বয়স বাড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কমিয়ে রাজউকে চাকরি

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯: ৫৫

বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর বয়স ৭১ বছর। আর সরকারি চাকরি হিসেবে তাঁর বয়স ৫১ বছর। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি ভাতা পাচ্ছেন। আবার বয়স কমিয়ে চাকরি করছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক)। এভাবেই জালিয়াতি করে বছরের পর বছর চাকরি এবং ভাতা নিচ্ছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের দায়চারা পাটওয়ারীবাড়ির মো. আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারী। 

আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারীর এই ফিরিস্তি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হলেও তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। যদিও বয়স লুকিয়ে চাকরি করার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, সংসার চালাতে নিতান্ত বাধ্য হয়েই চাকরি করছেন তিনি। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাটওয়ারীবাড়ির মৃত জয়নাল আবেদিন পাটওয়ারীর তিন ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারী। তিনি ও তাঁর বড় ভাই আতিকুল ইসলাম (মানিক পাটওয়ারী) মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। আহসান উল্ল্যা রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে জরিপ সাথি হিসেবে কর্মরত এবং থাকেন পূর্ব বাড্ডায় রাজউক স্টাফ কোয়ার্টারে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সরোয়ার হোসেন আহসান উল্ল্যার ভাতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

জন্মের সময় নিয়ে গন্ডগোল
দায়চারা গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম খান ২০১৭ সালে দুদকে আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ এনেছিলেন। ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, আহসান উল্ল্যা বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার তথ্য গোপন করে এবং ২০ বছর বয়স কমিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রাজউকে সরকারি চাকরি করছেন। অভিযোগটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

এ প্রসঙ্গে আহসান উল্ল্যার বড় ভাই আতিকুল ইসলাম মানিক পাটওয়ারী বলেন, তাঁর ভাই ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তিনিও জানান, আহসান রাজউকে চাকরি করেন। তাঁর বাবা ১৯৭১ সালে মারা গিয়েছেন। 

মুক্তিযোদ্ধা সংসদে দাখিল করা কাগজপত্র অনুসারে, আহসান উল্ল্যার জন্ম ১৯৫৩ সালে। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মন্ত্রণালয়ের (মুক্তিবার্তা লাল বই) সনদ নম্বর ১১৪২৬১। বেসামরিক গেজেট নম্বর ৫৩৮। তাঁর পরিচিতি নম্বর ০১২৬০০০০২১৯, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ০২০৫০৫০৩৩৫। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, আহসান উল্ল্যার বাবার মৃত্যু হয় ১৯৭১ সালে। আগের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে, বাবা মারা যাওয়ার প্রায় দুই বছর পর আহসান উল্ল্যার জন্ম হয়। নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর জন্ম ১৯৭৩ সালে। তবে স্মার্ট আইডিতে এই তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে। স্মার্ট আইডি কার্ডে তাঁর জন্মতারিখ দেখাচ্ছে ১ জানুয়ারি ১৯৫৩। স্মার্ট আইডি অনুসারে, ২০ বছর বয়স কমিয়ে রাজউকে চাকরি করছেন তিনি। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারী মুক্তিযোদ্ধা ভাতাপ্রাপ্তি ও রাজউকে চাকরি করার কথা স্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ১৯৯৮ সালে মোহাম্মদপুরে আগুনে তাঁর সর্বস্ব পুড়ে যায়। তাই পেটের দায়ে তিনি রাজউকে প্রথমে দারোয়ান হিসেবে মাস্টাররোলে চাকরি নেন। এখন তিনি জরিপ সাথি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত