মাসুদ উর রহমান
১ জুলাই সোমবার থেকে পেনশন নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ আছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে শিক্ষকদের এ কেমন আন্দোলন? উত্তর হচ্ছে, এ আন্দোলনটি কিন্তু এক দিনে চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি। অনেক দিন থেকেই শিক্ষকেরা এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে আসছেন, পাশাপাশি ছোটখাটো কর্মসূচিও তাঁরা পালন করেছেন কিন্তু কর্ণপাত করেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কেন করেনি? কারণ শিক্ষা এখন সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ই না। প্রসঙ্গক্রমে কিছু তথ্য-উপাত্ত দিলে হয়তো পাঠকদের বুঝতে সহজ হবে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রথম বাজেট হয় ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর। সেই বাজেটে শিক্ষা খাতে এ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ (জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ) সরকারি ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছিল, যা কমতে কমতে বর্তমানে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশে নেমে এসেছে; অর্থাৎ জিডিপি ৫ শতাংশ থেকে নেমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয়েছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এই ক্রমহ্রাসমান তথ্যই প্রমাণ করে শিক্ষা এখন আর সরকারের প্রায়োরিটির কোনো বিষয় নয়। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ (জিডিপির অনুপাতে) ২০ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।
শিক্ষার মূল ভিত্তিটা গড়ে দেয় যাঁরা, সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন, পরিমাণের দিক দিয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৫তম! হাইস্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকান—একই অবস্থা সর্বত্র! আর তাই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে হরহামেশাই এখন নির্দ্বিধায় অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে মেধাবীরা। একটি উদাহরণ দিই। অনেক বছর আগের ঘটনা। শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা এ বি এম জি কিবরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। সারদা একাডেমিতে আইজিপি কিবরিয়াকে নতুন প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে তদানীন্তন প্রশিক্ষককে প্রিন্সিপাল বলেন, ‘দে আর ভেরি ব্রিলিয়ান্ট স্যার, ওয়ান অব দেম ওয়াজ আ ইউনিভার্সিটি টিচার।’
অর্থাৎ প্রিন্সিপাল এটিই বোঝাতে চেয়েছিলেন, এই পুলিশ অফিসারদের মধ্যে এমন একজন অতি মেধাবী আছেন, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এখন সেই মর্যাদা নেই কেন কিংবা কেন মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না? সত্যি বলতে কি, মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না এটি–যেমন সত্যি, আবার প্রকৃত মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগবঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও পত্রিকার খবরে প্রায়ই দেখা যায়। শুনতে খারাপ লাগলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগের নামে রাজনৈতিক বিবেচনায় এখন চলে ভোটার নিয়োগ! যত ভালো রেজাল্টই থাকুক না কেন কিংবা উচ্চতর গবেষণা—রাজনৈতিক আনুগত্য না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়াটা এখন খুব কঠিন। শুধু কি তা-ই ? টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার খবরও আমরা ইতিমধ্যে হজম করেছি।
পাবলিকের একটা গড়পড়তা বুলি এখন চারদিকে শোনা যায়—ক্লাসে পড়ায় না, টিউশন-বাণিজ্য করে কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টটাইম করে—এগুলো একেবারে মিথ্যা নয়। কিন্তু সংখ্যার বিচারে শতকরা কত ভাগ? অর্থাৎ শিক্ষকেরা আর আগের মতো নেই! আরে বাবা থাকবে কেমন করে? শিক্ষক তো এখন ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সরদার! তার না আছে স্বল্প বেতনের বাইরে অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ, না আছে ক্ষমতা।
একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কিংবা একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বেতন স্কেল কলেজের সহকারী অধ্যাপকের সমান। দুজনই বিসিএস পাস করেছেন, কিন্তু অর্থ আর ক্ষমতার বৈষম্যটা অনুভব করেন। কাজেই একজন মেধাবী কেন শিক্ষক হতে চাইবেন? জানপ্রাণ দিয়ে মুখস্থনির্ভর বিসিএস পাস করে প্রশাসন, পুলিশ, কর-ক্যাডার হওয়ার যোগ্য হতে পারাটাই তো কাঙ্ক্ষিত হওয়া উচিত। আর এভাবেই মেধাবীদের শিক্ষকতায় নিরুৎসাহিত করার ব্যবস্থা করে রাষ্ট্র কীভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন আশা করতে পারে?
যদি বলি শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের উদাসীনতা আর অবহেলাই আজ শিক্ষার এ দুরবস্থার জন্য দায়ী, তাহলে একটুও ভুল বলা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আলোচনায় প্রস্তুত এবং দ্রুত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া শুরু করতে চান। কিন্তু দাবির সুরাহা না হলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাঁদের উপায় থাকবে না। কেন উপায় থাকবে না, তার কারণটি এই ফাঁকে একটু বলে নেওয়া যাক।
আমরা সবাই জানি, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট। বর্তমানে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় মোট পাঁচটি কর্মসূচি (স্কিম) রয়েছে। এগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস, সমতা ও প্রত্যয়। এর মধ্যে প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আপত্তি কেন? শিক্ষকেরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা (যেটি সর্বনিম্ন) কেটে রাখার কথা বলা হয়েছে, যা বর্তমান পেনশন ব্যবস্থায় নেই। এ ছাড়া প্রত্যয় স্কিমে আনুতোষিকও শূন্য। বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন; কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমে তা উল্লেখ নেই। এর বাইরে প্রত্যয় স্কিমে পেনশনধারীদের বয়সসীমা ৬০ বছর রাখা হয়েছে, যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অবসরে যান ৬৫ বছরে। আর বর্তমান পেনশনব্যবস্থায় এককালীন বিশাল অঙ্কের অর্থ পাওয়া যায়, যা প্রত্যয় স্কিমে সম্ভব নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যরা কেন আন্দোলন করছেন না? করছে না এই কারণে যে ব্যতিক্রম বাদ দিলে সরকারি চাকরিজীবীরা চাকরিতে থাকা অবস্থায় যেভাবে গাড়ি-বাড়ির মালিক হতে পারেন, সাধারণ শিক্ষকের ক্ষেত্রে সেটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর কোনো শিক্ষকের হায়াত যদি পরম করুণাময় ৭৫ বছরের বেশি লিখে রাখেন, তাহলে তাঁর অবস্থা কী হবে—একবার অনুমান করতে পারেন?
আমি চাই বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই অচলাবস্থা দীর্ঘদিন চললে তাতে অনেক ফাঁকফোকর সৃষ্টি হতে পারে। অতীতে স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা দাবি আদায়ে রাজপথে দিনের পর দিন অনশন করে শেষ পর্যন্ত লাঠিপেটা খেয়ে ফিরতে হয়েছে—এমন নজিরও কিন্তু এ দেশে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তেমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা যেমন রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাকর হবে, তেমনি সরকারের জন্যও হতে পারে চরম অস্বস্তিকর।
শুভবুদ্ধির উদয় হোক সব পক্ষের।
মাসুদ উর রহমান, কলেজশিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী
১ জুলাই সোমবার থেকে পেনশন নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ আছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে শিক্ষকদের এ কেমন আন্দোলন? উত্তর হচ্ছে, এ আন্দোলনটি কিন্তু এক দিনে চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি। অনেক দিন থেকেই শিক্ষকেরা এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে আসছেন, পাশাপাশি ছোটখাটো কর্মসূচিও তাঁরা পালন করেছেন কিন্তু কর্ণপাত করেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কেন করেনি? কারণ শিক্ষা এখন সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ই না। প্রসঙ্গক্রমে কিছু তথ্য-উপাত্ত দিলে হয়তো পাঠকদের বুঝতে সহজ হবে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রথম বাজেট হয় ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর। সেই বাজেটে শিক্ষা খাতে এ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ (জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ) সরকারি ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছিল, যা কমতে কমতে বর্তমানে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশে নেমে এসেছে; অর্থাৎ জিডিপি ৫ শতাংশ থেকে নেমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয়েছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এই ক্রমহ্রাসমান তথ্যই প্রমাণ করে শিক্ষা এখন আর সরকারের প্রায়োরিটির কোনো বিষয় নয়। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ (জিডিপির অনুপাতে) ২০ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।
শিক্ষার মূল ভিত্তিটা গড়ে দেয় যাঁরা, সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন, পরিমাণের দিক দিয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৫তম! হাইস্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকান—একই অবস্থা সর্বত্র! আর তাই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে হরহামেশাই এখন নির্দ্বিধায় অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে মেধাবীরা। একটি উদাহরণ দিই। অনেক বছর আগের ঘটনা। শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা এ বি এম জি কিবরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। সারদা একাডেমিতে আইজিপি কিবরিয়াকে নতুন প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে তদানীন্তন প্রশিক্ষককে প্রিন্সিপাল বলেন, ‘দে আর ভেরি ব্রিলিয়ান্ট স্যার, ওয়ান অব দেম ওয়াজ আ ইউনিভার্সিটি টিচার।’
অর্থাৎ প্রিন্সিপাল এটিই বোঝাতে চেয়েছিলেন, এই পুলিশ অফিসারদের মধ্যে এমন একজন অতি মেধাবী আছেন, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এখন সেই মর্যাদা নেই কেন কিংবা কেন মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না? সত্যি বলতে কি, মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না এটি–যেমন সত্যি, আবার প্রকৃত মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগবঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও পত্রিকার খবরে প্রায়ই দেখা যায়। শুনতে খারাপ লাগলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগের নামে রাজনৈতিক বিবেচনায় এখন চলে ভোটার নিয়োগ! যত ভালো রেজাল্টই থাকুক না কেন কিংবা উচ্চতর গবেষণা—রাজনৈতিক আনুগত্য না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়াটা এখন খুব কঠিন। শুধু কি তা-ই ? টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার খবরও আমরা ইতিমধ্যে হজম করেছি।
পাবলিকের একটা গড়পড়তা বুলি এখন চারদিকে শোনা যায়—ক্লাসে পড়ায় না, টিউশন-বাণিজ্য করে কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টটাইম করে—এগুলো একেবারে মিথ্যা নয়। কিন্তু সংখ্যার বিচারে শতকরা কত ভাগ? অর্থাৎ শিক্ষকেরা আর আগের মতো নেই! আরে বাবা থাকবে কেমন করে? শিক্ষক তো এখন ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সরদার! তার না আছে স্বল্প বেতনের বাইরে অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ, না আছে ক্ষমতা।
একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কিংবা একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বেতন স্কেল কলেজের সহকারী অধ্যাপকের সমান। দুজনই বিসিএস পাস করেছেন, কিন্তু অর্থ আর ক্ষমতার বৈষম্যটা অনুভব করেন। কাজেই একজন মেধাবী কেন শিক্ষক হতে চাইবেন? জানপ্রাণ দিয়ে মুখস্থনির্ভর বিসিএস পাস করে প্রশাসন, পুলিশ, কর-ক্যাডার হওয়ার যোগ্য হতে পারাটাই তো কাঙ্ক্ষিত হওয়া উচিত। আর এভাবেই মেধাবীদের শিক্ষকতায় নিরুৎসাহিত করার ব্যবস্থা করে রাষ্ট্র কীভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন আশা করতে পারে?
যদি বলি শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের উদাসীনতা আর অবহেলাই আজ শিক্ষার এ দুরবস্থার জন্য দায়ী, তাহলে একটুও ভুল বলা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আলোচনায় প্রস্তুত এবং দ্রুত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া শুরু করতে চান। কিন্তু দাবির সুরাহা না হলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাঁদের উপায় থাকবে না। কেন উপায় থাকবে না, তার কারণটি এই ফাঁকে একটু বলে নেওয়া যাক।
আমরা সবাই জানি, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট। বর্তমানে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় মোট পাঁচটি কর্মসূচি (স্কিম) রয়েছে। এগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস, সমতা ও প্রত্যয়। এর মধ্যে প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আপত্তি কেন? শিক্ষকেরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা (যেটি সর্বনিম্ন) কেটে রাখার কথা বলা হয়েছে, যা বর্তমান পেনশন ব্যবস্থায় নেই। এ ছাড়া প্রত্যয় স্কিমে আনুতোষিকও শূন্য। বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন; কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমে তা উল্লেখ নেই। এর বাইরে প্রত্যয় স্কিমে পেনশনধারীদের বয়সসীমা ৬০ বছর রাখা হয়েছে, যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অবসরে যান ৬৫ বছরে। আর বর্তমান পেনশনব্যবস্থায় এককালীন বিশাল অঙ্কের অর্থ পাওয়া যায়, যা প্রত্যয় স্কিমে সম্ভব নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যরা কেন আন্দোলন করছেন না? করছে না এই কারণে যে ব্যতিক্রম বাদ দিলে সরকারি চাকরিজীবীরা চাকরিতে থাকা অবস্থায় যেভাবে গাড়ি-বাড়ির মালিক হতে পারেন, সাধারণ শিক্ষকের ক্ষেত্রে সেটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর কোনো শিক্ষকের হায়াত যদি পরম করুণাময় ৭৫ বছরের বেশি লিখে রাখেন, তাহলে তাঁর অবস্থা কী হবে—একবার অনুমান করতে পারেন?
আমি চাই বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই অচলাবস্থা দীর্ঘদিন চললে তাতে অনেক ফাঁকফোকর সৃষ্টি হতে পারে। অতীতে স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা দাবি আদায়ে রাজপথে দিনের পর দিন অনশন করে শেষ পর্যন্ত লাঠিপেটা খেয়ে ফিরতে হয়েছে—এমন নজিরও কিন্তু এ দেশে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তেমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা যেমন রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাকর হবে, তেমনি সরকারের জন্যও হতে পারে চরম অস্বস্তিকর।
শুভবুদ্ধির উদয় হোক সব পক্ষের।
মাসুদ উর রহমান, কলেজশিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে