মৃত্যুঞ্জয় রায়
‘অধরা দিল ধরা এ ধুলার ধরণিতে’—পয়লা বৈশাখে রমনার বটমূলে ছায়ানটের পরিবেশনায় রবীন্দ্রনাথের এই গান শোনার সময় মনে হলো, অধরা কী এমন, যে আজ এই ধরিত্রীর বুকে ধরা দিয়েছে? যাকে আমরা ধরতে পারছি না, ছুঁতে পারছি না, কিন্তু সে আছে, যার অস্তিত্ব কেবল অনুভব করতে পারছি, যে আমাদের উন্নয়নে নেশাগ্রস্ত করে ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ধরার ধূলিতে, মৃত্যুলোকে। ওরা আজ নেমে এসেছে ঊর্ধ্বলোক থেকে মর্ত্যলোকে, ধুলোর ধরণিতে। সমগ্র মানবজাতির সুখ-আনন্দ বিপন্ন করে তুলেছে। কী সেই সংকট? ধরিত্রীর সামনে এখন তিন সংকট, যারা একের সঙ্গে আর এক মিলেমিশে সমগ্র ধরিত্রী ও মানবসভ্যতাকে বিপন্ন করে তুলছে। ধরিত্রী এখন ত্রিসংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে—জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশদূষণ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি। এরা একে অপরের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিলেমিশে আমাদের জীবন ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি করে চলেছে অনেকটা নীরবে, নিভৃতে। আমরা যদি এই ধরার বুকে বাঁচতে চাই, আমাদের সবুজ গ্রহকে বাঁচাতে চাই, তাহলে এই তিন সংকটের সমাধানে মনোযোগী হতে হবে।
ধরিত্রী ও মানবজাতির জন্য মূল সংকট হলো জলবায়ু পরিবর্তন। কোনো স্থানের স্বল্প সময়ে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের অবস্থা হলো আবহাওয়া। আর সেই স্থানে দীর্ঘ সময়ের, অর্থাৎ ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়া হলো সেখানকার জলবায়ু। প্রতিটি স্থানের একটি নির্দিষ্ট ও প্রায় স্থায়ী জলবায়ু প্যাটার্ন আছে, যার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেই স্থানের জীব ও উদ্ভিদকুলের জীবনধারা গড়ে ওঠে। দীর্ঘ মেয়াদে তাপমাত্রার পরিবর্তনে এখন সেখানকার আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্যাটার্নও বদলে যাচ্ছে, যার সুস্পষ্ট প্রভাব পড়ছে সেখানকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর। বলা বাহুল্য, জলবায়ুর এই পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকাণ্ড। আমরা আমাদের উন্নয়নের জন্য বর্তমানে যা যা করছি, সেসব কর্মকাণ্ড থেকেই কার্বন নিঃসারণ ঘটছে, যা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে শিল্পকারখানা চালনা, গাড়ি চালনা, ভবন নির্মাণ ও কৃষিকাজ—এই চার ক্ষেত্রে শক্তির ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দিনে দিনে বাড়ছে আর এর ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসারণের পরিমাণও বাড়ছে। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি মানে তাপমাত্রার বৃদ্ধি। এর পরিণতিতে এখন বিশ্বব্যাপী বেড়েছে মারাত্মক খরা, পানির সংকট, দাবানল, লবণাক্ততা, বন্যা, বৃষ্টিপাত, মেরু অঞ্চলের বরফ গলন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ইত্যাদি।
ধরিত্রীর দ্বিতীয় সংকট হলো বায়ুদূষণ। মানুষের নানারূপ কর্মকাণ্ডের ফলে দিনে দিনে বাড়ছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণে বাড়ছে রোগ। এর ফলে পৃথিবীতে প্রতিবছর ৭০ লাখের বেশি মানুষ অপরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করছে। পৃথিবীর প্রতি ১০ জনে ৯ জন শ্বাস গ্রহণ করছে দূষিত বাতাসের, যার ক্ষতিকর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া দূষণমাত্রার চেয়ে বেশি। দূষণ কিসে না হচ্ছে? অতিরিক্ত দাবদাহে যখন বিস্তীর্ণ বনভূমি পুড়ে ছারখার হচ্ছে, সেখান থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে, গাড়ি চালিয়ে ভস ভস করে যে ধোঁয়া আমরা বাতাসে ছেড়ে দিচ্ছি, তা থেকে বায়ুদূষণ ঘটছে, বনভূমি উজাড় করে গাছ কেটে তা যখন চুলার লাকড়ি হিসেবে পোড়াচ্ছি, তা থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে, ইটভাটা আর কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে, আগ্নেয়গিরি থেকে উদ্গত ধোঁয়া ও ছাই বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে।
শুধু বায়ুদূষণের ফলে ২০১৬ সালে পৃথিবীতে ৩৮ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে ঘরের ভেতরের চুলার বায়ুদূষণ থেকে। বর্তমানে বিশ্বে শুধু ঘরের বাইরের বায়ুদূষণে ৪২ লাখ লোক মরছে। দিনে দিনে এই হার বাড়ছে। প্রতি বছর বিশ্বে যত গাছ কাটা পড়ে, তার সিংহভাগ যায় চুলার জ্বালানিতে।
ধরিত্রীর তৃতীয় সংকট হলো জীববৈচিত্র্য কমে যাওয়া বা ক্ষতি। এ পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণী ও উদ্ভিদ পরস্পর এক মধুর বন্ধনে আবদ্ধ, একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এই সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতার ওপর ভর করে টিকে আছে কোনো স্থানের ইকোসিস্টেম বা পরিবেশতন্ত্র। হঠাৎ সেই ইকোসিস্টেম থেকে কোনো জীবের বিলুপ্তি বা বিপন্নতার প্রভাব পড়ে আরেকটি জীবের ওপর। কোনো না কোনোভাবে ধরিত্রীর প্রতিটি জীব একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু ক্রমাগত নির্বনীকরণ ও মরুকরণের মতো অপরাধ সরাসরি জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে চলেছে। জীববৈচিত্র্য হলো ধরিত্রীর বুকে জীবনের ভিত্তি—জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি মানে আমাদের জল ও খাবার প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা। আর দিন শেষে এর পরিণাম হলো মানুষ নামের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবেরও ধরিত্রীর বুক থেকে বিলোপ ঘটা। যেখানে খাদ্য নেই, জল নেই, সেখানে জীবেরাও থাকতে পারে না। এরূপ এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের হাতছানি আমরা শুনতে পাচ্ছি। নিজেদের উন্নতির জন্য মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে আজ যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার অনিবার্য ফল আমাদের ভোগ করতে হবেই। প্রকৃতি যেমন উদার, তেমনি নিষ্ঠুরও। প্রকৃতির ক্ষতি হলে একদিন প্রকৃতি তার শোধ নেবেই নেবে। জাতিসংঘ মহাসচিব অন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘মানুষের এরূপ প্রকৃতিবিরোধী কাজ আমাদের নির্বুদ্ধিতার পরিচয়, যা আত্মহননের শামিল।’ এর ফলে আমাদের যতই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসুক, তার জন্য অনেক জীবনের মূল্য দিতে হচ্ছে, ধরিত্রীকে আমরা গভীর সংকটের মধ্যে ফেলে দিচ্ছি। ধরিত্রীর বুক থেকে কোনো জীবের হারিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য কোনো শুভ লক্ষণ নয়।
ধরিত্রীর এসব সংকটের সুস্পষ্ট প্রভাব আমরা আমাদের জীবদ্দশাতেই চোখের সামনে ঘটতে দেখছি। বিগত ৫০ বছরে পূর্বের তুলনায় আবহাওয়াঘটিত দুর্যোগ বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। প্রতি বছর ধরিত্রীর বুকে জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ মানুষ। চরম ঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, লবণাক্ততাই এর পেছনে মূল কারণ।
কে কী করল বা করল না, তা না ভেবে ব্যক্তি হিসেবেই ধরিত্রীর এসব সংকট নিরসনে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। আমরা অতিরিক্ত খাওয়া বাদ দিতে পারি, খাদ্যের অপচয় মোটেই হতে দেব না, চট করে অল্প দূরে যেতে হলেও গাড়িতে না গিয়ে হাঁটতে বা সাইকেল চালাতে পারি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করব না, জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে পারি, চুলার জ্বালানির জন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে গাছ কাটা বন্ধ করতে পারি, যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে, সেখানে গাছ লাগাতে পারি, খেতে সার ও বালাইনাশকের ব্যবহার কমাতে বা বন্ধ করতে পারি, পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার কমাতে পারি। মোদ্দাকথা হলো, ধরিত্রীকে রক্ষা করতে হলে সব ধরনের দূষণ বন্ধ করতে হবে। এর জন্য প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে বেশি দরকার সচেতনতা ও মানসিকতার পরিবর্তন।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
‘অধরা দিল ধরা এ ধুলার ধরণিতে’—পয়লা বৈশাখে রমনার বটমূলে ছায়ানটের পরিবেশনায় রবীন্দ্রনাথের এই গান শোনার সময় মনে হলো, অধরা কী এমন, যে আজ এই ধরিত্রীর বুকে ধরা দিয়েছে? যাকে আমরা ধরতে পারছি না, ছুঁতে পারছি না, কিন্তু সে আছে, যার অস্তিত্ব কেবল অনুভব করতে পারছি, যে আমাদের উন্নয়নে নেশাগ্রস্ত করে ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ধরার ধূলিতে, মৃত্যুলোকে। ওরা আজ নেমে এসেছে ঊর্ধ্বলোক থেকে মর্ত্যলোকে, ধুলোর ধরণিতে। সমগ্র মানবজাতির সুখ-আনন্দ বিপন্ন করে তুলেছে। কী সেই সংকট? ধরিত্রীর সামনে এখন তিন সংকট, যারা একের সঙ্গে আর এক মিলেমিশে সমগ্র ধরিত্রী ও মানবসভ্যতাকে বিপন্ন করে তুলছে। ধরিত্রী এখন ত্রিসংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে—জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশদূষণ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি। এরা একে অপরের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিলেমিশে আমাদের জীবন ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি করে চলেছে অনেকটা নীরবে, নিভৃতে। আমরা যদি এই ধরার বুকে বাঁচতে চাই, আমাদের সবুজ গ্রহকে বাঁচাতে চাই, তাহলে এই তিন সংকটের সমাধানে মনোযোগী হতে হবে।
ধরিত্রী ও মানবজাতির জন্য মূল সংকট হলো জলবায়ু পরিবর্তন। কোনো স্থানের স্বল্প সময়ে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের অবস্থা হলো আবহাওয়া। আর সেই স্থানে দীর্ঘ সময়ের, অর্থাৎ ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়া হলো সেখানকার জলবায়ু। প্রতিটি স্থানের একটি নির্দিষ্ট ও প্রায় স্থায়ী জলবায়ু প্যাটার্ন আছে, যার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেই স্থানের জীব ও উদ্ভিদকুলের জীবনধারা গড়ে ওঠে। দীর্ঘ মেয়াদে তাপমাত্রার পরিবর্তনে এখন সেখানকার আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্যাটার্নও বদলে যাচ্ছে, যার সুস্পষ্ট প্রভাব পড়ছে সেখানকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর। বলা বাহুল্য, জলবায়ুর এই পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকাণ্ড। আমরা আমাদের উন্নয়নের জন্য বর্তমানে যা যা করছি, সেসব কর্মকাণ্ড থেকেই কার্বন নিঃসারণ ঘটছে, যা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে শিল্পকারখানা চালনা, গাড়ি চালনা, ভবন নির্মাণ ও কৃষিকাজ—এই চার ক্ষেত্রে শক্তির ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দিনে দিনে বাড়ছে আর এর ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসারণের পরিমাণও বাড়ছে। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি মানে তাপমাত্রার বৃদ্ধি। এর পরিণতিতে এখন বিশ্বব্যাপী বেড়েছে মারাত্মক খরা, পানির সংকট, দাবানল, লবণাক্ততা, বন্যা, বৃষ্টিপাত, মেরু অঞ্চলের বরফ গলন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ইত্যাদি।
ধরিত্রীর দ্বিতীয় সংকট হলো বায়ুদূষণ। মানুষের নানারূপ কর্মকাণ্ডের ফলে দিনে দিনে বাড়ছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণে বাড়ছে রোগ। এর ফলে পৃথিবীতে প্রতিবছর ৭০ লাখের বেশি মানুষ অপরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করছে। পৃথিবীর প্রতি ১০ জনে ৯ জন শ্বাস গ্রহণ করছে দূষিত বাতাসের, যার ক্ষতিকর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া দূষণমাত্রার চেয়ে বেশি। দূষণ কিসে না হচ্ছে? অতিরিক্ত দাবদাহে যখন বিস্তীর্ণ বনভূমি পুড়ে ছারখার হচ্ছে, সেখান থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে, গাড়ি চালিয়ে ভস ভস করে যে ধোঁয়া আমরা বাতাসে ছেড়ে দিচ্ছি, তা থেকে বায়ুদূষণ ঘটছে, বনভূমি উজাড় করে গাছ কেটে তা যখন চুলার লাকড়ি হিসেবে পোড়াচ্ছি, তা থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে, ইটভাটা আর কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে, আগ্নেয়গিরি থেকে উদ্গত ধোঁয়া ও ছাই বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে।
শুধু বায়ুদূষণের ফলে ২০১৬ সালে পৃথিবীতে ৩৮ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে ঘরের ভেতরের চুলার বায়ুদূষণ থেকে। বর্তমানে বিশ্বে শুধু ঘরের বাইরের বায়ুদূষণে ৪২ লাখ লোক মরছে। দিনে দিনে এই হার বাড়ছে। প্রতি বছর বিশ্বে যত গাছ কাটা পড়ে, তার সিংহভাগ যায় চুলার জ্বালানিতে।
ধরিত্রীর তৃতীয় সংকট হলো জীববৈচিত্র্য কমে যাওয়া বা ক্ষতি। এ পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণী ও উদ্ভিদ পরস্পর এক মধুর বন্ধনে আবদ্ধ, একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এই সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতার ওপর ভর করে টিকে আছে কোনো স্থানের ইকোসিস্টেম বা পরিবেশতন্ত্র। হঠাৎ সেই ইকোসিস্টেম থেকে কোনো জীবের বিলুপ্তি বা বিপন্নতার প্রভাব পড়ে আরেকটি জীবের ওপর। কোনো না কোনোভাবে ধরিত্রীর প্রতিটি জীব একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু ক্রমাগত নির্বনীকরণ ও মরুকরণের মতো অপরাধ সরাসরি জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে চলেছে। জীববৈচিত্র্য হলো ধরিত্রীর বুকে জীবনের ভিত্তি—জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি মানে আমাদের জল ও খাবার প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা। আর দিন শেষে এর পরিণাম হলো মানুষ নামের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবেরও ধরিত্রীর বুক থেকে বিলোপ ঘটা। যেখানে খাদ্য নেই, জল নেই, সেখানে জীবেরাও থাকতে পারে না। এরূপ এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের হাতছানি আমরা শুনতে পাচ্ছি। নিজেদের উন্নতির জন্য মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে আজ যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার অনিবার্য ফল আমাদের ভোগ করতে হবেই। প্রকৃতি যেমন উদার, তেমনি নিষ্ঠুরও। প্রকৃতির ক্ষতি হলে একদিন প্রকৃতি তার শোধ নেবেই নেবে। জাতিসংঘ মহাসচিব অন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘মানুষের এরূপ প্রকৃতিবিরোধী কাজ আমাদের নির্বুদ্ধিতার পরিচয়, যা আত্মহননের শামিল।’ এর ফলে আমাদের যতই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসুক, তার জন্য অনেক জীবনের মূল্য দিতে হচ্ছে, ধরিত্রীকে আমরা গভীর সংকটের মধ্যে ফেলে দিচ্ছি। ধরিত্রীর বুক থেকে কোনো জীবের হারিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য কোনো শুভ লক্ষণ নয়।
ধরিত্রীর এসব সংকটের সুস্পষ্ট প্রভাব আমরা আমাদের জীবদ্দশাতেই চোখের সামনে ঘটতে দেখছি। বিগত ৫০ বছরে পূর্বের তুলনায় আবহাওয়াঘটিত দুর্যোগ বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। প্রতি বছর ধরিত্রীর বুকে জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ মানুষ। চরম ঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, লবণাক্ততাই এর পেছনে মূল কারণ।
কে কী করল বা করল না, তা না ভেবে ব্যক্তি হিসেবেই ধরিত্রীর এসব সংকট নিরসনে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। আমরা অতিরিক্ত খাওয়া বাদ দিতে পারি, খাদ্যের অপচয় মোটেই হতে দেব না, চট করে অল্প দূরে যেতে হলেও গাড়িতে না গিয়ে হাঁটতে বা সাইকেল চালাতে পারি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করব না, জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে পারি, চুলার জ্বালানির জন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে গাছ কাটা বন্ধ করতে পারি, যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে, সেখানে গাছ লাগাতে পারি, খেতে সার ও বালাইনাশকের ব্যবহার কমাতে বা বন্ধ করতে পারি, পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার কমাতে পারি। মোদ্দাকথা হলো, ধরিত্রীকে রক্ষা করতে হলে সব ধরনের দূষণ বন্ধ করতে হবে। এর জন্য প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে বেশি দরকার সচেতনতা ও মানসিকতার পরিবর্তন।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে