ফারুক মেহেদী, ঢাকা
জিনিসপত্রের দামের উত্তাপে জ্বলতে থাকা সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট যখন চরমে, তখন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সবাইকে বড় অঙ্কের বাজেটের স্বপ্নে ভাসালেন। তিনি যখন স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার আর স্মার্ট সমাজব্যবস্থার কথা বললেন; তখনো একজন স্বল্প আয়ের নাগরিককে বাজারে গিয়ে ১৬০ টাকায় এক ডজন ডিম কিনতে দশবার ভাবতে হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী যখন দূরভবিষ্যতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ ডলার আর মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশের ঘরে রাখার আশা জাগাচ্ছেন, তখনো সীমিত আয়ের একজন ভোক্তাকে চালচুলো ঠিক রাখতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
একজন সাধারণ মানুষ যখন ১০ শতাংশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে মরিয়া, তখন অর্থমন্ত্রীর তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণার মধ্যেই জানা গেল মোবাইল ফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে অসংখ্য নিত্যপণ্য, পণ্যের কাঁচামালে শুল্ক-কর বসানো হয়েছে। পার্কে ভ্রমণ থেকে পানের জর্দা-জুস-বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যক পণ্য ও সেবায় বসছে করের খড়্গ।
সাধ আছে সক্ষমতা কম বলে বেশি ধারকর্জ আর কর-রাজস্বে ভর করে বেশি খরচের সব পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী তাঁর প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে। এ রকম একটি বাজেটের ফিরিস্তি তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির সামনে তুলে ধরেছেন।
অর্থমন্ত্রী তাঁর নিজের প্রথম বাজেটটি রীতি মেনে ঘোষণা করলেন ঠিকই; তবে কৃচ্ছ্রসাধন আর সংকটের মধ্যেও আকারে খুব একটা ছাড় দেননি। আগেরটি থেকে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বেশি খরচের পরিকল্পনা করে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে গেছেন নিজের বাজেটটি।
বড় খরচ মানেই আয়ও বেশি করতে হবে। তাই করছাড় কমিয়েছেন বহু খাতে। আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট খাতেও বিস্তার করেছেন করের জাল।
এ জন্য মানুষের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কর আরোপ করে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চান। এর মধ্যে কর রাজস্ব থেকেই নিতে চান ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বহু জায়গায় করের বিস্তার করেও তিনি খরচ সামাল দিতে পারবেন না নতুন অর্থবছরে। কারণ খরচ আর আয়ের মধ্যে তখনো ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি।
অর্থমন্ত্রী জানালেন, এই ঘাটতি মেটাতে তিনি ধার করবেন বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে। এসব ঋণ তাঁকে উচ্চসুদে নিতে হবে। বিদেশি সংস্থা থেকে নিতে চান ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা আর দেশের ভেতরের ব্যাংক থেকে নিতে চান ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর ঋণের পেছনেই সুদ বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে তাঁকে। বিদেশি ঋণের সুদে দিতে হবে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর দেশের ঋণের সুদে দিতে হবে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে হলেও ঋণ নিতে হতে পারে সরকারকে।
এ রকম পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়লে তা কীভাবে কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে ধরে রাখবেন সে কৌশলের ব্যাপারে কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম সহনীয় হয়ে আসায় যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ আর প্রতিবেশী ভারতে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ হয়েছে। অথচ একই সময়ে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি কেন, তার কারণ জানাতে পারেননি।
অর্থমন্ত্রী ধারকর্জ আর কর রাজস্ব থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে সাজানো তাঁর বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পৌনে ৭ শতাংশে নিয়ে যেতে চান। এটা করার জন্য সরকারি বিনিয়োগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)র আকার নিয়ে গেছেন ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটিতে। এর মাধ্যমে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়বে। তখনো মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি থাকবে। সেটা সামাল দিতে আগাম সুদের হার বাড়িয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার ফলে বেসরকারি খাতে এমনিতেই ঋণের প্রবাহ কম। আমদানিও কম। ফলে বেসরকারি খাতে বিদ্যমান বিনিয়োগ স্থবিরতার উন্নতি না করে কীভাবে আবার পৌনে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবেন, সেই পথনকশাও বাজেটে জানাননি অর্থমন্ত্রী।
মোটাদাগে নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী জোরেশোরে কর আদায়ের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। আইএমএফের ঋণের শর্তের প্রতিফলন ঘটেছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। সংস্থাটি বলেছিল করছাড় কমাতে হবে। সেই পথেই হেঁটেছেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে করছাড়ের কারণে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হবে। শুল্ক ও ভ্যাট খাতেও এ রকম করছাড় দিয়ে রাজস্ব ক্ষতি করছে সরকার। এটার যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। তাই বাজেটে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাটের সম্ভব সব খাতেই কিছু কিছু করে করছাড় কমিয়ে কর আরোপের কথা বলেছেন। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল এত দিন যা শূন্য শুল্কে আসত, সামনে তার জন্য ১ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এর ফলে শিল্পের যত কাঁচামাল বাড়তি শুল্ক দিয়ে আসবে, সেগুলো দিয়ে যেসব পণ্য উৎপাদিত হবে, তার ফিনিশড পর্যায়ে দাম বাড়তে পারে। এর প্রভাব সরাসরি পড়বে ভোক্তার ঘাড়ে।
অর্থমন্ত্রী বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ে ২০ লাখ টাকার বেশি আয় করলেই ৩০ শতাংশের সর্বোচ্চ কর দেওয়ার কথা বলেছেন। এর ফলে মোটামুটি মধ্য স্তরের চাকরিজীবীকেও এ করের স্তরে পড়ে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
সমবায় সমিতির ওপর আগের ১০ শতাংশের সঙ্গে বাড়তি ৫ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছে। মিষ্টি পানীয়ের কর বাড়ানো হয়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কেউ ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় করলে তাঁকে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে।
বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট আরোপের পাাশপাশি সিগারেট, জর্দা, কোমল পানীয়, আমসত্ত্ব, ফলের রস, আইসক্রিম, বৈদুতিক বাতি, ফ্রিজ-এসি, পানির ফিল্টার, সুইস-সকেট, মোটরসাইকেল, কাজুবাদামসহ বহু পণ্যে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের সিম কার্ড, ইন্টারনেট ও ফোনে এসবের প্রভাব সরাসরি পণ্যের দামে পড়ে। পণ্যে যতটুকু শুল্ক-কর বসে, দাম বাড়ে তার চেয়ে বেশি হারে। বাড়তি দামের সরাসরি প্রভাব পড়ে ভোক্তার ঘাড়ে। ব্যাংকে টাকা রাখলে বাড়তি আবগারি শুল্ক দিতে হবে। এর প্রভাব কমবেশি আমানতকারী সব গ্রাহকের ওপরই পড়বে।
এ ছাড়া, সরকারের কর আরোপে মরিয়া মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে নির্বিচারে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে। সৎ করদাতারা যেখানে কষ্টার্জিত আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হারে কর দেবেন, সেখানে অবৈধভাবে আয় করা ব্যক্তি ও কোম্পানি দেবে তার অর্ধেক কর। এটা নিয়ে সমালোচনা হলেও অর্থমন্ত্রী এর নৈতিকতার প্রশ্নে কোনো ব্যাখ্যা দেননি বাজেট বক্তৃতায়।
ভোক্তার ওপর করের চাপ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো গেলে পরোক্ষ করের ওপর চাপটা কম পড়ত। পরোক্ষ করের চাপ ভোক্তার ওপর পড়ে। যেহেতু প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো যাচ্ছে না, পরোক্ষ কর বাড়ানোর ফলে তা জিনিসপত্রের দামে গিয়ে পড়বে, যার ভুক্তভোগী ভোক্তা। এবার কর বাড়ানোর চেষ্টা কতটা সফল হবে বলা যাচ্ছে না।’
মীর নাসির আরও বলেন, আসলে ব্যয়ের কৃচ্ছ্রসাধনের দরকার ছিল। ব্যয় কমানো গেলে আয়টাও কম করলে চলত। তখন করের চাপ কম হতো। ঘাটতি মেটাতে বড় অঙ্কের ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এটা করলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটা আগের বাজেটের তুলনায় সংকোচনমুখী (কনজারভেটিভ)। ব্যয়টা আগের চেয়ে বেশি তবে আদর্শ (মোডেস্ট)। ঘাটতি আগের চেয়ে কম। সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশের ওপর ঘাটতি রাখে কিন্তু এবার সেটা ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
জায়েদি সাত্তার আরও বলেন, বাজেট মুদ্রানীতির সহায়ক হচ্ছে। যেহেতু আমরা এলডিসি উত্তরণ করব, সেহেতু আমাদের এক্সটারনাল খাতে আরও প্রতিযোগিতা-সক্ষম হতে হবে। সেখানে ঘাটতি রয়েছে। কিছু পরিবর্তন দরকার, যাতে করে আমাদের রপ্তানি আরও রোভার্স হয়। রেমিট্যান্সও আরও বেশি আসে। এ ক্ষেত্রে আমি কিছু প্রো-অ্যাকটিভ পলিসি আশা করেছিলাম, এখন পর্যন্ত দেখিনি। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেটা বোঝা যাবে।
জিনিসপত্রের দামের উত্তাপে জ্বলতে থাকা সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট যখন চরমে, তখন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সবাইকে বড় অঙ্কের বাজেটের স্বপ্নে ভাসালেন। তিনি যখন স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার আর স্মার্ট সমাজব্যবস্থার কথা বললেন; তখনো একজন স্বল্প আয়ের নাগরিককে বাজারে গিয়ে ১৬০ টাকায় এক ডজন ডিম কিনতে দশবার ভাবতে হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী যখন দূরভবিষ্যতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ ডলার আর মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশের ঘরে রাখার আশা জাগাচ্ছেন, তখনো সীমিত আয়ের একজন ভোক্তাকে চালচুলো ঠিক রাখতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
একজন সাধারণ মানুষ যখন ১০ শতাংশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে মরিয়া, তখন অর্থমন্ত্রীর তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণার মধ্যেই জানা গেল মোবাইল ফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে অসংখ্য নিত্যপণ্য, পণ্যের কাঁচামালে শুল্ক-কর বসানো হয়েছে। পার্কে ভ্রমণ থেকে পানের জর্দা-জুস-বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যক পণ্য ও সেবায় বসছে করের খড়্গ।
সাধ আছে সক্ষমতা কম বলে বেশি ধারকর্জ আর কর-রাজস্বে ভর করে বেশি খরচের সব পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী তাঁর প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে। এ রকম একটি বাজেটের ফিরিস্তি তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির সামনে তুলে ধরেছেন।
অর্থমন্ত্রী তাঁর নিজের প্রথম বাজেটটি রীতি মেনে ঘোষণা করলেন ঠিকই; তবে কৃচ্ছ্রসাধন আর সংকটের মধ্যেও আকারে খুব একটা ছাড় দেননি। আগেরটি থেকে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বেশি খরচের পরিকল্পনা করে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে গেছেন নিজের বাজেটটি।
বড় খরচ মানেই আয়ও বেশি করতে হবে। তাই করছাড় কমিয়েছেন বহু খাতে। আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট খাতেও বিস্তার করেছেন করের জাল।
এ জন্য মানুষের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কর আরোপ করে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চান। এর মধ্যে কর রাজস্ব থেকেই নিতে চান ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বহু জায়গায় করের বিস্তার করেও তিনি খরচ সামাল দিতে পারবেন না নতুন অর্থবছরে। কারণ খরচ আর আয়ের মধ্যে তখনো ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি।
অর্থমন্ত্রী জানালেন, এই ঘাটতি মেটাতে তিনি ধার করবেন বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে। এসব ঋণ তাঁকে উচ্চসুদে নিতে হবে। বিদেশি সংস্থা থেকে নিতে চান ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা আর দেশের ভেতরের ব্যাংক থেকে নিতে চান ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর ঋণের পেছনেই সুদ বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে তাঁকে। বিদেশি ঋণের সুদে দিতে হবে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর দেশের ঋণের সুদে দিতে হবে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে হলেও ঋণ নিতে হতে পারে সরকারকে।
এ রকম পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়লে তা কীভাবে কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে ধরে রাখবেন সে কৌশলের ব্যাপারে কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম সহনীয় হয়ে আসায় যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ আর প্রতিবেশী ভারতে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ হয়েছে। অথচ একই সময়ে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি কেন, তার কারণ জানাতে পারেননি।
অর্থমন্ত্রী ধারকর্জ আর কর রাজস্ব থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে সাজানো তাঁর বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পৌনে ৭ শতাংশে নিয়ে যেতে চান। এটা করার জন্য সরকারি বিনিয়োগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)র আকার নিয়ে গেছেন ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটিতে। এর মাধ্যমে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়বে। তখনো মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি থাকবে। সেটা সামাল দিতে আগাম সুদের হার বাড়িয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার ফলে বেসরকারি খাতে এমনিতেই ঋণের প্রবাহ কম। আমদানিও কম। ফলে বেসরকারি খাতে বিদ্যমান বিনিয়োগ স্থবিরতার উন্নতি না করে কীভাবে আবার পৌনে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবেন, সেই পথনকশাও বাজেটে জানাননি অর্থমন্ত্রী।
মোটাদাগে নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী জোরেশোরে কর আদায়ের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। আইএমএফের ঋণের শর্তের প্রতিফলন ঘটেছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। সংস্থাটি বলেছিল করছাড় কমাতে হবে। সেই পথেই হেঁটেছেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে করছাড়ের কারণে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হবে। শুল্ক ও ভ্যাট খাতেও এ রকম করছাড় দিয়ে রাজস্ব ক্ষতি করছে সরকার। এটার যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। তাই বাজেটে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাটের সম্ভব সব খাতেই কিছু কিছু করে করছাড় কমিয়ে কর আরোপের কথা বলেছেন। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল এত দিন যা শূন্য শুল্কে আসত, সামনে তার জন্য ১ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এর ফলে শিল্পের যত কাঁচামাল বাড়তি শুল্ক দিয়ে আসবে, সেগুলো দিয়ে যেসব পণ্য উৎপাদিত হবে, তার ফিনিশড পর্যায়ে দাম বাড়তে পারে। এর প্রভাব সরাসরি পড়বে ভোক্তার ঘাড়ে।
অর্থমন্ত্রী বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ে ২০ লাখ টাকার বেশি আয় করলেই ৩০ শতাংশের সর্বোচ্চ কর দেওয়ার কথা বলেছেন। এর ফলে মোটামুটি মধ্য স্তরের চাকরিজীবীকেও এ করের স্তরে পড়ে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
সমবায় সমিতির ওপর আগের ১০ শতাংশের সঙ্গে বাড়তি ৫ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছে। মিষ্টি পানীয়ের কর বাড়ানো হয়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কেউ ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় করলে তাঁকে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে।
বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট আরোপের পাাশপাশি সিগারেট, জর্দা, কোমল পানীয়, আমসত্ত্ব, ফলের রস, আইসক্রিম, বৈদুতিক বাতি, ফ্রিজ-এসি, পানির ফিল্টার, সুইস-সকেট, মোটরসাইকেল, কাজুবাদামসহ বহু পণ্যে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের সিম কার্ড, ইন্টারনেট ও ফোনে এসবের প্রভাব সরাসরি পণ্যের দামে পড়ে। পণ্যে যতটুকু শুল্ক-কর বসে, দাম বাড়ে তার চেয়ে বেশি হারে। বাড়তি দামের সরাসরি প্রভাব পড়ে ভোক্তার ঘাড়ে। ব্যাংকে টাকা রাখলে বাড়তি আবগারি শুল্ক দিতে হবে। এর প্রভাব কমবেশি আমানতকারী সব গ্রাহকের ওপরই পড়বে।
এ ছাড়া, সরকারের কর আরোপে মরিয়া মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে নির্বিচারে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে। সৎ করদাতারা যেখানে কষ্টার্জিত আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হারে কর দেবেন, সেখানে অবৈধভাবে আয় করা ব্যক্তি ও কোম্পানি দেবে তার অর্ধেক কর। এটা নিয়ে সমালোচনা হলেও অর্থমন্ত্রী এর নৈতিকতার প্রশ্নে কোনো ব্যাখ্যা দেননি বাজেট বক্তৃতায়।
ভোক্তার ওপর করের চাপ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো গেলে পরোক্ষ করের ওপর চাপটা কম পড়ত। পরোক্ষ করের চাপ ভোক্তার ওপর পড়ে। যেহেতু প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো যাচ্ছে না, পরোক্ষ কর বাড়ানোর ফলে তা জিনিসপত্রের দামে গিয়ে পড়বে, যার ভুক্তভোগী ভোক্তা। এবার কর বাড়ানোর চেষ্টা কতটা সফল হবে বলা যাচ্ছে না।’
মীর নাসির আরও বলেন, আসলে ব্যয়ের কৃচ্ছ্রসাধনের দরকার ছিল। ব্যয় কমানো গেলে আয়টাও কম করলে চলত। তখন করের চাপ কম হতো। ঘাটতি মেটাতে বড় অঙ্কের ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এটা করলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটা আগের বাজেটের তুলনায় সংকোচনমুখী (কনজারভেটিভ)। ব্যয়টা আগের চেয়ে বেশি তবে আদর্শ (মোডেস্ট)। ঘাটতি আগের চেয়ে কম। সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশের ওপর ঘাটতি রাখে কিন্তু এবার সেটা ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
জায়েদি সাত্তার আরও বলেন, বাজেট মুদ্রানীতির সহায়ক হচ্ছে। যেহেতু আমরা এলডিসি উত্তরণ করব, সেহেতু আমাদের এক্সটারনাল খাতে আরও প্রতিযোগিতা-সক্ষম হতে হবে। সেখানে ঘাটতি রয়েছে। কিছু পরিবর্তন দরকার, যাতে করে আমাদের রপ্তানি আরও রোভার্স হয়। রেমিট্যান্সও আরও বেশি আসে। এ ক্ষেত্রে আমি কিছু প্রো-অ্যাকটিভ পলিসি আশা করেছিলাম, এখন পর্যন্ত দেখিনি। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেটা বোঝা যাবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে