জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
উর্দু আসার আগে এই অঞ্চলে আরবি ও ফারসি ছিল দামি ভাষা। মুসলিম শাসনামলে ভালো রাজচাকরি পাওয়ার জন্য ফারসি জানা খুব জরুরি ছিল। ভাষাটি রপ্ত করতে মুসলমানরা যতটা চেষ্টা করেছে, হিন্দুরাও ততটা বা তার চেয়ে বেশি চেষ্টা করেছে। ফলে রাষ্ট্রের চাকরিগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সেই আমলেও এগিয়ে ছিল।
মধ্যযুগে মুসলমান শাসকদের আমলে মুসলমানদের অবস্থা ভালো ছিল আর ইংরেজরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা মুসলমানদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই মুসলমানরা পিছিয়ে পড়েছে, এটা ভুল ধারণা। মধ্যযুগেও গরিব মুসলমানদের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। মুসলিম শাসকেরা কৃষকের মুখ চেয়ে নতুন উৎপাদনব্যবস্থা চালু করেননি। কৃষি বা শিল্পে এমন কোনো অবদান রাখেননি, যাতে সাধারণ গরিব মানুষের মুখে হাসি ফোটে। সামন্ততান্ত্রিক জীবনব্যবস্থায় প্রজার কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা আর বিলাসিতায় গা ভাসানোর প্রবণতা ছিল। শাসকদের ছত্রচ্ছায়ায় যে অভিজাতশ্রেণি গড়ে উঠেছিল, তারাও সাধারণ মানুষকে শোষণ করে আয়েশী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এই অভিজাতশ্রেণির মধ্যে মুসলমানরা যেমন ছিল, তেমনি হিন্দুরাও। এবং খুবই তাৎপর্যময় তথ্য হলো, মুসলিম শাসনের শেষের দিকে মুসলিম অভিজাতদের তুলনায় হিন্দু অভিজাত পরিবারের সংখ্যা বেশি ছিল।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরও সাধারণ মুসলমানদের জীবনযাত্রা বদলে যায়নি। আগে যে কাজ করতেন তাঁরা, সে কাজই করতেন ধর্ম পরিবর্তন করার পরও। সে সময় সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। রাজপরিবারের সন্তানদের ছিল গৃহশিক্ষক। ধনী ব্যক্তিরাও সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখতেন। পাঠশালায় বাংলা পড়ানো হতো। কিন্তু সেখানে মূলত হিন্দুরাই যেত। কারণ, পাঠশালার বইয়ে হিন্দু পুরাণের কথা স্থান পেত। কেন মুসলমানের সন্তানেরা সেগুলো পড়বে? তা ছাড়া বাংলা শিখে তো রাজকার্য পাওয়া যাবে না। কেন মিছেমিছি বাংলা পড়বে তারা?
টোল আর চতুষ্পাঠী ছিল হিন্দু শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার জায়গা। এই দুই বিদ্যায়তনে শিক্ষা দেওয়া হতো সংস্কৃতের মাধ্যমে। মুসলমানদের জন্য ছিল মক্তব আর মাদ্রাসা। সেখানে ভাষা ছিল আরবি আর ফারসি।
যদি মক্তব-মাদ্রাসায় আরবি আর ফারসি পড়ানো হয়, তাহলে বাংলার মুসলমানের সন্তানদেরই তো বেশি বেশি রাজকার্যে নিয়োগ পাওয়ার কথা! এখানে দুটো বিষয়ে জানানো দরকার। মক্তব-মাদ্রাসায় যে আরবি আর ফারসি পড়ানো হতো, তা ছিল অনেকটা মুখস্থবিদ্যার মতো। ঠিকভাবে শেখা হতো না। রাজকার্য পেতে হলে ফারসি জানতে হবে। তাই হিন্দুদের শিক্ষার জন্য আলাদা ‘পার্সি’ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যেখানে পার্সি স্কুল ছিল না, সেখানে হিন্দু সন্তানেরা মাদ্রাসায়ও যেত ফারসি শেখার জন্য। নবাবি আমলে মুসলমানদের তুলনায় ফারসি জানা হিন্দুরা রাজকার্যে বেশি যোগ দিত।
কোম্পানি শাসনামলে লর্ড বেন্টিংকের সময় থেকে নথি হাজির করা যাক। তাঁর শাসনামলে উইলিয়াম অ্যাডাম বাংলা ও বিহারের ‘স্বদেশী শিক্ষাব্যবস্থা’ সম্পর্কে তিনটি রিপোর্ট (১৮৩৫-১৮৩৮) পেশ করেছিলেন। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদ জেলায় বাংলা স্কুলে মোট ১ হাজার ৮০ জন ছাত্রের মধ্যে হিন্দু ছাত্রের সংখ্যা ৯৯৮, মুসলিম ছাত্র ছিল ৮২ জন। আর আরবি ফারসি স্কুলে ছাত্রদের অবস্থান? ১০৯ জন ছাত্রের মধ্যে ৬২ জন হিন্দু এবং ৪৭ জন মুসলমান। বলাই যায়, বাংলা শিক্ষায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান সম্প্রদায়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে তো ছিলই, এমনকি আরবি ফারসিতেও তারা মুসলমানদের থেকে এগিয়ে ছিল।
তাহলে বলাই যায়, রাজভাষা শিক্ষায় হিন্দুরা মুসলমানদের চেয়ে এগিয়ে থাকায় রাজকার্যেও তারা ছিল এগিয়ে। বলা যায়, পলাশী যুদ্ধের কিছুকাল আগে থেকে বাংলার জমিদারি, রাজস্ব বিভাগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং মহাজনি কারবারে হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল। শুধু বিচার বিভাগ আর সামরিক বিভাগে মুসলমানরা এগিয়ে ছিল। কোম্পানি শাসনের সময় কীভাবে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়েছে, সে বিষয়ে কথা বললেই বোঝা যাবে মুসলমানদের উর্দুপ্রীতির কারণ। কোম্পানির কর্মকর্তারা কীভাবে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জন্ম দিল, সেটাই হবে পরবর্তী আলোচনার বিষয়।
উর্দু আসার আগে এই অঞ্চলে আরবি ও ফারসি ছিল দামি ভাষা। মুসলিম শাসনামলে ভালো রাজচাকরি পাওয়ার জন্য ফারসি জানা খুব জরুরি ছিল। ভাষাটি রপ্ত করতে মুসলমানরা যতটা চেষ্টা করেছে, হিন্দুরাও ততটা বা তার চেয়ে বেশি চেষ্টা করেছে। ফলে রাষ্ট্রের চাকরিগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সেই আমলেও এগিয়ে ছিল।
মধ্যযুগে মুসলমান শাসকদের আমলে মুসলমানদের অবস্থা ভালো ছিল আর ইংরেজরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা মুসলমানদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই মুসলমানরা পিছিয়ে পড়েছে, এটা ভুল ধারণা। মধ্যযুগেও গরিব মুসলমানদের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। মুসলিম শাসকেরা কৃষকের মুখ চেয়ে নতুন উৎপাদনব্যবস্থা চালু করেননি। কৃষি বা শিল্পে এমন কোনো অবদান রাখেননি, যাতে সাধারণ গরিব মানুষের মুখে হাসি ফোটে। সামন্ততান্ত্রিক জীবনব্যবস্থায় প্রজার কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা আর বিলাসিতায় গা ভাসানোর প্রবণতা ছিল। শাসকদের ছত্রচ্ছায়ায় যে অভিজাতশ্রেণি গড়ে উঠেছিল, তারাও সাধারণ মানুষকে শোষণ করে আয়েশী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এই অভিজাতশ্রেণির মধ্যে মুসলমানরা যেমন ছিল, তেমনি হিন্দুরাও। এবং খুবই তাৎপর্যময় তথ্য হলো, মুসলিম শাসনের শেষের দিকে মুসলিম অভিজাতদের তুলনায় হিন্দু অভিজাত পরিবারের সংখ্যা বেশি ছিল।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরও সাধারণ মুসলমানদের জীবনযাত্রা বদলে যায়নি। আগে যে কাজ করতেন তাঁরা, সে কাজই করতেন ধর্ম পরিবর্তন করার পরও। সে সময় সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। রাজপরিবারের সন্তানদের ছিল গৃহশিক্ষক। ধনী ব্যক্তিরাও সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখতেন। পাঠশালায় বাংলা পড়ানো হতো। কিন্তু সেখানে মূলত হিন্দুরাই যেত। কারণ, পাঠশালার বইয়ে হিন্দু পুরাণের কথা স্থান পেত। কেন মুসলমানের সন্তানেরা সেগুলো পড়বে? তা ছাড়া বাংলা শিখে তো রাজকার্য পাওয়া যাবে না। কেন মিছেমিছি বাংলা পড়বে তারা?
টোল আর চতুষ্পাঠী ছিল হিন্দু শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার জায়গা। এই দুই বিদ্যায়তনে শিক্ষা দেওয়া হতো সংস্কৃতের মাধ্যমে। মুসলমানদের জন্য ছিল মক্তব আর মাদ্রাসা। সেখানে ভাষা ছিল আরবি আর ফারসি।
যদি মক্তব-মাদ্রাসায় আরবি আর ফারসি পড়ানো হয়, তাহলে বাংলার মুসলমানের সন্তানদেরই তো বেশি বেশি রাজকার্যে নিয়োগ পাওয়ার কথা! এখানে দুটো বিষয়ে জানানো দরকার। মক্তব-মাদ্রাসায় যে আরবি আর ফারসি পড়ানো হতো, তা ছিল অনেকটা মুখস্থবিদ্যার মতো। ঠিকভাবে শেখা হতো না। রাজকার্য পেতে হলে ফারসি জানতে হবে। তাই হিন্দুদের শিক্ষার জন্য আলাদা ‘পার্সি’ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যেখানে পার্সি স্কুল ছিল না, সেখানে হিন্দু সন্তানেরা মাদ্রাসায়ও যেত ফারসি শেখার জন্য। নবাবি আমলে মুসলমানদের তুলনায় ফারসি জানা হিন্দুরা রাজকার্যে বেশি যোগ দিত।
কোম্পানি শাসনামলে লর্ড বেন্টিংকের সময় থেকে নথি হাজির করা যাক। তাঁর শাসনামলে উইলিয়াম অ্যাডাম বাংলা ও বিহারের ‘স্বদেশী শিক্ষাব্যবস্থা’ সম্পর্কে তিনটি রিপোর্ট (১৮৩৫-১৮৩৮) পেশ করেছিলেন। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদ জেলায় বাংলা স্কুলে মোট ১ হাজার ৮০ জন ছাত্রের মধ্যে হিন্দু ছাত্রের সংখ্যা ৯৯৮, মুসলিম ছাত্র ছিল ৮২ জন। আর আরবি ফারসি স্কুলে ছাত্রদের অবস্থান? ১০৯ জন ছাত্রের মধ্যে ৬২ জন হিন্দু এবং ৪৭ জন মুসলমান। বলাই যায়, বাংলা শিক্ষায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান সম্প্রদায়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে তো ছিলই, এমনকি আরবি ফারসিতেও তারা মুসলমানদের থেকে এগিয়ে ছিল।
তাহলে বলাই যায়, রাজভাষা শিক্ষায় হিন্দুরা মুসলমানদের চেয়ে এগিয়ে থাকায় রাজকার্যেও তারা ছিল এগিয়ে। বলা যায়, পলাশী যুদ্ধের কিছুকাল আগে থেকে বাংলার জমিদারি, রাজস্ব বিভাগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং মহাজনি কারবারে হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল। শুধু বিচার বিভাগ আর সামরিক বিভাগে মুসলমানরা এগিয়ে ছিল। কোম্পানি শাসনের সময় কীভাবে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়েছে, সে বিষয়ে কথা বললেই বোঝা যাবে মুসলমানদের উর্দুপ্রীতির কারণ। কোম্পানির কর্মকর্তারা কীভাবে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জন্ম দিল, সেটাই হবে পরবর্তী আলোচনার বিষয়।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে