বিভুরঞ্জন সরকার
এবার স্বাধীনতার মাস মার্চে রোজা শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য আমাদের যে দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রাম, সেটা নিয়ে কিছু লিখব বলে ভেবেছিলাম। পরক্ষণেই মনে হলো, যেহেতু সংযমের মাস চলছে, সেহেতু আমাদের অসংযমী আচরণ নিয়েই নাহয় দুকথা লিখি। লিখতে বসে মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। পত্রিকার পাতায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখলে কেমন যেন অস্থির লাগে। কথায় ও কাজে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার কত কথা শুনলাম। সরকার কয়েকটি পণ্যের দামও বেঁধে দিয়েছে। বাজারে গিয়ে ক্রেতারা সেই দামে কোনো পণ্যই কিনতে পারছে না। আগে শুনতাম সরকারের হাত অনেক লম্বা। এখন দেখা যাচ্ছে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের হাত তার চেয়েও লম্বা। সরকার বিএনপিসহ বিরোধী কিংবা মিত্র দলগুলোকে দাবিয়ে রাখতে সফল হলেও দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
এর মধ্যেই নজরে এল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর একটি ফেসবুক পোস্ট। তিনি লিখেছেন: ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক এগুলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা। কিন্তু এই পুরস্কারগুলো পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করা হয় অতি অবহেলায় বা তদবিরে। শোনা যায় পুরস্কারের প্রস্তাব পেশ করতে হয়, তারপর শুরু হয় তদবির। আরও একটি অদ্ভুত বিষয় মরণোত্তর পুরস্কার। কেউ যদি যুদ্ধে শহীদ হন বা কোনো ন্যায় সংগ্রামে প্রাণ দেন বা অকালমৃত্যু হয়, তখন তাঁর পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়া যায় মরণোত্তর পুরস্কার দিয়ে। কিন্তু যাঁরা জীবদ্দশায় নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন, বেঁচে থাকতে তাঁদের সম্মানিত করা হয় না কেন? রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সাদিকে পুরস্কার দেওয়ার আবেদন করতে হবে কেন!’
পদক সম্মাননা নিয়ে এই বিতর্ক নতুন নয়। তারপরও সরকারের টনক নড়ে না কেন? এ ক্ষেত্রে সরকারের কৌশল যেন ‘বকো আর ঝকো কানে দিয়েছি তুলো, মারো আর ধরো পিঠে বেঁধেছি কুলো।’
দুই. লীনা পারভীন গণমাধ্যমে লেখালেখি করেন। সম্প্রতি তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, সাদি মহম্মদ দেশের একজন প্রথম সারির রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ছিলেন। তার চেয়েও তাঁর আরেকটা পরিচয় ছিল, যে পরিচয়টা কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। তিনি একজন শহীদের সন্তান। তাঁর পিতার নামেই মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের নামকরণ। সম্ভবত এই তথ্য আমাদের প্রজন্ম পর্যন্ত জানা ছিল। এরপর তাঁরাও আর সামনে আনেননি আর রাষ্ট্র ও সরকার তো এই লাইনে চিন্তাই করে না।...
আজ যাঁরা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন যে সাদি মহম্মদ পদকের শোকে আত্মহত্যা করেছেন, তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, আপনারা তো সবাই জানতেন এ কথা। কই এত দিনে কেন একটা শব্দও তোলেননি? কাউকে তো শুনলাম না একটা লাইন লিখতে বা বলতে এই দাবি নিয়ে। কেন করেননি? উত্তরটা জানা দরকার। আপনাদের শিল্পী সংগঠনগুলো যে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে মজে থাকে এ নিয়ে আওয়াজ কই? ধান্দাবাজি করার সময় কই থাকে আপনাদের নীতিবাক্য?...
আমার জানা নেই যে বাংলাদেশে যতজন গুণী শিল্পী ছিলেন বা আছেন, তাঁদের সবাই রাষ্ট্রীয় পদক বেঁচে থাকতে পেয়েছেন কি না। আর পদক না পেলেই কি মানুষের জীবন অর্থহীন হয়ে যায়? এই লাইনে যিনি চিন্তা করেন আমার কাছে মানুষ হিসেবে তাঁর অবস্থান অনেক নিচে। সেটা সাদি মহম্মদও যদি ভেবে থাকতেন তাহলে তিনিও ক্ষুদ্র চিন্তার ছিলেন বলেই মনে করি। পদকের জন্য কেউ কাজ করেন না। করা উচিত না। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সরাসরি লড়াই করার পরেও সনদ নেননি। কেন নেননি? তাই বলে কি তাঁদের অবদান নষ্ট হয়ে গেছে? তাহলে সাদি মহম্মদ পদক পাননি বলেই আত্মহত্যা করেছেন, এই ন্যারেটিভ যাঁরা সামনে আনছেন, তাঁরা সমাজের ভ্রষ্ট মানুষ। তাঁরা কিছু পাওয়ার লোভে কাজ করেন। নিজের আনন্দ বা তৃপ্তির জন্য নয়।
সাদি মহম্মদের মৃত্যুতে আজ যাঁরা গান গেয়ে বিদায় দিচ্ছেন, তাঁরাই বা কয়দিন খোঁজ রেখেছিলেন তাঁর? কেন গানের জগৎ থেকে তাঁদেরই একজন সতীর্থ হারিয়ে গেলেন—সেই খোঁজ কয়জন নিয়েছেন?...
আমরা সবাই এত হিপোক্রিট যে কেউ যখন সমস্যায় থাকে তার দায় নিই না অথচ মৃত্যুর পর সেই দায় সবার ওপরে দিয়ে নিজেকে তৃপ্ত রাখি। ভাবি বিরাট বিপ্লব করলাম। এসব ভন্ডামি থেকে যত দিন না এই জাতি বের হতে পারবে, তত দিন সাদি মহম্মদরা এমন আত্মহত্যাই করে যাবেন আর আপনারা সেখানে বসে রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে গাল ভাসাবেন।
তিন. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহত্যা করে অনেকগুলো প্রশ্ন আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন। আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি, যখন ঘরের ময়লা পরিষ্কার না করে তা কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রেখে একধরনের স্বস্তি অনুভব করছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান যে নিম্নগামী, তা নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের জ্ঞান গরিমা নিয়ে যেসব খবর বের হয়, তাতে যেকোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের মাথা লজ্জায় হেঁট হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারকদের এ নিয়ে হেলদোল নেই। জ্ঞানী খোঁজা হয় না, এখন খোঁজা হয় অনুগত। রাজনৈতিক বিশ্বাস ও নীতি-আদর্শের প্রতি আনুগত্য দোষের নয়। কিন্তু কর্তা ভজা কীর্তন গাওয়া কি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাজ হতে পারে?
উপাচার্য নীতিহীন বা দুর্নীতিপরায়ণ হলে শিক্ষক-ছাত্ররা কীভাবে উন্নত নৈতিকতার অধিকারী হবেন? ছাত্ররাই এখন কেবল ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করেন না, এই দৌড়ে শামিল হচ্ছেন শিক্ষকেরাও। এমনই উত্ত্যক্তের শিকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অবন্তিকা। চার মাস আগে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে শেষে গলায় দড়ি দিয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করেছেন তিনি।
এখন নানা তথ্য পাওয়া যাবে। ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের চেয়ে চটকদার খরব তৈরির অপচেষ্টাও চলবে। কোনো কোনো গণমাধ্যমও সত্যানুসন্ধানের চেয়ে মানুষ কেমন খবর ‘খায়’, তেমন খবর পরিবেশন করে বাজার ধরার প্রয়াস চালাবে।
ফেসবুকেও ছন্দা মাহবুব লিখেছেন: ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম একজন সুপরিচিত উইমেন অ্যাকটিভিস্ট। দেশ-বিদেশের নানা মঞ্চে নারী অধিকার, নারী নির্যাতন বিষয়ে তাঁর বক্তব্য শোনা যায়। অথচ তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি, যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নিতেও দেখা যায়নি।...জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও এক মেয়ের কথা শুনলাম একটা ভিডিওতে। তিনি শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। সে বিষয়ে অভিযোগ করার পর থেকে তাঁকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। পরীক্ষায় তাঁকে ফেল করানো হয়েছে, তাঁর অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া হয় না, কোনো শিক্ষার্থী তাঁর সঙ্গে কথা বলেন না, কথা বলতে ভয় পান, কারণ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে তাঁদেরও একই অবস্থা হতে পারে। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটি কোনো প্রতিবেদন বা সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। শুধু সেই মেয়ে না, আরও অনেক মেয়ে জবিতে যৌন হয়রানির শিকার কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস নেই বলে জানিয়েছে মেয়েটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একজন বিখ্যাত নারী অধিকারকর্মী হওয়ার পরেও তাঁর প্রতিষ্ঠানে নারীদের এই অবস্থা দুঃখজনক।’
ছন্দা শেষে প্রশ্ন তুলেছেন, কে বিচার করবে? কাদের কাছে বিচার চাইছি? যারা দিনের পর দিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, তাদের কাছে? সবকিছু ফালতু লাগে। বিচার-টিচার চেয়ে কিছু হবে না। অপশন দুটো: হয় এভাবেই বাঁচো, নয় মরে যাও।
আহা, স্বাধীনতার মাসে এমন ক্ষোভ প্রকাশ কী প্রমাণ করছে?
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
এবার স্বাধীনতার মাস মার্চে রোজা শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য আমাদের যে দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রাম, সেটা নিয়ে কিছু লিখব বলে ভেবেছিলাম। পরক্ষণেই মনে হলো, যেহেতু সংযমের মাস চলছে, সেহেতু আমাদের অসংযমী আচরণ নিয়েই নাহয় দুকথা লিখি। লিখতে বসে মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। পত্রিকার পাতায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখলে কেমন যেন অস্থির লাগে। কথায় ও কাজে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার কত কথা শুনলাম। সরকার কয়েকটি পণ্যের দামও বেঁধে দিয়েছে। বাজারে গিয়ে ক্রেতারা সেই দামে কোনো পণ্যই কিনতে পারছে না। আগে শুনতাম সরকারের হাত অনেক লম্বা। এখন দেখা যাচ্ছে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের হাত তার চেয়েও লম্বা। সরকার বিএনপিসহ বিরোধী কিংবা মিত্র দলগুলোকে দাবিয়ে রাখতে সফল হলেও দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
এর মধ্যেই নজরে এল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর একটি ফেসবুক পোস্ট। তিনি লিখেছেন: ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক এগুলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা। কিন্তু এই পুরস্কারগুলো পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করা হয় অতি অবহেলায় বা তদবিরে। শোনা যায় পুরস্কারের প্রস্তাব পেশ করতে হয়, তারপর শুরু হয় তদবির। আরও একটি অদ্ভুত বিষয় মরণোত্তর পুরস্কার। কেউ যদি যুদ্ধে শহীদ হন বা কোনো ন্যায় সংগ্রামে প্রাণ দেন বা অকালমৃত্যু হয়, তখন তাঁর পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়া যায় মরণোত্তর পুরস্কার দিয়ে। কিন্তু যাঁরা জীবদ্দশায় নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন, বেঁচে থাকতে তাঁদের সম্মানিত করা হয় না কেন? রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সাদিকে পুরস্কার দেওয়ার আবেদন করতে হবে কেন!’
পদক সম্মাননা নিয়ে এই বিতর্ক নতুন নয়। তারপরও সরকারের টনক নড়ে না কেন? এ ক্ষেত্রে সরকারের কৌশল যেন ‘বকো আর ঝকো কানে দিয়েছি তুলো, মারো আর ধরো পিঠে বেঁধেছি কুলো।’
দুই. লীনা পারভীন গণমাধ্যমে লেখালেখি করেন। সম্প্রতি তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, সাদি মহম্মদ দেশের একজন প্রথম সারির রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ছিলেন। তার চেয়েও তাঁর আরেকটা পরিচয় ছিল, যে পরিচয়টা কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। তিনি একজন শহীদের সন্তান। তাঁর পিতার নামেই মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের নামকরণ। সম্ভবত এই তথ্য আমাদের প্রজন্ম পর্যন্ত জানা ছিল। এরপর তাঁরাও আর সামনে আনেননি আর রাষ্ট্র ও সরকার তো এই লাইনে চিন্তাই করে না।...
আজ যাঁরা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন যে সাদি মহম্মদ পদকের শোকে আত্মহত্যা করেছেন, তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, আপনারা তো সবাই জানতেন এ কথা। কই এত দিনে কেন একটা শব্দও তোলেননি? কাউকে তো শুনলাম না একটা লাইন লিখতে বা বলতে এই দাবি নিয়ে। কেন করেননি? উত্তরটা জানা দরকার। আপনাদের শিল্পী সংগঠনগুলো যে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে মজে থাকে এ নিয়ে আওয়াজ কই? ধান্দাবাজি করার সময় কই থাকে আপনাদের নীতিবাক্য?...
আমার জানা নেই যে বাংলাদেশে যতজন গুণী শিল্পী ছিলেন বা আছেন, তাঁদের সবাই রাষ্ট্রীয় পদক বেঁচে থাকতে পেয়েছেন কি না। আর পদক না পেলেই কি মানুষের জীবন অর্থহীন হয়ে যায়? এই লাইনে যিনি চিন্তা করেন আমার কাছে মানুষ হিসেবে তাঁর অবস্থান অনেক নিচে। সেটা সাদি মহম্মদও যদি ভেবে থাকতেন তাহলে তিনিও ক্ষুদ্র চিন্তার ছিলেন বলেই মনে করি। পদকের জন্য কেউ কাজ করেন না। করা উচিত না। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সরাসরি লড়াই করার পরেও সনদ নেননি। কেন নেননি? তাই বলে কি তাঁদের অবদান নষ্ট হয়ে গেছে? তাহলে সাদি মহম্মদ পদক পাননি বলেই আত্মহত্যা করেছেন, এই ন্যারেটিভ যাঁরা সামনে আনছেন, তাঁরা সমাজের ভ্রষ্ট মানুষ। তাঁরা কিছু পাওয়ার লোভে কাজ করেন। নিজের আনন্দ বা তৃপ্তির জন্য নয়।
সাদি মহম্মদের মৃত্যুতে আজ যাঁরা গান গেয়ে বিদায় দিচ্ছেন, তাঁরাই বা কয়দিন খোঁজ রেখেছিলেন তাঁর? কেন গানের জগৎ থেকে তাঁদেরই একজন সতীর্থ হারিয়ে গেলেন—সেই খোঁজ কয়জন নিয়েছেন?...
আমরা সবাই এত হিপোক্রিট যে কেউ যখন সমস্যায় থাকে তার দায় নিই না অথচ মৃত্যুর পর সেই দায় সবার ওপরে দিয়ে নিজেকে তৃপ্ত রাখি। ভাবি বিরাট বিপ্লব করলাম। এসব ভন্ডামি থেকে যত দিন না এই জাতি বের হতে পারবে, তত দিন সাদি মহম্মদরা এমন আত্মহত্যাই করে যাবেন আর আপনারা সেখানে বসে রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে গাল ভাসাবেন।
তিন. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহত্যা করে অনেকগুলো প্রশ্ন আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন। আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি, যখন ঘরের ময়লা পরিষ্কার না করে তা কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রেখে একধরনের স্বস্তি অনুভব করছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান যে নিম্নগামী, তা নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের জ্ঞান গরিমা নিয়ে যেসব খবর বের হয়, তাতে যেকোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের মাথা লজ্জায় হেঁট হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারকদের এ নিয়ে হেলদোল নেই। জ্ঞানী খোঁজা হয় না, এখন খোঁজা হয় অনুগত। রাজনৈতিক বিশ্বাস ও নীতি-আদর্শের প্রতি আনুগত্য দোষের নয়। কিন্তু কর্তা ভজা কীর্তন গাওয়া কি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাজ হতে পারে?
উপাচার্য নীতিহীন বা দুর্নীতিপরায়ণ হলে শিক্ষক-ছাত্ররা কীভাবে উন্নত নৈতিকতার অধিকারী হবেন? ছাত্ররাই এখন কেবল ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করেন না, এই দৌড়ে শামিল হচ্ছেন শিক্ষকেরাও। এমনই উত্ত্যক্তের শিকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অবন্তিকা। চার মাস আগে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে শেষে গলায় দড়ি দিয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করেছেন তিনি।
এখন নানা তথ্য পাওয়া যাবে। ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের চেয়ে চটকদার খরব তৈরির অপচেষ্টাও চলবে। কোনো কোনো গণমাধ্যমও সত্যানুসন্ধানের চেয়ে মানুষ কেমন খবর ‘খায়’, তেমন খবর পরিবেশন করে বাজার ধরার প্রয়াস চালাবে।
ফেসবুকেও ছন্দা মাহবুব লিখেছেন: ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম একজন সুপরিচিত উইমেন অ্যাকটিভিস্ট। দেশ-বিদেশের নানা মঞ্চে নারী অধিকার, নারী নির্যাতন বিষয়ে তাঁর বক্তব্য শোনা যায়। অথচ তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি, যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নিতেও দেখা যায়নি।...জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও এক মেয়ের কথা শুনলাম একটা ভিডিওতে। তিনি শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। সে বিষয়ে অভিযোগ করার পর থেকে তাঁকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। পরীক্ষায় তাঁকে ফেল করানো হয়েছে, তাঁর অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া হয় না, কোনো শিক্ষার্থী তাঁর সঙ্গে কথা বলেন না, কথা বলতে ভয় পান, কারণ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে তাঁদেরও একই অবস্থা হতে পারে। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটি কোনো প্রতিবেদন বা সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। শুধু সেই মেয়ে না, আরও অনেক মেয়ে জবিতে যৌন হয়রানির শিকার কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস নেই বলে জানিয়েছে মেয়েটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একজন বিখ্যাত নারী অধিকারকর্মী হওয়ার পরেও তাঁর প্রতিষ্ঠানে নারীদের এই অবস্থা দুঃখজনক।’
ছন্দা শেষে প্রশ্ন তুলেছেন, কে বিচার করবে? কাদের কাছে বিচার চাইছি? যারা দিনের পর দিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, তাদের কাছে? সবকিছু ফালতু লাগে। বিচার-টিচার চেয়ে কিছু হবে না। অপশন দুটো: হয় এভাবেই বাঁচো, নয় মরে যাও।
আহা, স্বাধীনতার মাসে এমন ক্ষোভ প্রকাশ কী প্রমাণ করছে?
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে