আজকের পত্রিকা: বিএনপি ও তার মিত্ররা দাবি তুলেছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। তারা নির্বাচনে না গেলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না?
মাহবুব উল আলম হানিফ: প্রথমত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এ প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীন। তাই এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনেই মূল ভূমিকা পালন করবে। আর নির্বাচনকালীন সরকার তাদের সহায়তা করবে।
আমরা সব রাজনৈতিক দলকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে যদি কোনো দলের ভালো পরামর্শ থাকে, তারা তা দিতে পারে। একটি বিষয় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের আলোকেই হবে। এর বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আর তারা একটা অযৌক্তিক দাবি তুলেছে, তারা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। আমরা বারবার বলেছি, সংবিধানের বাইরে গিয়ে আমাদের করার কিছু নেই।
যেকোনো দলের পরামর্শ বা দাবি-দাওয়া হওয়া উচিত সংবিধানের আলোকে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কেউ যদি অযৌক্তিক দাবি তুলে আন্দোলন করে, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা কোনো ধরনের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত নই।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেওয়া যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, না নেওয়াও তেমনি গণতান্ত্রিক অধিকার। বিশেষ করে, কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং যাদের নির্বাচনে জয়লাভের সক্ষমতা কম, তারা নির্বাচনে অংশ না-ও নিতে পারে।
নির্দিষ্ট একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না—সেটা কোনো সংবিধানসম্মত কিংবা যৌক্তিক কথাও হতে পারে না। অনেক নিবন্ধিত দল আছে, তার মধ্যে দু-একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না-ও করতে পারে। তবে আমি আশাবাদী, যেসব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সক্ষমতা আছে, তারা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে শেষ পর্যন্ত।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি বলেছে, তারা আন্দোলনের মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে সরকারের পতন ঘটাবে। এই বক্তব্যটাকে কীভাবে দেখছেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন ২০১২ সাল থেকে করে আসছে। বিশেষ করে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা যখন শুরু হলো, তখন থেকে তারা আন্দোলন করছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য তারা আন্দোলন করেছে। তারা ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৫ সালে আগুন-সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি করেছে, কিন্তু তারা সফল হয়নি।
হুমকি-ধমকির রাজনীতি তারা বহু দিন থেকে করে আসছে। এসব আন্দোলন এ দেশের মানুষ দেখেছে এবং এসবে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আর যে আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকে না, সেটা কোনোভাবেই সফলতা লাভ করে না।
আওয়ামী লীগ হলো রাজপথের দল। বিএনপি হলো প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের দল। তাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সরকার পতনের সক্ষমতা এ দলের নেই। বিএনপির এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে, তারা ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজছে। তারা তাদের
বিদেশি প্রভু, বিশেষ করে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল যারা, তাদের কাছে গিয়ে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।এভাবে সরকারের পতন হবে না। সেটা তারাও জানে। জানে বলেই তারা ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজছে।
আজকের পত্রিকা: আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে কোনো সংকটের আশঙ্কা আছে কী?
মাহবুব উল আলম হানিফ: স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটা কিছু কিছু দেখা যাচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিন্তু তা থাকবে না। স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক ব্যবহারটাই আমাদের দেশের মানুষের কাছে নতুন বিষয় ছিল। আগে আমরা দেখতাম স্থানীয় নির্বাচনে যাঁদের সামাজিক, পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা, প্রভাব আছে, তাঁরাই ৫-১০ ধরে নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করে তারপর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু দলীয় প্রতীক দেওয়ার পর থেকে দেখা গেছে, যাঁরা সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে, তাঁরাই দলের মনোনয়ন পান। এ কারণে দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রস্তুত করেছেন, কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পাননি, তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান থাকবে না। যদি কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তাহলে তিনি দল বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেন না। এ কারণে তাঁর আর আওয়ামী লীগ করার সুযোগ নেই।
আজকের পত্রিকা: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, দলে তাঁর প্রয়োজন আছে। আপনি কী মনে করেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: আওয়ামী লীগ এ দেশের বৃহৎ একটি দল। এ দলে হাজার হাজার, লাখ লাখ নেতা-কর্মী আছে। বিভিন্ন স্তরে নির্বাচন করার মতো আমাদের অসংখ্য যোগ্য প্রার্থী আছে। বিভিন্ন নেতা-কর্মীর চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিভিন্ন রকম আছে। একজন ব্যক্তি তাঁর জ্ঞানের আলোকে কিছু কথা বলতেই পারেন। যখন কেউ বলেন, আওয়ামী লীগে তাঁর প্রয়োজন আছে, তখন বুঝতে হবে তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞানের মাত্রাটা কোন পর্যায়ের। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ একটি নদীর মতো প্রবহমান দল। এ দলে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নন। কেউ যদি মনে করেন, এ দলে তাঁর প্রয়োজন আছে, তাহলে বুঝতে হবে তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক অজ্ঞতাটা প্রকট।
আজকের পত্রিকা: বরিশাল সিটি করপোরেশনে বঙ্গবন্ধুর দুই আত্মীয়কে নিয়ে তৈরি সংকট সমাধান হবে বলে আপনি মনে করেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: অবশ্যই হবে। স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব হয়। কারণ, যখন কেউ অনেক দিন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে মনোনয়ন পান না, তখন তাঁর মধ্যে কষ্ট থাকাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আর বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যই মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবেন।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচন সামনে রেখে জোটকে আরও সম্প্রসারিত কথার কথা শোনা যাচ্ছে। ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে মৈত্রী হলে ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে সংকট দেখা দেবে কী?
মাহবুব উল আলম হানিফ: আমরা তো বলেছি, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেটাকে বিশ্বাস করে—এ রকম মানসিকতার ব্যক্তি বা দল যদি আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐক্য করতে চায়, তাদের জন্য অবশ্যই আমাদের দরজা খোলা থাকবে। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে না বা জাতির পিতাকে স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেন, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো ঐক্য হওয়ার সুযোগ নেই।
আজকের পত্রিকা: আপনি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো দুর্বলতা দেখেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: আমার মতে, আওয়ামী লীগের দুর্বলতা হলো, প্রচারের দুর্বলতা। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, এই উন্নয়নের সুফল জনগণ পাচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের খবরগুলো আমরা জনগণের কাছে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারছি না বা পারিনি। পাশাপাশি আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার, অপপ্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, সেসবের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের নেতা-কর্মীরা উদাসীন। এটাই আওয়ামী লীগের বড় দুর্বলতা বলে আমি মনে করি। এ ছাড়া আমাদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী। দেশের মানুষের আস্থা, ভরসা আছে আমাদের নেত্রীর প্রতি। স্বাভাবিক হিসেবে এ দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির ধারক হিসেবে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে আবারও দেশের জনগণ ম্যান্ডেট দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
আজকের পত্রিকা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সম্প্রতি একজন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে কিছু বলবেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাড়ে তিন বছর ধরে সারা পৃথিবী একটা বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যখন সবকিছু স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল, সেই সময়ে কিন্তু শেখ হাসিনা সব পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমেরিকা, ইউরোপের দেশসমূহে মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটেছে। সম্প্রতি তুরস্ক, জার্মানি, ইংল্যান্ডসহ প্রায় সব জায়গায় মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। নানা বাস্তব কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বৈশ্বিক প্রভাবে বাংলাদেশেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক।
আর আমাদের দেশের বড় সমস্যা হলো, মানুষের মধ্যে নীতিনৈতিকতা ও সততার বড় অভাব। আমরা সুযোগ পেলেই বাড়তি মুনাফার জন্য মানুষকে ঠকাই। বাড়তি মুনাফার জন্য ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাই। পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে বড়দিন উপলক্ষে বেশির ভাগ পণ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ছাড় দেওয়া হয়। আর বাংলাদেশে আমরা কী করি? রমজান মাসে আমরা পুরো বছরের মুনাফা উঠিয়ে নেওয়ার টার্গেট নিয়ে মাঠে নামি। সব জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিই। এসব কারণেই কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসের দাম হ্রাস পেলেও কোনো কারণ ছাড়াই এ দেশে দাম বাড়ানো হয়। ভয়াবহ, আমাদের মানসিকতার দৈন্য আছে। এ ক্ষেত্রে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ।
মাহবুব উল আলম হানিফ: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ও তার মিত্ররা দাবি তুলেছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। তারা নির্বাচনে না গেলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না?
মাহবুব উল আলম হানিফ: প্রথমত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এ প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীন। তাই এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনেই মূল ভূমিকা পালন করবে। আর নির্বাচনকালীন সরকার তাদের সহায়তা করবে।
আমরা সব রাজনৈতিক দলকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে যদি কোনো দলের ভালো পরামর্শ থাকে, তারা তা দিতে পারে। একটি বিষয় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের আলোকেই হবে। এর বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আর তারা একটা অযৌক্তিক দাবি তুলেছে, তারা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। আমরা বারবার বলেছি, সংবিধানের বাইরে গিয়ে আমাদের করার কিছু নেই।
যেকোনো দলের পরামর্শ বা দাবি-দাওয়া হওয়া উচিত সংবিধানের আলোকে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কেউ যদি অযৌক্তিক দাবি তুলে আন্দোলন করে, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা কোনো ধরনের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত নই।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেওয়া যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, না নেওয়াও তেমনি গণতান্ত্রিক অধিকার। বিশেষ করে, কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং যাদের নির্বাচনে জয়লাভের সক্ষমতা কম, তারা নির্বাচনে অংশ না-ও নিতে পারে।
নির্দিষ্ট একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না—সেটা কোনো সংবিধানসম্মত কিংবা যৌক্তিক কথাও হতে পারে না। অনেক নিবন্ধিত দল আছে, তার মধ্যে দু-একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না-ও করতে পারে। তবে আমি আশাবাদী, যেসব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সক্ষমতা আছে, তারা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে শেষ পর্যন্ত।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি বলেছে, তারা আন্দোলনের মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে সরকারের পতন ঘটাবে। এই বক্তব্যটাকে কীভাবে দেখছেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন ২০১২ সাল থেকে করে আসছে। বিশেষ করে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা যখন শুরু হলো, তখন থেকে তারা আন্দোলন করছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য তারা আন্দোলন করেছে। তারা ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৫ সালে আগুন-সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি করেছে, কিন্তু তারা সফল হয়নি।
হুমকি-ধমকির রাজনীতি তারা বহু দিন থেকে করে আসছে। এসব আন্দোলন এ দেশের মানুষ দেখেছে এবং এসবে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আর যে আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকে না, সেটা কোনোভাবেই সফলতা লাভ করে না।
আওয়ামী লীগ হলো রাজপথের দল। বিএনপি হলো প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের দল। তাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সরকার পতনের সক্ষমতা এ দলের নেই। বিএনপির এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে, তারা ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজছে। তারা তাদের
বিদেশি প্রভু, বিশেষ করে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল যারা, তাদের কাছে গিয়ে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।এভাবে সরকারের পতন হবে না। সেটা তারাও জানে। জানে বলেই তারা ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজছে।
আজকের পত্রিকা: আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে কোনো সংকটের আশঙ্কা আছে কী?
মাহবুব উল আলম হানিফ: স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটা কিছু কিছু দেখা যাচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিন্তু তা থাকবে না। স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক ব্যবহারটাই আমাদের দেশের মানুষের কাছে নতুন বিষয় ছিল। আগে আমরা দেখতাম স্থানীয় নির্বাচনে যাঁদের সামাজিক, পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা, প্রভাব আছে, তাঁরাই ৫-১০ ধরে নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করে তারপর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু দলীয় প্রতীক দেওয়ার পর থেকে দেখা গেছে, যাঁরা সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে, তাঁরাই দলের মনোনয়ন পান। এ কারণে দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রস্তুত করেছেন, কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পাননি, তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান থাকবে না। যদি কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তাহলে তিনি দল বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেন না। এ কারণে তাঁর আর আওয়ামী লীগ করার সুযোগ নেই।
আজকের পত্রিকা: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, দলে তাঁর প্রয়োজন আছে। আপনি কী মনে করেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: আওয়ামী লীগ এ দেশের বৃহৎ একটি দল। এ দলে হাজার হাজার, লাখ লাখ নেতা-কর্মী আছে। বিভিন্ন স্তরে নির্বাচন করার মতো আমাদের অসংখ্য যোগ্য প্রার্থী আছে। বিভিন্ন নেতা-কর্মীর চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিভিন্ন রকম আছে। একজন ব্যক্তি তাঁর জ্ঞানের আলোকে কিছু কথা বলতেই পারেন। যখন কেউ বলেন, আওয়ামী লীগে তাঁর প্রয়োজন আছে, তখন বুঝতে হবে তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞানের মাত্রাটা কোন পর্যায়ের। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ একটি নদীর মতো প্রবহমান দল। এ দলে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নন। কেউ যদি মনে করেন, এ দলে তাঁর প্রয়োজন আছে, তাহলে বুঝতে হবে তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক অজ্ঞতাটা প্রকট।
আজকের পত্রিকা: বরিশাল সিটি করপোরেশনে বঙ্গবন্ধুর দুই আত্মীয়কে নিয়ে তৈরি সংকট সমাধান হবে বলে আপনি মনে করেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: অবশ্যই হবে। স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব হয়। কারণ, যখন কেউ অনেক দিন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে মনোনয়ন পান না, তখন তাঁর মধ্যে কষ্ট থাকাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আর বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যই মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবেন।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচন সামনে রেখে জোটকে আরও সম্প্রসারিত কথার কথা শোনা যাচ্ছে। ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে মৈত্রী হলে ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে সংকট দেখা দেবে কী?
মাহবুব উল আলম হানিফ: আমরা তো বলেছি, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেটাকে বিশ্বাস করে—এ রকম মানসিকতার ব্যক্তি বা দল যদি আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐক্য করতে চায়, তাদের জন্য অবশ্যই আমাদের দরজা খোলা থাকবে। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে না বা জাতির পিতাকে স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেন, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো ঐক্য হওয়ার সুযোগ নেই।
আজকের পত্রিকা: আপনি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো দুর্বলতা দেখেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: আমার মতে, আওয়ামী লীগের দুর্বলতা হলো, প্রচারের দুর্বলতা। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, এই উন্নয়নের সুফল জনগণ পাচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের খবরগুলো আমরা জনগণের কাছে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারছি না বা পারিনি। পাশাপাশি আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার, অপপ্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, সেসবের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের নেতা-কর্মীরা উদাসীন। এটাই আওয়ামী লীগের বড় দুর্বলতা বলে আমি মনে করি। এ ছাড়া আমাদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী। দেশের মানুষের আস্থা, ভরসা আছে আমাদের নেত্রীর প্রতি। স্বাভাবিক হিসেবে এ দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির ধারক হিসেবে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে আবারও দেশের জনগণ ম্যান্ডেট দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
আজকের পত্রিকা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সম্প্রতি একজন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে কিছু বলবেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ: করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাড়ে তিন বছর ধরে সারা পৃথিবী একটা বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যখন সবকিছু স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল, সেই সময়ে কিন্তু শেখ হাসিনা সব পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমেরিকা, ইউরোপের দেশসমূহে মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটেছে। সম্প্রতি তুরস্ক, জার্মানি, ইংল্যান্ডসহ প্রায় সব জায়গায় মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। নানা বাস্তব কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বৈশ্বিক প্রভাবে বাংলাদেশেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক।
আর আমাদের দেশের বড় সমস্যা হলো, মানুষের মধ্যে নীতিনৈতিকতা ও সততার বড় অভাব। আমরা সুযোগ পেলেই বাড়তি মুনাফার জন্য মানুষকে ঠকাই। বাড়তি মুনাফার জন্য ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাই। পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে বড়দিন উপলক্ষে বেশির ভাগ পণ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ছাড় দেওয়া হয়। আর বাংলাদেশে আমরা কী করি? রমজান মাসে আমরা পুরো বছরের মুনাফা উঠিয়ে নেওয়ার টার্গেট নিয়ে মাঠে নামি। সব জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিই। এসব কারণেই কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসের দাম হ্রাস পেলেও কোনো কারণ ছাড়াই এ দেশে দাম বাড়ানো হয়। ভয়াবহ, আমাদের মানসিকতার দৈন্য আছে। এ ক্ষেত্রে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ।
মাহবুব উল আলম হানিফ: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে