খাল ভরাট করে বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ২৮

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের একটি খাল ভরাট করে বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজও। অবিলম্বে সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করার দাবি স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হবিগঞ্জ-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের বেকিটেকা থেকে বামৈ তিনপুল পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সরকারি খাল দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িসহ নানা স্থাপনা। কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজের জমির সঙ্গে মিলিয়ে বানিয়েছেন কৃষিজমি। কেউ কেউ বানিয়েছেন পুকুর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৬-২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও পরে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও সরকারি খাল প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে চলে যায়। খাল দখলের নেতৃত্ব দিয়েছেন লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন আজাদ। উপজেলার সব কাজে তাঁর হস্তক্ষেপ ছিল। তাঁর বাড়িতে গাড়ি যাতায়াতের সুবিধার জন্য খাল ভরাট করেছেন। বেকিটেকা এলাকায় খালের প্রবেশমুখের একটি অংশ ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করেন। পরে বাড়িটি বিক্রি করে দেন তিনি। তাঁর চাচাতো ভাই মোতাহের মাস্টার খাল ভরাট করে শাকসবজি চাষ করছেন। তবে নিজেদের মালিকানা জায়গা অন্য লোকের কাছে বিক্রি করেছেন বলে দাবি আজাদের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সুমনের।

আজাদের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত বুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা খোকন চন্দ্র গোপ খালের ওপরে একটি মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া খালের ওপর রাইস মিল, স মিলসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। দখলদার সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বা তাঁদের আশীর্বাদপুষ্ট।

অভিযোগের বিষয়ে বুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন চন্দ্র বলেন, ‘আমি কোনো খাল দখল করিনি। এটা আমাদের বাপ-দাদার আমলের সম্পদ। যদি অবৈধভাবে খাল দখল হয়ে থাকে, তা উদ্ধার করা জরুরি।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুল্লা বাজারের পশ্চিম অংশে আওয়ামী লীগ নেতা চুনু মিয়াসহ কয়েকজন মিলে মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করেছেন। বামৈ বাজারে দুই বিএনপি নেতা এবং তাঁদের আত্মীয়-স্বজনেরা দোকান নির্মাণ করেছেন। 

কালাউক বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ বলেন, ‘খালের পাড়ে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বাজার রয়েছে। এসব বাজারের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের গোডাউন হিসেবে খালের ওপর ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তা ছাড়া দোকানগুলোর সব ময়লা-আবর্জনা খালে ফেলা হয়। যে কারণে খাল ভরাট হয়ে যায়। বৃষ্টি এলে এই খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয়ে হাওরে গিয়ে পড়ত। এখন খাল দখল ও ভরাট হওয়ায় পুরো উপজেলাজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।’

বামৈ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন ফুরুখ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নেও এই সরকারি খাল দখল করে রেখেছে অনেকে। খাল দখল হয়ে ভরাট হওয়ায়, জলাবদ্ধতা ও কৃষিকাজে অসুবিধা হচ্ছে এলাকাবাসীর। এখন যেহেতু কোনো রাজনৈতিক প্রভাব নেই, তাই খালটি পুনরুদ্ধার হওয়া দরকার।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে দখলকৃত খালটি পুনরুদ্ধার করা জরুরি। এতে ফসলি জমিগুলো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। একই সঙ্গে মানুষ পরিবেশ ধ্বংসের বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকেও বাঁচবে। খাল দখলে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা দরকার। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়াতে সাহস না পায়।

লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা জানান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমানের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করে সরকারি খাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি সম্পত্তি যারাই দখল করেছে, তাদের চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত