মৃত্যুঞ্জয় রায়
আমরা শহরবাসীর সুযোগ-সুবিধা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে যতটা ভাবি, গ্রামের মানুষের কথা সেভাবে ভাবি না। শহর সাজানোর জন্য রয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ। শহরে প্রতিটি বাড়ি তৈরির ব্যাপারে রয়েছে পরিকল্পনার বাধ্যবাধকতা। বাড়িগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রেও রয়েছে স্থপতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে নগর পরিকল্পনা পাঠের মতো বিষয়। কিন্তু গ্রামের পল্লি পরিবেশ ও পরিকল্পনা চলছে কীভাবে?
সেখানে কেউ কখনো কোনো পরিকল্পনার প্রয়োজন বোধ করে না। অথচ এ দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ এখন গ্রামে বাস করে। শহরের মানুষের মতো তাদেরও রয়েছে সুন্দর বাসস্থান ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ উপভোগের অধিকার। শহরের মানুষের যেমন নিরাপদ পানি পানের দরকার, তেমনি গ্রামের মানুষেরও তা চাই। কিন্তু শহরের মতো সে ধরনের কোনো সুব্যবস্থা গ্রামে গড়ে ওঠেনি। শহরের মানুষের যেমন পয়োনিষ্কাশন ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা রয়েছে, গ্রামের কতজন এমন ব্যবস্থা উপভোগ করতে পারছে?
ইদানীং গ্রামেও কিছু পরিবর্তন এসেছে সত্যি। আগের মতো এখন আর আসমানীদের মতো কুঁড়েঘর দেখা যায় না, সন্ধ্যাবেলা হারিকেন জ্বলে না। গ্রামের অনেক মানুষই এখন বিত্তশালী হওয়ায় তাঁদের ঘরবাড়িগুলোও শহরের ঘরবাড়ির মতো করে নির্মাণ করছেন। কিন্তু সেই সব বাড়ির বর্জ্য যাচ্ছে কোথায়? ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি নতুন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও অন্য শহরের ব্যাপারে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। শহরে যেমন গাড়ি ও কলকারখানার ধোঁয়া পরিবেশ ও বায়ুমণ্ডলের দূষণ বাড়াচ্ছে, গ্রামে তেমন গাড়ির চলাচল ও কলকারখানা না থাকলেও দূষণ থেমে নেই। কখনোই আমরা গ্রামের বায়ুদূষণ নিয়ে ভাবিনি, মাপিনি তার এয়ার কোয়ালিটি। গ্রামে যত জলাবদ্ধ ডোবা আর মশার বিচরণক্ষেত্র রয়েছে, শহরে তেমন নেই।
সম্প্রতি জরিপে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বাইরেই এখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। গ্রামেও এই সর্বনাশা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে মশক নিধনের ব্যবস্থা কী? যেখানে-সেখানে জলাভূমিতে পাট পচিয়ে বাতাসে তার দুর্গন্ধ ছড়ানো হচ্ছে, পাট পচানো পানিতে আমাদের জলবাসী জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা কি কখনো যাচাই করে দেখেছি? অথবা যেসব মানুষ পাটের পচানো আঁশ ছাড়াতে ছাড়াতে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া-জীবাণুর সংস্পর্শে থাকছেন, তাতে তাদের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি? অথবা সেই পাট ও ধান জন্মাতে যেসব রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে, তাতে মাটি ও পানির কতটুকু ক্ষতি হলো, কতটা দূষিত হলো কৃষিক্ষেত্রের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের—বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কখনো গভীরভাবে ভাবা হয়নি। কীভাবে দেশের শত শত প্রজাতির দেশি মাছ ষাটের দশকের পর থেকে হারিয়ে গেল, তা আমরা বুঝতেই পারিনি। কী করে আমাদের সোনার চেয়ে খাঁটি মাটি হারিয়ে ফেলল চিরকালীন উর্বরতা—এ কথা আমরা যেন বুঝতে চাইছি না।
গ্রামে পরিবেশদূষণের আরেকটি ক্ষেত্র হলো গোয়াল ও হাঁস-মুরগির খামারের বর্জ্য। দেশে লক্ষাধিক মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। প্রায় ৪৩ কোটি গবাদি প্রাণী রয়েছে, যেগুলো অধিকাংশই গ্রামের। এসব খামারের বর্জ্যগুলোর কী হচ্ছে? গ্রামের অন্যান্য বর্জ্য যাচ্ছে কোথায়? মুরগির বিষ্ঠা আর গোবর পচিয়ে জৈব সার উৎপাদনের প্রক্রিয়া ঠিকভাবে অনুসরণ করা না হলে সেখান থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসারণ হচ্ছে। মিথেন একটি ক্ষতিকর গ্যাস, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নামে পরিচিত এবং বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে অন্তত ২৩ গুণ বেশি বৃদ্ধি করে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ লাকড়ি বা কাঠ পুড়িয়ে চুলায় রান্না করে। এর জন্য একদিকে সেই সব লাকড়ির জোগান দিতে যেমন বৃক্ষ উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে তা বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। যেসব গাছপালা বাতাসে বেড়ে যাওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডকে শোষণ করে পরিবেশকে নির্মল রাখতে সাহায্য করে, শহরের চেয়ে সেগুলো গ্রামে নিশ্চয়ই অনেক বেশি আছে।
শুধু বৃক্ষ বা বন নয়, গ্রামে আছে অবারিত শস্য-শ্যামল মাঠ, তৃণাচ্ছাদিত ভূমি, জলাশয়। প্রকৃতির এসব আশীর্বাদের প্রাচুর্য গ্রামে থাকলেও আগের মতো নেই। নানা প্রয়োজনে আমরা বনের গাছ কেটে জমি ফাঁকা করছি, ঘরবাড়ি ও রাস্তা বানাচ্ছি, খামার তৈরি করছি। ফলে পল্লি জননীর সেই সৌন্দর্যমণ্ডিত আবরণ এখন ধীরে ধীরে খুলে পড়ছে। আজ থেকে ৩০ বছরের বেশি আগে এ দেশে গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলো কী পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসারণ করেছে, তার একটা হিসাব বের করেছিলেন এ দেশের গবেষকেরা। সেই গবেষণাপত্রে তাঁরা লিখেছিলেন, গ্রামের জলমগ্ন ধানখেত থেকে বছরে ২৫৭ থেকে ৬২২ গিগাগ্যালন মিথেন নিঃসারণ হচ্ছে, প্রাণিসম্পদের বর্জ্য থেকে মিথেন নিঃসারণ হচ্ছে বছরে প্রায় ৪৫৩ গিগাগ্যালন। বর্তমানে নিশ্চয়ই এর পরিমাণ আরও বেড়েছে।
এর প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ আবহাওয়া ও পরিবেশের ওপর। গ্রামের বাস্তুতন্ত্রে অনেক জীবের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। অনেক গাছপালাই এখন আর গ্রামে দেখা যায় না, অতীতে যেসব গ্রামীণ ও অপ্রচলিত ফল খেয়ে আমাদের রসনা স্বাদ পেত বৈচিত্র্যের, তা দখল করেছে আধুনিক ফল, বিদেশ থেকে আসা ফল। গ্রামে এখন ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে, কিন্তু কেউ ডেউয়া বা লুকলুকির চাষ করে না। এমনকি খায়ও না। অথচ এগুলোর পুষ্টিগুণ অনেক ভালো। এভাবে প্রায় ৬০ প্রজাতির অপ্রচলিত বুনো ফল এ দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, যেগুলো প্রধানত গ্রামের জঙ্গলে জন্মাত। এখন তো জঙ্গলই নেই, এসব গাছ থাকবে কোথায়? এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে অনেক বনৌষধি গাছ ও প্রাণী।
বাংলাদেশে প্রধানত তিন ধরনের জনপদ দেখা যায়—শহর, উপশহর ও গ্রাম। রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে তুলনামূলকভাবে নাগরিক সুবিধা বেশি। উপশহরগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম নাগরিক সুবিধা মেলে। সেখানে শহর ও গ্রামের একটা মিশেল অবস্থার স্বাদ নেওয়া যায়। এখন অনেক উপশহরেও শিল্প-কারখানার বিস্তৃতি হচ্ছে। গ্রামে শহরের ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাও মেলে না। রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার বা সামাজিক মিলনায়তন, বিদ্যুৎ, পানীয় জল সরবরাহ, স্যানিটেশন, পার্ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সুবিধা গ্রামে অপ্রতুল।
গ্রামগুলো যেন শুধুই খাদ্য উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু। অথচ খাদ্য উৎপাদন করেও গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষ সেই সুফল ভোগ করতে পারে না। এসব অপ্রাপ্তি নিয়ে গ্রামের মানুষেরও যেন কোনো অভিযোগ নেই।
গ্রাম উন্নয়নে এবং গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে হবে অবশ্যই, তবে প্রকৃতিকে অবজ্ঞা করা যাবে না। প্রকৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করেই গ্রাম উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনা হতে হবে সুসমন্বিত, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
আমরা শহরবাসীর সুযোগ-সুবিধা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে যতটা ভাবি, গ্রামের মানুষের কথা সেভাবে ভাবি না। শহর সাজানোর জন্য রয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ। শহরে প্রতিটি বাড়ি তৈরির ব্যাপারে রয়েছে পরিকল্পনার বাধ্যবাধকতা। বাড়িগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রেও রয়েছে স্থপতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে নগর পরিকল্পনা পাঠের মতো বিষয়। কিন্তু গ্রামের পল্লি পরিবেশ ও পরিকল্পনা চলছে কীভাবে?
সেখানে কেউ কখনো কোনো পরিকল্পনার প্রয়োজন বোধ করে না। অথচ এ দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ এখন গ্রামে বাস করে। শহরের মানুষের মতো তাদেরও রয়েছে সুন্দর বাসস্থান ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ উপভোগের অধিকার। শহরের মানুষের যেমন নিরাপদ পানি পানের দরকার, তেমনি গ্রামের মানুষেরও তা চাই। কিন্তু শহরের মতো সে ধরনের কোনো সুব্যবস্থা গ্রামে গড়ে ওঠেনি। শহরের মানুষের যেমন পয়োনিষ্কাশন ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা রয়েছে, গ্রামের কতজন এমন ব্যবস্থা উপভোগ করতে পারছে?
ইদানীং গ্রামেও কিছু পরিবর্তন এসেছে সত্যি। আগের মতো এখন আর আসমানীদের মতো কুঁড়েঘর দেখা যায় না, সন্ধ্যাবেলা হারিকেন জ্বলে না। গ্রামের অনেক মানুষই এখন বিত্তশালী হওয়ায় তাঁদের ঘরবাড়িগুলোও শহরের ঘরবাড়ির মতো করে নির্মাণ করছেন। কিন্তু সেই সব বাড়ির বর্জ্য যাচ্ছে কোথায়? ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি নতুন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও অন্য শহরের ব্যাপারে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। শহরে যেমন গাড়ি ও কলকারখানার ধোঁয়া পরিবেশ ও বায়ুমণ্ডলের দূষণ বাড়াচ্ছে, গ্রামে তেমন গাড়ির চলাচল ও কলকারখানা না থাকলেও দূষণ থেমে নেই। কখনোই আমরা গ্রামের বায়ুদূষণ নিয়ে ভাবিনি, মাপিনি তার এয়ার কোয়ালিটি। গ্রামে যত জলাবদ্ধ ডোবা আর মশার বিচরণক্ষেত্র রয়েছে, শহরে তেমন নেই।
সম্প্রতি জরিপে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বাইরেই এখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। গ্রামেও এই সর্বনাশা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে মশক নিধনের ব্যবস্থা কী? যেখানে-সেখানে জলাভূমিতে পাট পচিয়ে বাতাসে তার দুর্গন্ধ ছড়ানো হচ্ছে, পাট পচানো পানিতে আমাদের জলবাসী জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা কি কখনো যাচাই করে দেখেছি? অথবা যেসব মানুষ পাটের পচানো আঁশ ছাড়াতে ছাড়াতে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া-জীবাণুর সংস্পর্শে থাকছেন, তাতে তাদের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি? অথবা সেই পাট ও ধান জন্মাতে যেসব রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে, তাতে মাটি ও পানির কতটুকু ক্ষতি হলো, কতটা দূষিত হলো কৃষিক্ষেত্রের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের—বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কখনো গভীরভাবে ভাবা হয়নি। কীভাবে দেশের শত শত প্রজাতির দেশি মাছ ষাটের দশকের পর থেকে হারিয়ে গেল, তা আমরা বুঝতেই পারিনি। কী করে আমাদের সোনার চেয়ে খাঁটি মাটি হারিয়ে ফেলল চিরকালীন উর্বরতা—এ কথা আমরা যেন বুঝতে চাইছি না।
গ্রামে পরিবেশদূষণের আরেকটি ক্ষেত্র হলো গোয়াল ও হাঁস-মুরগির খামারের বর্জ্য। দেশে লক্ষাধিক মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। প্রায় ৪৩ কোটি গবাদি প্রাণী রয়েছে, যেগুলো অধিকাংশই গ্রামের। এসব খামারের বর্জ্যগুলোর কী হচ্ছে? গ্রামের অন্যান্য বর্জ্য যাচ্ছে কোথায়? মুরগির বিষ্ঠা আর গোবর পচিয়ে জৈব সার উৎপাদনের প্রক্রিয়া ঠিকভাবে অনুসরণ করা না হলে সেখান থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসারণ হচ্ছে। মিথেন একটি ক্ষতিকর গ্যাস, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নামে পরিচিত এবং বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে অন্তত ২৩ গুণ বেশি বৃদ্ধি করে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ লাকড়ি বা কাঠ পুড়িয়ে চুলায় রান্না করে। এর জন্য একদিকে সেই সব লাকড়ির জোগান দিতে যেমন বৃক্ষ উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে তা বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। যেসব গাছপালা বাতাসে বেড়ে যাওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডকে শোষণ করে পরিবেশকে নির্মল রাখতে সাহায্য করে, শহরের চেয়ে সেগুলো গ্রামে নিশ্চয়ই অনেক বেশি আছে।
শুধু বৃক্ষ বা বন নয়, গ্রামে আছে অবারিত শস্য-শ্যামল মাঠ, তৃণাচ্ছাদিত ভূমি, জলাশয়। প্রকৃতির এসব আশীর্বাদের প্রাচুর্য গ্রামে থাকলেও আগের মতো নেই। নানা প্রয়োজনে আমরা বনের গাছ কেটে জমি ফাঁকা করছি, ঘরবাড়ি ও রাস্তা বানাচ্ছি, খামার তৈরি করছি। ফলে পল্লি জননীর সেই সৌন্দর্যমণ্ডিত আবরণ এখন ধীরে ধীরে খুলে পড়ছে। আজ থেকে ৩০ বছরের বেশি আগে এ দেশে গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলো কী পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসারণ করেছে, তার একটা হিসাব বের করেছিলেন এ দেশের গবেষকেরা। সেই গবেষণাপত্রে তাঁরা লিখেছিলেন, গ্রামের জলমগ্ন ধানখেত থেকে বছরে ২৫৭ থেকে ৬২২ গিগাগ্যালন মিথেন নিঃসারণ হচ্ছে, প্রাণিসম্পদের বর্জ্য থেকে মিথেন নিঃসারণ হচ্ছে বছরে প্রায় ৪৫৩ গিগাগ্যালন। বর্তমানে নিশ্চয়ই এর পরিমাণ আরও বেড়েছে।
এর প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ আবহাওয়া ও পরিবেশের ওপর। গ্রামের বাস্তুতন্ত্রে অনেক জীবের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। অনেক গাছপালাই এখন আর গ্রামে দেখা যায় না, অতীতে যেসব গ্রামীণ ও অপ্রচলিত ফল খেয়ে আমাদের রসনা স্বাদ পেত বৈচিত্র্যের, তা দখল করেছে আধুনিক ফল, বিদেশ থেকে আসা ফল। গ্রামে এখন ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে, কিন্তু কেউ ডেউয়া বা লুকলুকির চাষ করে না। এমনকি খায়ও না। অথচ এগুলোর পুষ্টিগুণ অনেক ভালো। এভাবে প্রায় ৬০ প্রজাতির অপ্রচলিত বুনো ফল এ দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, যেগুলো প্রধানত গ্রামের জঙ্গলে জন্মাত। এখন তো জঙ্গলই নেই, এসব গাছ থাকবে কোথায়? এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে অনেক বনৌষধি গাছ ও প্রাণী।
বাংলাদেশে প্রধানত তিন ধরনের জনপদ দেখা যায়—শহর, উপশহর ও গ্রাম। রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে তুলনামূলকভাবে নাগরিক সুবিধা বেশি। উপশহরগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম নাগরিক সুবিধা মেলে। সেখানে শহর ও গ্রামের একটা মিশেল অবস্থার স্বাদ নেওয়া যায়। এখন অনেক উপশহরেও শিল্প-কারখানার বিস্তৃতি হচ্ছে। গ্রামে শহরের ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাও মেলে না। রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার বা সামাজিক মিলনায়তন, বিদ্যুৎ, পানীয় জল সরবরাহ, স্যানিটেশন, পার্ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সুবিধা গ্রামে অপ্রতুল।
গ্রামগুলো যেন শুধুই খাদ্য উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু। অথচ খাদ্য উৎপাদন করেও গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষ সেই সুফল ভোগ করতে পারে না। এসব অপ্রাপ্তি নিয়ে গ্রামের মানুষেরও যেন কোনো অভিযোগ নেই।
গ্রাম উন্নয়নে এবং গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে হবে অবশ্যই, তবে প্রকৃতিকে অবজ্ঞা করা যাবে না। প্রকৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করেই গ্রাম উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনা হতে হবে সুসমন্বিত, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে