প্যাট্রিক হাউলেট-মার্টিন
গাজা উপত্যকা ১৪ বছরে চারবার ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য হয়েছে: ২০০৯, ২০১২, ২০১৪ ও ২০২১ সালে। ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী গাজায় ৭ হাজার ৭৫৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৪১টি শিশু এবং ৫৭২ জন নারী। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে দুই দিন পর থেকে ইসরায়েল গাজায় হামলা চালানো শুরু করে।
এটা গাজায় ইসরায়েলের পঞ্চম সামরিক হামলা। ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি হত্যার (যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক ছিল) ও ২০০ জনকে জিম্মি করার প্রতিশোধ হিসেবে সর্বাত্মক আক্রমণ চালায় দেশটির সামরিক বাহিনী। এতে নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
মাত্র ১৮ দিনে ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজায় গত ২৩ বছরের তুলনায় অনেক বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।
ইতিমধ্যে ৩ হাজারের বেশি শিশু মারা গেছে। কবে শেষ হবে এই হিসাব-নিকাশ, কে জানে? ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কি সাধারণ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি শিশুরা দায়ী? হামাসের সশস্ত্র শাখার সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য ফিলিস্তিনি শিশুরা কীভাবে দায়ী হতে পারে? কী উদ্দেশ্যে এই শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে? গাজায় দফায় দফায় ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি শিশুদের মৃত্যু কি কোনোভাবে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে?
জার্মানির নাৎসি বাহিনীর ডেথ স্কোয়াড আইনজাৎসগ্রুপেনের অন্যতম নেতা অটো ওলেনডর্ফ নুরেমবার্গ ট্রায়ালের সময় স্বীকার করেছিলেন, ইউক্রেনে ইহুদি, কমিউনিস্টসহ ৯০ হাজার লোককে কোনো সামরিক প্রয়োজন ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি এই ভয়ে যে তারা বড় হয়ে প্রতিশোধ নেবে।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে গাজা সংঘাতের সময় ছয়জন ইসরায়েলি ইহুদি ফিলিস্তিনি কিশোর মুহাম্মদ আবু খাদিরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার এক সপ্তাহ পরে ইসরায়েলি পার্লামেন্টের একজন সদস্য এবং বিচারমন্ত্রী আয়েলেত শাকেদ ‘সাপের’ মায়েদের বিরুদ্ধে গণহত্যার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাপ বলতে তিনি ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোরদের বুঝিয়েছিলেন।
তিনি তখন বলেছিলেন, ‘প্রতিটি সন্ত্রাসীর পেছনে কয়েক ডজন পুরুষ ও নারী দাঁড়িয়ে আছেন, যাঁরা তাঁদের কার্যকলাপ সমর্থন করেন। তাঁরা সবাই শত্রু যোদ্ধা। এর মধ্যে শহীদদের মায়েরাও রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের ফুল ও চুমু দিয়ে জাহান্নামে পাঠান। তাঁদের উচিত তাঁদের ছেলেদের অনুসরণ করা, এর চেয়ে বেশি কিছু হবে না। তাঁদের যেতে হবে, যেমন তাঁরা সাপগুলোকে লালন-পালন করেছেন। তা না হলে সেখানে আরও ছোট ছোট সাপ জন্মাবে।’
২০১৪ সালের আগস্টে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির সদস্য মোশে ফিগলিন গাজা ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি সিনাই মরুভূমির সীমান্ত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের শিবির স্থানান্তরিত করার জন্য একটি বিশদ পরিকল্পনা প্রস্তাবও করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী অন্য কোনো বিবেচনা ছাড়াই আমাদের সৈন্যদের ক্ষতি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো উপায় ব্যবহার করে সমগ্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে।’
এখন একই ধরনের কথা বলেছেন ইসরায়েলের বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। ১০ অক্টোবর তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমরা “পশুদের” মোকাবিলা করছি এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দেব...আমরা গাজা বন্ধ করে দিচ্ছি। বিদ্যুৎ, খাবার, পানি, জ্বালানি কিছু থাকবে না।’
একইভাবে ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি ইশাই ‘গাজাকে মধ্যযুগে ফেরত পাঠানোর’ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ, যিনি ২০১৪ সালে গাজায় আক্রমণের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘গাজা পুড়ে যাবে। অন্য কোনো সমীকরণ নেই।’
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাকে ‘শয়তানের শহর’ হিসেবে উল্লেখ করে একটি টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ‘হামাস যেসব স্থানকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে, আমরা সেগুলো দখল করব।’ গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ১০ লাখের বেশি শিশু-কিশোর রয়েছে। গাজায় বর্তমান ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কতজন এতিম, কতজন বিধবা, কতজন শোকার্তের প্রয়োজন হবে?
গাজার অবকাঠামো—স্কুল, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র, ব্যবসা, পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক এবং শহুরে আবাসন—সব ইসরায়েলি বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সংবাদদাতাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর জন্য জাতিসংঘের সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক রবার্তো ভ্যালেন্ট বলেছিলেন, ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় ধ্বংস হওয়া ভবনগুলো পুনর্নির্মাণ করতে কমপক্ষে ৩০ বছর সময় লাগবে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘের উন্নয়ন সম্মেলনে অনুমান করা হয়েছিল যে ২০৩০ সালের মধ্যে গাজা উপত্যকা আর অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর হবে না।
বর্তমান ইসরায়েলি আক্রমণের পরে এটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিসের (ইউএনআরডব্লিউএ) বহিঃসম্পর্কের দায়িত্বে আছেন প্যাজ ফার্নান্দেজ। তিনি বলেছেন, ‘গাজা একটি বিশাল কারাগার। সেখানে কার্যত সব শিল্প কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।’
২০০২ সালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মোশে ইয়ালোন প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের হৃদয়ের গভীরে এ বিষয়টি গেঁথে দিতে হবে যে তারা এক-একজন পরাজিত মানুষ।’ জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের মতে, গাজায় ২ হাজারের বেশি অনাথ শিশু রয়েছে। প্রায় ৫ হাজার ফিলিস্তিনি আটক রয়েছে ইসরায়েলে।
জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ দূত রিচার্ড ফকের অনুমান, ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলি দখলদারি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল তাদের কারাগারে সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে আটক করে রেখেছ, যা গাজা এবং পশ্চিম তীরের পুরুষ ফিলিস্তিনিদের প্রায় ৪০ শতাংশ। জাতিসংঘের এই বিশেষ দূতকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁর গাজায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বি’টসেলেমের মতে, ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ইসরায়েলি আদালত ৮ হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে পাথর নিক্ষেপের জন্য সাজা দিয়েছেন। তাদের ওয়েবসাইটে, সংস্থাটি পাথর ছোড়ার অপরাধে ইসরায়েলি স্নাইপারদের গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের নাম তালিকাভুক্ত করেছে। তবে ইসরায়েলি বিচার বিভাগ এসব ফিলিস্তিনি শিশুর নাম রেডিওতে প্রচার করতে নিষেধ করেছে।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে সংস্থাটি একটি ভিডিও প্রকাশ করে যাতে দেখা গেছে, পাথর নিক্ষেপের জন্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি পাঁচ বছরের শিশুকে আটক করেছে। ইউনিসেফ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিলিস্তিনি অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি দুর্ব্যবহারের বিষয়ে একটি কঠোর প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাকে ‘ব্যবস্থাগত, ব্যাপক এবং প্রাতিষ্ঠানিক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, শিশুদের ওপর নির্মম হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলকে সমর্থন করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইউনিসেফ যখন ২৬ অক্টোবর রাতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় কত শিশু নিহত হয়েছে তা গণনা করছে বলে, তখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলের বোমাবর্ষণকে ‘আত্মরক্ষার জন্য’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং ইসরায়েলের প্রতিশোধকে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ‘সম্মিলিত শাস্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু এভাবে শিশুদের হত্যা করে আসলে কী পাবে ইসরায়েল? গাজাবাসী কি এই বর্বরতার শিকার হয়ে নিজ ভূমি ছেড়ে চলে যাবে? নাকি গাজার ধ্বংসাবশেষ ও ছাই থেকে জন্ম নেবে ইসরায়লিদের ভাষায় নতুন কোনো দানব?
(অনলাইন ম্যাগাজিন কাউন্টারপাঞ্চে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত)
প্যাট্রিক হাউলেট-মার্টিন, সাংবাদিক ও পেশাদার কূটনীতিক
গাজা উপত্যকা ১৪ বছরে চারবার ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য হয়েছে: ২০০৯, ২০১২, ২০১৪ ও ২০২১ সালে। ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী গাজায় ৭ হাজার ৭৫৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৪১টি শিশু এবং ৫৭২ জন নারী। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে দুই দিন পর থেকে ইসরায়েল গাজায় হামলা চালানো শুরু করে।
এটা গাজায় ইসরায়েলের পঞ্চম সামরিক হামলা। ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি হত্যার (যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক ছিল) ও ২০০ জনকে জিম্মি করার প্রতিশোধ হিসেবে সর্বাত্মক আক্রমণ চালায় দেশটির সামরিক বাহিনী। এতে নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
মাত্র ১৮ দিনে ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজায় গত ২৩ বছরের তুলনায় অনেক বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।
ইতিমধ্যে ৩ হাজারের বেশি শিশু মারা গেছে। কবে শেষ হবে এই হিসাব-নিকাশ, কে জানে? ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কি সাধারণ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি শিশুরা দায়ী? হামাসের সশস্ত্র শাখার সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য ফিলিস্তিনি শিশুরা কীভাবে দায়ী হতে পারে? কী উদ্দেশ্যে এই শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে? গাজায় দফায় দফায় ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি শিশুদের মৃত্যু কি কোনোভাবে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে?
জার্মানির নাৎসি বাহিনীর ডেথ স্কোয়াড আইনজাৎসগ্রুপেনের অন্যতম নেতা অটো ওলেনডর্ফ নুরেমবার্গ ট্রায়ালের সময় স্বীকার করেছিলেন, ইউক্রেনে ইহুদি, কমিউনিস্টসহ ৯০ হাজার লোককে কোনো সামরিক প্রয়োজন ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি এই ভয়ে যে তারা বড় হয়ে প্রতিশোধ নেবে।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে গাজা সংঘাতের সময় ছয়জন ইসরায়েলি ইহুদি ফিলিস্তিনি কিশোর মুহাম্মদ আবু খাদিরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার এক সপ্তাহ পরে ইসরায়েলি পার্লামেন্টের একজন সদস্য এবং বিচারমন্ত্রী আয়েলেত শাকেদ ‘সাপের’ মায়েদের বিরুদ্ধে গণহত্যার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাপ বলতে তিনি ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোরদের বুঝিয়েছিলেন।
তিনি তখন বলেছিলেন, ‘প্রতিটি সন্ত্রাসীর পেছনে কয়েক ডজন পুরুষ ও নারী দাঁড়িয়ে আছেন, যাঁরা তাঁদের কার্যকলাপ সমর্থন করেন। তাঁরা সবাই শত্রু যোদ্ধা। এর মধ্যে শহীদদের মায়েরাও রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের ফুল ও চুমু দিয়ে জাহান্নামে পাঠান। তাঁদের উচিত তাঁদের ছেলেদের অনুসরণ করা, এর চেয়ে বেশি কিছু হবে না। তাঁদের যেতে হবে, যেমন তাঁরা সাপগুলোকে লালন-পালন করেছেন। তা না হলে সেখানে আরও ছোট ছোট সাপ জন্মাবে।’
২০১৪ সালের আগস্টে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির সদস্য মোশে ফিগলিন গাজা ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি সিনাই মরুভূমির সীমান্ত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের শিবির স্থানান্তরিত করার জন্য একটি বিশদ পরিকল্পনা প্রস্তাবও করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী অন্য কোনো বিবেচনা ছাড়াই আমাদের সৈন্যদের ক্ষতি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো উপায় ব্যবহার করে সমগ্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে।’
এখন একই ধরনের কথা বলেছেন ইসরায়েলের বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। ১০ অক্টোবর তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমরা “পশুদের” মোকাবিলা করছি এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দেব...আমরা গাজা বন্ধ করে দিচ্ছি। বিদ্যুৎ, খাবার, পানি, জ্বালানি কিছু থাকবে না।’
একইভাবে ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি ইশাই ‘গাজাকে মধ্যযুগে ফেরত পাঠানোর’ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ, যিনি ২০১৪ সালে গাজায় আক্রমণের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘গাজা পুড়ে যাবে। অন্য কোনো সমীকরণ নেই।’
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাকে ‘শয়তানের শহর’ হিসেবে উল্লেখ করে একটি টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ‘হামাস যেসব স্থানকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে, আমরা সেগুলো দখল করব।’ গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ১০ লাখের বেশি শিশু-কিশোর রয়েছে। গাজায় বর্তমান ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কতজন এতিম, কতজন বিধবা, কতজন শোকার্তের প্রয়োজন হবে?
গাজার অবকাঠামো—স্কুল, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র, ব্যবসা, পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক এবং শহুরে আবাসন—সব ইসরায়েলি বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সংবাদদাতাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর জন্য জাতিসংঘের সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক রবার্তো ভ্যালেন্ট বলেছিলেন, ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় ধ্বংস হওয়া ভবনগুলো পুনর্নির্মাণ করতে কমপক্ষে ৩০ বছর সময় লাগবে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘের উন্নয়ন সম্মেলনে অনুমান করা হয়েছিল যে ২০৩০ সালের মধ্যে গাজা উপত্যকা আর অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর হবে না।
বর্তমান ইসরায়েলি আক্রমণের পরে এটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিসের (ইউএনআরডব্লিউএ) বহিঃসম্পর্কের দায়িত্বে আছেন প্যাজ ফার্নান্দেজ। তিনি বলেছেন, ‘গাজা একটি বিশাল কারাগার। সেখানে কার্যত সব শিল্প কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।’
২০০২ সালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মোশে ইয়ালোন প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের হৃদয়ের গভীরে এ বিষয়টি গেঁথে দিতে হবে যে তারা এক-একজন পরাজিত মানুষ।’ জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের মতে, গাজায় ২ হাজারের বেশি অনাথ শিশু রয়েছে। প্রায় ৫ হাজার ফিলিস্তিনি আটক রয়েছে ইসরায়েলে।
জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ দূত রিচার্ড ফকের অনুমান, ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলি দখলদারি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল তাদের কারাগারে সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে আটক করে রেখেছ, যা গাজা এবং পশ্চিম তীরের পুরুষ ফিলিস্তিনিদের প্রায় ৪০ শতাংশ। জাতিসংঘের এই বিশেষ দূতকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁর গাজায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বি’টসেলেমের মতে, ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ইসরায়েলি আদালত ৮ হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে পাথর নিক্ষেপের জন্য সাজা দিয়েছেন। তাদের ওয়েবসাইটে, সংস্থাটি পাথর ছোড়ার অপরাধে ইসরায়েলি স্নাইপারদের গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের নাম তালিকাভুক্ত করেছে। তবে ইসরায়েলি বিচার বিভাগ এসব ফিলিস্তিনি শিশুর নাম রেডিওতে প্রচার করতে নিষেধ করেছে।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে সংস্থাটি একটি ভিডিও প্রকাশ করে যাতে দেখা গেছে, পাথর নিক্ষেপের জন্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি পাঁচ বছরের শিশুকে আটক করেছে। ইউনিসেফ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিলিস্তিনি অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি দুর্ব্যবহারের বিষয়ে একটি কঠোর প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাকে ‘ব্যবস্থাগত, ব্যাপক এবং প্রাতিষ্ঠানিক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, শিশুদের ওপর নির্মম হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলকে সমর্থন করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইউনিসেফ যখন ২৬ অক্টোবর রাতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় কত শিশু নিহত হয়েছে তা গণনা করছে বলে, তখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলের বোমাবর্ষণকে ‘আত্মরক্ষার জন্য’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং ইসরায়েলের প্রতিশোধকে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ‘সম্মিলিত শাস্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু এভাবে শিশুদের হত্যা করে আসলে কী পাবে ইসরায়েল? গাজাবাসী কি এই বর্বরতার শিকার হয়ে নিজ ভূমি ছেড়ে চলে যাবে? নাকি গাজার ধ্বংসাবশেষ ও ছাই থেকে জন্ম নেবে ইসরায়লিদের ভাষায় নতুন কোনো দানব?
(অনলাইন ম্যাগাজিন কাউন্টারপাঞ্চে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত)
প্যাট্রিক হাউলেট-মার্টিন, সাংবাদিক ও পেশাদার কূটনীতিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
১৩ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
১৩ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
১৩ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
১৪ ঘণ্টা আগে