২০০৮ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন করলেও ফেনী-৩ আসনে জিততে পারেননি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। ২০১৪ সালে দলীয় প্রার্থীই দেওয়া হয়নি। আসন ছেড়ে দেওয়া হয় জাতীয় পার্টিকে (জাপা)। কিন্তু অসন্তুষ্ট হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন এক নেতা। ২০১৮ সালেও জাপাকে আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নেই দীর্ঘদিন ধরেই। এবারও কি জাপাকে আসন ছেড়ে দেবে দলটি? এদিকে বিএনপি নির্বাচনে এলে জাপার হেরে যাওয়ার সংশয়ও রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতন ভোটাররা। জোটের এই জটিল সমীকরণ নিয়েই এখন মাঠে আলোচনা বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক (মিরসরাই-সোনাগাজী) অঞ্চলের কারণে এবারও আসনটি গুরুত্ব বহন করছে। বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রার্থীরা তৎপরতা শুরু করেছেন। খালেদা জিয়ার নিজ জেলার এ আসন বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। হারানো আসনটি উদ্ধার করতে চায় দলটি। এ জন্য তারা চাচ্ছে হেভিওয়েট প্রার্থী।
আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি থাকলেও নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে অনেকে শেষ সময়ে সরে আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলেও তারা স্বতন্ত্রভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্যকে সামনে রেখে এবারও আসন ধরে রাখতে চায় জাপা।
এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন নব্বইয়ের দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি, ২০০২-০৬ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি, ২০০৯ থেকে আওয়ামী লীগের উপকমিটি ও বর্তমানে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন; জেলা যুবলীগের সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন; সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, সোনাগাজী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জেড এম কামরুল আনাম এবং যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল বাশার।
বিএনপি নির্বাচনে গেলে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ হোসেন চৌধুরী, দাগনভূঞা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি। জাপা থেকে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফেনী জেলার উপদেষ্টা বর্তমান এমপি লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও রিন্টু আনোয়ার মনোনয়ন চাইতে পারেন।
জামায়াতে ইসলামী নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলেও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি দাগনভূঞার ফখরুদ্দিন মানিকের পক্ষে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে চরমোনাই পীরের হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে তারা তিনজনের নাম প্রকাশ করেছে। তবে গত দুবার নির্বাচন করা মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের মনোনয়ন এবারও অনেকটা নিশ্চিত। এ ছাড়া ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ার প্রতীকে মাঈন উদ্দিন, বিশ্ব সুন্নি আন্দোলনের মোহাম্মদ হাসান আহমেদ সাদা গোলাপ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে অনেকে একমত পোষণ করছেন। তৃণমূল আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে দলীয় প্রার্থী চাইছেন নেতা-কর্মীরা। সরকারের উন্নয়নের কারণে এ পথে হাঁটলে বিজয় আসবে বলে মত তাঁদের। এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘এবার দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। নৌকাকে বিজয়ী করা সম্ভব। সবার আশা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার নৌকার প্রার্থী দেবেন।’
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন বিএনপির প্রার্থী। দলটি আসনের দুই উপজেলায় আগের সেই অবস্থান ফিরে পেতে চাইছে। এ জন্য শুরু হয়েছে জোর তৎপরতা। নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে আকবর হোসেন জানান, ‘নির্বাচনে গেলে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে কাজ করব। দল যদি আমাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়, তাহলে বিজয়ী হতে সবাইকে নিয়ে কাজ করব।’
বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ভোটাররা জানান, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে দল থেকে মনোনয়ন দিলে দল-মত-নির্বিশেষে সবাই যোগ্য ব্যক্তিকে সমর্থন জানাতে হীনমন্যতা বোধ করবে না। এতে নির্বাচনও হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।