স্বপ্না রেজা
ব্যবসা-বাণিজ্যে বিজ্ঞাপন লাগে। ক্রেতা আকৃষ্টের জন্য কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম ছড়াতে বিজ্ঞাপনের বিকল্প নেই। বিশেষত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তেমনটাই মনে করে। বিজ্ঞাপন হলো উৎপাদিত পণ্য বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক ও মনোমুগ্ধকর তথ্য প্রচার, যা মানুষের কাছে সেই পণ্য ও প্রতিষ্ঠান বিষয়ে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়।
বিশ্বাসযোগ্যতার সিঁড়ি ডিঙিয়ে যেন সেই পণ্য কিনতে মানুষ উৎসাহী হয় এবং তাদের ভেতরে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একধরনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জন্মে। পণ্যদ্রব্য ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা তথা ব্র্যান্ডিং যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অপরিহার্য একটা বিষয়। বাজারে কোনো পণ্য ছাড়ার আগে ও পরে বিজ্ঞাপন লাগে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রায় প্রতিটি করপোরেট, সামাজিক, শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তাই মার্কেটিং ও মিডিয়া ডিপার্টমেন্ট থাকে।
পণ্যের গুণগত মান যাই হোক না কেন, বিজ্ঞাপনগুলোকে হৃদয়স্পর্শী করার একধরনের পাঁয়তারা থাকে সংশ্লিষ্টদের। শুধু যে উৎপাদিত পণ্যের গুণগান গেয়ে প্রচারণা শেষ হয়, তা নয়। বড়সড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বাণিজ্যকে আকাশচুম্বী করতে মানুষের দুর্বল জায়গা স্পর্শ করে। মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ব্যবসায়ে লাভবান হতে চায়। এমন প্রবণতা কমছে না, বাড়ছে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই সীমা ক্রমশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি একটা বিজ্ঞাপন বেশ কিছুদিন ধরে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে। দেশের মস্ত বড় এক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনটি অটিজমের মতো একটা সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে। অটিস্টিক শিশুর বৈশিষ্ট্য ও তাদের প্রতি মানবিক মূল্যবোধ জাগানোর কথা শুনিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত টিস্যুর প্রচার করা হয়েছে কায়দা করে। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত টিস্যু বাজারে বিক্রির পর প্রতি প্যাক টিস্যু থেকে ১ টাকা অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞাপনটি নাটকীয় আবহে তৈরি করা হয়েছে। দেশের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শক্তিমান অভিনেতাকে দিয়ে অটিস্টিক শিশুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মানবিক কথা বলা হয়েছে যেমন, তেমনি বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির টিস্যুর বিজ্ঞাপনমূলক প্রচারণার কথা। পুরো বিজ্ঞাপন মূলত প্রতিষ্ঠানটির টিস্যু-কেন্দ্রিক, তথা টিস্যুর বিজ্ঞাপনভিত্তিক এবং সেটা অটিজমকে আশ্রয় করে। যেকোনো প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদিত দ্রব্যের প্রচার-প্রচারণা চালাবে তাদের মতো করে, এটা তাদের ব্যবসায়িক অধিকার। কিন্তু মানবজীবনের সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কেন, যেখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তির মানবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়? অবশ্য এখানে প্রশ্ন রাখতে হয়, যারা এমন কাজটি করেছে, তারা বুঝতে সক্ষম কি না যে, এই বিজ্ঞাপনে অটিস্টিক শিশুর মানবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে কি না।
অটিজম সম্পর্কে এখনো মানুষের মধ্যে তেমন সচেতনতা জাগেনি। আলো-আঁধারের মতো অটিজম ধারণা নানাজনের কাছে নানা রকম। শুধু মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরাই জানে যে অটিজম একটি শিশুর জন্য যেমন, তেমনি গোটা পরিবারের জন্য কতটা কঠিন সংগ্রামের, অসহায়ত্বের। না বললে নয় যে, আমাদের সমাজ এখনো অন্ধকারমুক্ত হতে পারেনি। আলো জ্বলতে দেখা গেলেও সেই আলো সবখানে জ্বলে না। অটিস্টিক ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার নানাভাবে, নানা কৌশলে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত। যদিও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী একজন প্রতিবন্ধীবান্ধব ব্যক্তিত্ব ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছেন। এই আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কীভাবে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক ব্যক্তি তাঁর ন্যায্য অধিকার ও সম্মান ভোগ করবেন।
নাগরিক সুবিধাভোগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে আইনে। যদিও অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে বলে অভিমত প্রকাশিত হয়েছে। সমাজে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ব্যক্তিদের ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না বলে তাদের একরকম করুণ জীবন যাপন করতে হয়। সমাজে তাদের অবাধ বিচরণ সম্ভব হয় না। ঘরে পুরো পরিবারই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সামাজিক জীবন বলতে নিজেদের সঙ্গে নিজেরাই। তবে আইন প্রণয়নের পর কিছুটা পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হয়, সচেতনতা দেখা যায়, যা অপ্রতুল।
অবশ্য এই সচেতনতার মধ্যে চ্যারিটি, করুণা ও ব্যক্তিগোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারের প্রবণতার আধিক্য লক্ষণীয়। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ উদ্ধার করা হচ্ছে। এসব মনিটরিং করলে তার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যাবে বৈকি। যা হোক, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষ আচরণসম্পন্ন এই জনগোষ্ঠী স্বাভাবিক আচরণের জনগোষ্ঠীর কাছে কতখানি সমাদর ও সম্মান-মর্যাদা পাবে, তা নির্ভর করে ব্যক্তির মানবিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধের ওপর এবং রাষ্ট্রের নিয়মনীতি ও বিধির ওপর। রাষ্ট্র কতটা নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে তার জনগণকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করবে, করতে সমর্থ হবে, তা মানবমর্যাদা রক্ষার জন্য অতীব জরুরি একটি বিষয়।
বেশ কিছুদিন আগে একটি প্রাইভেট চ্যানেলের নাটকে প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে এমন একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে করে মর্যাদাহানির প্রশ্নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অভিভাবক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের সংশ্লিষ্টরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল, এমনকি আদালত পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। যদিও নাটকের পরিচালক ও কলাকুশলীরা এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। সেই সময়ে দেখা গেল, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মরত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবমর্যাদার বিষয়ে একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং বিষয়টিকে চরম অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় শাস্তি কামনা করছে। এমনকি চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধেরও দাবি জানিয়েছিল।
বোঝা গেল, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তার পরিবারের কাছে বিষয়টি যথেষ্ট সংবেদনশীল এবং আপত্তিকর। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আশ্রয় কিংবা ব্যবহার করে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত টিস্যুর যে বিজ্ঞাপন, সেটাকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তার পরিবার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছে, তারা কীভাবে দেখছে, প্রশ্ন থেকে যায়। মানবতার দৃষ্টিতে ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠান যদি অটিস্টিক শিশুদের জন্য কোনো মহৎ উদ্যোগ নিয়েই থাকে, তাহলে তো তা সেই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মহৎ কাজ হিসেবেই মূল্যায়িত হবে। এটা তাদের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি হতে পারে। তারা এই কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে পারে, যাতে করে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হয়, অনুপ্রাণিত হয়।
কিন্তু অটিজম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে টিস্যুর প্রসঙ্গ এনে টিস্যুর বাজারজাতকে এগিয়ে নেওয়া হয় কি না বলে কেউ কেউ প্রশ্ন রেখেছে। বিজ্ঞজনেরা বলছেন, এটা একজন অটিস্টিক ব্যক্তির অসহায়ত্বকে পুঁজি করে নিজেদের ফায়দা লোটার শামিল। প্রাইভেট চ্যানেলে প্রদর্শিত নাটকের সংলাপের চেয়ে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে অটিজম বিষয়টি নিয়ে আসা বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য আরও বেশি মানহানিকর কি না, তা বিচার-বিশ্লেষণ করার ‘মাথা’ নেই বলে অনেকের ধারণা। কিংবা থাকলেও তারা সম্ভবত সুবিধাবাদী এবং পুঁজিবাদী।
আরও একটা বিজ্ঞাপনে দেখা গেল, পাবলিক প্লেসে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিজ্ঞাপনে এক নারীকে ধূমপান করানো হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, নারী কেন? কতজন নারী পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে? নারীর প্রতি এই সমাজব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠেনি। পরাধীনতার শেকল তার পায়ে এবং সেটা নানান কৌশলে। যেটুকু সাফল্য ও অর্জন নারীর, তা অব্যাহত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নারীকে বিজ্ঞাপনে ধূমপানরত অবস্থায় দেখানোর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে কি না। কোনো গোঁড়া প্রকৃতির ব্যক্তি এমন বিজ্ঞাপন দেখে নারী সম্পর্কে আরও একটা খারাপ উক্তি করার সুযোগ পেতে পারে। পরিশেষে বলব, বিজ্ঞাপনে ব্যক্তির মর্যাদা সুরক্ষিত হতে হবে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ব্যবসা-বাণিজ্যে বিজ্ঞাপন লাগে। ক্রেতা আকৃষ্টের জন্য কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম ছড়াতে বিজ্ঞাপনের বিকল্প নেই। বিশেষত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তেমনটাই মনে করে। বিজ্ঞাপন হলো উৎপাদিত পণ্য বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক ও মনোমুগ্ধকর তথ্য প্রচার, যা মানুষের কাছে সেই পণ্য ও প্রতিষ্ঠান বিষয়ে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়।
বিশ্বাসযোগ্যতার সিঁড়ি ডিঙিয়ে যেন সেই পণ্য কিনতে মানুষ উৎসাহী হয় এবং তাদের ভেতরে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একধরনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জন্মে। পণ্যদ্রব্য ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা তথা ব্র্যান্ডিং যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অপরিহার্য একটা বিষয়। বাজারে কোনো পণ্য ছাড়ার আগে ও পরে বিজ্ঞাপন লাগে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রায় প্রতিটি করপোরেট, সামাজিক, শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তাই মার্কেটিং ও মিডিয়া ডিপার্টমেন্ট থাকে।
পণ্যের গুণগত মান যাই হোক না কেন, বিজ্ঞাপনগুলোকে হৃদয়স্পর্শী করার একধরনের পাঁয়তারা থাকে সংশ্লিষ্টদের। শুধু যে উৎপাদিত পণ্যের গুণগান গেয়ে প্রচারণা শেষ হয়, তা নয়। বড়সড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বাণিজ্যকে আকাশচুম্বী করতে মানুষের দুর্বল জায়গা স্পর্শ করে। মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ব্যবসায়ে লাভবান হতে চায়। এমন প্রবণতা কমছে না, বাড়ছে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই সীমা ক্রমশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি একটা বিজ্ঞাপন বেশ কিছুদিন ধরে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে। দেশের মস্ত বড় এক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনটি অটিজমের মতো একটা সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে। অটিস্টিক শিশুর বৈশিষ্ট্য ও তাদের প্রতি মানবিক মূল্যবোধ জাগানোর কথা শুনিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত টিস্যুর প্রচার করা হয়েছে কায়দা করে। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত টিস্যু বাজারে বিক্রির পর প্রতি প্যাক টিস্যু থেকে ১ টাকা অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞাপনটি নাটকীয় আবহে তৈরি করা হয়েছে। দেশের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শক্তিমান অভিনেতাকে দিয়ে অটিস্টিক শিশুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মানবিক কথা বলা হয়েছে যেমন, তেমনি বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির টিস্যুর বিজ্ঞাপনমূলক প্রচারণার কথা। পুরো বিজ্ঞাপন মূলত প্রতিষ্ঠানটির টিস্যু-কেন্দ্রিক, তথা টিস্যুর বিজ্ঞাপনভিত্তিক এবং সেটা অটিজমকে আশ্রয় করে। যেকোনো প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদিত দ্রব্যের প্রচার-প্রচারণা চালাবে তাদের মতো করে, এটা তাদের ব্যবসায়িক অধিকার। কিন্তু মানবজীবনের সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কেন, যেখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তির মানবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়? অবশ্য এখানে প্রশ্ন রাখতে হয়, যারা এমন কাজটি করেছে, তারা বুঝতে সক্ষম কি না যে, এই বিজ্ঞাপনে অটিস্টিক শিশুর মানবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে কি না।
অটিজম সম্পর্কে এখনো মানুষের মধ্যে তেমন সচেতনতা জাগেনি। আলো-আঁধারের মতো অটিজম ধারণা নানাজনের কাছে নানা রকম। শুধু মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরাই জানে যে অটিজম একটি শিশুর জন্য যেমন, তেমনি গোটা পরিবারের জন্য কতটা কঠিন সংগ্রামের, অসহায়ত্বের। না বললে নয় যে, আমাদের সমাজ এখনো অন্ধকারমুক্ত হতে পারেনি। আলো জ্বলতে দেখা গেলেও সেই আলো সবখানে জ্বলে না। অটিস্টিক ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার নানাভাবে, নানা কৌশলে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত। যদিও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী একজন প্রতিবন্ধীবান্ধব ব্যক্তিত্ব ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছেন। এই আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কীভাবে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক ব্যক্তি তাঁর ন্যায্য অধিকার ও সম্মান ভোগ করবেন।
নাগরিক সুবিধাভোগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে আইনে। যদিও অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে বলে অভিমত প্রকাশিত হয়েছে। সমাজে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ব্যক্তিদের ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না বলে তাদের একরকম করুণ জীবন যাপন করতে হয়। সমাজে তাদের অবাধ বিচরণ সম্ভব হয় না। ঘরে পুরো পরিবারই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সামাজিক জীবন বলতে নিজেদের সঙ্গে নিজেরাই। তবে আইন প্রণয়নের পর কিছুটা পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হয়, সচেতনতা দেখা যায়, যা অপ্রতুল।
অবশ্য এই সচেতনতার মধ্যে চ্যারিটি, করুণা ও ব্যক্তিগোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারের প্রবণতার আধিক্য লক্ষণীয়। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ উদ্ধার করা হচ্ছে। এসব মনিটরিং করলে তার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যাবে বৈকি। যা হোক, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষ আচরণসম্পন্ন এই জনগোষ্ঠী স্বাভাবিক আচরণের জনগোষ্ঠীর কাছে কতখানি সমাদর ও সম্মান-মর্যাদা পাবে, তা নির্ভর করে ব্যক্তির মানবিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধের ওপর এবং রাষ্ট্রের নিয়মনীতি ও বিধির ওপর। রাষ্ট্র কতটা নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে তার জনগণকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করবে, করতে সমর্থ হবে, তা মানবমর্যাদা রক্ষার জন্য অতীব জরুরি একটি বিষয়।
বেশ কিছুদিন আগে একটি প্রাইভেট চ্যানেলের নাটকে প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে এমন একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে করে মর্যাদাহানির প্রশ্নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অভিভাবক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের সংশ্লিষ্টরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল, এমনকি আদালত পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। যদিও নাটকের পরিচালক ও কলাকুশলীরা এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। সেই সময়ে দেখা গেল, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মরত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবমর্যাদার বিষয়ে একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং বিষয়টিকে চরম অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় শাস্তি কামনা করছে। এমনকি চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধেরও দাবি জানিয়েছিল।
বোঝা গেল, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তার পরিবারের কাছে বিষয়টি যথেষ্ট সংবেদনশীল এবং আপত্তিকর। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আশ্রয় কিংবা ব্যবহার করে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত টিস্যুর যে বিজ্ঞাপন, সেটাকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তার পরিবার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছে, তারা কীভাবে দেখছে, প্রশ্ন থেকে যায়। মানবতার দৃষ্টিতে ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠান যদি অটিস্টিক শিশুদের জন্য কোনো মহৎ উদ্যোগ নিয়েই থাকে, তাহলে তো তা সেই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মহৎ কাজ হিসেবেই মূল্যায়িত হবে। এটা তাদের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি হতে পারে। তারা এই কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে পারে, যাতে করে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হয়, অনুপ্রাণিত হয়।
কিন্তু অটিজম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে টিস্যুর প্রসঙ্গ এনে টিস্যুর বাজারজাতকে এগিয়ে নেওয়া হয় কি না বলে কেউ কেউ প্রশ্ন রেখেছে। বিজ্ঞজনেরা বলছেন, এটা একজন অটিস্টিক ব্যক্তির অসহায়ত্বকে পুঁজি করে নিজেদের ফায়দা লোটার শামিল। প্রাইভেট চ্যানেলে প্রদর্শিত নাটকের সংলাপের চেয়ে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে অটিজম বিষয়টি নিয়ে আসা বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য আরও বেশি মানহানিকর কি না, তা বিচার-বিশ্লেষণ করার ‘মাথা’ নেই বলে অনেকের ধারণা। কিংবা থাকলেও তারা সম্ভবত সুবিধাবাদী এবং পুঁজিবাদী।
আরও একটা বিজ্ঞাপনে দেখা গেল, পাবলিক প্লেসে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিজ্ঞাপনে এক নারীকে ধূমপান করানো হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, নারী কেন? কতজন নারী পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে? নারীর প্রতি এই সমাজব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠেনি। পরাধীনতার শেকল তার পায়ে এবং সেটা নানান কৌশলে। যেটুকু সাফল্য ও অর্জন নারীর, তা অব্যাহত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নারীকে বিজ্ঞাপনে ধূমপানরত অবস্থায় দেখানোর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে কি না। কোনো গোঁড়া প্রকৃতির ব্যক্তি এমন বিজ্ঞাপন দেখে নারী সম্পর্কে আরও একটা খারাপ উক্তি করার সুযোগ পেতে পারে। পরিশেষে বলব, বিজ্ঞাপনে ব্যক্তির মর্যাদা সুরক্ষিত হতে হবে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে