আজকের পত্রিকা: আমরা ভাবতাম, একটা গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি। আসলে কি কখনো আমাদের দেশ গণতন্ত্র দ্বারা শাসিত হয়েছে?
আলতাফ পারভেজ: গণতন্ত্র কোনো একটি উপাদান দিয়ে গঠিত নয়। এর কোনো ধরাবাঁধা পরিসরও নেই। সমাজ ও রাষ্ট্রে কী কী উপাদান থাকলে তাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক সমাজ বলা হবে, তার সীমারেখা বেশ বড়। তবে নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের ন্যূনতম কিছু উপাদান বা সূচক আছে। বিশ্বজুড়ে সেই ন্যূনতম সাধারণ উপাদানগুলো দিয়েই বিভিন্ন জনপদের গণতান্ত্রিক অবস্থা পরিমাপ করা হয়।যেমন কোথাও বিভিন্ন আদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ আছে কি না, সংবাদপত্রে সংবাদ ছাপানো ও মতামত প্রকাশের ভয়হীন পরিবেশ আছে কি না, মানুষ শাসকদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে নির্বিঘ্নে বাসাবাড়িতে থাকতে পারে কি না, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ হতে পারে কি না ইত্যাদি হলো গণতন্ত্রের ন্যূনতম বিষয়। আমাদের দেশে এসব ছিল না, এমন নয়। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তো আমরা দেখেছি এ দেশে। ডিজিটাল অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইনের আগে, সন্ত্রাস দমন আইনের আগে, বিশেষ ক্ষমতা আইনের আগে নিশ্চয়ই এখনকার মতো পরিবেশ ছিল না। অন্তত আমার কথা বলতে পারি, জীবনের শুরুতে এমন অনেক ঐতিহাসিক বিষয়-আশয়ে লিখেছি, গবেষণা করেছি, এখন আর সে রকম লেখার কাজ করার সাহস পাই না। সাহসের এই ঘাটতি তো পরিবেশ-সৃষ্ট। লেখক স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করে না।
আজকের পত্রিকা: জাতি আজ দুদিকে বিভক্ত হয়ে গেছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে গ্রাহ্যই করে না। সহিংস হয়ে উঠেছে। এর প্রতিকার কী?
আলতাফ পারভেজ: জাতি দুই ভাগ হয়ে গেছে কথাটা সত্য। তবে কীভাবে দুই ভাগ হলো এবং সেই দুই ভাগে কারা কারা আছে, সেটা দেখার বিষয় হলো গুরুত্বপূর্ণ; অর্থাৎ ভাগের মানদণ্ডটা হলো গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন আমরা যদি শেয়ারবাজারকে একটা মানদণ্ড ধরি, তাহলে যারা শেয়ারবাজার থেকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে এবং যারা সেখানে সর্বস্ব খুইয়েছে, এরা দুই ভাগে পড়ে যাওয়া মানুষ। এখন কেউ যদি বলে এই দুই ভাগের মানুষই তো বাঙালি—তাদের মিলেমিশে শান্তিতে থাকা উচিত, তাহলে সেটা কিন্তু বাজার লুণ্ঠনকারীদের পক্ষে যাবে।
পুরো অর্থনীতি মিলিয়ে এ রকম মোটাদাগের দুটি শ্রেণি আছে এখন। একদল নির্বিঘ্নে টাকা পাচার করতে পারছে, সিন্ডিকেট বানিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে, সামান্য বেতনের চাকরি করেও হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারছে, আরেক দল অসহায়ের মতো সেসবের দর্শক-শ্রোতা হয়ে আছে।
আবার উপরিকাঠামোর রাজনীতি যদি দেখি, সেখানেও অবশ্যই দুটি পক্ষ আছে। তাদের মাঝে যে দ্বন্দ্ব ও বৈরিতা দেখছি, তার কারণ সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী ব্যবস্থার সংকট। কোনো দেশের সমাজে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যদি দেখে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা থাকে, শান্তিতে মতামত ব্যক্ত করা যাচ্ছে, তাহলেই কেবল স্বাস্থ্যকর একটা রাজনৈতিক পরিবেশ আশা করা যায় সেখানে। কোনো সমাজই অহেতুক সহিংস হয়ে ওঠে না। সহিংসতার কারণ না খুঁজে শান্তিবাদী হয়ে ওঠাও একটা বোকা বোকা ব্যাপার। সমাজে সহিংসতার কারণ দূর না করে আহাজারি করে আমরা ইতিবাচক কোথাও পৌঁছাতে পারব না।
আজকের পত্রিকা: সাধারণ মানুষের মধ্যেও যে ধৈর্যহীনতা, অসহিষ্ণুতা এসেছে, কিছু একটা হলেই হাতাহাতি, মারামারি হচ্ছে, এর থেকে কীভাবে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব?
আলতাফ পারভেজ: বাংলাদেশের মানুষকে আমার অতিরিক্ত সহিষ্ণু এবং ধৈর্যশীল মনে হয়। এত ধনবৈষম্য, এত নাগরিক অধিকারহীন, এতটা মানবিক মর্যাদাহীন, এতটা অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারশূন্য একটা সমাজে মানুষ যে এত শান্তিবাদী হয়ে থাকছে দশকের পর দশক, সেটাই বরং খুব অস্বাভাবিক। এখানে দশকওয়ারি হানাহানির পরিসংখ্যানও খুব নগণ্য। আমি এমন অনেক জেলা-উপজেলার কথা জানি, যেখানে নাগরিক পরিবহনব্যবস্থা নেই, স্বাস্থ্যব্যবস্থা দুর্বল, লাখ লাখ তরুণ-তরুণী বেকার, লাখ লাখ মানুষ ভূমিহীন অথচ সমাজ প্রায় শান্ত। তারা এসব বিষয়ে কথা বলতেও ভুলে গেছে। এখানে কোটি কোটি তরুণ-তরুণী জানে না তাদের পেশাগত ভবিষ্যৎ কী—অথচ তারা এ নিয়ে তেমন সোচ্চারও নয়। ভোটের সময় এসব কোনো ইস্যুও হয় না। কোটি কোটি মানুষের এ রকম দাসোচিত জীবন সমাজবিজ্ঞানের দিক থেকে খুবই বিস্ময়কর, অস্বাভাবিক এবং অসুস্থতার লক্ষণও বটে।
আজকের পত্রিকা: আমাদের মনন গঠনে সাম্প্রদায়িকতা এসেছে। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় অসাম্প্রদায়িকতার দীক্ষা নিয়েছিল জনগণ। এই বাঁকবদলের কারণ কী?
আলতাফ পারভেজ: ধর্মভিত্তিক হানাহানির অর্থে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা খুবই অনুল্লেখ্য। আশপাশের দেশ মিয়ানমার, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশে যেভাবে অপর ধর্ম পদ্ধতিগত সহিংসতার শিকার হয়, বাংলাদেশে অন্তত তেমন মোটাদাগে কিছু দেখি না। তবে এখানে মনস্তাত্ত্বিক ধর্মীয় বিদ্বেষ আছে। এর কারণ হলো, স্বাধীনতার পর থেকে যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে, সেই দল নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধর্মকে ব্যবহার করেছে। শাসকেরা চায় এখানে ধর্মচর্চা বাড়ুক। এই শাসকেরা কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে, কখনো আবার সংখ্যালঘুকে আপন স্বার্থে রাজনৈতিক-প্রশাসনিকভাবে ব্যবহার করেছে। ফলে সমাজে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আবার আমাদের এখানে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ তৈরির পেছনে ভারতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পরোক্ষে গভীর প্রভাব রেখেছে। সেখানে আরএসএস-বিজেপির উত্থান দেখে সবাই এখন মনে করছে, ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজে প্রভাবশালী হওয়া যায়, ভোটের রাজনীতিতেও সফল হওয়া যায়। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা সবল থাকলে আমাদের এখানেও সাম্প্রদায়িকতার আবেদন কমে যেত।
আজকের পত্রিকা: বামপন্থী আন্দোলন কেন দেশের জনগণের সমর্থন পেল না?
আলতাফ পারভেজ: ‘সফলতা’কে আমরা আসলে কীভাবে মাপব? ক্ষমতায় থাকার অর্থে? নাকি সমাজের ইতিবাচক বিকাশের অর্থে? আমাদের এখানে বামপন্থীরা কোনোকালে ক্ষমতায় ছিল না। ছিল ডানপন্থী-মধ্যপন্থীরাই। আপনার ওপরের প্রশ্নেই রয়েছে, এই ডান ও মধ্যপন্থীদের ৫০-৫৫ বছরের শাসনে সমাজে শান্তি নেই, হিংসা ও বৈরিতায় ছেয়ে গেছে সমাজ। তাহলে তাদের কি আমরা সফল বলব? তবে ‘ক্ষমতা’য় থাকাও নিশ্চয়ই কোনো এক মানদণ্ডে সফলতাই বটে। এই মানদণ্ডে বামেরা ব্যর্থ। ডানেরা সফল।
বামেরা যে ক্ষমতায় যেতে পারেনি তার কারণ, তাদের প্রধান একাংশ মূলত ডানদের লেজুড়বৃত্তি করেছে। ডানদের করুণা ভিক্ষা করে ক্ষমতার হিস্যা পেতে চেয়েছে। অনেক বামপন্থী দল ডানদের নির্বাচনী প্রতীকে নির্বাচন করে। খুবই করুণ ব্যাপার।
আবার অনেক বামপন্থী দল ডানদের সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনী আঁতাত না করেও একধরনের ছদ্ম মিত্রের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে নমনীয় বিরোধিতার আড়ালে। সাধারণ মানুষের কাছে এসব ভঙ্গি খুবই পরিষ্কার। ফলে মানুষ কখনো এ রকম কোনো ধারাকে সবল এবং ক্ষমতার উপযুক্ত ভাবেনি। তরুণদের কাছে এদের ব্যবহারিক ভূমিকার কারণে প্রকৃত বামপন্থী আদর্শ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এ রকম দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সুযোগ আসবে বলে মনে হয় না।
আজকের পত্রিকা: এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
আলতাফ পারভেজ: বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল সংস্কার দরকার। প্রশ্ন হলো, সেই সংস্কার কে করবে? সে রকম কোনো সবল রাজনৈতিক শক্তি এখানে হাজির নেই। হাজির হলেও তাদের ব্যাপক বাধার মুখে পড়তে হবে। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রযন্ত্র এবং তার সহায়ক রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখানে সংস্কার উদ্যোগকে বাধা দেবে। সেই বাধা অতিক্রমের মতো রাজনীতি গড়ে না ওঠা পর্যন্ত এখানে চলতি অবস্থাই চলতে থাকবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
আলতাফ পারভেজ: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: আমরা ভাবতাম, একটা গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি। আসলে কি কখনো আমাদের দেশ গণতন্ত্র দ্বারা শাসিত হয়েছে?
আলতাফ পারভেজ: গণতন্ত্র কোনো একটি উপাদান দিয়ে গঠিত নয়। এর কোনো ধরাবাঁধা পরিসরও নেই। সমাজ ও রাষ্ট্রে কী কী উপাদান থাকলে তাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক সমাজ বলা হবে, তার সীমারেখা বেশ বড়। তবে নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের ন্যূনতম কিছু উপাদান বা সূচক আছে। বিশ্বজুড়ে সেই ন্যূনতম সাধারণ উপাদানগুলো দিয়েই বিভিন্ন জনপদের গণতান্ত্রিক অবস্থা পরিমাপ করা হয়।যেমন কোথাও বিভিন্ন আদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ আছে কি না, সংবাদপত্রে সংবাদ ছাপানো ও মতামত প্রকাশের ভয়হীন পরিবেশ আছে কি না, মানুষ শাসকদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে নির্বিঘ্নে বাসাবাড়িতে থাকতে পারে কি না, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ হতে পারে কি না ইত্যাদি হলো গণতন্ত্রের ন্যূনতম বিষয়। আমাদের দেশে এসব ছিল না, এমন নয়। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তো আমরা দেখেছি এ দেশে। ডিজিটাল অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইনের আগে, সন্ত্রাস দমন আইনের আগে, বিশেষ ক্ষমতা আইনের আগে নিশ্চয়ই এখনকার মতো পরিবেশ ছিল না। অন্তত আমার কথা বলতে পারি, জীবনের শুরুতে এমন অনেক ঐতিহাসিক বিষয়-আশয়ে লিখেছি, গবেষণা করেছি, এখন আর সে রকম লেখার কাজ করার সাহস পাই না। সাহসের এই ঘাটতি তো পরিবেশ-সৃষ্ট। লেখক স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করে না।
আজকের পত্রিকা: জাতি আজ দুদিকে বিভক্ত হয়ে গেছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে গ্রাহ্যই করে না। সহিংস হয়ে উঠেছে। এর প্রতিকার কী?
আলতাফ পারভেজ: জাতি দুই ভাগ হয়ে গেছে কথাটা সত্য। তবে কীভাবে দুই ভাগ হলো এবং সেই দুই ভাগে কারা কারা আছে, সেটা দেখার বিষয় হলো গুরুত্বপূর্ণ; অর্থাৎ ভাগের মানদণ্ডটা হলো গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন আমরা যদি শেয়ারবাজারকে একটা মানদণ্ড ধরি, তাহলে যারা শেয়ারবাজার থেকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে এবং যারা সেখানে সর্বস্ব খুইয়েছে, এরা দুই ভাগে পড়ে যাওয়া মানুষ। এখন কেউ যদি বলে এই দুই ভাগের মানুষই তো বাঙালি—তাদের মিলেমিশে শান্তিতে থাকা উচিত, তাহলে সেটা কিন্তু বাজার লুণ্ঠনকারীদের পক্ষে যাবে।
পুরো অর্থনীতি মিলিয়ে এ রকম মোটাদাগের দুটি শ্রেণি আছে এখন। একদল নির্বিঘ্নে টাকা পাচার করতে পারছে, সিন্ডিকেট বানিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে, সামান্য বেতনের চাকরি করেও হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারছে, আরেক দল অসহায়ের মতো সেসবের দর্শক-শ্রোতা হয়ে আছে।
আবার উপরিকাঠামোর রাজনীতি যদি দেখি, সেখানেও অবশ্যই দুটি পক্ষ আছে। তাদের মাঝে যে দ্বন্দ্ব ও বৈরিতা দেখছি, তার কারণ সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী ব্যবস্থার সংকট। কোনো দেশের সমাজে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যদি দেখে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা থাকে, শান্তিতে মতামত ব্যক্ত করা যাচ্ছে, তাহলেই কেবল স্বাস্থ্যকর একটা রাজনৈতিক পরিবেশ আশা করা যায় সেখানে। কোনো সমাজই অহেতুক সহিংস হয়ে ওঠে না। সহিংসতার কারণ না খুঁজে শান্তিবাদী হয়ে ওঠাও একটা বোকা বোকা ব্যাপার। সমাজে সহিংসতার কারণ দূর না করে আহাজারি করে আমরা ইতিবাচক কোথাও পৌঁছাতে পারব না।
আজকের পত্রিকা: সাধারণ মানুষের মধ্যেও যে ধৈর্যহীনতা, অসহিষ্ণুতা এসেছে, কিছু একটা হলেই হাতাহাতি, মারামারি হচ্ছে, এর থেকে কীভাবে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব?
আলতাফ পারভেজ: বাংলাদেশের মানুষকে আমার অতিরিক্ত সহিষ্ণু এবং ধৈর্যশীল মনে হয়। এত ধনবৈষম্য, এত নাগরিক অধিকারহীন, এতটা মানবিক মর্যাদাহীন, এতটা অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারশূন্য একটা সমাজে মানুষ যে এত শান্তিবাদী হয়ে থাকছে দশকের পর দশক, সেটাই বরং খুব অস্বাভাবিক। এখানে দশকওয়ারি হানাহানির পরিসংখ্যানও খুব নগণ্য। আমি এমন অনেক জেলা-উপজেলার কথা জানি, যেখানে নাগরিক পরিবহনব্যবস্থা নেই, স্বাস্থ্যব্যবস্থা দুর্বল, লাখ লাখ তরুণ-তরুণী বেকার, লাখ লাখ মানুষ ভূমিহীন অথচ সমাজ প্রায় শান্ত। তারা এসব বিষয়ে কথা বলতেও ভুলে গেছে। এখানে কোটি কোটি তরুণ-তরুণী জানে না তাদের পেশাগত ভবিষ্যৎ কী—অথচ তারা এ নিয়ে তেমন সোচ্চারও নয়। ভোটের সময় এসব কোনো ইস্যুও হয় না। কোটি কোটি মানুষের এ রকম দাসোচিত জীবন সমাজবিজ্ঞানের দিক থেকে খুবই বিস্ময়কর, অস্বাভাবিক এবং অসুস্থতার লক্ষণও বটে।
আজকের পত্রিকা: আমাদের মনন গঠনে সাম্প্রদায়িকতা এসেছে। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় অসাম্প্রদায়িকতার দীক্ষা নিয়েছিল জনগণ। এই বাঁকবদলের কারণ কী?
আলতাফ পারভেজ: ধর্মভিত্তিক হানাহানির অর্থে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা খুবই অনুল্লেখ্য। আশপাশের দেশ মিয়ানমার, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশে যেভাবে অপর ধর্ম পদ্ধতিগত সহিংসতার শিকার হয়, বাংলাদেশে অন্তত তেমন মোটাদাগে কিছু দেখি না। তবে এখানে মনস্তাত্ত্বিক ধর্মীয় বিদ্বেষ আছে। এর কারণ হলো, স্বাধীনতার পর থেকে যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে, সেই দল নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধর্মকে ব্যবহার করেছে। শাসকেরা চায় এখানে ধর্মচর্চা বাড়ুক। এই শাসকেরা কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে, কখনো আবার সংখ্যালঘুকে আপন স্বার্থে রাজনৈতিক-প্রশাসনিকভাবে ব্যবহার করেছে। ফলে সমাজে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আবার আমাদের এখানে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ তৈরির পেছনে ভারতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পরোক্ষে গভীর প্রভাব রেখেছে। সেখানে আরএসএস-বিজেপির উত্থান দেখে সবাই এখন মনে করছে, ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজে প্রভাবশালী হওয়া যায়, ভোটের রাজনীতিতেও সফল হওয়া যায়। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা সবল থাকলে আমাদের এখানেও সাম্প্রদায়িকতার আবেদন কমে যেত।
আজকের পত্রিকা: বামপন্থী আন্দোলন কেন দেশের জনগণের সমর্থন পেল না?
আলতাফ পারভেজ: ‘সফলতা’কে আমরা আসলে কীভাবে মাপব? ক্ষমতায় থাকার অর্থে? নাকি সমাজের ইতিবাচক বিকাশের অর্থে? আমাদের এখানে বামপন্থীরা কোনোকালে ক্ষমতায় ছিল না। ছিল ডানপন্থী-মধ্যপন্থীরাই। আপনার ওপরের প্রশ্নেই রয়েছে, এই ডান ও মধ্যপন্থীদের ৫০-৫৫ বছরের শাসনে সমাজে শান্তি নেই, হিংসা ও বৈরিতায় ছেয়ে গেছে সমাজ। তাহলে তাদের কি আমরা সফল বলব? তবে ‘ক্ষমতা’য় থাকাও নিশ্চয়ই কোনো এক মানদণ্ডে সফলতাই বটে। এই মানদণ্ডে বামেরা ব্যর্থ। ডানেরা সফল।
বামেরা যে ক্ষমতায় যেতে পারেনি তার কারণ, তাদের প্রধান একাংশ মূলত ডানদের লেজুড়বৃত্তি করেছে। ডানদের করুণা ভিক্ষা করে ক্ষমতার হিস্যা পেতে চেয়েছে। অনেক বামপন্থী দল ডানদের নির্বাচনী প্রতীকে নির্বাচন করে। খুবই করুণ ব্যাপার।
আবার অনেক বামপন্থী দল ডানদের সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনী আঁতাত না করেও একধরনের ছদ্ম মিত্রের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে নমনীয় বিরোধিতার আড়ালে। সাধারণ মানুষের কাছে এসব ভঙ্গি খুবই পরিষ্কার। ফলে মানুষ কখনো এ রকম কোনো ধারাকে সবল এবং ক্ষমতার উপযুক্ত ভাবেনি। তরুণদের কাছে এদের ব্যবহারিক ভূমিকার কারণে প্রকৃত বামপন্থী আদর্শ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এ রকম দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সুযোগ আসবে বলে মনে হয় না।
আজকের পত্রিকা: এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
আলতাফ পারভেজ: বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল সংস্কার দরকার। প্রশ্ন হলো, সেই সংস্কার কে করবে? সে রকম কোনো সবল রাজনৈতিক শক্তি এখানে হাজির নেই। হাজির হলেও তাদের ব্যাপক বাধার মুখে পড়তে হবে। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রযন্ত্র এবং তার সহায়ক রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখানে সংস্কার উদ্যোগকে বাধা দেবে। সেই বাধা অতিক্রমের মতো রাজনীতি গড়ে না ওঠা পর্যন্ত এখানে চলতি অবস্থাই চলতে থাকবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
আলতাফ পারভেজ: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে