মহিউদ্দিন খান মোহন
আমার ভায়রার মেয়ে সুবহা তাবাস্সুমের মনটা ভীষণ খারাপ। ফোনে যখন কথা বলছিলাম, ও কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, ‘খালুজান, আমাদের পরীক্ষা আর হবে না।’ বললাম, ‘খারাপ কী, তোমরা এমনি এমনি পাস করে গেলে!’ সে বলল, ‘আমি তো তা চাই না। দুই বছর পড়াশোনা করেছি। এখন পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করব, সেটা আর হলো না।’ সুবহা বনশ্রীর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী।
এসএসসিতে গোল্ডেন এ+ পাওয়া শিক্ষার্থী। পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে ওর একটি বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। ডাক্তার বলেছিলেন, এবার পরীক্ষা ড্রপ দিতে। কিন্তু প্রচণ্ড মানসিক শক্তিসম্পন্ন সুবহার জেদ—সে পরীক্ষা দেবেই। যে সাতটি পরীক্ষা ইতিমধ্যে দিয়েছে, তা সন্তোষজনক। বাকি ছয়টিতেও ভালো করবে, এ আশা ছিল। কিন্তু কতিপয় শিক্ষার্থীর চাপের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাকি পরীক্ষা গ্রহণ না করে ফলাফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত দেওয়ায় সে হতাশ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো মিটিং করেছে বা প্রধান উপদেষ্টার মতামত নিয়েছিল কি না, জানি না। তাঁর মতামত নিলে তিনি হয়তো এতে রাজি হতেন না। তিনি নিজেও একজন শিক্ষক ছিলেন, তাই তিনি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমন উদ্ভট সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দিতেন না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকে এটাকে ‘অটোপ্রমোশন’ বলে অভিহিত করছেন; যদিও তা পূর্ণ অটোপ্রমোশন নয়। যে কয়টি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে ফলাফল দেওয়া হবে। প্রশ্ন হলো, কেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আংশিক অটোপ্রমোশন দিতে হবে? যে মেধার মূল্যায়নের দাবিতে এত বড় একটি রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়ে গেল, যার পরিণতিতে একটি সরকারকে গদিচ্যুত হতে হলো, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে সেই মেধার মূল্যায়নকেই কি অস্বীকার করা হলো না?
সব শিক্ষার্থী সব বিষয়ে ভালো হয় না। আগের সাতটি পরীক্ষায় যারা একটু খারাপ করেছে, তারা বাকি পরীক্ষাগুলোয় ভালো করতে পারত। সবগুলো বিষয়ের নম্বর মিলিয়ে তাদের গ্রেড নির্ধারিত হতো। এখন যারা আগের পরীক্ষাগুলোয় একটু খারাপ করেছে, তাদের ফলাফল ভালো করার আর কোনো উপায় থাকল না। এটা ওই সব শিক্ষার্থীর মেধার অবমূল্যায়ন ও তাদের প্রতি অবিচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের প্রথম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল শিক্ষার্থীদের অটোপ্রমোশন। প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ‘স্বাধীনতার উপঢৌকন’ হিসেবে আমরা সেই অটোপ্রমোশন পেয়েছিলাম।
স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আমি ছিলাম সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। অটোপ্রমোশনের সুবাদে উঠে গেলাম অষ্টম শ্রেণিতে। আনন্দে গদগদ আমরা তখন বুঝতে পারিনি, সরকারের ওই সিদ্ধান্ত আমাদের কত বড় সর্বনাশ করেছে! অঙ্ক ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নতুন নতুন থিওরি পড়তে গিয়ে বুঝলাম, ক্লাস সেভেনে না পড়ার ফলে আমরা ওই সব বিষয়ে অজ্ঞ থেকে গিয়েছি। সেদিনের সেই ঘাটতি সারা জীবনে পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
সরকারের উচিত ছিল, অটোপ্রমোশন না দিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম যাতে সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে, সে বিষয়ে যত্নবান হওয়া, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও নাগরিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার বিষয় স্কুল পাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু তা না করে শিক্ষার্থীদের তুষ্ট করতে একটি অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাধীন দেশের একটি প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞানের ঘাটতি সৃষ্টি করা হয়েছিল।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন, যা পরবর্তী সময়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় এবং সফল হয়, তার প্রতি দেশের প্রায় সব সাধারণ মানুষের সমর্থন ছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন দেখে সবাই এই ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল যে, এবার আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোর ইতিবাচক সংস্কার সম্ভব হবে। সরকার সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রদবদলের মাধ্যমে পরিবর্তন শুরু হয়েছে।
তবে কতিপয় পদে ব্যক্তির পরিবর্তনই সংস্কার নয়, সংস্কারের অংশবিশেষ মাত্র। কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের জন্য দরকার অনুসৃত নীতির ইতিবাচক পরিবর্তন। সেটাতে সরকার এখনো হাত দিয়েছে বলে মনে হয় না। হয়তো অচিরেই দেবে। আর সে জন্য দরকার পর্যাপ্ত সময়।
কিন্তু সেই কাজে হাত দেওয়ার আগে নানা কর্নার থেকে বিভিন্ন বিষয়ে দাবি তুলে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললে আসল লক্ষ্যে পৌঁছানো দুরূহ হয়ে পড়তে পারে। যেমন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা আবদার করে বসল তারা আর পরীক্ষা দেবে না। কেন দেবে না পরীক্ষা?
এর উত্তরে বলা হলো, সাম্প্রতিক আন্দোলনের কারণে তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেনি, তাই। এটা কোনো যৌক্তিক কারণ হতে পারে না। আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে অনেকে। শহীদ শিক্ষার্থীরা আর ফিরে আসবে না। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে সক্ষম হবে, তারা স্বাভাবিক নিয়মেই পরীক্ষা দেবে। যারা পারবে না, হাসপাতালের বিছানায় তাদের পরীক্ষা নিতে হবে। তারপরও যথাসময়ে স্বাভাবিক নিয়মে পরীক্ষা হতে হবে—এটা সচেতন মানুষের বক্তব্য। আর যারা একেবারেই অক্ষম বিবেচিত হবে, তাদের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে দেশের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল মেধার বিজয় সুনিশ্চিত করার জন্য। পরীক্ষা না নিয়ে পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের মেধার যে অবমূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা অযৌক্তিক। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ নেই।
সরকারি যেকোনো সিদ্ধান্ত হতে হবে ভেবেচিন্তে, সুস্থ ও ধীরস্থির মস্তিষ্কে। ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর কথা বিবেচনায় না এনে কয়েক শ শিক্ষার্থীর চাপের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা বাতিলের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত অপরিণামদর্শী এবং ক্ষতিকর। এ সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আরও খবর পড়ুন:
আমার ভায়রার মেয়ে সুবহা তাবাস্সুমের মনটা ভীষণ খারাপ। ফোনে যখন কথা বলছিলাম, ও কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, ‘খালুজান, আমাদের পরীক্ষা আর হবে না।’ বললাম, ‘খারাপ কী, তোমরা এমনি এমনি পাস করে গেলে!’ সে বলল, ‘আমি তো তা চাই না। দুই বছর পড়াশোনা করেছি। এখন পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করব, সেটা আর হলো না।’ সুবহা বনশ্রীর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী।
এসএসসিতে গোল্ডেন এ+ পাওয়া শিক্ষার্থী। পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে ওর একটি বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। ডাক্তার বলেছিলেন, এবার পরীক্ষা ড্রপ দিতে। কিন্তু প্রচণ্ড মানসিক শক্তিসম্পন্ন সুবহার জেদ—সে পরীক্ষা দেবেই। যে সাতটি পরীক্ষা ইতিমধ্যে দিয়েছে, তা সন্তোষজনক। বাকি ছয়টিতেও ভালো করবে, এ আশা ছিল। কিন্তু কতিপয় শিক্ষার্থীর চাপের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাকি পরীক্ষা গ্রহণ না করে ফলাফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত দেওয়ায় সে হতাশ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো মিটিং করেছে বা প্রধান উপদেষ্টার মতামত নিয়েছিল কি না, জানি না। তাঁর মতামত নিলে তিনি হয়তো এতে রাজি হতেন না। তিনি নিজেও একজন শিক্ষক ছিলেন, তাই তিনি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমন উদ্ভট সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দিতেন না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকে এটাকে ‘অটোপ্রমোশন’ বলে অভিহিত করছেন; যদিও তা পূর্ণ অটোপ্রমোশন নয়। যে কয়টি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে ফলাফল দেওয়া হবে। প্রশ্ন হলো, কেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আংশিক অটোপ্রমোশন দিতে হবে? যে মেধার মূল্যায়নের দাবিতে এত বড় একটি রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়ে গেল, যার পরিণতিতে একটি সরকারকে গদিচ্যুত হতে হলো, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে সেই মেধার মূল্যায়নকেই কি অস্বীকার করা হলো না?
সব শিক্ষার্থী সব বিষয়ে ভালো হয় না। আগের সাতটি পরীক্ষায় যারা একটু খারাপ করেছে, তারা বাকি পরীক্ষাগুলোয় ভালো করতে পারত। সবগুলো বিষয়ের নম্বর মিলিয়ে তাদের গ্রেড নির্ধারিত হতো। এখন যারা আগের পরীক্ষাগুলোয় একটু খারাপ করেছে, তাদের ফলাফল ভালো করার আর কোনো উপায় থাকল না। এটা ওই সব শিক্ষার্থীর মেধার অবমূল্যায়ন ও তাদের প্রতি অবিচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের প্রথম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল শিক্ষার্থীদের অটোপ্রমোশন। প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ‘স্বাধীনতার উপঢৌকন’ হিসেবে আমরা সেই অটোপ্রমোশন পেয়েছিলাম।
স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আমি ছিলাম সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। অটোপ্রমোশনের সুবাদে উঠে গেলাম অষ্টম শ্রেণিতে। আনন্দে গদগদ আমরা তখন বুঝতে পারিনি, সরকারের ওই সিদ্ধান্ত আমাদের কত বড় সর্বনাশ করেছে! অঙ্ক ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নতুন নতুন থিওরি পড়তে গিয়ে বুঝলাম, ক্লাস সেভেনে না পড়ার ফলে আমরা ওই সব বিষয়ে অজ্ঞ থেকে গিয়েছি। সেদিনের সেই ঘাটতি সারা জীবনে পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
সরকারের উচিত ছিল, অটোপ্রমোশন না দিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম যাতে সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে, সে বিষয়ে যত্নবান হওয়া, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও নাগরিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার বিষয় স্কুল পাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু তা না করে শিক্ষার্থীদের তুষ্ট করতে একটি অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাধীন দেশের একটি প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞানের ঘাটতি সৃষ্টি করা হয়েছিল।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন, যা পরবর্তী সময়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় এবং সফল হয়, তার প্রতি দেশের প্রায় সব সাধারণ মানুষের সমর্থন ছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন দেখে সবাই এই ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল যে, এবার আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোর ইতিবাচক সংস্কার সম্ভব হবে। সরকার সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রদবদলের মাধ্যমে পরিবর্তন শুরু হয়েছে।
তবে কতিপয় পদে ব্যক্তির পরিবর্তনই সংস্কার নয়, সংস্কারের অংশবিশেষ মাত্র। কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের জন্য দরকার অনুসৃত নীতির ইতিবাচক পরিবর্তন। সেটাতে সরকার এখনো হাত দিয়েছে বলে মনে হয় না। হয়তো অচিরেই দেবে। আর সে জন্য দরকার পর্যাপ্ত সময়।
কিন্তু সেই কাজে হাত দেওয়ার আগে নানা কর্নার থেকে বিভিন্ন বিষয়ে দাবি তুলে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললে আসল লক্ষ্যে পৌঁছানো দুরূহ হয়ে পড়তে পারে। যেমন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা আবদার করে বসল তারা আর পরীক্ষা দেবে না। কেন দেবে না পরীক্ষা?
এর উত্তরে বলা হলো, সাম্প্রতিক আন্দোলনের কারণে তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেনি, তাই। এটা কোনো যৌক্তিক কারণ হতে পারে না। আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে অনেকে। শহীদ শিক্ষার্থীরা আর ফিরে আসবে না। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে সক্ষম হবে, তারা স্বাভাবিক নিয়মেই পরীক্ষা দেবে। যারা পারবে না, হাসপাতালের বিছানায় তাদের পরীক্ষা নিতে হবে। তারপরও যথাসময়ে স্বাভাবিক নিয়মে পরীক্ষা হতে হবে—এটা সচেতন মানুষের বক্তব্য। আর যারা একেবারেই অক্ষম বিবেচিত হবে, তাদের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে দেশের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল মেধার বিজয় সুনিশ্চিত করার জন্য। পরীক্ষা না নিয়ে পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের মেধার যে অবমূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা অযৌক্তিক। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ নেই।
সরকারি যেকোনো সিদ্ধান্ত হতে হবে ভেবেচিন্তে, সুস্থ ও ধীরস্থির মস্তিষ্কে। ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর কথা বিবেচনায় না এনে কয়েক শ শিক্ষার্থীর চাপের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা বাতিলের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত অপরিণামদর্শী এবং ক্ষতিকর। এ সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আরও খবর পড়ুন:
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে