অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪-এর প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তি উৎসাহিত করুন’। ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ডে’র অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে তা-ই বলা হয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ এবারের প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে, ‘নারীর সম-অধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’।
আমরা বিনিয়োগ করি শৈশবে শিক্ষায়, যৌবনে কর্মক্ষেত্রে, যাতে বার্ধক্যটা আরামদায়ক হয়। আমরা বিনিয়োগ করি গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসা, সম্পদে। এই বিনিয়োগে কারও দ্বিমত নেই।
কিন্তু মনে আছে, একটা সময় আমাদের বলা হতো, ‘কুড়িতে বুড়ি’। কারণ সেই সময় মানুষের জীবনকালের ব্যাপ্তি কম ছিল। বেশি দিন আগের কথা নয়, ১৯৭১ সালেও বাংলাদেশে নারীদের গড় বয়স ছিল ৪৩ বছর, যেটা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান উন্নতির কারণে এখন ৭৩ বছর হয়েছে। অচিরেই সেটা ৮০ বছরের বেশি হবে। কারণ আমাদের জনসংখ্যার যে পিরামিড, সেটা যদি দেখেন, সেখানে খেয়াল করবেন, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা সব থেকে বেশি। আর প্রবীণদের অবস্থান পিরামিডের চূড়ায়। তার মানে, এখন আমাদের দেশে তরুণ অনেক বেশি। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এই তরুণেরা যখন প্রবীণ হবেন, তখন আমাদের জনসংখ্যার পিরামিড কিন্তু প্রবীণের ভারে অবনত হয়ে যাবে। ঠিক যেমনটি আমরা গল্প শুনি যে জাপানে শতায়ুজীবীর সংখ্যা অধিক। তার মানে, আর কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের চিত্রটাও সেরকমই হতে যাচ্ছে।
কিন্তু এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা কোথায় নারী দিবসের? এটা কেন আতঙ্কিত করার মতো একটি ঘটনা? আর এর সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক কী? গবেষণালব্ধ উপাত্ত বলছে, জীবনের শেষ দিনগুলোতে চিকিৎসকের ভাষায় যাকে বলা হয়, ‘এন্ড অব লাইফ কেয়ার’ (জীবনের শেষ প্রান্ত), সেখানেও নারীরা সম-অধিকারে চিকিৎসা সেবা পান না। কিন্তু সেবা প্রদানকারী হিসেবে পরিবার বেছে নিচ্ছে নারীদের। আর সেই নারী যখন নিজে বিছানায় পড়ছেন, তার শেষ দিনগুলোর যত্ন পর্যাপ্তভাবে হচ্ছে না। কারণ সমাজ নির্ধারণ করে দিচ্ছে নারীর ভূমিকা সেবাকারীর, পক্ষান্তরে সেবা গ্রহণের অধিক ক্ষমতা পুরুষকে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, নারী যদি তার সেবাকারীর ভূমিকায় সেবা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যান, তবে মুখ ফুটে একটু শব্দও তিনি করতে পারবেন না। কারণ সঙ্গে সঙ্গে সমাজ তাঁর দিকে আঙুল তুলবে, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। বলা হচ্ছে, যে নারী ঠিকমতো যত্ন করতে পারেন না, সেই নারী হিসেবে তাঁর ভূমিকার উপযুক্ত পালন করতে পারছেন না। কিন্তু মমতা ও যত্নের ব্যাকরণ তো সর্বজনীন। এখানে কেন নারী-পুরুষের বিভেদ আসছে?
গবেষণালব্ধ উপাত্ত আরও বলছে, নারীরা অধিক নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন, অধিক দৈহিক ব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাবসহ নানাবিধ শারীরিক উপসর্গে বেশি ভোগেন। ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, জার্মানি, পর্তুগাল ও নিউজিল্যান্ডে এ প্রসঙ্গে ব্যাপক গবেষণা হয়। গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, নারীরা জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈধব্য অথবা নিঃসঙ্গ জীবনের মধ্য দিয়ে কাটান। কথায় বলে, ‘কই মাছের প্রাণ’! গবেষণাও বলছে যে, নারীরা পুরুষের তুলনায় কিঞ্চিৎ বেশি দীর্ঘজীবী। মুশকিল হলো, এই দীর্ঘ জীবন আনন্দময় নয়, বরং এই দীর্ঘ জীবন কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগে ভুগে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় শক্তি ও অর্থ নিঃশেষিত হয়ে যেন ধুঁকে ধুঁকে মরে যাওয়া, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় খারাপ মৃত্যু বলা হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বর্তমানে মৃত্যুকে দুই ভাগে ভাগ করেছে—ভালো মৃত্যু ও খারাপ মৃত্যু। ফলে বাস্তবতা বলছে, নারীরা তাঁদের পুরুষ জীবনসঙ্গী থেকে তুলনামূলকভাবে জীবনের শেষ দিনগুলো অধিক দারিদ্র্যে কাটান; কারণ জীবদ্দশায় এবং কর্মক্ষেত্রে তাঁরা ক্ষেত্রবিশেষে সমপরিমাণ বেতন পান না। কী ভয়ংকর বৈষম্য মরার আগে! অথচ এর প্রতিটি কথা বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ উপাত্তভিত্তিক। শুধু তাই নয়, সামাজিকভাবে মনে করা হয়, তীব্র ব্যথায় জর্জরিত হলেও এটা তেমন ব্যথা নয়, মুখ বুজে নীরবে সহ্য করে যাও! এই মুখ বুঝে সহ্য করার দায়ভারও যেন সমাজ নারীর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অনেকটা সেই আবুল হাসানের কবিতার মতো—
‘ঝিনুক নীরবে সহো
ঝিনুক নীরবে সহো,
ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!’
অথচ প্রশমন সেবা বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অনেক কম উপসর্গ নিয়েই পুরুষেরা জীবনের শেষ দিনগুলোতে চিকিৎসাব্যবস্থার দ্বারস্থ হচ্ছেন। সম্ভবত ধারণা করা হচ্ছে, নারী পারিবারিক দায়িত্ব এবং পুরুষ অর্থনৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব সামলানোর জন্য সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত। ফলে অর্থ যাঁর হাতে থাকে অথবা সম্পত্তির যিনি মালিক হন, জীবনের শেষ দিনগুলোতে বা অন্তিম মুহূর্তে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সম্ভাবনা তাঁর বেশি। কাজেই মৃত্যুর আগে চিকিৎসাসেবার সাম্যতা নারী-পুরুষের মধ্যে নেই। আরেকটু যদি চিকিৎসাব্যবস্থার গভীরে ঢুকি তবে দেখব, নারীরা সাধারণত পারিবারিক চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন, যেখানে পুরুষেরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা বেশি নিয়ে থাকেন। গবেষণা বলছে, সম্ভবত এর সঙ্গে পুরুষদের মানসিকভাবে ক্ষীণ আশার প্রত্যাশা থাকে, যেখানে তাঁরা ভাবেন যে, হয়তো লড়াই করলে বাঁচা যাবে, অর্থাৎ চিন্তাটাই নিরাময়কেন্দ্রিক। কথায় আছে না, ‘যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ’!
পক্ষান্তরে দেখা গেছে, নারীরা মৃত্যুকে আরেকটু সহজে গ্রহণ করেন। নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাঁদের হাসপাতালে অবস্থানের সময়সীমা কম। শুধু তাই নয়, নারীরা নিজের অসুস্থতার কারণে পরিবারের লোকদের ভোগান্তিতে ফেলতে চান না বিধায় যতটুকু কম পারা যায়, নিজের জন্য ঠিক ততটুকু চিকিৎসাসেবা বরাদ্দের আশা রাখেন। দেখা গেছে, নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নিজেকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা সজ্ঞান অবস্থায় করে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে পুরুষদের তুলনায় আইসিইউতে নারীদের মৃত্যু কম হয়।
কিন্তু অপেক্ষাকৃতভাবে পুরুষের তুলনায় প্রশমনসেবা বা পালিয়েটিভ কেয়ার বেশি প্রত্যাশা করে নারীরা। কারণ পুরুষের মানসিকতা বেশির ভাগ নিরাময়কেন্দ্রিক। পক্ষান্তরে নারীর তুলনায় পুরুষ জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে শেষ বয়সে বেশি সেবা প্রত্যাশা করে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নারী সেবাকারীরা একদিকে যেমন অপেক্ষাকৃত অধিক মানসিক এবং শারীরিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে সেরকম বেশি পরিমাণ আত্মবিশ্বাসহীনতা ও ক্লান্তিতে ভুগছেন। কারণ ধরেই নেওয়া হচ্ছে, নারীর সামাজিক দায়িত্ব সেবাকারীর।
ওপরের প্রতিটি কথা উপাত্তনির্ভর বিধায় আমাদের এখনই খেয়াল করার সময়। কারণ নারীরা বিচ্ছিন্ন কোনো জীব নন। তাঁরা আমাদের মা, বোন, কন্যা, জীবনসঙ্গী, প্রেমিকা, প্রিয়তমা, বন্ধু অথবা সহকর্মী কিংবা সহযাত্রী। নারী দিবসের প্রতিপাদ্য মাথায় রেখে আমরা নারীদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রাপ্তির সমসুযোগ ও সম-অধিকারে বিনিয়োগ করি।
আপনার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় নারী যখন নিরাময় অযোগ্য, জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় প্রায় অচেতন, তখনো যেন আপনি পরম মমতায় তাঁর হাত ধরে মনে মনে বলেন—
‘পাড়ি দিতে নদী হাল ভাঙে যদি,
ছিন্ন পালের কাছি,
মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়ে জানিব—
তুমি আছ, আমি আছি।’
লেখক: চিকিৎসক, কাউনসেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪-এর প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তি উৎসাহিত করুন’। ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ডে’র অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে তা-ই বলা হয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ এবারের প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে, ‘নারীর সম-অধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’।
আমরা বিনিয়োগ করি শৈশবে শিক্ষায়, যৌবনে কর্মক্ষেত্রে, যাতে বার্ধক্যটা আরামদায়ক হয়। আমরা বিনিয়োগ করি গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসা, সম্পদে। এই বিনিয়োগে কারও দ্বিমত নেই।
কিন্তু মনে আছে, একটা সময় আমাদের বলা হতো, ‘কুড়িতে বুড়ি’। কারণ সেই সময় মানুষের জীবনকালের ব্যাপ্তি কম ছিল। বেশি দিন আগের কথা নয়, ১৯৭১ সালেও বাংলাদেশে নারীদের গড় বয়স ছিল ৪৩ বছর, যেটা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান উন্নতির কারণে এখন ৭৩ বছর হয়েছে। অচিরেই সেটা ৮০ বছরের বেশি হবে। কারণ আমাদের জনসংখ্যার যে পিরামিড, সেটা যদি দেখেন, সেখানে খেয়াল করবেন, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা সব থেকে বেশি। আর প্রবীণদের অবস্থান পিরামিডের চূড়ায়। তার মানে, এখন আমাদের দেশে তরুণ অনেক বেশি। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এই তরুণেরা যখন প্রবীণ হবেন, তখন আমাদের জনসংখ্যার পিরামিড কিন্তু প্রবীণের ভারে অবনত হয়ে যাবে। ঠিক যেমনটি আমরা গল্প শুনি যে জাপানে শতায়ুজীবীর সংখ্যা অধিক। তার মানে, আর কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের চিত্রটাও সেরকমই হতে যাচ্ছে।
কিন্তু এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা কোথায় নারী দিবসের? এটা কেন আতঙ্কিত করার মতো একটি ঘটনা? আর এর সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক কী? গবেষণালব্ধ উপাত্ত বলছে, জীবনের শেষ দিনগুলোতে চিকিৎসকের ভাষায় যাকে বলা হয়, ‘এন্ড অব লাইফ কেয়ার’ (জীবনের শেষ প্রান্ত), সেখানেও নারীরা সম-অধিকারে চিকিৎসা সেবা পান না। কিন্তু সেবা প্রদানকারী হিসেবে পরিবার বেছে নিচ্ছে নারীদের। আর সেই নারী যখন নিজে বিছানায় পড়ছেন, তার শেষ দিনগুলোর যত্ন পর্যাপ্তভাবে হচ্ছে না। কারণ সমাজ নির্ধারণ করে দিচ্ছে নারীর ভূমিকা সেবাকারীর, পক্ষান্তরে সেবা গ্রহণের অধিক ক্ষমতা পুরুষকে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, নারী যদি তার সেবাকারীর ভূমিকায় সেবা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যান, তবে মুখ ফুটে একটু শব্দও তিনি করতে পারবেন না। কারণ সঙ্গে সঙ্গে সমাজ তাঁর দিকে আঙুল তুলবে, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। বলা হচ্ছে, যে নারী ঠিকমতো যত্ন করতে পারেন না, সেই নারী হিসেবে তাঁর ভূমিকার উপযুক্ত পালন করতে পারছেন না। কিন্তু মমতা ও যত্নের ব্যাকরণ তো সর্বজনীন। এখানে কেন নারী-পুরুষের বিভেদ আসছে?
গবেষণালব্ধ উপাত্ত আরও বলছে, নারীরা অধিক নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন, অধিক দৈহিক ব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাবসহ নানাবিধ শারীরিক উপসর্গে বেশি ভোগেন। ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, জার্মানি, পর্তুগাল ও নিউজিল্যান্ডে এ প্রসঙ্গে ব্যাপক গবেষণা হয়। গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, নারীরা জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈধব্য অথবা নিঃসঙ্গ জীবনের মধ্য দিয়ে কাটান। কথায় বলে, ‘কই মাছের প্রাণ’! গবেষণাও বলছে যে, নারীরা পুরুষের তুলনায় কিঞ্চিৎ বেশি দীর্ঘজীবী। মুশকিল হলো, এই দীর্ঘ জীবন আনন্দময় নয়, বরং এই দীর্ঘ জীবন কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগে ভুগে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় শক্তি ও অর্থ নিঃশেষিত হয়ে যেন ধুঁকে ধুঁকে মরে যাওয়া, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় খারাপ মৃত্যু বলা হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বর্তমানে মৃত্যুকে দুই ভাগে ভাগ করেছে—ভালো মৃত্যু ও খারাপ মৃত্যু। ফলে বাস্তবতা বলছে, নারীরা তাঁদের পুরুষ জীবনসঙ্গী থেকে তুলনামূলকভাবে জীবনের শেষ দিনগুলো অধিক দারিদ্র্যে কাটান; কারণ জীবদ্দশায় এবং কর্মক্ষেত্রে তাঁরা ক্ষেত্রবিশেষে সমপরিমাণ বেতন পান না। কী ভয়ংকর বৈষম্য মরার আগে! অথচ এর প্রতিটি কথা বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ উপাত্তভিত্তিক। শুধু তাই নয়, সামাজিকভাবে মনে করা হয়, তীব্র ব্যথায় জর্জরিত হলেও এটা তেমন ব্যথা নয়, মুখ বুজে নীরবে সহ্য করে যাও! এই মুখ বুঝে সহ্য করার দায়ভারও যেন সমাজ নারীর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অনেকটা সেই আবুল হাসানের কবিতার মতো—
‘ঝিনুক নীরবে সহো
ঝিনুক নীরবে সহো,
ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!’
অথচ প্রশমন সেবা বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অনেক কম উপসর্গ নিয়েই পুরুষেরা জীবনের শেষ দিনগুলোতে চিকিৎসাব্যবস্থার দ্বারস্থ হচ্ছেন। সম্ভবত ধারণা করা হচ্ছে, নারী পারিবারিক দায়িত্ব এবং পুরুষ অর্থনৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব সামলানোর জন্য সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত। ফলে অর্থ যাঁর হাতে থাকে অথবা সম্পত্তির যিনি মালিক হন, জীবনের শেষ দিনগুলোতে বা অন্তিম মুহূর্তে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সম্ভাবনা তাঁর বেশি। কাজেই মৃত্যুর আগে চিকিৎসাসেবার সাম্যতা নারী-পুরুষের মধ্যে নেই। আরেকটু যদি চিকিৎসাব্যবস্থার গভীরে ঢুকি তবে দেখব, নারীরা সাধারণত পারিবারিক চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন, যেখানে পুরুষেরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা বেশি নিয়ে থাকেন। গবেষণা বলছে, সম্ভবত এর সঙ্গে পুরুষদের মানসিকভাবে ক্ষীণ আশার প্রত্যাশা থাকে, যেখানে তাঁরা ভাবেন যে, হয়তো লড়াই করলে বাঁচা যাবে, অর্থাৎ চিন্তাটাই নিরাময়কেন্দ্রিক। কথায় আছে না, ‘যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ’!
পক্ষান্তরে দেখা গেছে, নারীরা মৃত্যুকে আরেকটু সহজে গ্রহণ করেন। নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাঁদের হাসপাতালে অবস্থানের সময়সীমা কম। শুধু তাই নয়, নারীরা নিজের অসুস্থতার কারণে পরিবারের লোকদের ভোগান্তিতে ফেলতে চান না বিধায় যতটুকু কম পারা যায়, নিজের জন্য ঠিক ততটুকু চিকিৎসাসেবা বরাদ্দের আশা রাখেন। দেখা গেছে, নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নিজেকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা সজ্ঞান অবস্থায় করে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে পুরুষদের তুলনায় আইসিইউতে নারীদের মৃত্যু কম হয়।
কিন্তু অপেক্ষাকৃতভাবে পুরুষের তুলনায় প্রশমনসেবা বা পালিয়েটিভ কেয়ার বেশি প্রত্যাশা করে নারীরা। কারণ পুরুষের মানসিকতা বেশির ভাগ নিরাময়কেন্দ্রিক। পক্ষান্তরে নারীর তুলনায় পুরুষ জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে শেষ বয়সে বেশি সেবা প্রত্যাশা করে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নারী সেবাকারীরা একদিকে যেমন অপেক্ষাকৃত অধিক মানসিক এবং শারীরিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে সেরকম বেশি পরিমাণ আত্মবিশ্বাসহীনতা ও ক্লান্তিতে ভুগছেন। কারণ ধরেই নেওয়া হচ্ছে, নারীর সামাজিক দায়িত্ব সেবাকারীর।
ওপরের প্রতিটি কথা উপাত্তনির্ভর বিধায় আমাদের এখনই খেয়াল করার সময়। কারণ নারীরা বিচ্ছিন্ন কোনো জীব নন। তাঁরা আমাদের মা, বোন, কন্যা, জীবনসঙ্গী, প্রেমিকা, প্রিয়তমা, বন্ধু অথবা সহকর্মী কিংবা সহযাত্রী। নারী দিবসের প্রতিপাদ্য মাথায় রেখে আমরা নারীদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রাপ্তির সমসুযোগ ও সম-অধিকারে বিনিয়োগ করি।
আপনার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় নারী যখন নিরাময় অযোগ্য, জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় প্রায় অচেতন, তখনো যেন আপনি পরম মমতায় তাঁর হাত ধরে মনে মনে বলেন—
‘পাড়ি দিতে নদী হাল ভাঙে যদি,
ছিন্ন পালের কাছি,
মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়ে জানিব—
তুমি আছ, আমি আছি।’
লেখক: চিকিৎসক, কাউনসেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে