মহিউদ্দিন খান মোহন
উনসত্তরে আমি ছিলাম পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আমাদের স্কুলটি ছিল থানা সদর শ্রীনগরে। সে সময় আমাদের দেশ, অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছিল আইয়ুববিরোধী গণ-আন্দোলনে উত্তাল। সেই আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি—আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি। শেখ মুজিবকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর গদি রক্ষার জন্য আইয়ুব খান আন্দোলনের শেষদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করলেন। প্রস্তাব করলেন শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারোলে মুক্তি দেবেন সে বৈঠকে অংশ নিতে। শেখ মুজিবও প্রথমদিকে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আপসনামায় স্বাক্ষর করার ঠিক আগমুহূর্তে বেগম মুজিবের আগমন ও পরামর্শ সবকিছু পাল্টে দেয়। প্যারোলে মুক্তি নিতে অস্বীকার করেন তিনি। (সূত্র: বাংলাদেশ: স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা, মওদুদ আহমদ)
উপায় না দেখে আইয়ুব খান তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হন। ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান শেখ মুজিবুর রহমান। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) গণসংবর্ধনায় তৎকালীন ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ (বর্তমানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী) তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। আওয়ামী লীগসহ ডানপন্থী দলগুলো গোলটেবিল বৈঠকের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেও মওলানা ভাসানীর ন্যাপ ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি গোলটেবিল বৈঠকের নামে আপসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছিল সোচ্চার। মওলানা ভাসানী শেখ মুজিবকে গোলটেবিলে যেতে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, এ থেকে পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তি আসবে না। মওলানার গোলটেবিল বৈঠক বিরোধিতাকে আমলে নেননি বঙ্গবন্ধু। তবে গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর ঢাকা প্রত্যাবর্তন করলে তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শেখ মুজিব ‘পূর্ব পাকিস্তানের আচকান-পাঞ্জাবি পরা’ রাজনৈতিক নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি মওলানা ভাসানীকে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। (সূত্র: আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৭-১৯৭০, মহিউদ্দিন আহমদ, পৃষ্ঠা-১৯৮)
শেখ মুজিবুর রহমান মওলানা ভাসানীকে অবসরে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর কথাই সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল। গোলটেবিল বৈঠক কোনো সাফল্য বয়ে আনেনি। তবে মওলানা হুজুরকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন শেখ মুজিব। তিনি বৈঠকে যাওয়ার আগে হুজুরকে কথা দিয়েছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দাবির প্রশ্নে কোনো আপস করবেন না, করেনওনি। তো গোলটেবিল বৈঠক নিয়ে যখন পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়, তখন এর বিরোধীরা স্লোগান দিত, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’। ‘গোলটেবিল না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’। উল্লেখ্য, কিশোরকাল থেকে বামপন্থী রাজনীতিতে দীক্ষা নেওয়া আমিও এই স্লোগান দিয়েছি বড় ভাইদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে।
রাজনীতিতে সংগ্রাম এবং আপসের অবস্থান খুব কাছাকাছি, মানবদেহের দুই চোখের মতো। দুই ইঞ্চি দূরত্বের মধ্যে তাদের অবস্থান হলেও একে অপরের দর্শন পায় না আরশির সামনে না দাঁড়ানো পর্যন্ত। রাজনীতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম যেমন অনেক সময় লক্ষ্য অর্জনের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার নজির আছে, পাশাপাশি আপস বা সমঝোতার গুরুত্বও কম নয়। কখনো কখনো চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আপসের রাস্তায় হাঁটতে হয়। চিরকাল আপসহীন থাকা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে নীতির প্রশ্নে কেউ কেউ নিরাপদ থেকে লক্ষ্য অর্জনে সফলও হন। যেমন হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। স্বৈরশাসক এরশাদের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসা তাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছিল। তিনি অভিষিক্ত হয়েছিলেন ‘আপসহীন নেত্রী’র অভিধায়। তবে রাজনীতিতে সব সময় আপসহীন থাকা চলে না; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে তো আরও নয়। এখানে যিনি যত কৌশল অবলম্বন করতে পারেন, তিনি তত সাফল্য পান। গণতন্ত্রকে বলা হয় ‘আর্ট অব কম্প্রোমাইজিং’।
এখানে নীতির প্রশ্নে আপসহীনতা যেমন সাফল্যের অন্যতম নিয়ামক, তেমনি বৃহত্তর স্বার্থে সমঝোতারও বিকল্প থাকে না। এই সমঝোতাকে অবশ্য অনেকে ‘আপস’ বলে অভিহিত করে থাকেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ‘আপস’সংক্রান্ত একটি উক্তি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সামাজিক মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়েছে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। ৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার সাভারের আমিনবাজারে দলীয় এক শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘কোথায় নিষেধাজ্ঞা? কোথায় ভিসা নীতি? তলে তলে আপস হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার, আমরা আছি, দিল্লি আছে, আমরা আছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা এমন ভারসাম্য সবার সঙ্গে করে ফেলেছেন, আর কোনো চিন্তা নাই। নির্বাচন হবে।’ (আজকের পত্রিকা, ৪ আগস্ট, ২০২৩)।
ওবায়দুল কাদেরের কথাগুলো পত্রিকায় পাঠ করে মনে হলো, বিপদ কেটে যাওয়ায় উল্লসিত কোনো ব্যক্তি তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। একটি সরকারকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় ডিল করতে হয়। এসব করতে গিয়ে কখনো কখনো নিজের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে গিয়ে সমঝোতা করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সেটাকে ‘আপস’ না বলে সমঝোতা বলাই শ্রেয়। কেননা, আপস কথাটির মধ্যে ‘আত্মসমর্পণ’ জাতীয় একটি নেতিবাচক গন্ধ আছে, যা একটি দল বা সরকার সম্বন্ধে জনমনে ভিন্ন রকম ধারণা সৃষ্টি করতে পারে। আমি জানি না, বক্তব্য-বিবৃতির জন্য সরকারের মন্ত্রী বা দলীয় নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করতে হয় কি না। হলে অবশ্যই তাঁরা বাকসংযমী হতেন, কথা বলার সময় আগপিছ ভাবতেন।
ওবায়দুল কাদের যে আপসের কথা বলেছেন, তা কার কার সঙ্গে হয়েছে, সেটা পরিষ্কার করেননি। কোন ইস্যুতে এবং কিসের বিনিময়ে এই আপস তা-ও খোলাসা করেননি। অবশ্য কারও কারও ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে খবরদারি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে অস্বস্তি ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছিল, তাঁদের আশ্বস্ত ও উদ্দীপ্ত করতেই কাদের সাহেব ওই কথা বলেছেন। আর এখানেই মূল প্রশ্নটি এসে যায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলে থাকেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাঁদের সঙ্গে আছেন। যদি তা-ই হয়, তাহলে ব্যাপক ‘জনসমর্থনপুষ্ট’ একটি রাজনৈতিক দল কেন ভিনদেশি কোনো সরকারের চাপে চিন্তিত হবে? অবশ্য তারা সব সময়ই বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি বা স্যাংশনকে পরোয়া করেন না। নীতির প্রশ্নে স্বচ্ছ অবস্থানে থাকা একটি সরকারের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক। কেননা, একটি দল বা সরকারের মূল শক্তি জনগণ। তারা যখন সরকারের পক্ষে থাকে, তখন কোনো শক্তিরই সাধ্য নেই সেই সরকারকে চাপে ফেলার।
এটা এখন সর্বজনবিদিত যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি বৃহৎ শক্তির চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। এই পরিস্থিতিতে ‘আপস’ হয়ে গেছে বলে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী যখন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তখন প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক—কিসের বিনিময়ে হলো এই আপস? তা ছাড়া কাদের সাহেবের ‘আমেরিকার দিল্লিকে দরকার, আমরা আছি, দিল্লি আছে, আর চিন্তা নাই’ কথাগুলো একটি দল বা সরকারের জন্য কতটুকু সম্মানজনক তা-ও ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। এ থেকে এই ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে, মুখে তাঁরা যতই জনসমর্থনের কথা বলুন, তাঁদের ভরসাস্থল সীমান্তের বাইরে। কথায় আছে ‘ভাবিতে উচিত ছিল প্রতিজ্ঞা যখন’। রাজনীতিতে তা হওয়া উচিত ‘ভাবিতে উচিত ছিল বলিবে যখন’।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
উনসত্তরে আমি ছিলাম পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আমাদের স্কুলটি ছিল থানা সদর শ্রীনগরে। সে সময় আমাদের দেশ, অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছিল আইয়ুববিরোধী গণ-আন্দোলনে উত্তাল। সেই আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি—আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি। শেখ মুজিবকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর গদি রক্ষার জন্য আইয়ুব খান আন্দোলনের শেষদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করলেন। প্রস্তাব করলেন শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারোলে মুক্তি দেবেন সে বৈঠকে অংশ নিতে। শেখ মুজিবও প্রথমদিকে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আপসনামায় স্বাক্ষর করার ঠিক আগমুহূর্তে বেগম মুজিবের আগমন ও পরামর্শ সবকিছু পাল্টে দেয়। প্যারোলে মুক্তি নিতে অস্বীকার করেন তিনি। (সূত্র: বাংলাদেশ: স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা, মওদুদ আহমদ)
উপায় না দেখে আইয়ুব খান তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হন। ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান শেখ মুজিবুর রহমান। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) গণসংবর্ধনায় তৎকালীন ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ (বর্তমানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী) তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। আওয়ামী লীগসহ ডানপন্থী দলগুলো গোলটেবিল বৈঠকের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেও মওলানা ভাসানীর ন্যাপ ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি গোলটেবিল বৈঠকের নামে আপসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছিল সোচ্চার। মওলানা ভাসানী শেখ মুজিবকে গোলটেবিলে যেতে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, এ থেকে পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তি আসবে না। মওলানার গোলটেবিল বৈঠক বিরোধিতাকে আমলে নেননি বঙ্গবন্ধু। তবে গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর ঢাকা প্রত্যাবর্তন করলে তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শেখ মুজিব ‘পূর্ব পাকিস্তানের আচকান-পাঞ্জাবি পরা’ রাজনৈতিক নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি মওলানা ভাসানীকে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। (সূত্র: আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৭-১৯৭০, মহিউদ্দিন আহমদ, পৃষ্ঠা-১৯৮)
শেখ মুজিবুর রহমান মওলানা ভাসানীকে অবসরে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর কথাই সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল। গোলটেবিল বৈঠক কোনো সাফল্য বয়ে আনেনি। তবে মওলানা হুজুরকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন শেখ মুজিব। তিনি বৈঠকে যাওয়ার আগে হুজুরকে কথা দিয়েছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দাবির প্রশ্নে কোনো আপস করবেন না, করেনওনি। তো গোলটেবিল বৈঠক নিয়ে যখন পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়, তখন এর বিরোধীরা স্লোগান দিত, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’। ‘গোলটেবিল না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’। উল্লেখ্য, কিশোরকাল থেকে বামপন্থী রাজনীতিতে দীক্ষা নেওয়া আমিও এই স্লোগান দিয়েছি বড় ভাইদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে।
রাজনীতিতে সংগ্রাম এবং আপসের অবস্থান খুব কাছাকাছি, মানবদেহের দুই চোখের মতো। দুই ইঞ্চি দূরত্বের মধ্যে তাদের অবস্থান হলেও একে অপরের দর্শন পায় না আরশির সামনে না দাঁড়ানো পর্যন্ত। রাজনীতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম যেমন অনেক সময় লক্ষ্য অর্জনের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার নজির আছে, পাশাপাশি আপস বা সমঝোতার গুরুত্বও কম নয়। কখনো কখনো চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আপসের রাস্তায় হাঁটতে হয়। চিরকাল আপসহীন থাকা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে নীতির প্রশ্নে কেউ কেউ নিরাপদ থেকে লক্ষ্য অর্জনে সফলও হন। যেমন হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। স্বৈরশাসক এরশাদের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসা তাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছিল। তিনি অভিষিক্ত হয়েছিলেন ‘আপসহীন নেত্রী’র অভিধায়। তবে রাজনীতিতে সব সময় আপসহীন থাকা চলে না; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে তো আরও নয়। এখানে যিনি যত কৌশল অবলম্বন করতে পারেন, তিনি তত সাফল্য পান। গণতন্ত্রকে বলা হয় ‘আর্ট অব কম্প্রোমাইজিং’।
এখানে নীতির প্রশ্নে আপসহীনতা যেমন সাফল্যের অন্যতম নিয়ামক, তেমনি বৃহত্তর স্বার্থে সমঝোতারও বিকল্প থাকে না। এই সমঝোতাকে অবশ্য অনেকে ‘আপস’ বলে অভিহিত করে থাকেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ‘আপস’সংক্রান্ত একটি উক্তি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সামাজিক মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়েছে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। ৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার সাভারের আমিনবাজারে দলীয় এক শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘কোথায় নিষেধাজ্ঞা? কোথায় ভিসা নীতি? তলে তলে আপস হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার, আমরা আছি, দিল্লি আছে, আমরা আছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা এমন ভারসাম্য সবার সঙ্গে করে ফেলেছেন, আর কোনো চিন্তা নাই। নির্বাচন হবে।’ (আজকের পত্রিকা, ৪ আগস্ট, ২০২৩)।
ওবায়দুল কাদেরের কথাগুলো পত্রিকায় পাঠ করে মনে হলো, বিপদ কেটে যাওয়ায় উল্লসিত কোনো ব্যক্তি তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। একটি সরকারকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় ডিল করতে হয়। এসব করতে গিয়ে কখনো কখনো নিজের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে গিয়ে সমঝোতা করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সেটাকে ‘আপস’ না বলে সমঝোতা বলাই শ্রেয়। কেননা, আপস কথাটির মধ্যে ‘আত্মসমর্পণ’ জাতীয় একটি নেতিবাচক গন্ধ আছে, যা একটি দল বা সরকার সম্বন্ধে জনমনে ভিন্ন রকম ধারণা সৃষ্টি করতে পারে। আমি জানি না, বক্তব্য-বিবৃতির জন্য সরকারের মন্ত্রী বা দলীয় নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করতে হয় কি না। হলে অবশ্যই তাঁরা বাকসংযমী হতেন, কথা বলার সময় আগপিছ ভাবতেন।
ওবায়দুল কাদের যে আপসের কথা বলেছেন, তা কার কার সঙ্গে হয়েছে, সেটা পরিষ্কার করেননি। কোন ইস্যুতে এবং কিসের বিনিময়ে এই আপস তা-ও খোলাসা করেননি। অবশ্য কারও কারও ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে খবরদারি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে অস্বস্তি ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছিল, তাঁদের আশ্বস্ত ও উদ্দীপ্ত করতেই কাদের সাহেব ওই কথা বলেছেন। আর এখানেই মূল প্রশ্নটি এসে যায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলে থাকেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাঁদের সঙ্গে আছেন। যদি তা-ই হয়, তাহলে ব্যাপক ‘জনসমর্থনপুষ্ট’ একটি রাজনৈতিক দল কেন ভিনদেশি কোনো সরকারের চাপে চিন্তিত হবে? অবশ্য তারা সব সময়ই বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি বা স্যাংশনকে পরোয়া করেন না। নীতির প্রশ্নে স্বচ্ছ অবস্থানে থাকা একটি সরকারের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক। কেননা, একটি দল বা সরকারের মূল শক্তি জনগণ। তারা যখন সরকারের পক্ষে থাকে, তখন কোনো শক্তিরই সাধ্য নেই সেই সরকারকে চাপে ফেলার।
এটা এখন সর্বজনবিদিত যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি বৃহৎ শক্তির চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। এই পরিস্থিতিতে ‘আপস’ হয়ে গেছে বলে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী যখন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তখন প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক—কিসের বিনিময়ে হলো এই আপস? তা ছাড়া কাদের সাহেবের ‘আমেরিকার দিল্লিকে দরকার, আমরা আছি, দিল্লি আছে, আর চিন্তা নাই’ কথাগুলো একটি দল বা সরকারের জন্য কতটুকু সম্মানজনক তা-ও ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। এ থেকে এই ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে, মুখে তাঁরা যতই জনসমর্থনের কথা বলুন, তাঁদের ভরসাস্থল সীমান্তের বাইরে। কথায় আছে ‘ভাবিতে উচিত ছিল প্রতিজ্ঞা যখন’। রাজনীতিতে তা হওয়া উচিত ‘ভাবিতে উচিত ছিল বলিবে যখন’।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে