.০৯ টাকা এবং ১৩০.৪২ টাকা। (১ রুপি সমান গড় ১.২৩ টাকা)। অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ৩৪.০৯ এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ৪৪.৪২ টাকা কমে বিক্রয় হচ্ছিল। মূল্য কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া সময়ের দাবি।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন গত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি ২২ থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রি করে (সব পণ্য) ৮০১৪.৫১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলেও সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে।
এবারের তেলের মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে কখনো লিটারে ৩৪-৪৬ টাকা বাড়েনি। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন, কৃষি ও উৎপাদিত পণ্যের ব্যয় বাড়বে। প্রভাব পড়বে বিদ্যুতের দামেও। যার ফলে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি পাবে। সব মিলিয়ে ভীষণ রকম চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
কথা হলো, জ্বালানি তেলের দাম কেন এতটা বাড়ানো হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পদক্ষেপ এটি। সরকার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সেই শর্ত পূরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানোর জন্য নতুন এক ‘পদ্ধতি’ প্রয়োগ করা হচ্ছে। নতুন এই পদ্ধতি অনুযায়ী, ধরে ধরে সুনির্দিষ্ট পণ্যের দাম বাড়ানোর দরকার হচ্ছে না। কৌশলে মাত্র একটা জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন, ব্যস, কেল্লা ফতে। তাতে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-সেবা নয়, সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়! এ অনেকটা কান ধরে টান মারার মতো। কান টানুন, মাথা-চোখ, নাক-মুখ, কপাল এমনিতেই কাছে আসবে!
এই ‘কৌশলগত পণ্য’টির নাম হলো জ্বালানি তেল। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ান, বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে। অন্য সব জিনিসের দামও বেড়ে যাবে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাপারটা নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় না। এটা করে মন্ত্রণালয় ও তথাকথিত রেগুলেটরি এজেন্সি। ফলে নির্বাচিত হোক আর অনির্বাচিত হোক—জাতীয় সংসদের সঙ্গে এই দাম বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই। এর জন্য জাতীয় সংসদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন হয় না। জাতীয় সংসদে আলোচনাও হয় না। অথচ কাগজে-কলমে আমাদের দেশে সংসদীয় রাজনীতি বহাল আছে!
আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে কিন্তু জ্বালানির দাম ক্রমেই কমছে। বেশ কিছুদিন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছিল। মাস দুয়েক আগে দুই ধরনের তেলের দামই বেড়ে প্রতি ব্যারেল প্রায় ১২৫ ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৯০ ডলারে নেমে এসেছে। তেলের দাম আরও কমবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কেননা, ওপেক ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎপাদন বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যখন কমছে, ঠিক তখন জ্বালানি তেলের দাম কেন এতটা বাড়ানো হলো?
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে গত বছরের অক্টোবরে। এর আগের সাত-আট বছর তেলের দাম ছিল অনেক কম। তখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কম দামে তেল কিনে দেশের ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই টাকা কোথায় গেল? এখন কেন রাতারাতি ভর্তুকি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হলো? বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই হয়? গত আট বছরে সরকার মাত্র একবার দাম কমিয়েছিল, তা-ও অতিসামান্য, মাত্র ৩ টাকা প্রতি লিটারে। কিন্তু দাম বাড়তে শুরু করার এক মাসের মধ্যেই বিপিসির দেওয়া প্রস্তাব মেনে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় লিটারে ১৫ টাকা; অর্থাৎ এক লাফে বাড়ে ২৩ শতাংশ। আর এবার বাড়ানো হলো ৪৭ শতাংশ।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো মানেই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া। করোনায় নাকাল দেশবাসীর কাছে এ মূল্যবৃদ্ধি এক বড় আঘাত। মানুষ যখন একটু একটু করে গত দুই বছরের অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তখন এই মূল্যবৃদ্ধি বজ্রাঘাতের শামিল। তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদেরও সমর্থন ছিল না। তাঁরা গত কয়েক বছরে যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা হয়েছে, সেই টাকা থেকে ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা না করে ভেবেছে কেবল বিপিসির কথা, পরিবহন খাতের প্রভাবশালী মালিকদের কথা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণ। কিন্তু এতে করে যে গরিব মধ্যবিত্তরা চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাবে, এ ব্যাপারে কোনো হুঁশ আছে বলে মনে হয় না!
সরকার ছলেবলেকৌশলে আমাদের আয়ের ওপর ‘গোপন-হামলা’ চালাচ্ছে। আমাদের পরিশ্রমের টাকা নানা কায়দায় হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রত্যক্ষ করের পরিবর্তে পরোক্ষ করের বোঝা তো আছেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তেল এবং সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা অচিরেই আসবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। কথা হলো, আমরা কি সবকিছু অকাতরে মেনে নেব? নাকি একটু নড়েচড়ে বসব, একটু প্রতিবাদী হব? পিঠ যে দেয়ালে ঠেকে গেছে, আর কত?
লেখক: চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট
প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। এর মধ্যে বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ১১৪ টাকা, অকটেন লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা, পেট্রল লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। ৫ আগস্ট রাত থেকে নতুন এই মূল্য কার্যকর করা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তেলের পাম্পগুলোতে তেল কেনার জন্য হুড়োহুড়ি-মারামারি শুরু হয়ে যায়। আগের কেনা দামে পরের দিন বিক্রি করলে বেশি লাভ পাওয়া যাবে—এই আশায় অনেকে পাম্প বন্ধ করে দেন। অনেকে আবার ২০০ টাকা লিটারে জ্বালানি তেল বিক্রি করেন। ওদিকে দেশের কোনো কোনো এলাকার পরিবহনমালিকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন চালানো বন্ধের ঘোষণা দেন। ফলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তেলের দাম বাড়ানো হলে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়াটা অবশ্য পরিবহন ব্যবসায়ীদের পুরোনো নীতি। তাঁরা কোনো রকম পূর্বঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘটে যান। এরপর দর-কষাকষি করে তাঁদের লাভ ঠিক রেখে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কে ভাড়া বাড়িয়ে আবার পরিবহন চালানো শুরু করেন। এর আগে তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন ভাড়া বেড়েছিল প্রায় ২৭ শতাংশ। এবার তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। কাজেই ভাড়া কী পরিমাণ বাড়বে, তা সহজেই অনুমেয়।
জ্বালানি তেলের দাম যে বাড়বে, তা কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এতটা বাড়বে, তা কল্পনা করা যায়নি। দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশ নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ভারত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ১০৬.০৩ রুপি নির্ধারণ করেছে, যা এখনো বিদ্যমান আছে। এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪.০৯ টাকা এবং ১৩০.৪২ টাকা। (১ রুপি সমান গড় ১.২৩ টাকা)। অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ৩৪.০৯ এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ৪৪.৪২ টাকা কমে বিক্রয় হচ্ছিল। মূল্য কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া সময়ের দাবি।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন গত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি ২২ থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রি করে (সব পণ্য) ৮০১৪.৫১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলেও সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে।
এবারের তেলের মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে কখনো লিটারে ৩৪-৪৬ টাকা বাড়েনি। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন, কৃষি ও উৎপাদিত পণ্যের ব্যয় বাড়বে। প্রভাব পড়বে বিদ্যুতের দামেও। যার ফলে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি পাবে। সব মিলিয়ে ভীষণ রকম চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
কথা হলো, জ্বালানি তেলের দাম কেন এতটা বাড়ানো হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পদক্ষেপ এটি। সরকার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সেই শর্ত পূরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানোর জন্য নতুন এক ‘পদ্ধতি’ প্রয়োগ করা হচ্ছে। নতুন এই পদ্ধতি অনুযায়ী, ধরে ধরে সুনির্দিষ্ট পণ্যের দাম বাড়ানোর দরকার হচ্ছে না। কৌশলে মাত্র একটা জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন, ব্যস, কেল্লা ফতে। তাতে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-সেবা নয়, সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়! এ অনেকটা কান ধরে টান মারার মতো। কান টানুন, মাথা-চোখ, নাক-মুখ, কপাল এমনিতেই কাছে আসবে!
এই ‘কৌশলগত পণ্য’টির নাম হলো জ্বালানি তেল। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ান, বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে। অন্য সব জিনিসের দামও বেড়ে যাবে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাপারটা নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় না। এটা করে মন্ত্রণালয় ও তথাকথিত রেগুলেটরি এজেন্সি। ফলে নির্বাচিত হোক আর অনির্বাচিত হোক—জাতীয় সংসদের সঙ্গে এই দাম বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই। এর জন্য জাতীয় সংসদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন হয় না। জাতীয় সংসদে আলোচনাও হয় না। অথচ কাগজে-কলমে আমাদের দেশে সংসদীয় রাজনীতি বহাল আছে!
আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে কিন্তু জ্বালানির দাম ক্রমেই কমছে। বেশ কিছুদিন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছিল। মাস দুয়েক আগে দুই ধরনের তেলের দামই বেড়ে প্রতি ব্যারেল প্রায় ১২৫ ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৯০ ডলারে নেমে এসেছে। তেলের দাম আরও কমবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কেননা, ওপেক ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎপাদন বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যখন কমছে, ঠিক তখন জ্বালানি তেলের দাম কেন এতটা বাড়ানো হলো?
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে গত বছরের অক্টোবরে। এর আগের সাত-আট বছর তেলের দাম ছিল অনেক কম। তখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কম দামে তেল কিনে দেশের ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই টাকা কোথায় গেল? এখন কেন রাতারাতি ভর্তুকি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হলো? বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই হয়? গত আট বছরে সরকার মাত্র একবার দাম কমিয়েছিল, তা-ও অতিসামান্য, মাত্র ৩ টাকা প্রতি লিটারে। কিন্তু দাম বাড়তে শুরু করার এক মাসের মধ্যেই বিপিসির দেওয়া প্রস্তাব মেনে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় লিটারে ১৫ টাকা; অর্থাৎ এক লাফে বাড়ে ২৩ শতাংশ। আর এবার বাড়ানো হলো ৪৭ শতাংশ।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো মানেই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া। করোনায় নাকাল দেশবাসীর কাছে এ মূল্যবৃদ্ধি এক বড় আঘাত। মানুষ যখন একটু একটু করে গত দুই বছরের অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তখন এই মূল্যবৃদ্ধি বজ্রাঘাতের শামিল। তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদেরও সমর্থন ছিল না। তাঁরা গত কয়েক বছরে যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা হয়েছে, সেই টাকা থেকে ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা না করে ভেবেছে কেবল বিপিসির কথা, পরিবহন খাতের প্রভাবশালী মালিকদের কথা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণ। কিন্তু এতে করে যে গরিব মধ্যবিত্তরা চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাবে, এ ব্যাপারে কোনো হুঁশ আছে বলে মনে হয় না!
সরকার ছলেবলেকৌশলে আমাদের আয়ের ওপর ‘গোপন-হামলা’ চালাচ্ছে। আমাদের পরিশ্রমের টাকা নানা কায়দায় হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রত্যক্ষ করের পরিবর্তে পরোক্ষ করের বোঝা তো আছেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তেল এবং সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা অচিরেই আসবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। কথা হলো, আমরা কি সবকিছু অকাতরে মেনে নেব? নাকি একটু নড়েচড়ে বসব, একটু প্রতিবাদী হব? পিঠ যে দেয়ালে ঠেকে গেছে, আর কত?
লেখক: চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে