রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৫৪৩ কোটি ৭ লাখ ৪ হাজার ২১৮ টাকা। এর মধ্যে শুধু করোনাপ্রতিরোধী টিকা কিনতেই ব্যয় হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৪০ কোটি ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এমনকি করোনা বিডির দুটি অ্যাপ বানাতে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৮০ টাকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড মহামারি সমাপ্তি ঘোষণার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত হিসাব নিরূপণ করেছে। সম্প্রতি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
তবে করোনাকালে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রণোদনার অর্থ এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সেই প্যাকেজে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সেই থেকে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৭ জনের দেহে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯
হাজার ৪৭৭ জনের। এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীপ্রতি সরকারের ব্যয় হয়েছে ৫৮ হাজার ৯১৬ টাকা।
কোভিড প্রতিরোধে দেশে প্রথম অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা গেছে, সেই টিকাসহ সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কিনতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। টিকা প্রয়োগের সিরিঞ্জ কিনতে লাগে ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সিরিঞ্জ জাহাজীকরণে ব্যয় হয়েছে ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮০ টাকা।
কোভিডপ্রতিরোধী বিভিন্ন সরঞ্জাম আকাশপথে আনতে ১৯ কোটি ৫৭ লাখ ৩ হাজার ৩৫৪ টাকা ব্যয় হয়েছে। শিশুদের টিকাদানের জন্য এডি সিরিঞ্জ কিনতে ব্যয় হয়েছে ১৭৮ কোটি ২ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কোভিড রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্প থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়েছে ৪০ হাজার ১২৫ কোটি ৯ লাখ টাকায়। একই জাতীয় সরঞ্জাম কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) মাধ্যমে কিনতে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৯২৮ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৩ টাকা।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন অবশ্য বলেন, এত বড় মহামারি নিয়ন্ত্রণে অনেক ব্যয় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘আমরা মহামারি মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছি। তবে বিপুল অর্থ লুটপাট হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি চক্র মিলে এই লুটপাট চালিয়েছে। একাধিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করায় অনেক টাকা অপচয় হয়েছে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কোভিড মোকাবিলায় সরকারের টিকা কার্যক্রমে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখতে পায়। গত বছরের ১২ এপ্রিল প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে সংস্থাটি জানায়, প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যায়নি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান তখন বলেছিলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও টিকা কার্যক্রম এবং করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নেওয়া প্রণোদনা কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ সুশাসনের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, ‘গবেষণায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকাসংশ্লিষ্টতার যে কথা বলেছেন, বাস্তবে তার অর্ধেক হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেয়েছি। টিকায় ১৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এখানেও তথ্যের ঘাটতি থাকতে পারে।’
দেশে মহামারির শুরুতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল কোয়ারেন্টিন। এই কোয়ারেন্টিন বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি ৬৮ লাখ ১ হাজার টাকা। কোভিড নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এসব কার্যক্রম চালাতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৭৯৮ কোটি ৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কোভিড রোগীদের চিকিৎসা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সরঞ্জাম, নিরাপত্তা সরঞ্জাম যন্ত্রপাতিসহ ২৮ ধরনের পণ্য কেনা হয়। এসব চিকিৎসাপণ্য কিনতে খরচ হয় ১২ হাজার ৯২৮ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৩ টাকা। এর মধ্যে ৩৭ লাখ সেট আরটি-পিসিআর কিট (ভিটিএম, সোয়াব স্টিকসহ) কেনা হয় ৬১৩ কোটি ৩১ লাখ টাকায়। এর বাইরে আরও ২০ লাখ ৮০ হাজার বিটিএম ও সোয়াব স্টিক কেনা হয় ৩৭ কোটি ৯৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭২০ টাকায়।
কোভিড-১৯ অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য ২ লাখ ২০ হাজার ৬২৫টি কিট কেনা হয় ২২ কোটি ৭২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকায়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় ৩১ লাখ ২৮ হাজার ৪৭০ সেট পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) কিনতে ব্যয় হয় ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৪৯ হাজার ২০০ টাকা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য ১ হাজার ১৯৩টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা কিনতে হয় ৪৩ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। ১১ হাজার ১৩৬টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর কেনা হয় ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়।
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২৫টি পোর্টেবল এক্স-রে যন্ত্র কিনতে ব্যয় হয় ৭ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৪৩টি অক্সিজেন জেনারেটর প্ল্যান্ট কিনে হাসপাতালে স্থাপন করতে ব্যয় হয় ১৪৬ কোটি ৯০ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৬ টাকা। ২৩২টি ভেন্টিলেটর কেনা হয় ৬২ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। ৪৬৩টি পেশেন্ট মনিটর কিনতে লাগে ১২ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার টাকা। ১০০টি এবিজি মেশিন কেনা হয় ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকায়। ৮৫৩টি আইসিইউ শয্যা কেনা হয় ২৩ কোটি ৮৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকায়। ১৭ হাজার ৬০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে লাগে ২৩ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনা হয় ৮ কোটি ৯৬ লাখ ৩ হাজার ২৯০ টাকার। ৭ লাখ ৬০ হাজার এন-৯৫ মাস্ক কেনা হয় ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। ৭ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮ পিস কেএন-৯৫ মাস্ক কেনা হয় ৬ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৬ টাকায়। ৬৯ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬৯ পিস সার্জিক্যাল মাস্ক কিনতে লাগে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯৯ টাকা। তিন লাখ পিস গ্লোভস (এক্সামিনেশন) কেনা হয় ৩৬ লাখ টাকায়। ৮ লাখ ৯০ হাজার ৩৫২ জোড়া সার্জিক্যাল গ্লোভস কেনা হয় ২ কোটি ৯৬ লাখ ৮২ হাজার ৩৭০ টাকায়। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটি আরটি-পিসিআর কেনা হয় ৫ কোটি ৭০ লাখ ৫৩ হাজার ৪০০ টাকায়। পরে আরও ১২টি পিসিআর কেনা হয় ২৯ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৭ টাকায়। এ ছাড়া ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৯৬ ভায়াল রেমডিসিভির ইনজেকশন কেনা হয় ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ টাকায়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোভিডকালে আমাদের দেশে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের প্রতি সরকারি সহায়তা ছিল অপ্রতুল। এ ছাড়া ফিল্ড হাসপাতাল করার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা নষ্ট করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অতি উচ্চমূল্যে সেবা কেনা হয়েছে।’
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে যে ব্যয় হয়েছে, সেখানে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। দেশের নাগরিকদের যদি সন্দেহ হয় যে এই খাতে ব্যয়ে অনিয়ম হয়েছে, তাহলে তদন্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হয়েছে, আবার প্রণোদনার মতো অনেক দরকারি ব্যয় করা হয়নি। এ ছাড়া কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তাই এ ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৫৪৩ কোটি ৭ লাখ ৪ হাজার ২১৮ টাকা। এর মধ্যে শুধু করোনাপ্রতিরোধী টিকা কিনতেই ব্যয় হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৪০ কোটি ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এমনকি করোনা বিডির দুটি অ্যাপ বানাতে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৮০ টাকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড মহামারি সমাপ্তি ঘোষণার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত হিসাব নিরূপণ করেছে। সম্প্রতি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
তবে করোনাকালে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রণোদনার অর্থ এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সেই প্যাকেজে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সেই থেকে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৭ জনের দেহে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯
হাজার ৪৭৭ জনের। এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীপ্রতি সরকারের ব্যয় হয়েছে ৫৮ হাজার ৯১৬ টাকা।
কোভিড প্রতিরোধে দেশে প্রথম অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা গেছে, সেই টিকাসহ সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কিনতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। টিকা প্রয়োগের সিরিঞ্জ কিনতে লাগে ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সিরিঞ্জ জাহাজীকরণে ব্যয় হয়েছে ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮০ টাকা।
কোভিডপ্রতিরোধী বিভিন্ন সরঞ্জাম আকাশপথে আনতে ১৯ কোটি ৫৭ লাখ ৩ হাজার ৩৫৪ টাকা ব্যয় হয়েছে। শিশুদের টিকাদানের জন্য এডি সিরিঞ্জ কিনতে ব্যয় হয়েছে ১৭৮ কোটি ২ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কোভিড রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্প থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়েছে ৪০ হাজার ১২৫ কোটি ৯ লাখ টাকায়। একই জাতীয় সরঞ্জাম কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) মাধ্যমে কিনতে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৯২৮ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৩ টাকা।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন অবশ্য বলেন, এত বড় মহামারি নিয়ন্ত্রণে অনেক ব্যয় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘আমরা মহামারি মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছি। তবে বিপুল অর্থ লুটপাট হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি চক্র মিলে এই লুটপাট চালিয়েছে। একাধিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করায় অনেক টাকা অপচয় হয়েছে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কোভিড মোকাবিলায় সরকারের টিকা কার্যক্রমে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখতে পায়। গত বছরের ১২ এপ্রিল প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে সংস্থাটি জানায়, প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যায়নি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান তখন বলেছিলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও টিকা কার্যক্রম এবং করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নেওয়া প্রণোদনা কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ সুশাসনের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, ‘গবেষণায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকাসংশ্লিষ্টতার যে কথা বলেছেন, বাস্তবে তার অর্ধেক হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেয়েছি। টিকায় ১৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এখানেও তথ্যের ঘাটতি থাকতে পারে।’
দেশে মহামারির শুরুতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল কোয়ারেন্টিন। এই কোয়ারেন্টিন বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি ৬৮ লাখ ১ হাজার টাকা। কোভিড নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এসব কার্যক্রম চালাতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৭৯৮ কোটি ৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কোভিড রোগীদের চিকিৎসা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সরঞ্জাম, নিরাপত্তা সরঞ্জাম যন্ত্রপাতিসহ ২৮ ধরনের পণ্য কেনা হয়। এসব চিকিৎসাপণ্য কিনতে খরচ হয় ১২ হাজার ৯২৮ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৩ টাকা। এর মধ্যে ৩৭ লাখ সেট আরটি-পিসিআর কিট (ভিটিএম, সোয়াব স্টিকসহ) কেনা হয় ৬১৩ কোটি ৩১ লাখ টাকায়। এর বাইরে আরও ২০ লাখ ৮০ হাজার বিটিএম ও সোয়াব স্টিক কেনা হয় ৩৭ কোটি ৯৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭২০ টাকায়।
কোভিড-১৯ অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য ২ লাখ ২০ হাজার ৬২৫টি কিট কেনা হয় ২২ কোটি ৭২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকায়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় ৩১ লাখ ২৮ হাজার ৪৭০ সেট পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) কিনতে ব্যয় হয় ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৪৯ হাজার ২০০ টাকা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য ১ হাজার ১৯৩টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা কিনতে হয় ৪৩ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। ১১ হাজার ১৩৬টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর কেনা হয় ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়।
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২৫টি পোর্টেবল এক্স-রে যন্ত্র কিনতে ব্যয় হয় ৭ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৪৩টি অক্সিজেন জেনারেটর প্ল্যান্ট কিনে হাসপাতালে স্থাপন করতে ব্যয় হয় ১৪৬ কোটি ৯০ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৬ টাকা। ২৩২টি ভেন্টিলেটর কেনা হয় ৬২ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। ৪৬৩টি পেশেন্ট মনিটর কিনতে লাগে ১২ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার টাকা। ১০০টি এবিজি মেশিন কেনা হয় ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকায়। ৮৫৩টি আইসিইউ শয্যা কেনা হয় ২৩ কোটি ৮৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকায়। ১৭ হাজার ৬০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে লাগে ২৩ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনা হয় ৮ কোটি ৯৬ লাখ ৩ হাজার ২৯০ টাকার। ৭ লাখ ৬০ হাজার এন-৯৫ মাস্ক কেনা হয় ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। ৭ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮ পিস কেএন-৯৫ মাস্ক কেনা হয় ৬ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৬ টাকায়। ৬৯ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬৯ পিস সার্জিক্যাল মাস্ক কিনতে লাগে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯৯ টাকা। তিন লাখ পিস গ্লোভস (এক্সামিনেশন) কেনা হয় ৩৬ লাখ টাকায়। ৮ লাখ ৯০ হাজার ৩৫২ জোড়া সার্জিক্যাল গ্লোভস কেনা হয় ২ কোটি ৯৬ লাখ ৮২ হাজার ৩৭০ টাকায়। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটি আরটি-পিসিআর কেনা হয় ৫ কোটি ৭০ লাখ ৫৩ হাজার ৪০০ টাকায়। পরে আরও ১২টি পিসিআর কেনা হয় ২৯ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৭ টাকায়। এ ছাড়া ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৯৬ ভায়াল রেমডিসিভির ইনজেকশন কেনা হয় ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ টাকায়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোভিডকালে আমাদের দেশে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের প্রতি সরকারি সহায়তা ছিল অপ্রতুল। এ ছাড়া ফিল্ড হাসপাতাল করার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা নষ্ট করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অতি উচ্চমূল্যে সেবা কেনা হয়েছে।’
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে যে ব্যয় হয়েছে, সেখানে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। দেশের নাগরিকদের যদি সন্দেহ হয় যে এই খাতে ব্যয়ে অনিয়ম হয়েছে, তাহলে তদন্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হয়েছে, আবার প্রণোদনার মতো অনেক দরকারি ব্যয় করা হয়নি। এ ছাড়া কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তাই এ ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে